গোপীনাথ বরদলৈ
সরঞ্জাম
সাধারণ
মুদ্রণ/রপ্তানি
অন্যান্য প্রকল্পে
গোপীনাথ বরদলৈ | |
---|---|
মুখ্যমন্ত্রী | |
নেতা | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | (১৮৯০-০৬-০৬)৬ জুন ১৮৯০ রহা, নগাঁও, অসম |
মৃত্যু | ৫ আগস্ট ১৯৫০(1950-08-05) (বয়স ৬০) গুয়াহাটি, অসম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুরবালা বরদলৈ |
পেশা | মুখ্যমন্ত্রী, রাজনীতিজ্ঞ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজসেবক, লেখক |
ধর্ম | হিন্দু |
পুরস্কার | ভারতরত্ন (১৯৯৯) |
গোপীনাথ বরদলৈ (ইংরেজি: Gopinath Bordoloi; অসমীয়া: গোপীনাথ বৰদলৈ) অসমের প্রথম মূখ্যমন্ত্রী ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা নীতির সমর্থক ছিলেন। অসম ও অসমীয়া জাতির জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করায় অসমের তৎকালীন রাজ্যপাল জয়রাম দাস দৌলতরাম গোপীনাথকে “লোকপ্রিয়” উপাধি দিয়েছিলেন।[১]।
১৮৯০ সনের ৬ জুন তারিখে নগাও শহরের রহা অঞ্চলে গোপীনাথ বরদলৈ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম বুদ্ধেশ্বর বরদলৈ ও মাতার নাম প্রাণেশ্বরী বরদলৈ। গোপীনাথের পিতা চাকরিজীবী ছিলেন। কর্মসূত্রে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন হতে হত। শিশু গোপীনাথের ৭ বৎসর বয়সে তার পিতা কর্মসূত্রে রহা থেকে মঙলদৈতে স্থানান্তর হয়েছিলেন। মঙলদৈ যাওয়ার পথে শিশু গোপীনাথ মহাভারত কাব্যগ্রন্থ পড়ে সমাপ্ত করেছিলেন। ১২ বৎসর বয়সে গোপীনাথ বরদলৈ মাতৃহারা হন। মায়ের মৃত্যুর পর বিধবা দিদি শশীকলা দেবী গোপীনাথের লালন পালন করেছিলেন। গুয়াহাটি শহরের কটন কলেজিয়েট উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে গোপীনাথের নাম ভর্ত্তী করা হয়েছিল। বেমার ও জ্বরের জন্য তিনি বেশীরভাগ দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকিতে পারতেন না তবুও তিনি পড়াশুনার ক্ষেত্রে ভাল স্থান লাভ করতেন।[২]
গোপীনাথ কলকাতায় মহাবিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়াশুনা করার সময়ে পিতার মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুর পর অভাবের তারণায় তিনি অধ্যয়ন অসমাপ্ত অবস্থায় অসম চলে আসেন। তরুনরাম ফুকনের সাহায্যে তিনি সোনারাম উচ্চতর বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অস্থায়ী পদে নিযুক্তি হয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি আইনের অধ্যয়ন করেন ও আইন পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। তারপর তিনি উকিল সত্যনাথ বরার অধীনে আর্টিকেল ক্লার্ক রুপে উকালতিতে যোগদান দিয়েছিলেন। ১৯১৭ সনে তিনি গুয়াহাটিতে উকালতি আরম্ভ করেছিলেন।[২]
গোপীনাথ বরদলৈ ১৯২২ সনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অসম শাখায় যোগদান করে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশীদার ছিলেন। ১৯২২ সনের অসহযোগ আন্দোলনে গোপীনাথকে গ্রেপ্তার করা হয় ও ১ বৎসরের জন্য কারাবাস দেওয়া হয়। ১৯৩০ সন থেকে ১৯৩৩ সন পর্যন্ত তিনি রাজনীতির কার্য বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি গুয়াহাটি পৌরসভার সদস্য ছিলেন। তিনি অসমে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ ন্যায়ালয় স্থাপনের দাবি করেছিলেন।[২]
