খালিদ বিন আবদুল আজিজ

সৌদি আরবের বাদশাহ

খালিদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (আরবি: خالد بن عبد العزيز آل سعود Khālid ibn ‘Abd al ‘Azīz Āl Su‘ūd; ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩ – ১৩ জুন ১৯৮২) ছিলেন সৌদি আরবের বাদশাহ। তিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি সৌদি আরবের চতুর্থ শাসক।[৩] তার শাসনামলে তেল থেকে অর্জিত মুনাফার কারণে দেশে প্রভূত উন্নতি হয়।

খালিদ বিন আবদুল আজিজ
সৌদি আরবের বাদশাহ
রাজত্ব২৫ মার্চ ১৯৭৫ – ১৩ জুন ১৯৮২
বায়াত২৫ মার্চ ১৯৭৫
পূর্বসূরিফয়সাল বিন আবদুল আজিজ
উত্তরসূরিফাহাদ বিন আবদুল আজিজ
হেজাজের শাসক
সময়কাল১৯৩২–১৯৩৪
পূর্বসূরিফয়সাল বিন আবদুল আজিজ
বাদশাহআবদুল আজিজ ইবনে সৌদ
জন্ম১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩
রিয়াদ
মৃত্যু১৩ জুন ১৯৮২(1982-06-13) (বয়স ৬৯)
তাইফ
সমাধি১৩ জুন ১৯৮২
আল আউদ কবরস্থান, রিয়াদ
বংশধরবন্দর
আবদুল্লাহ
আল জাওহারা
নুয়াফ
মুদি বিনতে খালিদ
হাসা
ফয়সাল বিন খালিদ
আল বন্দরি
মিশাল
পূর্ণ নাম
খালিদ বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান বিন ফয়সাল বিন তুর্কি বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন সৌদ
রাজবংশআল সৌদ
পিতাআবদুল আজিজ ইবনে সৌদ
মাতাজাওয়ারা বিনতে মুসাইদ আল জুলুয়ি[১][২]
ধর্মইসলাম

প্রারম্ভিক জীবন

খালিদ ১৯১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৫] তিনি বাদশাহ আবদুল আজিজের পঞ্চম সন্তান।[৬][৭] তার মা আল জাওয়ারা বিনতে মুসায়েদ আল জুলুয়ি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ আল জুলুয়ি গোত্রের সদস্য।[২][৮][৯] আল সৌদের সাথে এই গোত্রের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল।[১০]

খালিদের একমাত্র আপন ভাই প্রিন্স মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ[১১] তার বোন আল আনুদের সাথে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের আপন ভাই সাদ বিন আবদুর রহমানের ছেলের বিয়ে হয়। প্রথমে সাদের ছেলে সৌদ বিন সাদের সাথে বিয়ে হয়। সৌদ বিন সাদ মারা যাওয়ার পর আরেক ছেলে ফাহাদ বিন সাদের সাথে তার বিয়ে হয়।[১২]

প্রাথমিক অভিজ্ঞতা

১৪ বছর বয়সে খালিদ বিন আবদুল আজিজকে বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মরুভূমির বিভিন্ন গোত্রের কাছে তাদের দাবি ও সমস্যা শোনার জন্য পাঠান।[৫] ১৯৩২ সালে প্রিন্স ফয়সালের স্থলে প্রিন্স খালিদকে হেজাজের শাসক নিযুক্ত করা হয় এবং ফয়সালকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত খালিদ এই পদে ছিলেন।[১৩] খালিদ সৌদি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৩৪ সালে ইয়েমেনি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।[৫] যুদ্ধের পর প্রিন্স খালিদ তাইফ কনফারেন্সে সৌদি প্রতিনিধিদলের চেয়ারম্যান হন।[১৪]

১৯৩৪ সালে খালিদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন এবং শান্তি আলোচনা সমূহে সৌদি প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ফিলিস্তিন নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সেন্ট জেমস সম্মেলনে অংশ নেন। এখানে তিনি সৌদি প্রতিনিধিদলের প্রধান প্রিন্স ফয়সাল বিন আবদুল আজিজের সহকারী হিসেবে যোগ দেন।[৫][১৪][১৫] বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে ফয়সালের সাথে যোগ দেয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ শাসন বিষয়ে তিনি জ্ঞানলাভ করতে থাকেন। সৌদি প্রতিনিধি হিসেবে তার ভ্রমণের কারণে তিনি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন।[১৪] বৈদেশিক নীতির সিদ্ধান্ত বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানাতে তিনি অনেক বেশি উদার ছিলেন।[৯]

