প্রণব মুখোপাধ্যায়

ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি

প্রণব কুমার মুখোপাধ্যায় (বাংলা উচ্চারণ: [prɔnɔb kumaːr mukʰardʒi̯] (); ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ — ৩১ আগস্ট ২০২০[১][২]) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন নেতা, যিনি ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি (জুলাই, ২০১২-এ কার্যভার গ্রহণকারী) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা-সমাধানকারী নেতা। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন ছয় দশকব্যাপী।

প্রণব মুখোপাধ্যায়
Secretary Tim Geithner and Finance Minister Pranab Mukherjee 2010 crop.jpg
ভারতের রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
২৫ জুলাই, ২০১২ – ২৪ জুলাই, ২০১৭
প্রধানমন্ত্রীমনমোহন সিংহ
নরেন্দ্র মোদী
উপরাষ্ট্রপতিমহম্মদ হামিদ আনসারি
পূর্বসূরীপ্রতিভা পাটিল
উত্তরসূরীরামনাথ কোবিন্দ
ভারতের অর্থমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৪ জানুয়ারি, ২০০৯ – ২৬ জুন, ২০১২
প্রধানমন্ত্রীমনমোহন সিংহ
পূর্বসূরীমনমোহন সিংহ
উত্তরসূরীমনমোহন সিংহ
কাজের মেয়াদ
১৫ জানুয়ারি, ১৯৮২ – ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৪
প্রধানমন্ত্রীইন্দিরা গান্ধী
রাজীব গান্ধী
পূর্বসূরীআর. ভেঙ্কটরমন
উত্তরসূরীবিশ্বনাথ প্রতাপ সিং
ভারতের বিদেশমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ – ১৬ মে, ১৯৯৬
প্রধানমন্ত্রীপি. ভি. নরসিমা রাও
পূর্বসূরীদীনেশ সিংহ
উত্তরসূরীঅটলবিহারী বাজপেয়ী
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২২ মে, ২০০৪ – ২৬ অক্টোবর, ২০০৬
প্রধানমন্ত্রীমনমোহন সিংহ
পূর্বসূরীজর্জ ফার্নান্ডেজ
উত্তরসূরীএ. কে. অ্যান্টনি
ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান
কাজের মেয়াদ
২৪ জুন, ১৯৯১ – ১৫ মে, ১৯৯৬
প্রধানমন্ত্রীপি. ভি. নরসিমা রাও
পূর্বসূরীমোহন ধারিয়া
উত্তরসূরীমধু দণ্ডবতে
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মপ্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়
(1935-12-11) ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ (বয়স ৮৮)
মিরাটি গ্রাম, বীরভূম জেলা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যু৩১ আগস্ট, ২০২০
ভারতীয় সেনা হাসপাতাল, নতুন দিল্লি
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৯৮৬-এর আগে; ১৯৮৯–২০২০)
রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস (১৯৮৬–১৯৮৯)
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
ইউনাইটেড ফ্রন্ট (১৯৯৬–২০০৪)
ইউপিএ (২০০৪–বর্তমান)
দাম্পত্য সঙ্গীশুভ্রা মুখোপাধ্যায়(১৯৫৭–২০১৫)
সন্তানশর্মিষ্ঠা মুখার্জি
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ধর্মহিন্দু
পুরস্কারভারতরত্ন (২০১৯)
পদ্মবিভূষণ (২০০৮)
ওয়েবসাইটসরকারি ওয়েবসাইট
প্রণব মুখোপাধ্যায়
এর রাষ্ট্রপতি রীতি
উদ্ধৃতিকরণের রীতিমহামহিম প্রণব মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি
কথ্যরীতিরাষ্ট্রপতি মুখার্জি
বিকল্প রীতিরাষ্ট্রপতি মহাশয়

১৯৬৯ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাহায্যে প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন। এরপর রাজনৈতিক কর্মজীবনে তাঁর দ্রুত উত্থান শুরু হয়। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর একজন বিশ্বস্ত সহকর্মীতে পরিণত হন এবং ১৯৭৩ সালে ইন্দিরা গান্ধীর ক্যাবিনেট মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ১৯৮২-৮৪ পর্বে তিনি ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার দলনেতাও ছিলেন।

প্রণব মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিদেশ, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, রাজস্ব ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পালনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। দলের প্রতি আনুগত্য ও অসামান্য প্রজ্ঞা এই বাঙালি রাজনীতিবিদকে কংগ্রেস দলে ও এমনকি দলের বাইরেও বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র করেছে। দেশের প্রতি অবদানের জন্য তাকে ভারতের সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নপদ্মবিভূষণ এবং শ্রেষ্ঠ সাংসদ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে, যুক্তরাজ্যের ইউরোমানি পত্রিকার একটি সমীক্ষায় তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হন।

