ইয়েমেন

মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ

ইয়েমেন (/ˈjɛmən/ (); আরবি: ٱلْيَمَن, প্রতিবর্ণীকৃত: আল-ইয়ামান; আরবি: ٱلْجُمْهُورِيَّةُ ٱلْيَمَنِيَّةُ, প্রতিবর্ণীকৃত: আল-জুমহূরিয়্যাহ আল-ইয়ামানিয়্যাহ) মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। এটি আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। সুউচ্চ পর্বতমালা ইয়েমেনের উপকূলীয় সমভূমিকে অভ্যন্তরের জনবিরল মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে। ইয়েমেনের জনসংখ্যা অল্প। দেশের অর্ধেকের বেশি অংশ বসবাসের অযোগ্য। এখানকার আরবেরা বেশির ভাগই গ্রামীণ। প্রাচীনকালে এখানে অনেকগুলি সমৃদ্ধ সভ্যতার অবস্থান ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এলাকাটির গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং এক হাজার বছরেরও বেশি সময় এটি একটি দরিদ্র ও অবহেলিত দেশ হিসেবে বিরাজ করছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে এখানে খনিজ তেল আবিষ্কার হলে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ইয়েমেনীয় প্রজাতন্ত্র

الجمهورِيّة اليَمَنيّة
আল-জুমহূরিয়্যাহ আল-ইয়ামানিয়্যাহ
Yemen জাতীয় পতাকা
পতাকা
Yemen জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: ٱللَّهُ، ٱلْوَطَنُ، ٱلثَوْرَةُ، ٱلْوَحْدَةُ (আরবি)
আল্লাহ, আল-ওয়াতান, আস-সাওরাহ, আল-ওয়াহদাহ
"আল্লাহ , স্বদেশ, বিপ্লব, একতা "
জাতীয় সঙ্গীত: 
نشيد اليمن الوطني (আরবি)
"একতাবদ্ধ প্রজাতন্ত্র"
Yemen অবস্থান
Yemen অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
সানা
সরকারি ভাষাআরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণইয়েমেনি
সরকারপ্রজাতন্ত্র
• রাষ্ট্রপতি
আব্দরাব্বুহ মানসুর হাদি
• প্রধানমন্ত্রী
আলী মোহাম্মাদ মুজুর
প্রতিষ্ঠিত
২২ মে ১৯৯০
আয়তন
• মোট
৫,২৭,৯৬৮ কিমি (২,০৩,৮৫০ মা) (৪৯ তম)
• পানি (%)
negligible
জনসংখ্যা
• 2011 আনুমানিক
23,833,000[১] (48th)
• 2004 আদমশুমারি
19,685,161
• ঘনত্ব
৪২/কিমি (১০৮.৮/বর্গমাইল) (160th)
জিডিপি (পিপিপি)2005 আনুমানিক
• মোট
$19.480 billion (110th)
• মাথাপিছু
$900 (175th)
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৪)বৃদ্ধি 0.492
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ১৫০ তম
মুদ্রাইয়েমেনি রিয়াল $1 = 198.13 Rials (YER)
সময় অঞ্চলইউটিসি+3
কলিং কোড967
ইন্টারনেট টিএলডি.ye

১৯৯০ সালে ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র (উত্তর ইয়েমেন) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী ইয়েমেন (দক্ষিণ ইয়েমেন) দেশ দুইটিকে একত্রিত করে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র গঠন করা হয়। সানা’আ ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।ইয়েমেনের পশ্চিমে লোহিত সাগর এবং দক্ষিণে এডেন উপসাগর। এটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বাব এল মান্দেব প্রণালীর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান অবস্থিত। সৌদি আরব ও ওমানই ইয়েমেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ইয়েমেনের আয়তন ৫,২৭,৯৭০ বর্গকিমি। তবে আরব বসন্তের পর দেশটি গরিব হয়। ২০১৭ সালে ইতিহাসের ৮ দশকের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ হয়।

