বার্লিন অবরোধ

বার্লিন অবরোধ(২৪ জুন ১৯৪৮ - ১২ মে ১৯৪৯) ছিল স্নায়ু যুদ্ধের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সংকট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির বহুজাতিক দখলের সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিমা নিয়ন্ত্রাণাধীন বার্লিনে পশ্চিমাদের প্রবেশের রেল, সড়ক এবং খালের চলাচল পথ বন্ধ করে দেয়। পশ্চিম বার্লিন থেকে পশ্চিমাদের নতুন প্রবর্তিত ডয়েচ মার্ক প্রত্যাহার করলে সোভিয়েত অবরোধ তুলে নেয়ার প্রস্তাব দেয়।

বার্লিন অবরোধ
মূল যুদ্ধ: স্নায়ু যুদ্ধ

বার্লিনের জনগণ একটি ডগলাস সি-৫৪ স্কাইমাস্টার বিমানকে টেম্পলহফ বিমানবন্দরে অবতরণ করতে দেখে, ১৯৪৮
তারিখজুন ২৪, ১৯৪৮ - মে ১২, ১৯৪৯ (৩২৩ দিন)
অবস্থান
ফলাফল

অবরোধ তুলে নেয়া হয়

জার্মানি বিভক্ত হয়
যুদ্ধমান পক্ষ
 সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র
 যুক্তরাজ্য
সমর্থনঃ
 ফ্রান্স
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্যাসিলি সকোলোভস্কি লুসিয়াস ডি. ক্লে
ব্রায়ান রবার্টসন
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
ক্ষয়ক্ষতি নেইবিমান দুর্ঘটনাঃ
৩৯ ব্রিটিশ এবং ৩১ আমেরিকান নিহত হয়
১৫ জার্মান নাগরিক নিহত হয়

পশ্চিমা মিত্রশক্তি পশ্চিম বার্লিনের জনগণের কাছে দ্রব্য সরবরাহ করার জন্য বার্লিন এয়ারলিফটের (২৬ জুন ১৯৪৮-৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯) ব্যবস্থা করেছিল, এটি ছিল শহরের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কঠিন একটা কাজ।[১] একবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী, রয়্যাল এয়ার ফোর্স, ফ্রেঞ্চ এয়ার ফোর্স, রয়্যাল কানাডিয়ান এয়ার ফোর্স, রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্স, রয়্যাল নিউজিল্যান্ড এয়ার ফোর্স এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এয়ার ফোর্স থেকে নেয়া বিমান চালকগণ ২০০,০০০ বার দ্রব্য সরবরাহ করেছিল, যেখানে পশ্চিমা বার্লিন অধিবাসীদের জন্য প্রতিদিনে প্রায় ১২,৯৪১ টন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, যেমন জ্বালানী এবং খাদ্য সরবরাহ করা হতো।[২] যাই হোক, এয়ারলিফটের শেষে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায়। সোভিয়েতরা জার্মানির এবং বিশেষত বার্লিনের মিত্রদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি থাকা সত্ত্বেও সোভিয়েত এই এয়ারলিফটকে বাঁধা দেয় নি কারণ সেটি প্রকাশ্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারত।

রয়্যাল এয়ার ফোর্স সর্বপ্রথম ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে আসে বার্লিনে নিযুক্ত ব্রিটিশ মিলিটারিদের সাহায্যের জন্য। এরপর যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ অপারেশন শুরু করে গোটা শহরের সাহায্যের জন্য। ১৯৪৯ সালের বসন্তের সময় এই এয়ারলিফট স্পষ্টতই সফল ছিল এবং এপ্রিলের দিকে এটি রেলপথের চেয়েও অধিক পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করেছিল। ১২ মে ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিম বার্লিন থেকে অবরোধ তুলে নেয়, যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স আরও কিছুদিন তাদের এয়ারলিফটের মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রেখেছিল। কারণ তারা ভেবেছিল সোভিয়েত সহজেই অবরোধ পুনরারম্ভ করতে পারে এবং এটি শুধু পশ্চিমা সরবরাহ বিঘ্নিত করার চেষ্টা মাত্র।

জার্মানির যুদ্ধপরবর্তী বিভাজন

জার্মানির লাল চিহ্নিত এলাকা ছিল সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত পূর্ব জার্মানি। এই এলাকায় মাঝে লাল, সবুজ, নীল ও হলুদ চিহ্নিত ক্ষুদ্র এলাকাটি হল বার্লিন।
বার্লিনের বিভক্তি
বার্লিনে প্রবেশের তিনটি আকাশপথ

