বেরিয়াম

রাসায়নিক মৌল

বেরিয়াম একটি রাসায়নিক মৌল যার সংকেত Ba এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৫৬। এটি রাসায়নিক মৌলের পর্যায় সারণীর দ্বিতীয় শ্রেণীর পঞ্চম মৌল। এটি নরম রুপালি রঙের ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু। বেরিয়াম ধাতু রাসায়নিক ভাবে খুব সক্রিয়, তাই প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না।

বেরিয়াম   ৫৬Ba
Barium
উচ্চারণ/ˈbɛəriəm/ (BAIR-ee-əm)
নাম, প্রতীকবেরিয়াম, Ba
উপস্থিতিsilvery gray; with a pale yellow tint[১]
পর্যায় সারণিতে বেরিয়াম
হাইড্রোজেনহিলিয়াম
লিথিয়ামবেরিলিয়ামবোরনকার্বননাইট্রোজেনঅক্সিজেনফ্লোরিননিয়ন
সোডিয়ামম্যাগনেসিয়ামঅ্যালুমিনিয়ামসিলিকনফসফরাসসালফারক্লোরিনআর্গন
পটাশিয়ামক্যালসিয়ামস্ক্যান্ডিয়ামটাইটেনিয়ামভ্যানাডিয়ামক্রোমিয়ামম্যাঙ্গানিজআয়রনCobaltNickelCopperZincGalliumGermaniumArsenicSeleniumBromineKrypton
RubidiumStrontiumYttriumZirconiumNiobiumMolybdenumTechnetiumRutheniumRhodiumPalladiumSilverCadmiumIndiumTinAntimonyTelluriumIodineXenon
CaesiumBariumLanthanumCeriumPraseodymiumNeodymiumPromethiumSamariumEuropiumGadoliniumTerbiumDysprosiumHolmiumErbiumThuliumYtterbiumLutetiumHafniumTantalumTungstenRheniumOsmiumIridiumPlatinumGoldMercury (element)ThalliumLeadBismuthPoloniumAstatineRadon
FranciumRadiumActiniumThoriumProtactiniumUraniumNeptuniumPlutoniumAmericiumCuriumBerkeliumCaliforniumEinsteiniumFermiumMendeleviumNobeliumLawrenciumRutherfordiumDubniumSeaborgiumBohriumHassiumMeitneriumDarmstadtiumRoentgeniumCoperniciumNihoniumFleroviumMoscoviumLivermoriumTennessineOganesson
Sr

Ba

Ra
caesiumbariumlanthanum
পারমাণবিক সংখ্যা৫৬
আদর্শ পারমাণবিক ভর
গ্রুপগ্রুপ ২: মৃৎক্ষার ধাতু
পর্যায়পর্যায় ৬
ব্লক  s-block
ইলেকট্রন বিন্যাস[Xe] 6s2
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা2, 8, 18, 18, 8, 2
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাsolid
গলনাঙ্ক1000 কে ​(727 °সে, ​1341 °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক2118 K ​(1845 °সে, ​3353 °ফা)
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে)3.51 g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
তরলের ঘনত্বm.p.: 3.338 g·cm−৩
ফিউশনের এনথালপি7.12 kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি142 kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব28.07 J·mol−১·K−১
বাষ্প চাপ
P (Pa)১০১০০১ k১০ k১০ k
at T (K)91110381185138816862170
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা+2, +1 ​(a strongly basic oxide)
তড়িৎ-চুম্বকত্ব0.89 (পলিং স্কেল)
আয়নীকরণ বিভব১ম: 502.9 kJ·mol−১
২য়: 965.2 kJ·mol−১
৩য়: 3600 kJ·mol−১
পারমাণবিক ব্যাসার্ধempirical: 222 pm
সমযোজী ব্যাসার্ধ215±11 pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ268 pm
বিবিধ
কেলাসের গঠন ​body-centered cubic (bcc)
Body-centered cubic জন্য কেলাসের গঠনbarium
শব্দের দ্রুতিপাতলা রডে: 1620 m·s−১ (at 20 °সে)
তাপীয় প্রসারাঙ্ক20.6 µm·m−১·K−১ (২৫ °সে-এ)
তাপীয় পরিবাহিতা18.4 W·m−১·K−১
তড়িৎ রোধকত্ব ও পরিবাহিতা২০ °সে-এ: 332 nΩ·m
চুম্বকত্বparamagnetic[২]
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক13 GPa
কৃন্তন গুণাঙ্ক4.9 GPa
আয়তন গুণাঙ্ক9.6 GPa
(মোজ) কাঠিন্য1.25
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা7440-39-3
ইতিহাস
আবিষ্কারCarl Wilhelm Scheele (1772)
প্রথম বিচ্ছিন্ন করেনHumphry Davy (1808)
[[{{{name_bn}}} আইসোটোপ]]
টেমপ্লেট:তথ্যছক হাইড্রোজেন আইসোটোপ এর অস্তিত্ব নেই
isoNAঅর্ধায়ুDMDE (MeV)DP
130Ba0.11%(0.5–2.7)×1021 yεε2.620130Xe
132Ba0.10%stable
133Basyn10.51 yε0.517133Cs
134Ba2.42%stable
135Ba6.59%stable
136Ba7.85%stable
137Ba11.23%stable
138Ba71.70%stable
· তথ্যসূত্র

