পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। একে আবহমণ্ডল-ও বলা হয়। এটি সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে। এটি তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে (গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া) ভূপৃষ্টকে উত্তপ্ত করে ও দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস করে।
শ্বাস-প্রশ্বাস ও সালোকসংশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসসমূহের প্রদত্ত প্রচলিত নাম বায়ু বা বাতাস। পরিমাণের দিক থেকে শুষ্ক বাতাসে ৭৮.০৯% নাইট্রোজেন,২০.৯৫% অক্সিজেন,[১] ০.৯৩% আর্গন, ০.০৩% কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস থাকে। বাতাসে এছাড়াও পরিবর্তনশীল পরিমাণ জলীয় বাষ্প রয়েছে যার গড় প্রায় ১%। বাতাসের পরিমাণ ও বায়ুমন্ডলীয় চাপ বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রকম হয়,স্থলজ উদ্ভিদ ও স্থলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত বাতাস কেবল পৃথিবীর ট্রপোমণ্ডল এবং কৃত্রিম বায়ুমণ্ডলসমূহে পাওয়া যাবে।
বায়ুমন্ডলের ভর হচ্ছে প্রায় ৫×১০১৮ কেজি,যার তিন চতুর্থাংশ পৃষ্ঠের প্রায় ১১ কিলোমিটারের (৩৬,০০০ ফুট ৬.৮ মাইল) মধ্যে থাকে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমন্ডল পাতলা হতে থাকে এবং বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্যের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। Karman লাইন, 100 কিলোমিটার (62 মাইল), অথবা পৃথিবীর ব্যাসার্ধ এর 1.57% এ, প্রায়ই বায়ুমণ্ডল এবং মহাশূন্যে মধ্যে সীমান্ত হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কারম্যান রেখা যা পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) উপরে অথবা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ১.৫৭% প্রায়ই বায়ুমণ্ডল এবং মহাশূন্যের মধ্যে সীমান্ত হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বায়ুমন্ডলীয় প্রভাবসমূহ পরিলক্ষিত হয় যখন মহাকাশযান প্রায় ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) উচ্চতায় অথ্যাৎ কারম্যান রেখার উপরে গমন করে। বৈশিষ্ট্য যেমন তাপমাত্রা ও গঠনের উপর ভিত্তি করে বায়ুমন্ডলকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করা যায়।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং তার প্রক্রিয়া নিয়ে চর্চা করাকে বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান বা অ্যাইরলজি বলা হয়। লিওন টিইসারিয়েক ডি বর্ট ও রিচার্ড অ্যাসম্যান এই শাস্ত্রের প্রারম্ভিক পথিকৃৎ। [২]
বায়ুমন্ডলের সংযুক্তি
বায়ু বা বাতাস প্রধানত নাইট্রোজেন,অক্সিজেন ও আর্গন দ্বারা গঠিত এবং এই গ্যাসসমূহ একত্রে বায়ুমন্ডলের অন্যান্য প্রধান গ্যাসসমূহ গঠন করে। জলীয় বাষ্প ভরের দিক থেকে বায়ুমন্ডলের প্রায় ০.২৫%। জলীয় বাষ্পের ঘনত্বের উল্লেখযোগ্যভাবে তারতম্য ঘটে যেমন বায়ুমন্ডলের শীতলতর অংশে প্রায় ১০ পিপিএমভি (প্রতি মিলিয়নে কণা) হয় যা ৫% বেড়ে যায় উষ্ণ অংশে এবং অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসের ঘনত্ব সাধারণত কোনো জলীয় বাষ্প ছাড়া শুষ্ক বায়ু জন্য প্রদান করা হয়। [৩] অবশিষ্ট গ্যাসসমূহকে প্রায়ই ট্রেস গ্যাস উল্লেখ করা হয়,[৪] যার মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাসসমূহ আছে যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড,মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড, এবং ওজোন। পরিস্রুৎ বাতাসে অন্যান্য অনেক রাসায়নিক যৌগ যা সামান্য পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে সৃষ্ট অনেক বস্তু স্থানভেদে এবং ঋতুভেদে পরিবর্তনশীল ক্ষুদ্র আকারে উপস্থিত থাকতে পারে যেমন অপরিশোধিত বাতাসের নমুনায় এরোসলের উপস্থিতি। এছাড়াও খনিজ কনা,জৈব উপাদান,পরাগ রেণু ও গুটিবীজ,সাগরের স্প্রে এবং আগ্নেয়গিরির ছাই উপস্থিত থাকে। বিভিন্ন শিল্প দূষকসমূহ যেমন ক্লোরিন (মৌল বা যৌগ আকারে),ফ্লোরিন যৌগ এবং পারদ মৌল বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসীয় অথবা এরোসল রূপে বাতাসে উপস্থিত থাকতে পারে। সালফার যৌগ যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড এবং সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) প্রাকৃতিক উৎস থেকে অথবা শিল্প কলকারখানার দূষিত বাতাস থেকে আহরিত হতে পারে।