যুদ্ধপরবর্তী ইউরোপের ভাগ্যনির্ধারণের জন্য ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট এর মাঝে বিজয়ী মিত্রশক্তি পোস্টডাম চুক্তি করে এবং পরাজিত জার্মানিকে চারটি সাময়িকভাবে দখলকৃত এলাকায় বিভক্ত করে নেয় (এটি করা হয় ইয়াল্টা সম্মেলন এর ভিত্তিতে)। এই এলাকা গুলো তৎকালীন মিত্রশক্তির সেনাবাহিনীর এলাকার কাছাকাছি অবস্থানে ছিল।[৩] বার্লিন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিকৃত অঞ্চলের ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) ভেতরে অবস্থিত এবং বার্লিনকেও ভাগ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স বার্লিনের পশ্চিমাঞ্চল এবং সোভিয়েত সৈন্য পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত।[৩]

সোভিয়েতের অঞ্চল এবং মিত্রপক্ষের বার্লিনে প্রবেশের অধিকার

পূর্বাঞ্চলে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ কমিউনিস্ট পার্টি অব জার্মানি এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এসপিডি) -কে জোরপূর্বক সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি(এসইডি) তে একত্রিত করেছিল এবং দাবী করেছিল যে এটি সেই সময়ে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বা সোভিয়েত কেন্দ্রিক হবে না।[৪] যখন সোভিয়েতের সামরিক প্রশাসন অন্যান্য সকল রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে দমন করেছিল, তখন এসইডি এর নেতারা একটি সংসদীয় গণপ্রজাতন্ত্রের আহবান জানায় ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।[৫] কারখানা, সরঞ্জাম, যন্ত্র প্রকৌশলি, ব্যবস্থাপক এবং দক্ষ কর্মীদের সোভিয়েত ইউনিয়নে অপসারণ করে আনা হয়।[৬]

১৯৪৫ সালের জুন মানে এক বৈঠকে স্ট্যালিন জার্মান কমিউনিস্ট নেতাদের জানান যে, তিনি আশা করেছিলেন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার মাঝে ব্রিটিশদের অবস্থান ধীরে ধীরে কমে যাবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এক বা দুই বছরের মাঝে তাদের এলাকা ত্যাগ করবে এবং এরপর সোভিয়েতের সীমার মাঝে কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রিত অবিচ্ছিন্ন জার্মানি গঠনের পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।[৭] ১৯৪৬ সালের শুরুর দিকে স্ট্যালিন এবং অন্যান্য নেতারা বুলগেরিয়ান এবং যুগোস্লাভিয়ান প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করে।[৭]

সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত এলাকার মাঝে দিয়ে রেল এবং সড়ক পথে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সোভিয়েত ও পশ্চিমাদের মধ্যে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না যা ছিল এই অবরোধের পেছনে অন্যতম একটি কারণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পশ্চিমা নেতারা বার্লিনে প্রবেশের ব্যপারে সোভিয়েতের দয়ার উপর নির্ভর করেছিল।[৮] সোভিয়েত প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ টি ট্রেন এবং সেটি শুধু মাত্র একটি রেল লাইন ব্যবহার করে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল, এর বাইরে তারা একটি কার্গোও প্রবেশ করাতে পারত না। পশ্চিমারা মনে করেছিল এটি একটি সাময়িক সীমাবদ্ধতা। কিন্তু সোভিয়েত পরবর্তীকালে বিভিন্ন রুটের সম্প্রসারণের প্রস্তাবটিও বাতিল করে।[৯]

বার্লিনে প্রবেশের জন্য সোভিয়েত হামবুর্গ, বুকেবার্গ এবং ফ্র্যাঙ্কফার্ট থেকে মাত্র তিনটি আকাশ পথে প্রবেশ অনুমতি দিয়েছিল।[৯] ১৯৪৬ সালে সোভিয়েত তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে পূর্ব জার্মানিতে কৃষি সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর উত্তরে আমেরিকান কমান্ডার লুসিয়াস ডি. ক্লে পশ্চিম জার্মানিতে সোভিয়েতে ধবংস্তুপ পণ্যের চালান বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিউত্তরে সোভিয়েতরা আমেরিকান নীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরির প্রচারণা চালায় এবং চারটি দখলকৃত জোনের প্রশাসনিক কাজে বাধা সৃষ্টি করতে শুরু করে।