প্রারম্ভিক জীবন

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কীর্ণাহার শহরের নিকটস্থ মিরাটি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও মাতার নাম রাজলক্ষ্মী দেবী। বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী কামদাকিঙ্কর ১৯২০ সাল থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনকালে তিনি দশ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন। পরে কামদাকিঙ্কর অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য (১৯৫২-৬৪) হন; তিনি বীরভূম জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতির পদও অলংকৃত করেন।[৩] প্রণব মুখোপাধ্যায় সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র ছিলেন; এই কলেজটি সেই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।

কর্মজীবন

প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন কলেজশিক্ষক রূপে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি সাংবাদিকের কাজও করেন কিছুকাল। এই সময় তিনি দেশের ডাক নামে একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ট্রাস্টি ও পরে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিও হন।[৪]মাননীয় প্রণব মুখোপাধ্যায় কর্মজীবনে প্রথম দিকে হাওড়া জেলার বাঁকড়ায় অবস্থিত "বাঁকড়া ইসলামিয়া হাইস্কুল"র ২ বছর শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আমতলার নিকটস্থ বিদ্যানগর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন।[৫]

রাজনৈতিক কর্মজীবন

প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রায় পাঁচ দশক ভারতীয় সংসদের সদস্য। ১৯৬৯ সালে তিনি প্রথম বার কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিস্বরূপ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালেও তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম ক্যাবিনেটে যোগদান করেন।

ক্যাবিনেটে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতির পর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে ইউরোমানি পত্রিকার একটি সমীক্ষায় তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম শিরোপা দেওয়া হয়।[৬][৭][৮] তাঁর মন্ত্রীত্বকালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ভারতের আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের ঋণের শেষ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ না তোলা। তার এই মন্ত্রীত্বকালে ড. মনমোহন সিংহ ছিলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর। ইন্দিরা হত্যার অব্যবহিত পরে একটি দলীয় গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের শিকার হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই সময় রাজীব গান্ধী তাঁকে নিজের ক্যাবিনেটে স্থান দেননি। কিছুকালের জন্য তাঁকে কংগ্রেস থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই সময় তিনি রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে নিজস্ব একটি দলও গঠন করেছিলেন। তবে ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মিটমাট করে নেওয়ার পর এই দল নিয়ে তিনি আবার কংগ্রেসে যোগ দেন।[৯] পরবর্তীকালে পি. ভি. নরসিমা রাও তাকে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করলে তার রাজনৈতিক কর্মজীবনের পুনরুজ্জীবন ঘটে। রাওয়ের মন্ত্রিসভায় পরে তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীরূপেও যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি রাওয়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সাংসদ পুরস্কারে ভূষিত হন।

প্রণব মুখোপাধ্যায় জাতীয় কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ শাখারও সভাপতি। ২০০৪ সালে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ রাজ্যসভার সদস্য হওয়ায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতার দায়িত্ব পান। উল্লেখ্য, এই বছরই তিনি প্রথমবার জঙ্গীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন।

প্রণব মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন সময়ে প্রতিরক্ষা, অর্থ, বিদেশ, রাজস্ব, জাহাজ-চলাচল, পরিবহন, যোগাযোগ এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের মতো একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। তিনি সারা দেশের কংগ্রেস সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে গঠিত যথাক্রমে কংগ্রেস সংসদীয় দল ও কংগ্রেস বিধানসভা দলেরও প্রধান। পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাইপাস সার্জারির সময় তদনীন্তন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় রাজনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্যাবিনেট পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন।

আন্তর্জাতিক ভূমিকা

ভারতের তদনীন্তন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে, ২০০৮ সালে

২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর প্রণব মুখোপাধ্যায় ও ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট কন্ডোলিজা রাইস সেকশন ১২৩ চুক্তি সই করেন। তিনি আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকের বোর্ড অফ গভর্নরসের সদস্য।

১৯৮৪ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রুপ অফ টোয়েন্টিফোরের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৯৫ সালের মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি সার্ক মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলনেও সভাপতিত্ব করেছিলেন।[১০]

বিদেশমন্ত্রী: অক্টোবর ২০০৬

২০০৬ সালের ২৪ অক্টোবর প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বে তার পরিবর্তে আসেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. অ্যান্টনি।