পিপিএমভি: প্রতি মিলিয়নে কণা পরিমাণ অনুসারে (note: volume fraction is equal to mole fraction for ideal gas only, see volume (thermodynamics)) | |
গ্যাস | পরিমাণ |
---|---|
নাইট্রোজেন (N2) | ৭৮০,৮৪০ পিপিএমভি (৭৮.০৮৪%) |
অক্সিজেন (O2) | ২০৯,৪৬০ পিপিএমভি (২০.৯৪৬%) |
আর্গন (Ar) | ৯,৩৪০ পিপিএমভি (০.৯৩৪০%) |
কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) | ৩৯৭ পিপিএমভি (০.০৩৯৭%) |
নিয়ন (Ne) | ১৮.১৮ পিপিএমভি (০.০০১৮১৮%) |
হিলিয়াম (He) | ৫.২৪ পিপিএমভি (০.০০০৫২৪%) |
মিথেন (CH4) | ১.৭৯ পিপিএমভি (০.০০০১৭৯%) |
ক্রিপ্টন (Kr) | ১.১৪ পিপিএমভি (০.০০০১১৪%) |
হাইড্রোজেন (H2) | ০.৫৫ পিপিএমভি (০.০০০০৫৫%) |
নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) | ০.৩২৫ পিপিএমভি (০.০০০০৩২৫%) |
কার্বন মনোক্সাইড (CO) | ০.১ পিপিএমভি (০.০০০০১%) |
জেনন (Xe) | ০.০৯ পিপিএমভি (৯×১০−৬%) (০.০০০০০৯%) |
ওজোন (O3) | ০.০ to ০.০৭ পিপিএমভি (০ থেকে ৭×১০−৬%) |
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) | ০.০২ পিপিএমভি (২×১০−৬%) (০.০০০০০২%) |
আয়োডিন (I2) | ০.০১ পিপিএমভি (১×১০−৬%) (০.০০০০০১%) |
অ্যামোনিয়া (NH3) | ট্রেস গ্যাস |
উপর্যুক্ত শুষ্ক বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান না: | |
জলীয় বাষ্প (H2O) | ~০.২৫% সম্পূর্ণ বায়ুমণ্ডলের ভর দ্বারা, স্থানীয়ভাবে ০.০০১%–৫% [৩] |
বায়ুমণ্ডলের গঠন
প্রধান স্তরসমূহ
সাধারণত বায়ুমন্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ু চাপ এবং ঘনত্ব হ্রাস পায়। কিন্তু,তাপমাত্রার সঙ্গে উচ্চতায় আরো জটিল সমীকরণ আছে এবং কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে স্থির বা এমনকি বৃদ্ধি পেতে পারে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে। তাপমাত্রা ও উচ্চতার সাধারণ পরিলেখ ধ্রুবক এবং বেলুন সাউন্ডিং দ্বারা চেনা যায়। তাপমাত্রার এই আচরণ দ্বারা বায়ুমন্ডলীয় স্তর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। এই ভাবে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পাঁচটি প্রধান স্তরে (একে বায়ুমণ্ডলীয় স্তরবিন্যাস বলা হয়) ভাগ করা যায়। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত এই স্তরগুলো হচ্ছেঃ
- ট্রপোমণ্ডল: ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২/১৮ কিলোমিটার (০ থেকে ৭/৯ মাইল)[৭]
- স্ট্র্যাটোমণ্ডল: ১২/১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার (৭/৯ থেকে ৩১ মাইল)
- মেসোমণ্ডল: ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার (৩১ থেকে ৫০ মাইল)
- তাপমণ্ডলঃ ৮০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার (৫০ থেকে ৪৪০ মাইল)[৮]
- এক্সোমণ্ডল: > ৭০০ কিলোমিটার (>৪৪০ মাইল)
- ম্যাগনেটোমণ্ডল
ট্রপোমণ্ডল
ট্রপোমণ্ডল বা ক্ষুব্ধমণ্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে শুরু হয় এবং প্রায় ১১-১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় ট্রপোবিরতি পর্যন্ত বিস্তৃত,যদিও এই উচ্চতার তারতম্য ঘটে আবহাওয়ার কারণে যা মেরুতে প্রায় ৯ কিলোমিটার (৩০,০০০ ফুট) এবং বিষুবরেখায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার (৫৬,০০০ ফুট)। [৯] তবে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৮ কিমি হলেও মেরু অঞ্চলে ইহা ৮১ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানের প্রায় ৭৬% এবং সমস্ত প্রকার জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা এই স্তরেই দেখতে পাওয়া যায়। মেঘ, বৃষ্টি, বজ্রপাত, ঝড়, শিশির, কুয়াশা সহ সমস্ত প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই স্তরেই দেখা যায় বলে একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে। ট্রপোমণ্ডল সবচেয়ে বেশি উওপ্ত হয় ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক বিকিরিত তাপশক্তি দ্বারা,তাই সাধারণত ট্রপোমণ্ডল সর্বনিম্ন অংশ উষ্ণ এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। মূলত সমস্ত আবহাওয়ার ঊপাদান যেমন মেঘ ইত্যাদিসহ ট্রপোমণ্ডল বায়ুমণ্ডলের ভরের প্রায় ৮০% ধারণ করে। [১০] ট্রপোবিরতি হচ্ছে ট্রপোমণ্ডল ও স্ট্রাটোমণ্ডলের মধ্যে সীমারেখা সরূপ। এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এই তাপমাত্রা হ্রাসের হার সাধারণভাবে প্রতি ১০০ মিটার উচ্চতায় ০.১° সেন্টিগ্রেড বা প্রতি ১০০০ মিটার (১ কিমি) উচ্চতায় ৬.৫° সেন্টিগ্রেড। ট্রপোমণ্ডল ও স্ট্র্যাটোমণ্ডল এর মধ্যবর্তী অঞ্চল ট্রপোপজ নামে পরিচিত।
স্ট্র্যাটোমণ্ডল
স্ট্রাটোমণ্ডল বা শান্তমণ্ডল অঞ্চল পৃথিবী থেকে ১২/১৫ কিলোমিটার (৭.৫/৯.৩ মাইল, ৩৯,০০০/৪৯,১০৪ ফুট) উপরে ট্রপোবিরতি হতে শুরু হয়ে স্ট্র্যাটোবিরতি পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫ (৩১-৩৪ মাইল; ১৬০,০০০- ১৮০,০০০ ফুট) কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। স্ট্রাটমণ্ডলে শীর্ষে বায়ুমন্ডলীয় চাপ সমুদ্র পৃষ্টের ১০০০ ভাগের এক। ওজোন স্তর দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ শোষণ বৃদ্ধি কারণে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরের তাপমাত্রা বাড়ে। ট্রপোবিরতিতে তাপমাত্রা -৬০° সেলসিয়াস হতে পারে (-৭৬° ফাঃ; ২১০ কেলভিন),স্ট্রাটমণ্ডলে উপরে অনেক গরম। [১২] ঝড় বৃষ্টি থাকে না বলেই এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত বিমান চলাচল করে। বায়ুপ্রবাহ থাকে না বলে জেটবিমানের ইঞ্জিনের ধোঁয়া পুঞ্জাকারে সাদা দাগের আকারে দেখা যায়। এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এই স্তরে ওজোন গ্যাসের স্তর বেশি পরিমাণে দেখা যায়। স্ট্যাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্ট্যাটোবিরতি বলে।
মেসোমণ্ডল
মেসোমণ্ডল সমুদ্রপৃষ্ট হতে ৫০ কিলোমিটার (১৬০,০০০ ফিট ৩১ মাইল) উপরে স্ট্র্যাটোবিরতি থেকে শুরু হয়ে মেসোবিরতি পর্যন্ত প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ (৫০-৫৩ মাইল; ২৬০০০০-২৮০০০০ ফুট) কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। উল্কাপিন্ড সাধারণত ৭৬ কিমি থেকে ১০০ কিমি এর মধ্যে উচ্চতায় মেসোমণ্ডল দেখা যায়। তাপমাত্রা মেসোমণ্ডলে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস যায়। মেসোমণ্ডলের উপরে অবস্থিত মেসোবিরতিতে তাপমাত্রা এত হ্রাস পায় যে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান এবং ঐ স্থানের গড় তাপমাত্রা প্রায় -৮৫° সেলসিয়াস (-১২০° ফাঃ, ১৯০ কেলভিন)। [১৩] এই উচ্চতায় তাপমাত্রা -১০০° সেলসিয়াস (-১৫০° ফাঃ; ১৭০ কেলভিন) পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। [১৪] এই স্তরের ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে। মেসোমণ্ডলের ওপরে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়। এই স্তরকে মেসোবিরতি বলে।
তাপমণ্ডল