১৯৪৮ সালে অবরোধ শুরু আগ পর্যন্ত ট্রুমান প্রশাসন ১৯৪৯ সালে পশ্চিম জার্মান সরকার প্রতিষ্টার আমেরিকান সৈন্য পশ্চিম বার্লিনে থাকা উচিত কি না তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি।[১০]

বার্লিনের দিকে নজর এবং ১৯৪৬ এর নির্বাচন

ইউরোপকে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী পুনর্গঠন করার জন্য খুব দ্রুতই বার্লিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। সোভিয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়াচেস্লাভ মলোটভ উল্লেখ করেন,"বার্লিনের যা ঘটবে,তা জার্মানিতেও ঘটবে; জার্মানিতে যা ঘটবে, তা ইউরোপও ঘটবে"। বার্লিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল; ৪.৩ মিলিয়ন মানুষ কমে দাঁঁড়িয়েছিল ২.৪ মিলিয়নে।

নির্মমতা, জোরপূর্বক অভিবাসন, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং বিশেষকরে ১৯৪৫-১৯৪৬ সালের শীতের প্রতিকুলতার পর সোভিয়েত-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাসকারী জার্মানরা সোভিয়েতের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছিল।[৭] ১৯৪৬ সালের স্থানীয় নির্বাচনে কমিউনিস্টের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভোট পড়েছিল, বিশেষ করে বার্লিনের সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত অংশে।[৭] বার্লিনের সিংহভাগ নাগরিক কমিউনিস্ট নয় এমন ব্যক্তিদের তাদের শহরের সরকার হিসেবে নির্বাচিত করেছিল।

রাজনৈতিক বিভাজন

একটি পশ্চিমা জার্মান রাষ্ট্রের পথে যাত্রা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, একটি ঐক্যবদ্ধ ও নিরপেক্ষ জার্মানির দাবী অযৌক্তিক ছিল। তাদের রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার ব্যাডেল স্মিথ জেনারেল আইসেনহাওয়ারকে বলেছিলেন যে, "আমাদের ঘোষিত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার কোনো শর্তেই আমরা ঐক্যবদ্ধ জার্মান চাই না এবং এটিকে গ্রহণ করার ইচ্ছাও আমাদের নেই; যদি তারা আমাদের আমাদের প্রয়োজনীয়তার অধিকাংশই পূরণ করার ইচ্ছা পোষণ করে তবুও নয়।" আমেরিকান পরিকল্পনাকারীরা গোপণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, যুদ্ধের সময় পশ্চিম ইউরোপিয়ান অর্থনীতিকে পুনর্নিমাণের জন্য জার্মানিকে দরকার হবে।[১১]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটিশরা তাদের দখলকৃত এলাকার অর্থনৈতিক সমন্বয় সাধনের জন্য ১ জানুয়ারি ১৯৪৭ সালে একীভুত হয়, এটিকে বলা হয় বাইজোন(Bizone)l[৭] ১ জুন ১৯৪৮ সালে ফ্রান্স যোগদান করার পর এটির নামকরণ করা হয় ট্রাইজোন(Trizone)। ১৯৪৬ সালের মার্চের পর রাষ্ট্রগুলো প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় কার্যালয়, রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও ভোক্তাদের সংগঠনগুলোকে নিয়ে ব্রিটিশ অ্যাডভাইসারি বোর্ড(জোনেনবের‍্যাট) প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এপ্রিল সংকট এবং ক্ষুদ্র এয়ালিফট

মুদ্রা সংকট

বার্লিন এয়ারলিফটের শুরু

অবরোধের প্রারম্ভ

এয়ারলিফটের সিদ্ধান্ত

এয়ারলিফটের শুরু

ব্ল্যাক ফ্রাইডে

অপারেশন লিটল ভিটলস

সোভিয়েতের প্রতিক্রিয়া

প্রারম্ভিক প্রতিক্রিয়া

পৌরসরকারে কমিউনিস্টদের পদত্যাগের চেষ্টা

ডিসেম্বরের নির্বাচন

১৯৪৮ এর শীতকাল থেকে ১৯৪৯ এর বসন্ত

শীতের প্রস্তুতি

ইস্টার প্যারেড

ব্লকেজের সমাপ্তি

পরবর্তী ঘটনাবলি

বার্লিন সংকট ১৯৪৬-৬২

অন্যান্য উন্নয়ন

স্নায়ু যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা

এয়ারলিফটের ব্যবহৃত বিমানসমূহ

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাজ্য

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