দুর্নীতি

অপ্রীতিকর বা প্রতারণামূলক আচরণে ক্ষমতার ব্যবহার

দুর্নীতি (ইংরেজি: Corruption) (বাংলা উচ্চারণ: [দুর্নীতি] ()) দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিকে নির্দেশ করে। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান , সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত।

২০০০ সালে ইথিওপিয়ায় দুর্নীতি-বিরোধী কর্মসূচি
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সম্মেলন

দুর্নীতি শব্দটি যখন বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সাংস্কৃতিক অর্থে “সমূলে বিনষ্ট হওয়াকে” নির্দেশ করে [১] দুর্নীতি শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন এরিস্টটল এরপর সিসারো দূর্নীতি শব্দটি ব্যবহার করেন, যিনি ঘুষ এবং সৎ অভ্যাস ত্যাগ প্রত্যয়ের যোগ করেছিলেন।[২] রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক মরিস লিখেছেন,[৩] দুর্নীতি হল ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার। অর্থনীতিবিদ আই. সিনিয়র [৪] একে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, দুর্নীতি এমন একটি কার্য; যেখানে অনৈতিক অর্থ প্রদানের কারণে, তৃতীয় কোনো পক্ষ সুবিধা পায়, যার ফলে তারা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার নিশ্চিত করে, এতে করে দুর্নীতির সাথে যুক্ত পক্ষটি এবং তৃতীয় পক্ষ উভয়ই লাভবান হয় এবং এই কার্যে দুর্নীতিগ্রস্ত পক্ষটি থাকে কর্তৃপক্ষ।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাফম্যান,[৫] দুর্নীতির ধারণাটিকে আরো বিস্তৃত করেন “আইনানুগ দুর্নীতি” শব্দদ্বয় যোগ করার মাধ্যমে যেখানে আইনকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করা হয়, যাতে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের ক্ষমতা আইন প্রণেতার নিকট রক্ষিত থাকে। ট্রান্সপারেন্সির এক জরিপে দেখা যায় যে, দুর্নীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এই হিসাবটি করা হয় ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে। যে দেশ যত দুর্নীতি মুক্ত সে দেশের পয়েন্ট তত বেশি। হিসাবে দেখা যায় যে, সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সোমালিয়া। এ দেশের পয়েন্ট ১০০ তে মাত্র ১০। এরপর কয়েকটি দেশের পরে আছে সিরিয়া। এর পয়েন্ট মাত্র ১৩। এরপর ১৪পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান করছে লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। এরপর ইরাকের আছে ১৭, লেবাননের আছে ২৮।

প্রথম আলোর মতে, আরব বিশ্বের নয়টি দেশ ও ভূখণ্ডে (ফিলিস্তিন) গত বছর দুর্নীতির পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে গভীর সংকটে পড়া লেবানন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের অবস্থা বেশি খারাপ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, প্রায় ১১ হাজার অংশগ্রহণকারীর মতামতের ভিত্তিতে পাওয়া জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া অন্য দেশ ও ভূখণ্ড হলো আলজেরিয়া, মিসর, জর্ডান, মরক্কো, ফিলিস্তিন, সুদানতিউনিসিয়া। অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ এসব দেশে গত বছর দুর্নীতি বেড়ে গেছে বলে তাদের ধারণা ব্যক্ত করেন। টিআই বলছে, ‘আরব বসন্ত শুরুর পর প্রায় অর্ধদশক পেরিয়ে গেলেও বিশ্বব্যাপী আমাদের দুর্নীতির পরিমাপে দেখা গেছে, সরকারি খাতের দুর্নীতি কমাতে বিভিন্ন সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে এখনো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।’ দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, আরব দেশগুলোর অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন, সম্প্রতি এসব দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। আবার অনেকে মনে করেন, সরকারি কর্মকর্তা ও পার্লামেন্ট সদস্যরা ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে লেবাননের ৯২ শতাংশ, ইয়েমেনের ৮৪ শতাংশ, জর্ডানের ৭৫ শতাংশ মনে করেন দেশগুলোতে দুর্নীতি বেড়েছে। বিপরীতে মিসরের ২৮ শতাংশ ও আলজেরিয়ার ২৬ শতাংশ মনে করেন তাঁদের দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। জরিপে যাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ইয়েমেনি ও প্রায় অর্ধেক মিসরীয় বলেন, সরকারি সেবা পেতে তাঁদের ঘুষ দিতে হয়েছে। একই কথা বলেন তিউনিসিয়ার ৯ শতাংশ ও জর্ডানের ৪ শতাংশ সাক্ষাৎকার প্রদানকারী।

জরিপ প্রতিবেদনের রচয়িতা কোরালাই প্রিং বলেন, তাঁরা লেবাননের দুর্নীতি পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন। গভীর রাজনৈতিক বিভক্তির মধ্যে দেশটি ২০১৪ সালের মে থেকে কোনো প্রেসিডেন্ট ছাড়াই চলছে। কোরালাই আরও বলেন, বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জনগণ যে শুধু দুর্নীতি রোধে সরকারি প্রচেষ্টাতেই তাঁদের প্রচণ্ড অসন্তোষ জানিয়েছেন তা-ই নয়, বরং সরকারি খাতজুড়ে দুর্নীতির উচ্চহারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

দুর্নীতির মানদন্ড

দুর্নীতি বিভিন্ন মানদন্ডে ঘটতে পারে, আওতা বা বিস্তৃতি ছোট হলে এবং তাতে যদি অল্পসংখ্যক মানুষ জড়িত থাকে তবে তাকে “ক্ষুদ্রার্থে” (petty corruption) আর যদি সরকার বড় আকারে প্রভাবিত হয়ে পড়ে তবে “ব্যাপকার্থে” (grand corruption) দুর্নীতি হিসেবে নির্দেশিত হয়।

ক্ষুদ্র দুর্নীতি

ক্ষুদ্র দুর্নীতি, ছোট মাত্রায় এবং প্রতিষ্ঠিত সামাজিক অবকাঠামো ও প্রশাসনিক নিয়মের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। অনুগ্রহ বা অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই প্রকারের দুর্নীতিতে ক্ষুদ্র উপহার বা ব্যক্তিগত সংযোগকে ব্যবহার করা হয়। মূলত উন্নয়নশীল বিশ্বে এই প্রকারের দুর্নীতি বেশি, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের তুলনামূলক নিম্নপর্যায়ের বেতন-ভাতা প্রদান যার একটি বিশেষ কারণ।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