এই সময় ভারতের রাষ্ট্রপতির পদে তার নাম সাময়িকভাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু পদটি নিছক আনুষ্ঠানিক হওয়ায়, কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে তার অবদান ও কার্যকরিতার কথা মাথায় রেখে তার নাম বিবেচনা থেকে প্রত্যাহৃত হয়। বিদেশ মন্ত্রকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্বগুলি হল প্রথমে মার্কিন সরকারের সঙ্গে ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসামরিক পরমাণু চুক্তি সই ও পরে নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফিকেশন ট্রিটি সই না করেই নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ারস গ্রুপের থেকে অসামরিক পরমাণু বাণিজ্যের অনুমতি আদায়। ২০০৭ সালে তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ দ্বারা সম্মানিত করা হয়।

দলগত ভূমিকা

নিজের দলে প্রণব মুখোপাধ্যায় এক ব্যতিক্রমী সম্মানের অধিকারী।[১১] অন্যান্য গণমাধ্যমে তার এই সম্মানকে "a reputation as a number-crunching politician with a phenomenal memory and an unerring survival instinct" বলে উল্লেখ করা হয়।[১২]

সনিয়া গান্ধী অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজনীতিতে যোগদান করতে সম্মত হলে প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রধান সহায়কের ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন সমস্যা সনিয়ার শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধী কীভাবে সমাধান করতেন, তার উল্লেখ করে তিনি সনিয়াকে সাহায্য করতেন।[১৩] প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নাতীত আনুগত্য ও প্রজ্ঞা তাঁকে সনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিংহের ঘনিষ্ঠ করে তোলে। ২০০৪ সালে দল ক্ষমতায় এলে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সম্মানজনক দায়িত্বটি পান।

২০০৫ সালে পেটেন্ট অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাসের ক্ষেত্রে তিনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। যদিও এই বিলটি সরাসরি তাঁর মন্ত্রক বা তাঁর দায়িত্ব তালিকাভুক্ত ছিল না।[১৪]

দুর্নীতি প্রসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি

প্রণব মুখোপাধ্যায় রাজনৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী হলেও একজন বাস্তববাদী। রিডিফকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তাঁকে তাঁর সরকারের দুর্নীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:

[১৫]

অর্থমন্ত্রী

মনমোহন সিংহের দ্বিতীয় সরকারে প্রণব মুখোপাধ্যায় পুনরায় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পান। উল্লেখ্য, ১৯৮০-এর দশকে তিনি এই মন্ত্রকেরই দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ জুলাই তিনি সরকারের বার্ষিক বাজেট পেশ করেন। এই বাজেটে তিনি কয়েকটি কর সংস্কারের প্রস্তাব রাখেন। যেমন, 'অস্বস্তিকর' ফ্রিঞ্জ বেনেফিট ট্যাক্স ও কমোডিটিজ ট্র্যানজাকশান ট্যাক্সের অবলোপন ইত্যাদি। এছাড়া তিনি ঘোষণা করেন যে অর্থমন্ত্রক শীঘ্রই গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স নামে একটি কর চালু করবে। এই করের কাঠামোটির প্রশংসা করেন বিভিন্ন কর্পোরেট কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদগণ। এছাড়াও তিনি কয়েকটি সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পে অর্থবরাদ্দ করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুনিশ্চিতকরণ আইন, শিশুকন্যাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ইত্যাদি। এছাড়াও অর্থবরাদ্দ করেন জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্মসূচি, বিদ্যুদয়ন প্রকল্প, এবং জওহরলাল নেহেরু জাতীয় নগরোন্নয়ন মিশনের মতো পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতেও। যদিও কেউ কেউ তাঁর অর্থমন্ত্রিত্বে রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০১২

এনডিএ প্রার্থী লোকসভার সাবেক স্পিকার মেঘালয়ের ভূমিপুত্র পিএন সাংমাকে ৭১ শতাংশের বেশি ভোটে হারিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ প্রাথী প্রণব মুখার্জি নির্বাচিত হন। ২৫ জুলাই ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। প্রণব পেয়েছেন পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৯টি ভোট, অন্যদিকে সাংমা পান দুই লাখ ৩২ হাজার ৫৫৮টি ভোট।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই প্রণব মুখোপাধ্যায় পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। শুভ্রা মুখার্জি ব্রিটিশ ভারতে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সেই কলকাতায় চলে আসেন৷[১৬][১৭] তাঁদের দুই পুত্র ও এক কন্যা বর্তমান। তাঁর অবসরকালীন শখ বই পড়া, বাগান করা ও গান শোনা।[১৮]