ইতিহাস

প্রাচীন ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ অব্দের দিকে উত্তর ইয়েমেনে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে। খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ অব্দের দিকে এ অঞ্চল ব্যবসায়ীদের জন্য অতি উত্তম রুট হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। খ্রিস্টের সময়ে এ অঞ্চলের স্বাভাবিক গতি মন্থর হয়ে পড়ে। এ সময়ে আবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া) এ অঞ্চল দখল করে। পরবর্তী প্রায় ১৩০০ বছর এ অঞ্চলের বিভিন্ন উপজাতি ও ধর্মীয় গোত্র মিশরীয় ও টার্কসদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ৮৯৭ সালের গোড়ার দিকে একজন ইমামের নেতৃত্বে এদেশ শাসিত হতে থাকে।

আধুনিক ইতিহাস

১৫১৭ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত উত্তর ইয়েমেন অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল। ১৯২৪ সালে এদেশ লাওসান চুক্তির মাধ্যমে অটোম্যান টার্ক সাম্রাজ্য থেকে মুক্ত হয়।প্রাচীনকাল থেকেই লোহিত সাগর ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার মধ্যে সমুদ্রপথের একমাত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফলে আরব সাগর তীরবর্তী দণি ইয়েমেন বাণিজ্যিক দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকায় এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। আরবে মুসলিম জাগরণের পরপরই এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রসার লাভ করে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুসলমান উপজাতীয় প্রধানরা এ অঞ্চল শাসন করে আসছিল। এরই মধ্যে সমুদ্রপথে একটি ব্রিটিশ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ চুর হয়ে যাওয়ার অজুহাতে ১৮৩৯ সালে বৃটেন এডেন দখল করে। ১৯৩৭ সালে এ অঞ্চল ব্রিটিশ রাজশাসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এডেন ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে শাসিত হয়ে আসছিল। ১৯৬৭ সালের ৩০ নভেম্বর দক্ষিণ ইয়েমেন স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৯০ সালের মে মাসের পূর্ব পর্যন্ত এদেশ দুটি আলাদা রাষ্ট্র উত্তর ইয়েমেন এবং দক্ষিণ ইয়েমেন নামে বিভক্ত ছিল। উভয় দেশ একত্রিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উত্তর ইয়েমেন গণপ্রজাতন্ত্রী এবং দক্ষিণ ইয়েমেন কমিউনিস্ট শাসনাধীনে ছিল।

ভূগোল

ইয়েমেনের ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র

ইয়েমেন দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে ওমান ও সৌদি আরবের মধ্যখানে অবস্থিত। দেশটি লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী বাব-এল-মান্দের প্রণালীর মুখে অবস্থিত। লোহিত সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত পেরিম দ্বীপ এবং এডেন উপসাগরে অবস্থিত সোকোত্রা দ্বীপকে গণনায় ধরে ইয়েমেনের মোট আয়তন ৫,২৭,৯৭০ বর্গকিলোমিটার। ইয়েমেনের স্থলসীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ১,৭৪৬ কিলোমিটার। [২]

ইয়েমেন আরব মালভূমির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। দেশটির পর্বতময় অভ্যন্তরভাগ পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্বে সরু উপকূলীয় সমভূমি এবং উত্তরে সৌদি আরবের সাথে সীমান্তে মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত। লোহিত সাগরের উপকূল ঘেঁষে প্রলম্বিত প্রায় ৪১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ অর্ধ-ঊষর উপকূলীয় সমভূমিটি তিহামাহ নামে পরিচিত। অভ্যন্তরভাগের পর্বতগুলি বিভিন্ন উচ্চতার হয়। সর্বোচ্চ পর্বত জাবাল আন নাবি শুয়াইবসমুদ্রতল থেকে ৩,৭৬০ উঁচুতে অবস্থিত। উচ্চভূমিগুলির ভেতর দিয়ে বেশ কিছু ওয়াদি বা নদী উপত্যকা চলে গেছে; এগুলি গ্রীষ্মকালে শুষ্ক থাকে। ইয়েমেনের কোন স্থায়ী নদী নেই। ওয়াদিগুলির মধ্যে হাজরামুত ওয়াদিটির উপরের অংশে পলিভূমি ও পানির দেখা মেলে। উত্তর ও পূর্বের মালভূমি ও মরুভূমি উত্তপ্ত ও শুষ্ক এবং এখানে গাছপালা তেমন হয় না।