তাপমণ্ডল প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল;২৬০.০০০ ফুট) উপরে অবস্থিত এবং মেসোবিরতি থেকে তাপবিরতি পর্যন্ত এই স্তরের তাপমাত্রা উচ্চতা বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যা এক্সোমণ্ডলে প্রবেশ করলে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে ধ্রুবক হয়। যেহেতু থার্মোবিরতি এক্সোমণ্ডল নিচে অবস্থিত তাই একে এক্সোবেসও বলা হয়। এর গড় উচ্চতা পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সৌর ক্রিয়া ও ব্যাপ্তি সঙ্গে পরিবর্তিত হয় ৫০০ থেকে ১০০০ (৩১০-৬২০ মাইল; ১৬০০০০০-৩৩০০০০০ ফুট) কিলোমিটার পর্যন্ত। [৮] এই স্তরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১,৫০০° সেলসিয়াস (২,৭০০° ফাঃ) পর্যন্ত হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এর কক্ষপথ এই স্তরের ৩২০ থেকে ৩৮০ কিলোমিটারের (২০০ এবং ২৪০ মাইল) মধ্যে অবস্থিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নোমণ্ডলের বিভিন্ন আয়নে বাধা পেয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে পৃথিবীতে বেতার সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়। এই স্তরে বিভিন্ন তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে অণুগুলি প্রোটন ও ইলেকট্রনের সংস্পর্শে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে একপ্রকার উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বলে। সুমেরু অঞ্চলের মেরুজ্যোতিকে সুমেরু প্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিস এবং কুমেরু অঞ্চলের মেরুজ্যোতিকে কুমেরু প্রভা বা অরোরা অস্ট্রালিস বলে।
এক্সোমণ্ডল
এক্সোমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে দূরবর্তী স্তর, এক্সোবেস থেকে শুরু হয়ে ৭০০ কিলোমিটার উপরে বিস্তৃত এবং সমুদ্রতল হতে প্রায় চাঁদের দূরত্বের অর্ধেক পথ। এটি প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং কিছু ভারী অনুসমূহ যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে গঠিত। এই অণু ও পরমাণুসমূহ পরস্পর থেকে এত দূরে থাকে যে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না ফলে বায়ুমন্ডল আর গ্যাস হিসাবে আচরণ করে না। এই সকল মুক্ত ভ্রমনরত কণাসমূহ নিক্ষিপ্ত বস্তুর নির্দিষ্ট আবক্র পথ অনুসরণ করে। এই স্তরে বায়ু খুবই হালকা। এই স্তরেও উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।
ম্যাগনেটোমণ্ডল
এক্সোমণ্ডলের ওপরে বায়ুমণ্ডলের কোশ সীমা পর্যন্ত বায়ুস্তরকে ম্যাগনেটোমণ্ডল বলে। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টান করে একটি প্রোটন ও ইলেকট্রনের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই স্তর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিবর্তন
প্রাচীনতম বায়ুমণ্ডল
প্রথম বায়ুমণ্ডলে সৌর নীহারিকাতে গ্যাস ছিল, প্রধানত হাইড্রোজেন। সম্ভবত সাধারণ হাইড্রাইড ছিল যেমন এখন গ্যাস দৈত্যদের (বৃহস্পতি এবং শনি) মধ্যে পাওয়া যায়, বিশেষ করে জলীয় বাষ্প, মিথেন এবং অ্যামোনিয়া। [১৫]
দ্বিতীয় বায়ুমণ্ডল
আগ্নেয়গিরি থেকে আউটগ্যাসিং, বিশাল গ্রহাণু দ্বারা পৃথিবীতে দেরীতে ভারী বোমাবর্ষণের সময় উত্পাদিত গ্যাস দ্বারা সম্পূরক, পরবর্তী বায়ুমণ্ডল তৈরি করে, যার মধ্যে মূলত নাইট্রোজেন প্লাস কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জড় গ্যাস রয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের একটি বড় অংশ জলে দ্রবীভূত হয় এবং ভূত্বক শিলাগুলির আবহাওয়ার সময় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ধাতুগুলির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনেট তৈরি করে যা পলি হিসাবে জমা হয়েছিল। ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগের তারিখ থেকে জল-সম্পর্কিত পলি পাওয়া গেছে।
প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগে, নাইট্রোজেন তখনকার স্থিতিশীল "দ্বিতীয় বায়ুমণ্ডল" এর প্রধান অংশ গঠন করেছিল। বায়ুমন্ডলের ইতিহাসে জীবনের প্রভাবকে খুব শীঘ্রই বিবেচনা করতে হবে কারণ প্রাথমিক জীবন-রূপের ইঙ্গিতগুলি ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে প্রদর্শিত হয়। সেই সময়ে পৃথিবী কীভাবে তরল জল এবং জীবনের জন্য যথেষ্ট উষ্ণ জলবায়ু বজায় রেখেছিল, যদি প্রারম্ভিক সূর্য আজকের চেয়ে 30% কম সৌর উজ্জ্বলতা প্রকাশ করে তবে এটি "অস্পষ্ট তরুণ সূর্য প্যারাডক্স" নামে পরিচিত একটি ধাঁধা।