গোপীনাথ মূখ্যমন্ত্রীর পদে নিযুক্তির পর তিনি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিরলস ভাবে কাজ করার আদেশ করেছিলেন। তিনি অন্যান্য মন্ত্রীদেরকে প্রাপ্য বেতনের কিছু অংশ কমিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। মন্ত্রীদের থেকে আহরণ করা অতিরিক্ত ধন তিনি বন্যাপীড়িত লোককে দান করিতেন। সেইসময়ে তিনি মাটির কড় কমিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি অসমের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতির প্রতি সচেতন ছিলেন। অসমের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য তিনি মহাত্মা গান্ধীর প্রবর্তিত নয়ী তালীমী শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন। তিনি অনুন্নত অঞ্চলে ৪১৯টী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ভারতীয় স্বাধীনতার পরে তিনি সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের সাহায্যে অসমে সার্বভৌম স্থাপন করিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভারত বিভাজনের পর সংঘর্ষে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সহস্র হিন্দু লোককে পুনস্থাপনের জন্য সাহায্য করেছিলেন। পোপীনাথ বরদলৈয়ের আপ্রান চেষ্টার ফলে অসমে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়, গুয়াহাটি উচ্চ ন্যায়ালয়, অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, অসম পশু চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, অসম আয়ুর্বেদিক কলেজ, বন প্রশিক্ষন মহাবিদ্যালয়, অসম অভিযান্ত্রিক মহাবিদ্যালয়, কামরুপ একাডেমী, বি.বরুয়া কলেজ, শরনিয়া কস্তুরীবা আশ্রম, বকোর মৌমেন আশ্রম, অসম কৃষি মহাবিদ্যালয়, আরক্ষী প্রশিক্ষন মহাবিদ্যালয়. কো-অপারেটিভ প্রশিক্ষন, অসম রাজ্যিক সংগ্রাহালয় ও যোরহাট কারিগরী বিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপিত হয়েছিল।
গোপীনাথ বরদলৈ েকজন সুলেখক ছিলেন।[৩] তার রচিত প্রবন্ধগুলি হল-
১৯৫০ সনের ১৫ আগস্ট গোপীনাথ প্রচন্ড বুক ব্যাথার অনু্ভতি করলেন। চিকিৎসকেরা এই রোগের উপশম করতে পারেন নাই ফলে উক্ত রাত্র ২:৪০ মিনিটে তিনি দেহত্যাগ করেন। শ্মশান যাত্রার দিন অর্ধউত্তোলিত ভারতীয় পতাকা ও ফুলের মালা দ্বারা সুসজ্জিত গাড়িতে গোপীনাথ বরদলৈয়ের মৃতদেহ বহন করা হয়। উলুধ্বনি ও হরিনাম করে শোকযাত্রা করা হয়েছিল। সহস্র জনসাধারন, অসম পুলিশ ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী এই শোকযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে গোপীনাথকে শেষবারের মত বিদায় জানায়। সম্পূর্ণ শহর প্রদক্ষিণ করার পর মৃতদেহ কংগ্রেশ কার্য্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। অবশেষে নবগ্রহ শ্মশানে নানান রাজকীয় সম্মান প্রদর্শন করার পর মৃতদেহের অন্তিম কার্য সমাপ্ত করা হয়েছিল।
১৯৯৯ সনে গোপীনাথ বরদলৈকে ভারত সরকার ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পুরস্কার “ ভারত রত্ন” দ্বারা সম্মানীত করেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে এই পুরস্কার লাভ করা তিনি প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি। তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ণন রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত একটি সভায় গোপীনাথ বরদলৈয়ের পত্নী সুরবালা বরদলৈয়ের হস্তে এই সম্মান প্রদান করেন।