নগ্নতা

পোশাকবিহীন দেহের সৌন্দর্য

নগ্নতা হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মানুষ পোশাক ছাড়া থাকে। [১]

ক্রানাচ দ্য এল্ডার অঙ্কিত "অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ" (১৫৩৩)
হান্স রটেনহ্যমার, "অ্যালগরি অব দ্য আর্টস" (১৬শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ)

শরীরের লোম হারানো শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি ছিল যা আধুনিক মানুষের জৈবিক বিবর্তনকে তাদের হোমিনিন পূর্বপুরুষদের থেকে চিহ্নিত করে। লোমহীনতার সাথে সম্পর্কিত অভিযোজনগুলি মস্তিষ্কের আকার, দ্বিপদবাদ এবং মানুষের ত্বকের রঙের পরিবর্তনে অবদান রাখে। যদিও অনুমানগুলি পরিবর্তিত হয়, অন্তত ৯০,০০০ বছর ধরে শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষ কোনো পোশাক পরতেন না, যার উদ্ভাবন কেবল শারীরবৃত্তীয় নয় বরং আচরণগতভাবে আধুনিক হওয়ার পরিবর্তনের অংশ ছিল।

আধুনিক যুগের শেষের দিক পর্যন্ত ইতিহাসের অনেক অংশে, শ্রম এবং অ্যাথলেটিক্স সহ প্রচেষ্টামূলক কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকাকালীন লোকেরা প্রয়োজন বা সুবিধার কারণে জনসাধারণের মধ্যে বস্ত্রহীনতা ছিল; বা স্নান বা সাঁতার কাটার সময়। এই ধরনের কার্যকরী নগ্নতা এমন গোষ্ঠীগুলিতে ঘটেছে যেগুলি সাধারণত কিন্তু সবসময় যৌনতার দ্বারা আলাদা করা হয় না৷ প্রাচীন সংস্কৃতির মধ্যে, যৌনতা সম্পর্কিত নগ্নতা এবং লজ্জার মধ্যে সম্পর্ক আব্রাহামিক ধর্মের অনুসারীদের কাছে অনন্য ছিল। ঔপনিবেশিক যুগে খ্রিস্টান এবং মুসলিম সংস্কৃতিগুলি প্রায়শই আদিবাসীদের মুখোমুখি হয়েছিল যারা আলংকারিক বা আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে পোশাক ব্যবহার করত কিন্তু প্রায়শই নগ্ন থাকতো, শরীর সম্পর্কে লজ্জার কোন ধারণা ছিল না।

নগ্নতা সম্পর্কিত সমসাময়িক সামাজিক নিয়মগুলি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, যা দেহ ও যৌনতার প্রতি সাংস্কৃতিক অস্পষ্টতা প্রতিফলিত করে এবং জনসম্মুখে বনাম ব্যক্তিগত স্থানগুলি সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা গঠন করে। নগ্নতার সাথে সম্পর্কিত সামাজিক নিয়মগুলি মহিলাদের জন্য পুরুষদের চেয়ে আলাদা। ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নগ্নতা সম্পর্কিত নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারে; যাদের ক্ষমতা নেই তারা প্রতিবাদ স্বরূপ নগ্নতা ব্যবহার করতে পারে এবং ক্ষমতার অধিকারীরা শাস্তি স্বরূপ অন্যদের উপর নগ্নতা চাপিয়ে দিতে পারে।

যদিও বেশিরভাগ সমাজের বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে পোশাকের প্রয়োজন হয়, অন্যরা অ-যৌন নগ্নতাকে কিছু বিনোদনমূলক, সামাজিক বা উদযাপনমূলক কার্যকলাপের জন্য উপযুক্ত হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং শিল্পকলায় নগ্নতাকে ইতিবাচক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে বলে প্রশংসা করে। জাপান এবং ফিনল্যান্ডের মতো সমাজে স্নান এবং সনা ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে সাম্প্রদায়িক নগ্নতার ঐতিহ্য বজায় রাখে, যা যৌনতার বিকল্প প্রদান করে। কিছু সমাজ এবং গোষ্ঠী ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র প্রকাশ্যে নয়, ব্যক্তিগতভাবেও নগ্নতাকে অস্বীকৃতি জানায়। নিয়মগুলি যথাযথ পোশাক এবং অশ্লীল প্রকাশকে সংজ্ঞায়িত করে আইন দ্বারা বিভিন্ন ডিগ্রীতে আইনি কোড করা হয়।