রাজনীতি

Shibam Wadi Hadhramaut Yemen

ইয়েমেনের রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ তাত্ত্বিকভাবে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা হতে স্বাধীন।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

  1. সাআদা
  2. আল জাওফ
  3. হাদরামাউত
  4. আল মাহরাহ
  5. হাজ্জাহ
  6. 'আমরান
  7. আল মাহভিত
  8. আমানত আল আসিমাহ
  9. সানা
  10. মা'রিব
  11. আল হুদাইদাহ
  12. রায়মাহ
  13. দামার
  14. ইব্ব
  15. দালে
  16. আল বায়দা
  17. শাবওয়াহ
  18. তাইজ
  19. লাহিজ
  20. আবইয়ান
  21. আদেন
  22. সোকোটরা

অর্থনীতি

ইয়েমেনে পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় স্থান আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এর রাজধানী সানা। সানা শহরটি সম্ভবত মনুষ্যনির্মিত প্রথম শহরগুলির একটি। ইউনেস্কো এটিকে World Heritage of Mankind বলে ঘোষণা করেছে। রাব আল খালি মরুভূমির প্রান্তে অবস্থিত মারিব শহর ছিল রাণী শেবার সাম্রাজ্যের রাজধানী। এখানে ৩০০০ বছর আগে নির্মিত বাঁধ এখনও দেখতে পাওয়া যায়। ইয়েমেন পূর্বে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং এদের রাজধানীগুলি দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে আছে। প্রতিটিতেই সেই আমলের বিশেষ নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। ইসলামের একেবারে প্রথম দিককার হযরত মুহাম্মদের (সা) জীবদ্দশাকালীন মসজিদ থেকে শুরু করে ইসলামী যুগের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ও আরও অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থানে ইয়েমেন পরিপূর্ণ।

জনমিতি

২০১৮ সালের উপাত্ত অনুসারে ইয়েমেনের জনসংখ্যা ২৮ মিলিয়ন,[৩][৪]৪৬% লোক ১৫ বছরের কম বয়সী এবং ২.৭% লোকের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। ১৯৫০ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৪.৫ মিলিয়ন।[৫][৬] ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা প্রায় ৬০ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে অনুমান করা হয়।[৭] ইয়েমেনে মোট প্রজনন ক্ষমতার হার বেশি, প্রতি মহিলাপিছু ৪.৪৪ জন শিশু। এটি বিশ্বের ৩০শ সর্বোচ্চ।[৮] সানার জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৯৭৮ সালে ৫৫,০০০ থেকে[৯] ২১শ শতাব্দীতে প্রায় ২ মিলিয়নে উপনীত হয়েছে।

জাতিগোষ্ঠী

ইয়েমেনের উপজাতীয় এবং শিয়া-সুন্নি অঞ্চলসমূহ। পশ্চিম ইয়েমেনের সবুজ চিহ্নিত অঞ্চলে মূলত শিয়া মুসলিমদের এবং বাকি অঞ্চলে সুন্নি মুসলিমদের বসবাস।