১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রিন্স ফয়সাল ও প্রিন্স খালিদকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান তাদের সম্মানে হোয়াইট হাউজে নৈশভোজের আয়োজন করেন।[১৬] তারা প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের সাথে সাক্ষাত করেছেন।[১৭][১৮] সফরের সময় তারা সরকারি অতিথি ভবন ব্লেয়ার হাউজে অবস্থান করেছেন। সরকারিভাবে বিশেষ ট্রেনে করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়।[১৬] একজন বিদেশি কূটনৈতিক এসময় প্রিন্স খালিদকে চমৎকার মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

১৯৬২ সালে প্রিন্স খালিদ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এর মাধ্যমে তার উত্তরাধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি ফুটে উঠে।[১৯][২০] বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজ ও প্রিন্স ফয়সালের মধ্যে দ্বন্দ্বের সময় খালিদ ফয়সালকে সমর্থন দেন।

যুবরাজ

১৯৬৫ সালে খালিদ বিন আবদুল আজিজকে তার বড় ভাই প্রিন্স মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজের বদলে যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[২১] প্রথমে প্রিন্স খালিদ ডেপুটি প্রিমিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। তার মূল দায়িত্ব ছিল মন্ত্রীদের কাউন্সিলের সব সাংগঠনিক ও নির্বাহী কাজ তদারক করা। বাদশাহ ফয়সালের পক্ষ থেকে তিনি মক্কা প্রদেশের বিষয়াদি দেখাশোনার কাজও করতেন।[১৪] দৈনন্দিন বিষয়ে তিনি সক্রিয় ছিলেন না কিন্তু ফয়সালের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন মিটিং বা অনুষ্ঠানে তার প্রতিনিধি হিসেবে থাকতেন।[১৯] যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ত করা ১৯৭১ সালের দলিল মোতাবেক এসময় খালিদ গোত্রীয় নেতা, ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ও এসময় ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান প্রিন্স আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের সমর্থন লাভ করেছিলেন।[২২]

শাসনকাল

১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ বাদশাহ ফয়সাল নিহত হওয়ার পর খালিদের শাসনকাল শুরু হয়।[২৩][২৪] ফয়সাল মারা যাওয়ার পর আল সৌদের পাঁচজন সিনিয়র সদস্যের বৈঠকের পর তারা বাদশাহ ঘোষণা করা হয়।[২৫][২৬] একইসাথে তিনি সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীর পদও পান।[২৭]

বিভিন্ন রিপোর্টে তাকে শুধু আনুষ্ঠানিক প্রধান বলা হলেও বাস্তবতা তদ্রূপ ছিল না। সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত তিনি নিতেন।[২৮] ফয়সালের চালু করা নিয়মানুযায়ী বাদশাহ পারিবারিক বিষয়ে চূড়ান্ত নিয়ামক ছিলেন।[২৯] তার কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে সম্মানিত বাদশাহ হিসেবে তার ভাবমূর্তি গড়ে উঠে। তিনি সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত প্রথাপ্রতিষ্ঠানের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখেছেন।[২৬] তাই অন্যান্য প্রিন্স ও দেশের ক্ষমতাশালী শক্তিগুলোর কাছ থেকে তিনি সমর্থন পান।[২৬]

অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড

ফয়সাল ও খালিদ, আনুমানিক ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ।

বাদশাহ খালিদের শাসনামলে সৌদি আরবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়। ফলে সৌদি আরব অন্যতম ধনী দেশ হয়ে উঠে। তিনি প্রাথমিকভাবে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ কাজে মন দেন।[২৭] জুবাইল ও ইয়ানবু শিল্পনগর তার সময় তৈরী করা হয়।[৩০][৩১] এছাড়াও অনেক স্কুল এসময় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৫ সালে ৩০২৮টি এলিমেন্টারি স্কুল, ৬৪৯টি সেকেন্ডারি স্কুল ও ১৮২টি হাইস্কুল ছিল। ১৯৮০ সালে তা বেড়ে ৫৩৭৩টি এলিমেন্টারি স্কুল, ১৩৭৭টি সেকেন্ডারি স্কুল ও ৪৫৬টি হাইস্কুলে দাঁড়ায়।[৩২] কিং ফয়সাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা এসময়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।[১৪]

সাবেক বাদশাহ ফয়সাল কঠোর অর্থনৈতিক নীতির কারণে অর্থনৈতিক উপকার হয় এবং দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি ফুলে উঠে। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে ১৯৭৫ সালে চালু করা পাঁচ বছরব্যপী পরিকল্পনা যার মাধ্যমে সৌদি অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলার লক্ষ্যস্থির করা হয়।[১৩] বাদশাহ খালিদ তৃতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা চালু করেন। ১৯৮০ সালের মে মাসে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট পরিকল্পনা করা হয়।[৩৩][৩৪]