ইতিহাস

মাইকেল্যাঞ্জেলো অঙ্কিত "দ্য ক্রিয়েশন অব অ্যাডাম" (১৫১২)
২৪০০০ হতে ২২০০০ খ্রিস্টপূর্ব সাল সময়কালের মাঝে নির্মিত "দ্য ভেনাস অব উইলেনডরফ"
টিটিয়ান অঙ্কিত "ভেনাস অব আরবিনো" (১৫৩৮)
প্রেম-ভালোবাসা ও কামনার গ্রিক দেবতা "কিউপিড", বোগারিউ কর্তৃক ১৮৭৫ সালে আঁকা
মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো নির্মিত ভাস্কর্য "ডেভিড"

নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন, আদিম মানুষ নগ্ন অবস্থায় থাকত। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে সম্ভবত ৭২,০০০ বছর আগেই মানব সমাজে নগ্নতা নিবারণের জন্য পোশাকের ব্যবহার শুরু হয়।[২] বাইবেলে বর্ণিত আদম ও ইভের উপাখ্যান অনুযায়ী, ঈশ্বর প্রথম নর ও নারীকে নগ্ন অবস্থায় সৃষ্টি করেছিলেন; এবং নগ্নতার জন্য তাদের মনে কোনো লজ্জা ছিল না। [৩] পরে শয়তান কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করে তারা যখন জ্ঞানবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে, তখন তাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হয় এবং নিজেদের নগ্ন দেখে তারা লজ্জিত হয়ে পড়েন।

কোনো কোনো প্রাচীন সভ্যতায় নগ্নতাকে অপমানকর বলে মনে করা হত। আদি বাইবেলে ফ্যারাও-শাসনাধীন মিশর ও ইহুদিদের একটি বর্ণনা থেকে এই চিত্র পাওয়া যায়: "আসিরিয়ার সম্রাট এই দুই দেশ [মিশর ও সুদান] থেকে বন্দীদের বিবস্ত্র অবস্থায় নিয়ে যাবে। যুবা-বৃদ্ধ সকলকেই নগ্ন পদে বিবস্ত্র অবস্থায় পথ চলতে হবে, তাদের অনাবৃত নিতম্ব মিশরের লজ্জার কারণ হবে।"[৪] প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতির জগতে পূর্ণবয়স্ক ও কিশোরদের নগ্নতার সৌন্দর্যের দিকটি বিশেষভাবে প্রশংসিত হত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বালক, নারী ও বালিকাদের নগ্নতাও প্রশংসা পেত। গ্রিকদের সৌন্দর্য চেতনায় প্রকৃতি, দর্শন ও শিল্পের পাশাপাশি মানবদেহেরও বিশেষ স্থান ছিল। গ্রিক শব্দ জিমন্যাসিয়াম কথাটির অর্থ ছিল "যেখানে নগ্ন অবস্থায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়"। পুরুষ খেলোয়াড়রা নগ্ন অবস্থায় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতেন। কিন্তু সেযুগে অধিকাংশ নগররাষ্ট্রেই নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, এমনকি দর্শকাসনে উপস্থিত থাকার অনুমতিও ছিল না। তবে স্পার্টা ছিল এর এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। রোমানরা গ্রিক সংস্কৃতির অনেক রীতিনীতি গ্রহণ করলেও, নগ্নতা সম্পর্কে তাদের মানসিকতা পৃথক ছিল। সাধারণ স্নানাগার বা সাধারণ শৌচাগার ছাড়া অন্যত্র নগ্নতাকে অনুচিত আখ্যা দেওয়া হত।

খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে খ্রিষ্টধর্ম রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষিত হলে গ্ল্যাডিয়েটর ক্রীড়া ধীরে ধীরে উঠে যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের নগ্নতা পাপের পর্যায়ে পর্যবসিত হয়। খ্রিষ্টধর্মের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি প্রথায় পরিণত হয়। যদিও অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে খ্রিষ্টানরা নগ্ন অবস্থায় ব্যাপ্টাইজড হতেন।[৫] ষষ্ঠ শতাব্দীতে সেন্ট বেনেডিক্ট অফ নার্সিয়া তার নিয়মাবলিতে সন্ন্যাসীদের তাদের ডরমিটরিতে সম্পূর্ণ পোশাক পরিহিত অবস্থায় ঘুমানোর পরামর্শ দেন। পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপীয় পুরুষেরা মূলত আলখাল্লা জাতীয় পোশাক পরতেন; তারপর কডপিস, টাইটস ও টাইট ট্রাউজার্সের প্রচলন হয়। এই পোশাকগুলি পুরুষাঙ্গকে ঢেকে রাখলেও তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করত।

শাস্তি

ডাইনি শিকারের সময় অভিযুক্ত ডাইনিদের নগ্ন করে তথাকথিত ডাইনি চিহ্নগুলি পরীক্ষা করা হত। এই সব চিহ্ন তাদের বিরুদ্ধে বিচারের প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হত।[৬]

নগ্নতা (সম্পূর্ণ বা অংশত) শারীরিক শাস্তির অংশ হতে পারে। জনসাধারণের সামনে কাউকে অপমান করার ক্ষেত্রেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শাস্তির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নাৎসিরা তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দীদের জোর করে নগ্ন করে রাখত। এই ঘটনা শিন্ডলারস লিস্ট নামক চলচ্চিত্রে বর্ণিত হয়েছে।[৭]

২০০৩ সালে ইরাকের আবু গারিব কারাগারে কুখ্যাত বন্দী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। মার্কিন সেনা কর্মচারীরা এখানে বন্দীদের নগ্ন করে, কখনও বেঁধে ও ভয় পাইয়ে দিয়ে তার ফটো তুলে রেখেছিল।

নগ্ন ফটোগ্রাফি

পোস্টকার্ডে লিখনরত মডেল—কার্ল লারসন (১৯০৬)

ফটোগ্রাফির আবিষ্কারের সময় থেকেই তাতে নগ্নতার ব্যবহার প্রচলিত। তবে ফটোগ্রাফিতে নগ্নতার মধ্যে সবসময় শৈল্পিক মেধা বিকশিত না হলেও, নগ্ন ফটোগ্রাফি বা ন্যুড ফটোগ্রাফিতে হয়ে থাকে। ফটোগ্রাফিতে নগ্নতা সাধারণত স্ন্যাপশট; কিন্তু নগ্ন ফটোগ্রাফি কোনো ব্যক্তির স্থির অবস্থায় তোলা ছবি। শিল্পকৃতি হিসেবে, নগ্ন ফটোগ্রাফি হল নগ্ন দেহের শৈল্পিক প্রদর্শন। এখানে মানবদেহের রেখা ও রূপই প্রধান উদ্দেশ্য।

অনেক ফটোগ্রাফারই একটি আর্ট ন্যুড ফটোগ্রাফকে ব্যক্তির বদলে মানবদেহের পাঠ মনে করেন। ব্যক্তির ফটোগ্রাফ, যেখানে তাকে চেনার উপায় থাকে, তাকে পোর্ট্রেট বলা চলে। কিন্তু অনেক ন্যুড ফটোগ্রাফে ব্যক্তির মুখই দেখা যায় না। ফটোগ্রাফারেরা অনেক সময় আলোছায়ার চরম ব্যবহার, তৈলাক্ত ত্বক অথবা দেহের গঠন বোঝাতে ছায়ার ব্যবহার করে থাকেন।[৮]

প্রথম যুগের ফটোগ্রাফাররা অনেক সময়ই নারীদের নগ্নতা ফটোগ্রাফিতে ফুটিয়ে তুলতেন। এঁদের মধ্যে ফেলিক্স-জ্যাক মলিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এডওয়ার্ড ওয়াটসন, রুথ বার্নহার্ড ও জেরি অ্যাভেনেইম প্রমুখ ফটোগ্রাফাররা শিল্পকর্ম হিসেবে দেহের রেখা প্রদর্শন করতে পছন্দ করতেন।

