তৃণভূমি
তৃণভূমি এমন অঞ্চল যেখানে গাছপালার মধ্যে ঘাসের (পোয়াসি) আধিপত্য থাকে। তবে শর (সাইপারেসি) এবং নলখাগড়া (জুঙ্গাকেসি)-ও দেখা যায়। সঙ্গে নানা অনুপাতে ক্লোভার (ত্রিপত্রবিশেষ) এর মতো শিম্ব জাতীয় গুল্ম এবং অন্যান্য ভেষজ পাওয়া যায়। কুমেরু বাদে সমস্ত মহাদেশে তৃণভূমি প্রাকৃতিকভাবে দেখা যায় এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ পরিবেশ অঞ্চল-এ পাওয়া যায়। তার উপরে পৃথিবীর বৃহত্তম বায়োমসমূহের মধ্যে একটি হলো তৃণভূমি। বলতে গেলে বিশ্বজুড়ে ভূদৃশ্য অধিকার করে আছে তৃণভূমি।[১] তৃণভূমি, পৃথিবীর পৃষ্ঠের ৩১-৪৩% অংশ জুড়ে রয়েছে। এগুলি আমাদের গ্রহের অন্যতম উৎপাদনশীল ভূদৃশ্য । বিভিন্ন ধরনের তৃণভূমি রয়েছে: প্রাকৃতিক তৃণভূমি, আধা-প্রাকৃতিক তৃণভূমি এবং কৃষিজ তৃণভূমি।[১]
সংজ্ঞা
বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে:
- "...যে কোনও রকমের ফসল কাটা চারা সহ যেখানে ঘাস এবং/অথবা শুঁটি প্রাধান্যযুক্ত উদ্ভিজ উৎপাদিত হয়।"[১]
- "...লতা এবং গুল্ম প্রভাবিত স্থলজ পরিবেশতন্ত্র এবং আগুন, চারণ, খরা এবং/বা হিমায়িত তাপমাত্রায় রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।" (পাইলট অ্যাসেসমেন্ট অফ গ্লোবাল ইকোসিস্টেমস, ২০০০)[১]
- "ঘাসের বৃদ্ধি সহায়ক পর্যাপ্ত গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত (২৫-৭৫ সেমি) যুক্ত একটি অঞ্চল ..." (স্টাইলিং, ১৯৯৯)[১]
আধা-প্রাকৃতিক তৃণভূমি একটি খুব সাধারণ ধরনের ঘাসভূমি। [২] একে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে:
- ঘাস ছাঁটাই বা গোচারণ প্রভৃতি মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে বিদ্যমান তৃণভূমি, যেখানে পরিবেশগত পরিস্থিতি এবং প্রজাতি পরিচর্যা, প্রাকৃতিক উপায়ে পরিচালিত হয়।[৩]
সেগুলি নিম্নলিখিত ভাবেও বর্ণনা করা যেতে পারে:
- "আধা-প্রাকৃতিক তৃণভূমি, একটি ক্ষুদ্র পরিসরে বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্যময় আবাসস্থল।" [৪]
- "আধা-প্রাকৃতিক তৃণভূমি বিশ্বের সর্বাধিক প্রজাতি সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত।"[৫]
- "... বহু শতাব্দী জুড়ে বিস্তৃত চারণ এবং ছাঁটাইয়ের (মোইং) মাধ্যমে তৈরি হয়েছে "[৪]
- „... আধুনিক কালের কীটনাশক বা সার ব্যবহার ছাড়াই জন্মেছে“[৬]
বিভিন্ন ধরনের আধা-প্রাকৃতিক তৃণভূমি রয়েছে। যেমন, উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, (হে মেডো) বা খড়ের তৃণক্ষেত্র।[৬]
তৃণভূমি প্রকারভেদ
তৃণভূমির শ্রেণিবিন্যাস
তৃণভূমির প্রকারভেদ, শ্রিম্পার (১৮৯৮, ১৯০৩) অনুযায়ী:[৭]
- মেডো (হাইগ্রোফিলাস বা ট্রপোফিলাস তৃণভূমি)
- স্টেপ (জেরোফিলাস তৃণভূমি)
- সাভানা (বিভিন্ন উদ্ভিদের সাথে জেরোফিলাস তৃণভূমি)
এলেনবার্গ এবং মুলার-ডম্ববইস (১৯৬৭) প্রবর্তিত তৃণভূমির প্রকারভেদ:[৮]
গঠন-শ্রেণি V. টেরেস্ট্রিয়াল হার্বেসিয়াস সম্প্রদায়ের
- সাভানা এবং সম্পর্কিত তৃণভূমি (ক্রান্তীয় বা উপ-ক্রান্তীয় তৃণভূমি এবং পার্কল্যাণ্ড)
- স্টেপ এবং সম্পর্কিত তৃণভূমি (উদাঃ উত্তর আমেরিকার "প্রেইরি" ইত্যাদি)
- মেডো, চারণ সম্পর্কিত তৃণভূমি