সম্মাননা

প্রণব মুখোপাধ্যায় একাধিক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৪ সালে ইউরোমানি পত্রিকার সমীক্ষায় তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী বলা হয়েছিল।[১৯] ২০১০ সালে বিশ্ব ব্যাংকআন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের দৈনিক সংবাদপত্র এমার্জিং মার্কেটস তাকে '"ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার ফর এশিয়া" পুরস্কার দিয়েছিল।[২০] ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে, দ্য ব্যাঙ্কার পত্রিকা তাকে "ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়াস" সম্মান দিয়েছিল।[২১] ভারত সরকার ২০০৮ সালে তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ প্রদান করেছিল।[২২] ২০১১ সালে উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টর অফ লেটারস ডিগ্রি দেয়।[২৩] ২০১২ সালের মার্চ মাসে অসম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বেশ্বরায়া প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি. লিট ডিগ্রি দেয়।[২৪][২৫] ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট অফ ল ডিগ্রি দেয়।[২৬] এবং ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টর অব লেটার্স ডিগ্রি দেয় ।২০১৩ সালের ৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার "বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা" পান।[২৭] ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ মরিশাস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টর অফ ল সম্মান দেয়।[২৮] তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত হন।

জীবনাবসান

৯ অগস্ট ২০২০ রাতে নিজের দিল্লির বাড়িতে শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। পর দিন সকাল থেকে তাঁর স্নায়ুঘটিত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। বাঁ হাত নাড়াচাড়া করতে সমস্যা হচ্ছিল।[২৯] ১০ ই আগস্ট দিল্লীর সেনা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়। হাসপাতালে তাঁর করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এরপর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এর কারণে ওনার ইমার্জেন্সী ব্রেন সার্জারি করা হয়। হাসপাতাল থেকে ওনাকে নিয়ে রোজই হেলথ বুলেটিন জারি করা হয়। আরেকদিকে, ওনার মৃত্যু নিয়ে প্রায়ই গুজব রটে। যদিও সমস্ত গুজবের জবাব দিয়েছিলেন প্রণব পুত্র এবং কন্যা। অবশেষে ৩১ আগস্ট ২০২০ তিনি জীবন যুদ্ধে হেরে যান। প্রণব পুত্র অভিজিৎ ওনার প্রয়াত হবার খবর টুইট করে দেশবাসীকে জানান।[৩০]

রচিত গ্রন্থাবলি

  • মিডটার্ম পোল
  • বিয়ন্ড সারভাইভ্যাল
  • এমার্জিং ডাইমেনশনস অফ ইন্ডিয়ান ইকোনমি
  • অফ দ্য ট্র্যাক, সাগা অফ স্ট্রাগল অ্যান্ড স্যাক্রিফাইস
  • চ্যালেঞ্জ বিফোর নেশন.[৩১]

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

বিধানসভার আসন
পূর্বসূরী
অজ্ঞাত
রাজ্যসভা সদস্য (পশ্চিমবঙ্গ)
১৯৬৯ – ২০০৪
উত্তরসূরী
অজ্ঞাত
বিধানসভার আসন
পূর্বসূরী
অজ্ঞাত
লোকসভা সদস্য (জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র)
২০০৪ – বর্তমান
নির্ধারিত হয়নি
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
আর. ভেঙ্কটরামন
ভারতের অর্থমন্ত্রী
১৯৮২ – ১৯৮৪
উত্তরসূরী
বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ
পূর্বসূরী
মোহন ধারিয়া
ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান
১৯৯১ – ১৯৯৬
উত্তরসূরী
মধু দণ্ডবতে
পূর্বসূরী
দীনেশ সিংহ
ভারতের বিদেশমন্ত্রী
১৯৯৫ – ১৯৯৬
উত্তরসূরী
সিকন্দর বখত
পূর্বসূরী
জর্জ ফার্নান্ডেজ
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
২০০৪ – ২০০৬
উত্তরসূরী
এ. কে. অ্যান্টনি
পূর্বসূরী
মনমোহন সিংহ
ভারতের বিদেশমন্ত্রী
২০০৬ – ২০০৯
উত্তরসূরী
এস. এম. কৃষ্ণ
ভারতের অর্থমন্ত্রী
২০০৯ – বর্তমান
নির্ধারিত হয়নি
পূর্বসূরী
প্রতিভা পাতিল
ভারতের রাষ্ট্রপতি
২০১২–২০১৭
উত্তরসূরী
রাম নাথ কোবিন্দ
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