তার শাসনামলে রাজনৈতিক ক্ষমতা রাজপরিবারের মধ্যে আরো কেন্দ্রীভূত হয়।[৩৫] ১৯৭৫ সালের মার্চে মন্ত্রীসভার পুনর্বিন্যাসের পর খালিদ যুবরাজ ফাহাদকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও আবদুল্লাহকে দ্বিতীয় ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন।[৩৬] যুবরাজ ও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের ফলে ফাহাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।[৩৭]

১৯৭৫ সালে মিউনিসিপাল ও আঞ্চলিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং রাজপুত্র মাজিদ বিন আবদুল আজিজ এর মন্ত্রী নিয়োগ পান।[৩৮] এছাড়াও প্রিন্স মুতাইব বিন আবদুল আজিজ জনসংশ্লিষ্ট কাজের মন্ত্রী নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[৩৯] এই দুই নিয়োগের ফলে মন্ত্রীসভায় সুদাইরি সেভেন বলে পরিচিতদের প্রভাব হ্রাস পায়।[৩৮] খালিদ প্রিন্স সৌদ বিন ফয়সালকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেন।[৪০] উপরন্তু শিল্প ও বিদ্যুত মন্ত্রণালয় খালিদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৪] তার বড় ভাই প্রিন্স মুহাম্মদ তার অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।[৩৬] সকল রাজনৈতিক ইস্যুতে তারা মূলত একসাথে কাজ করেছেন।[১৯]

১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর প্রায় ৫০০ জন হামলাকারী মসজিদুল হারাম অবরোধ করে।[৪১] এই হামলার খবর রিয়াদে পৌছালে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের জন্য বাদশাহ খালিদ উলামাদের সাথে আলোচনা করেন। প্রথমে উলামা সরাসরি উত্তর দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।[৪১] প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর তারা শক্তিপ্রয়োগের পক্ষে মত দেন।[৪১] এসময় যুবরাজ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ তিউনিসিয়ায় আরব সম্মেলনে অংশ নিচ্ছিলেন এবং ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ডার প্রিন্স আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ সরকারি সফরে মরক্কো ছিলেন। তাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স সুলতান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স নায়েফকে দায়িত্ব দেয়া হয়।[৪২] অবরোধকারীদের কাছ থেকে মসজিদ পুনরুদ্ধারের পর ৬৩ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ১৯৮০ সালের ৯ জানুয়ারি আটটি ভিন্ন শহরে এই দন্ড কার্যকর হয়।[৪৩]

১৯৭৯ সালে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের শিয়া সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদ শুরু করে এবং এতে বেশ কয়েকজন প্রতিরবাদকারী গ্রেপ্তার হন। ১৯৮০ সালে তারা মুক্তি পায়। তাদের মুক্তি দেয়ার পর খালিদ ও যুবরাজ ফাহাদ পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে সফর করেন।[৪৪] ১৯৮০ সালে সৌদি আরব আরামকোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায়।[২৩]

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

খালিদ তার পূর্বসূরি ফয়সালের মত আন্তর্জাতিক বিষয়ে বেশি আগ্রহী না হলেও[২৯] তার শাসনামলে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইরানি বিপ্লব, আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ড ও আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন যার সবগুলোই সৌদি আরবের উপর প্রভাব ফেলে।[৪৫]

১৯৭৫ সালের এপ্রিলে আল বুরাইমি মরূদ্যান নিয়ে চুক্তি খালিদের প্রথম কূটনৈতিক সফলতা। এখানে আবুধাবি, ওমান ও সৌদি আরবের সীমানা একসাথে মিলিত হয়।[২৪] অনেক বছর ধরে তাদের মধ্যে সীমানা বিরোধ চলছিল। খালিদ তাই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্য হাতে নেন।[২৭] এই কাজে সফলতা তার দক্ষতা প্রমাণ করতে সহায়তা করেছে।[১৩]

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে খালিদ দামেস্ক সফর করেন এবং সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি হাফিজ আল আসাদের সাথে সাক্ষাত করেন। গৃহযুদ্ধ কবলিত লেবাননের মুসলিমদের সমর্থনের উপায় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।[২৯] যুদ্ধে সিরিয়ার ভূমিকার প্রতি সৌদি আরব সমর্থন জানায়।[৪৬]

১৯৭৬ সালের এপ্রিলে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য খালিদ উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরে যান।[১৩] তিনি কয়েকটি সম্মেলন আহ্বান করেন এবং ১৯৮১ সালে গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) উদ্বোধন করেন।[১৩][২৩] বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতারসংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে জিসিসি গঠিত হয়।[২৩]