- সেজ জলজ এবং ফ্লাশ
- হার্বেসিয়াস এবং কাষ্ঠল লোনা জলজ
- ফোর্ব উদ্ভিদজ
তৃণভূমির প্রকারভেদ, লাইকক ( ১৯৭৯) অনুসারে:[৯]
- লম্বাঘাস (সত্য) প্রেইরি
- ছোটঘাস প্রেইরি
- মিশ্র-ঘাস প্রেইরি
- গুল্ম স্টেপ
- বাৎসরিক তৃণভূমি
- মরুভূমি (শুষ্ক) তৃণভূমি
- উঁচু পার্বত্য তৃণভূমি
সাধারণ প্রকারের তৃণভূমি
ক্রান্তীয় এবং উপ-ক্রান্তীয়
এই ধরনের তৃণভূমিসমূহকে ক্রান্তীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় তৃণভূমি, সাভানা এবং গুল্মভূমি বায়োম হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। এই তৃণভূমিতে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রতি বছর ৯০-১৫০ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে। ঘাস এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের ঐ পরিবেশের মধ্যে, সাধারণত বড় ধরনের স্তন্যপায়ী, যেমন ন্যু (কনোচেটিস টাওরিনাস) এবং জেব্রা (ইকুয়াস জেব্রা) চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। উল্লেখযোগ্য ক্রান্তীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় তৃণভূমির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার ল্যানোস তৃণভূমি। [১০]
নাতিশীতোষ্ণ
মধ্য-অক্ষাংশের তৃণভূমির মধ্যে রয়েছে, প্রেইরি, উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় তৃণভূমি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে-এর পম্পাস, চুনযুক্ত নিম্নভূমি, এবং ইউরোপ এর স্টেপ তৃণভূমি। এগুলিকে নাতশীতোষ্ণ তৃণভূমি, সাভানা এবং গুল্মভূমির বায়োম হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমিতে অনেক নিরামিষাশী প্রাণী যেমন বাইসন, গ্যজেল, জেব্রা, গণ্ডার, এবং বন্য ঘোড়া, প্রভৃতি বাস করে। আবার সিংহ-এর মতো মাংসাশী প্রাণী যেমন, নেকড়ে, চিতা এবং চিতাবাঘ প্রভৃতিও এই নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের তৃণভূমিতে অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় হরিণ, প্রেইরি কুকুর, ইঁদুর, জ্যাক খরগোশ, স্কঙ্ক, কোয়েট, সাপ, শেয়াল, পেঁচা, ব্যাজার, ব্ল্যাকবার্ড, গঙ্গাফড়িং, চড়ুই, কোয়েল, বাজপাখি এবং হায়না।[১১]
প্লাবিত
এই ধরনের তৃণভূমিতে মরশুমে বা সারা বছরব্যাপী প্লাবন হয়। যেমন ফ্লোরিডার এভারগ্লেডস, ব্রাজিল-এর প্যান্টানাল, বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়ে বা আর্জেন্টিনার এস্টারোস ডেল ইবেরা। এদের প্লাবিত তৃণভূমি এবং সাভানা বায়োম হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় এবং বেশিরভাগ ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখা যায়। এই প্রকার তৃণভূমিতে বসবাসকারী প্রজাতিগুলি সেখানের হাইড্রোলজিক ব্যবস্থা এবং মাটির অবস্থার সাথে ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। দ্য এভারগ্ল্যাডস হ'ল বিশ্বের বৃহত্তম বৃষ্টিবিধৌত প্লাবন তৃণভূমি। এই তৃণভূমিটি প্রায় ১১,০০০ প্রজাতির বীজ বহনকারী উদ্ভিদ, ২৫ প্রজাতির অর্কিড, ৩০০ প্রজাতির পাখি এবং ১৫০ টি প্রজাতির মাছ দ্বারা সমৃদ্ধ।
জল-তৃণভূমি হ'ল এমন তৃণভূমি যেখানে স্বল্প সময়ের জন্য বন্যা হয়।[১২]