ইরোটিক ফটোগ্রাফি ও পর্নোগ্রাফিতেও অনেক সময় নগ্ন বা অর্ধনগ্ন মডেলদের শৈল্পিক চিত্র বিধৃত হয়ে থাকে।

স্পেনসার টিউনিক নির্মিত সারা বিশ্বের নানা প্রকাশ্য স্থানে এক দঙ্গল নগ্ন লোকের স্থিতিস্থাপক ফটোগ্রাফি উচ্চ মানের শিল্পমেধার জন্য নন্দিত।

নগ্ন ক্যালেন্ডার

নগ্ন ক্যালেন্ডার প্রকাশের প্রথাও দ্রুত বিকাশলাভ করেছে। এগুলি বর্তমানে এক প্রকার বার্ষিক প্রথায় পরিণত হয়েছে। এই ক্যালেন্ডারগুলি দুই প্রকার:

  • নগ্ন নারী চিত্রসম্বলিত ক্যালেন্ডার
  • নগ্ন পুরুষ চিত্রসম্বলিত ক্যালেন্ডার

বিগত দুই দশকে নগ্ন দাতব্য ক্যালেন্ডার প্রকাশের প্রথাও বিকাশলাভ করেছে। সফল দাতব্য নগ্ন ক্যালেন্ডারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গডস অফ দ্য স্টেডিয়াম (ফ্রান্স) এবং গডস অফ ফুটবল, লিগ অফ দেয়ার ওন ও নেকেড রাগবি লিগ অস্ট্রেলিয়ান স্পোর্টস ক্যালেন্ডার।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতি

প্রাকৃত নগ্নতা

ম্যাসিয়েরযিন্সটু ("মাতৃত্ব"), ১৯০২ সালে স্টেইন-স্ল ভিস্পিয়ান্সকি অঙ্কিত একটি চিত্রকর্ম

অল্পসময়ের জন্য আবশ্যকীয় নগ্নতাকে (যেমন সৈকতে পোশাক পরিবর্তন) অশালীন মনে করা হয় না। তবে সৈকতে দীর্ঘক্ষণ নগ্ন অবস্থায় থাকাটা অশালীন বলে বিবেচিত হয়। যদিও নগ্ন সৈকতগুলিতে নগ্নতা গ্রহণযোগ্য। পাশ্চাত্য সমাজে নারীদের প্রকাশ্যে স্তন্যপান করানোয় অনেক ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্রুক রায়ান নামে জনৈক মহিলা একটি রেস্তোরাঁয় তার সাত মাসের শিশুপুত্রকে স্তন্যপান করাতে গেলে রেস্টুরেন্টের মালিক আপত্তি জানান। সেদেশে প্রকাশ্যে স্তন্যপান করানো যে আইনসঙ্গত সেই সংক্রান্ত একটি নথি দেখিয়েও তিনি মালিকের অনুমতি পাননি। অগত্যা তাকে গাড়ির মধ্যে পুত্রকে স্তন্যপান করাতে হয়। পরে তিনি ওই রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন।[৯] উল্লেখ্য, অধিকাংশ মার্কিন অঙ্গরাজ্যেই (২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী ৪০টি) মায়েদের প্রকাশ্যে সন্তানকে স্তন্যপান আইনসঙ্গত।[১০]

মুক্তস্তন

রৌদ্রস্নানরত উন্মুক্ত বক্ষ রমণী

অনেক পাশ্চাত্য দেশে এবং সূর্যস্নানের মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে মহিলাদের স্তন অনাবৃত রাখাকে অশালীন বলে মনে করা হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রাজ্যে অবশ্য প্রকাশ্যে মহিলাদের স্তনবৃন্ত প্রদর্শন ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে এবং প্রকাশ্য স্থানে তা করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যুক্তরাজ্যে পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট অফ ১৯৮৬ অনুসারে নগ্নতাকে "হয়রানি, সতর্কীকরণ বা যন্ত্রণা প্রদানের" জন্য ব্যবহার করা যায় না।