ইয়েমেনি নৃগোষ্ঠীগুলো মূলত আরব এবং এরপর রয়েছে আফ্রো-আরব, দক্ষিণ এশীয় এবং ইউরোপীয়।[১০] যখন উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেনের সাবেক রাষ্ট্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন বেশিরভাগ আবাসিক সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল।[১১] ইয়েমেন মূলত একটি উপজাতীয় সমাজ।[১২] উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে ৪০০ জায়েদি উপজাতির বসবাস রয়েছে।[১৩] আল-আখদামের মতো শহুরে অঞ্চলসমূহে পুরুষানুক্রমিক বর্ণভিত্তিক গোষ্ঠীও রয়েছে।[১৪] এছাড়া পারসিক বংশোদ্ভূত ইয়েমেনিও রয়েছে। মুকাদ্দসির মতে, ১০ম শতাব্দীতে পারসিকরা আদেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ছিল।[১৫][১৬]

ইয়েমেনি ইহুদিরা এককালে বিশ্বের অন্যান্য ইহুদি সম্প্রদায়ের চেয়ে পৃথক সংস্কৃতি নিয়ে ইয়েমেনের একটি বৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গঠন করেছিল।[১৭] বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আরব ও মুসলিম দেশ থেকে ইহুদিদের প্রস্থান এবং অপারেশন ম্যাজিক কার্পেটের পর বেশিরভাগ ইহুদি ইসরায়েলে দেশান্তরী হয়েছিল।[১৮] আনুমানিক ১০০,০০০ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আদেন, মুকাল্লা, শিহর, লাহাজ, মোখা এবং হোদেইদার আশেপাশে বাস করে।[১৯]

আরব বংশোদ্ভূত বেশিরভাগ ইন্দোনেশীয়, মালয়েশীয় এবং সিঙ্গাপুরি দক্ষিণ ইয়েমেনের হাদরামাওত উপকূলীয় অঞ্চলের হাদরামি লোক।[২০] বর্তমানে সিঙ্গাপুরে প্রায় ১০,০০০ হাদরামি রয়েছে।[২১] হাদরামিরা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকাভারতীয় উপমহাদেশে অভিপ্রয়াণ গ্রহণ করেছিল।[২২]

মাকিলরা ছিল ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত আরব বেদুইন উপজাতির একটি সংগ্রহ যাঁরা মিশরের মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে পাড়ি জমিয়েছিল। ইয়েমেনি আরবদের বেশ কয়েকটি দল দক্ষিণে মৌরিতানিয়ায় পরিণত হয়েছিল এবং সতেরো শতকের শেষের দিকে তারা পুরো দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এদের মরক্কোআলজেরিয়ার পাশাপাশি উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলিতেও পাওয়া যায়।[২৩]

ইয়েমেন আরব উপদ্বীপের একমাত্র দেশ যা ১৯৫১ এবং ১৯৬৭ সালের শরণার্থীদের সুরক্ষায় পরিচালিত দুটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী।[২৪] ইয়েমেন ২০০৭ সালে প্রায় ১২৪,৬০০ জন শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। ইয়েমেনে বসবাসকারী শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীরা মূলত সোমালিয়া (১১০,৬০০), ইরাক (১১,০০০), ইথিওপিয়া (২,০০০)[২৫] এবং সিরিয়া থেকে আগত।[২৬] এছাড়া সংঘর্ষের ফলে ৩৩৪,০০০ জনেরও বেশি ইয়েমেনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।[২৪]

ইয়েমেনীয় প্রবাসটি মূলত প্রতিবেশী সৌদি আরবে কেন্দ্রীভূত, যেখানে ৮০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন ইয়েমেনি বাস করে[২৭] এবং যুক্তরাজ্য যেখানে ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ ইয়েমেনি বসবাস করে।[২৮]

ভাষা

আধুনিক প্রমিত আরবি হল ইয়েমেনের সরকারি ভাষা, যদিও ইয়েমেনি আরবি স্থানীয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়। সুদূর পূর্ব ও সোকত্রা দ্বীপে আল-মাহরাহ গভর্নরেটগুলিতে বেশ কয়েকটি অনারবি ভাষা কথিত হয়।[২৯][৩০] বধিক সম্প্রদায় ইয়েমেনি সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে থাকে।