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর খালিদ ইমাম খোমেনিকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান এবং বলেন যে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে পারে।[৪৭] তিনি এও বলেন যে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দুই দেশের সহযোগীতায় প্রভাব ফেলবে না।[৪৮] তবে তার এসব উদ্যোগ সফল হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ইরান-ইরাক যুদ্ধে সৌদিদের সমর্থন ইরাকের দিকে চলে যায়।[৪৭]

১৯৮০ সালের এপ্রিলে ডেথ অব এ প্রিন্সেস নামক প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করায় প্রতিবাদ হিসেবে বাদশাহ খালিদ ব্রিটেন সফর বাতিল করেন। এতে রাজপুত্র মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজের নাতনি রাজকন্যা মিশাল বিন ফাহাদের মৃত্যুদন্ড তুলে ধরা হয়।[৪৯] অনৈতিক সম্পর্কের কারণে মিশালের মৃত্যুদন্ড হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সৌদি আরব সফর করার পর সেবছরের জুনে তিনি বাদশাহ খালিদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।[৪৯]

এই অঞ্চলে কমিউনিস্ট আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য বাদশাহ খালিদ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের সাথে দ্রুতগামী যুদ্ধবিমান ক্রয় নিয়ে আলোচনা করেন।[৫০] ১৯৮২ সালে ষাটটি এফ-১৫ বিমানের চালান সৌদি আরবে এসে পৌছায়। খালিদ তার সফরের জন্য অপারেটিং রুমযুক্ত একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানও কেনেন।[৫০] দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া তিনি শুরু করেন।[৫০]

স্বাস্থ্য

খালিদ হৃদযন্ত্র সমস্যায় ভোগার কারণে দীর্ঘ সময় যুবরাজ ফাহাদ বেশিরভাগ দায়িত্বপালন করেছেন।[৫১] ১৯৭০ সালে খালিদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং ১৯৭২ সালে তার হৃদযন্ত্রে অপারেশন করা হয়।[৫২] ১৯৭৮ সালের ৩ অক্টোবর দ্বিতীয়বার তার হার্ট সার্জারি করা হয়।[৫২][৫৩] ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালিদ হালকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন।[৫৪]

ব্যক্তিগত জীবন

বাদশাহ খালিদ চারবার বিয়ে করেছেন। তার চার ছেলে ও ছয় মেয়ে ছিল।[১] তার কনিষ্ঠ ছেলে ফয়সাল বিন খালিদ আসিরের গভর্নর ছিলেন।

খালিদ দয়ালু, অনুরাগী ও ভাইবোনদের প্রিয় পাত্র ছিলেন। তিনি বাজপাখি দিয়ে শিকার ও অশ্বারোহণ পছন্দ করতেন।[৪][৫৫] এ কারণে বর্ণনার সময় তাকে মরুভূমির মানুষ বলা হয়।[২৬] ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথম টয়োটা ল্যান্ডক্রুসার কেনেন।[৫৬] ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘতম ও উৎকৃষ্ট কেডিলাক গাড়ি কেনেন।[৫৭]

মৃত্যু ও জানাজা

১৯৮২ সালের ১৩ জুন তাইফে বাদশাহ খালিদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[৫১][৫৮] একই দিন তার লাশ মক্কায় আনা হয়। মসজিদুল হারামে জানাজার পর রিয়াদের আল আউদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[৫১][৫৯] কাতার, কুয়েত, জিবুতি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনমিশর থেকে নেতৃবৃন্দ তার জানাজায় অংশ নেয়।[৫১][৬০]

স্মরণ

রিয়াদের বাদশাহ খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বাদশাহ খালিদ চক্ষু বিশেষায়িত হাসপাতাল, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের বাদশাহ খালিদ সামরিক শহর ও বাদশাহ খালিদ মেডিকেল শহর তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।[৫০][৬১] তার পরিবার কিং খালিদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। তার ছেলে আবদুল্লাহ বিন খালিদ এর প্রধান।[৬২]

সম্মাননা

১৯৮১ সালের জানুয়ারি বাদশাহ খালিদ জাতিসংঘ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। বৈশ্বিক শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করা মুখপাত্রদের এই সর্বোচ্চ পদক দেয়া হয়।[৬৩] এছাড়াও ইসলামি ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য ১৯৮১ সালে খালিদ বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।[৬৪]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

খালিদ বিন আবদুল আজিজ
জন্ম: ১৯১৩ মৃত্যু: ১৯৮২
শাসনতান্ত্রিক খেতাব
পূর্বসূরী
ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ
সৌদি আরবের বাদশাহ
১৯৭৫-১৯৮২
উত্তরসূরী
ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ
Saudi Arabian royalty
পূর্বসূরী
মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ
সৌদি আরবের যুবরাজ
১৯৬৫–১৯৭৫
উত্তরসূরী
ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ
সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী
১৯৭৫–১৯৮২
উত্তরসূরী
ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