কয়েকটি বিচারের রায় থেকে পাশ্চাত্য সমাজে "মুক্তস্তন সমতা" ("টপফ্রি ইকুয়ালিটি") আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল পুরুষেরা যেমন কোমরের ঊর্ধ্বাংশ অনাবৃত রাখে, মহিলাদেরও তেমনই অধিকার পাওয়া উচিত। এই সূত্রে ইংরেজিতে "টপলেস" শব্দটির যৌন অনুষঙ্গ এড়াতে "টপফ্রি" শব্দটির প্রচলনও হয়।

নগ্নতাবাদ

নগ্নতাবাদ (ইংরেজি: Naturism বা nudism) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের নাম। এই আন্দোলন সর্বসমক্ষে ও প্রকাশ্যে নগ্নতাকে সমর্থন জানায় এবং তার সপক্ষে মতপ্রকাশ করে।[১১][১২]

শালীনতার যে প্রচলিত ধারাটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক নগ্নতার বিরোধী নগ্নতাবাদীরা তা প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। পরিবর্তে তারা এমন এক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান যেখানে মানুষে নগ্ন মানুষের সাহচর্যে অথবা অন্যান্য নগ্নতাবাদী বা সাধারণ মানুষের সামনে নগ্ন হয়ে থাকতে অস্বস্তিবোধ করবে না।[১১][১২]

জল কার্যক্রম

ভারতে শিশুরা নগ্ন অবস্থায় জলাধারে খেলছে।

এই প্রথানুযায়ী ইউরোপের অনেক দেশে (বিশেষত জার্মানি, ফিনল্যান্ডনেদারল্যান্ডে) উভয় লিঙ্গের মানুষেরই দলবদ্ধ অবস্থায় নগ্ন হয়ে স্নান স্বীকৃত। অধিকাংশ জার্মান স্পা-তে মিশ্র নগ্ন স্নানের অনুমতি দেওয়া হয়। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও গ্রিসের সৈকত ও সুইমিং পুলগুলিতে নগ্ন হয়ে স্নান অনুমোদিত। উল্লেখ্য, মহাদেশীয় ইউরোপে নগ্নতাকে অ্যাংলো-স্যাক্সন জগতের রক্ষণশীলতার তুলনায় অনেক লঘু করে দেখা হয়।

সনা ব্যবস্থার উৎস ফিনল্যান্ডে। এই দেশে এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য জার্মান-ভাষী রাষ্ট্রে সনায় নগ্ন অবস্থান অনুমোদিত।[১৩] সনা বর্তমান ফিনল্যান্ডে অতি সুপরিচিত। এখানে বর্তমানে প্রতি তিন জন নাগরিকের জন্য একটি করে সনা রয়েছে।[১৪] বিগত কয়েক দশকে সমগ্র ইউরোপেই সনা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

নগ্ন ভ্রমণ

বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে একা বা দলগতভাবে ভ্রমণ।স্টিফেন গগ্ ( 'নগ্ন ভবঘুরে' নামে আখ্যায়িত) ২০০৩/২০০৪ সালে ইউনাইটেড কিংডমের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত যাত্রা করেন শুধুমাত্র জুতো পরা অবস্থায়। তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন এবং তার ভ্রমণ দুবার বাধাপ্রাপ্ত হয় জেলবন্দী হওয়ার জন্য।নগ্নতা সম্বন্ধে মানুষের দৃষ্টিপ্রসারিত করতে তার এই উদ্যোগ ছিল।তিনি দেখেছিলেন স্কটল্যান্ডে ইংল্যান্ডের থেকেও নগ্নতা-বিরোধী আইনকানুন দৃঢ়তর।অবশেষে ২০০৬ সালের প্রথমার্ধে বহু বাধা অতিক্রমের পর তার ভ্রমণ শেষ করেন।

যৌনতা

যৌনসঙ্গীর সম্মুখে নগ্নতা সামাজিকভাবে অনুমোদিত; তবে সব ক্ষেত্রে নয়। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ কেউ কেবলমাত্র যৌনসঙ্গমের সময়ই আলোতে বা অন্ধকারে নগ্নতাকে অনুমোদন করেন। এছাড়া সঙ্গীর সঙ্গে স্নানের সময় বা স্নানের পরে, চাদর বা কম্বলের আবরণের অন্তরালে, অথবা ঘুমানোর সময় সঙ্গীর সম্মুখে নগ্নতা অনুমোদিত।

আরও দেখুন


তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