ইয়েমেন দক্ষিণ সেমিটিক ভাষার স্বদেশের অংশ। মেহরি হল দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বড় দক্ষিণ সেমেটিক ভাষা যার ৭০ হাজারেরও বেশি বক্তা রয়েছে। মেহরিভাষী নৃগোষ্ঠীকে মাহরা বলা হয়। সকোত্রি হল আরেক দক্ষিণ সেমেটিক ভাষা যেটির ভাষাভাষীরা সোসোক্রা দ্বীপে ইয়েমেনের মূল ভূখণ্ডে আরবির চাপ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে টিকে আছে। ইয়েমেনের ১৯৯০ সালের আদমশুমারি অনুসারে সেখানে সকোত্রিভাষীর সংখ্যা ছিল ৫৭,০০০।[৩১]

ইয়েমেন প্রাচীন দক্ষিণ আরবীয় ভাষাসমূহেরও আবাসস্থল ছিল। বর্তমানে রাজিহি ভাষাই একমাত্র অবশিষ্ট প্রাচীন দক্ষিণ আরবীয় ভাষা।

ইংরেজি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি ভাষা যা মূলত দক্ষিণাঞ্চলে বা সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশে শেখানো ও কথিত হয়।[৩২] ইয়েমেনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রুশভাষী রয়েছে, যারা মূলত ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে ইয়েমেনি-রুশ আন্তঃবিবাহের ফলে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯৭০-এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর ভিয়েতনাম থেকে প্রবাসী শরণার্থীদের মধ্য থেকে রাজধানী সানায় একটি ছোট চাম-ভাষী সম্প্রদায় পাওয়া যায়।

ধর্ম

ইয়েমেনে ধর্ম[৩৩]
সুন্নি ইসলাম
  
৬৫%
শিয়া ইসলাম
  
৩৪.৯৬%
অন্যান্য
  
০.০১%

ইয়েমেনের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন অনুসারে ইয়েমেনে ধর্ম মূলত দুটি প্রধান ইসলামি শাখা নিয়ে গঠিত: মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৬৫% সুন্নি এবং ৩৫% শিয়া[৩৪] সুন্নিরা মূলত শাফিঈ, তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মালিকিহাম্বলি সম্প্রদায়ও রয়েছে। শিয়ারা মূলত জায়েদি, তবে ইসমাইলি[৩৫]ইসনা আশারিয়াদের[৩৫][৩৬] উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও বসবাস রয়েছে।

সুন্নিরা প্রধানত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে। জায়েদিরা মূলত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে আর ইসমাইলিরা রয়েছে সাধারণত সানা ও মাআরিবের মতো প্রধান কেন্দ্রগুলিতে। বৃহত্তর শহরগুলিতে মিশ্র সম্প্রদায় রয়েছে। প্রায় ০.০৫ শতাংশ ইয়েমেনি অমুসলিম — খ্রিস্টান, ইহুদি বা হিন্দু ধর্মাবলম্বী অথবা ধর্মহীন।[৩৭][৩৮]

ইয়েমেনে খ্রিস্টানদের সংখ্যা আনুমানিক ২৫,০০০[৩৯] থেকে শুরু করে ৪১,০০০ পর্যন্ত।[৪০] ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেশের মুসলিম পটভূমির ৪০০ জন খ্রিস্টানকে অনুমান করা হয়েছে।[৪১]

ইয়েমেনে প্রায় ৫০ জন ইহুদি রয়ে গেছে। ইহুদি এজেন্সি কর্তৃক প্রায় ২০০ ইয়েমেনি ইহুদিকে আনুমানিক ২০১৬ সালে ইসরায়েলে আনা হয়েছিল।[৪২]

ডব্লিউআইএন/গ্যালাপ আন্তর্জাতিক জরিপ অনুসারে, আরব দেশগুলির মধ্যে ইয়েমেনে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক জনসংখ্যা রয়েছে এবং এটি বিশ্বব্যাপী অন্যতম ধার্মিক জনসংখ্যার মধ্যে একটি।[৪৩]


আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