বেরিয়ামের প্রধান খনিজ হলো ব্যারাইট (বেরিয়াম সালফেট, BaSO4)[৩] এবং উইথারাইট (বেরিয়াম কার্বনেট, BaCO3)। বেরিয়াম নামটি গ্রীক শব্দ βαρὺς "ব্যারিস" থেকে এসেছে। যার অর্থ 'ভারী'। বেরিক হলো বেরিয়ামের বিশেষণ রূপ। ১৭৭৪ সালে বেরিয়ামকে একটি নতুন মৌল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি জানা না থাকায় ১৮০৮ সাল পর্যন্ত এই ধাতুটিকে আলাদা করা সম্ভব হয়নি।

শিল্পক্ষেত্রে বেরিয়ামের কিছু ব্যবহার রয়েছে। ভ্যাকুয়াম টিউব এবং ক্যাথোড টিউবে বেরিয়াম যৌগের প্রলেপ ব্যবহার করা হয়। এটি ইট্রিয়াম বেরিয়াম কপার অক্সাইড, YBCO নামে উচ্চ-তাপমাত্রা সুপারকন্ডাক্টর এবং ইলেক্ট্রোসিরামিকসের একটি উপাদান। মাইক্রোস্ট্রাকচারের মধ্যে কার্বন দানার আকার কমাতে ইস্পাত এবং ঢালাই লোহাতে বেরিয়ামের যৌগ যোগ করা হয়। আতশবাজির আলোর রঙ সবুজ করার জন্য বেরিয়ামের যৌগ মেশানো। পেট্রোলিয়াম শিল্পে তেল কূপ ড্রিলিং-এ বেরিয়াম সালফেটের ব্যবহার দেখা যায়। চিকিৎসাবিদ্যায় বিশুদ্ধ বেরিয়াম সালফেটের প্রয়োগ রয়েছে। মানুষের পরিপাকযন্ত্রের এক্স-রে চিত্র তুলতে রোগীকে বেরিয়াম সালফেটের লেই খেতে হয়। যাকে আমরা 'বেরিয়াম মিল‍্স' বলে থাকি। জলে দ্রবণীয় বেরিয়াম যৌগগুলি বিষাক্ত এবং এগুলি ইঁদুর দমনে রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্য

ভৌত ধর্ম

বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জারিত বেরিয়াম

বেরিয়াম একটি নরম, রূপালী-সাদা ধাতু। অতি বিশুদ্ধ হলে সামান্য সোনালী আভাযুক্ত হয়ে থাকে।[৪]: বেরিয়াম ধাতুর রূপালী-সাদা রঙ বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়। অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সাইডের পাতলা একটি গাঢ় ধূসর স্তর তৈরি করে। বেরিয়াম জলের থেকে ৩.৫১ গুণ ভারী। এর উচ্চ বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা রয়েছে। বেরিয়াম বিশুদ্ধ করা কঠিন তাই এর অনেক বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি।[৪]:

সাধারণ তাপমাত্রা এবং চাপে, বেরিয়াম ধাতু একটি শরীর-কেন্দ্রিক ঘন কাঠামো (BCC) তৈরি করে, যার প্রতিটি বেরিয়াম-বেরিয়াম পরমাণুর দূরত্ব ৫০৩ পিকোমিটার। এই পরমাণুর দূরত্ব প্রায় ১.৮×১০−৫/ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে গরম করার সাথে প্রসারিত হয়।[৪]: এটি খুব নরম ধাতু। মোজ স্কেলে এর কাঠিন্য মাত্রা ১.২৫।[৪]: বেরিয়াম ধাতুর গলনাঙ্ক ১,০০০ ডিগ্রি কেলভিন (৭৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১,৩৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।[৫]:৪–৪৩ এই তাপমাত্রা হালকা ধাতু স্ট্রনশিয়াম (১,০৫০ ডিগ্রি কেলভিন বা ৭৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১,৪৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)[৫]:৪–৮৬ এবং ভারী ধাতু রেডিয়াম (৯৭৩ ডিগ্রি কেলভিন বা ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১,২৯২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)-এর মধ্যবর্তী।[৫]:৪–৭৮ বেরিয়াম ধাতুর স্ফুটনাঙ্ক ২,১৭০ ডিগ্রি কেলভিন (১,৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩,৪৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) অর্থাৎ স্ট্রনশিয়ামের (১,৬৫৫ ডিগ্রি কেলভিন বা ১,৩৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২,৫১৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থেকে বেশি।[৫]:৪–৮৬ বেরিয়ামের ঘনত্ব (৩.৬২ গ্রাম/সেমি)[৫]:৪–৪৩ অর্থাৎ স্ট্রনশিয়াম (২.৩৬ গ্রাম/সেমি)[৫]:৪–৮৬ এবং রেডিয়াম (≈৫ গ্রাম/সেমি) এর মধ্যবর্তী।[৫]:৪–৭৮

রাসায়নিক বিক্রিয়া

বেরিয়াম রাসায়নিকভাবে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং স্ট্রনশিয়ামের মতো। তবে রাসায়নিকভাবে আরও বেশি সক্রিয়। এটি সাধারণত +২ জারণ অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে কিছু বিরল এবং অস্থির আণবিক অবস্থার যৌগও রয়েছে। শুধুমাত্র গ্যাসীয় পর্যায়ে মধ্যে যেমন রয়েছে BaF যৌগটি।[৪]: তবে ২০১৮ সালে গ্রাফাইট ইন্টারক্যালেশন যৌগে একটি বেরিয়াম (I) যৌগ পাওয়া গিয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়।[৬] অক্সিজেন, সালফার, সেলেনিয়াম, টেলুরিয়াম অর্থাৎ এই শ্রেণীর মৌলগুলির সাথে বেরিয়ামের বিক্রিয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। তবে অক্সিজেন বা বাতাসের সাথে বিক্রিয়া সাধারণ তাপমাত্রায় ঘটে। এই কারণে, ধাতব বেরিয়ামকে প্রায়শই তেলের নীচে বা নিষ্ক্রিয় পরিমণ্ডলে সংরক্ষণ করা হয়।[৪]:কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সিলিকন এবং হাইড্রোজেন প্রভৃতি অন্যান্য অধাতুর সাথে বেরিয়ামের বিক্রিয়াগুলি সাধারণত তাপ উৎপাদক হয়। তাই তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিয়া দ্রুত হয়।[৪]:২–৩ জল এবং অ্যালকোহলের সাথে বিক্রিয়াগুলিও খুবই তাপ উৎপাদক এবং সেইসঙ্গে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়:[৪]:

Ba + 2 ROH → Ba(OR)2 + H2↑ (R একটি অ্যালকাইল গ্রুপ অথবা একটি হাইড্রোজেন পরমাণু)

বেরিয়াম অ্যামোনিয়ার সাথে বিক্রিয়া করে Ba(NH3)6 এর মতো জটিল যৌগ তৈরি করে।[৪]:

বেরিয়াম ধাতু সহজেই অ্যাসিড দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে সালফিউরিক অ্যাসিড একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। কারণ বিক্রিয়ার সময় বেরিয়াম ধাতুর উপর অদ্রবণীয় বেরিয়াম সালফেটের আস্তরণ পড়ে। তাই বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।[৭] অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা, সীসা, টিন প্রভৃতি ধাতুর সাথে বেরিয়াম সংকর ধাতু তৈরি করতে পারে।[৮]

যৌগ

বেরিয়াম লবণ কঠিন অবস্থায় সাধারণত সাদা রঙের হয়। তবে দ্রবীভূত অবস্থায় এটি বর্ণহীন।[৯] বেরিয়ামের হ্যালাইড যৌগগুলি ছাড়া ক্যালসিয়াম এবং স্ট্রনশিয়ামের একই ধরনের যৌগের চেয়ে বেরিয়ামের যৌগগুলি ঘন হয়। আলকেমিস্টদের কাছে বেরিয়াম হাইড্রক্সাইড "ব্যারাইটা" নামে পরিচিত ছিল। তারা বেরিয়াম কার্বনেট গরম করে এটি তৈরি করেছিলেন। ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইডের মতন এর জলীয় দ্রবণ খুব কমই কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। সেই কারণে বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইডের ওঠানামার উপর এটি সংবেদনশীল নয়। তাই pH মিটার ক্রমাঙ্কনে বেরিয়াম হাইড্রক্সাইড ব্যবহার করা হয়।

উদ্বায়ী বেরিয়াম যৌগগুলি সবুজ থেকে ফ্যাকাশে সবুজ রঙের শিখায় জ্বলে। এই রঙ দেখে বেরিয়াম যৌগ সনাক্ত করা যায়।৪৫৫.৪, ৪৯৩.৪, ৫৫৩.৬, এবং ৬১১.১ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বর্ণালী রেখা সবুজ রঙ সৃষ্টি করে।[৪]:

বেরিয়ামের জৈব যৌগ অর্থাৎ অর্গানোবেরিয়াম যৌগগুলি নিয়ে গবেষণা চলছে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত অর্গানোবেরিয়াম যৌগ দুটি হলো ডাইঅ্যালকিলবেরিয়াম এবং অ্যালকাইলহ্যালোবেরিয়াম।[৪]:

আইসোটোপ

বেরিয়ামের দৃশ্যমান বর্ণালী

বেরিয়ামের স্থায়ী আইসোটোপের সংখ্যা সাত। পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে পাওয়া বেরিয়াম হলো সাতটি আইসোটোপের মিশ্রণ। সেগুলি হলো বেরিয়াম-১৩০, ১৩২, এবং ১৩৪ থেকে ১৩৮।[১০] বেরিয়াম-১৩০ খুব ধীর গতিতে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় হয়ে জেনন-১৩০-এ পরিণত হয়। এর প্রাচুর্য প্রাকৃতিক বেরিয়ামের শতকরা প্রায় ০.১% ভাগ।[১১] তাত্ত্বিকভাবে, বেরিয়াম-১৩২ একইভাবে দ্বিগুণ বিটা কণা ক্ষয় করে জেনন-১৩২ হতে পারে। যদিও এই ক্ষয় সনাক্ত করা হয়নি।[১২] তবে আশার কথা এই আইসোটোপগুলির তেজস্ক্রিয়তা এতটাই দুর্বল যে এর থেকে বিপদের সম্ভাবনা খুবই কম।

বেরিয়ামের স্থায়ী আইসোটোপগুলির মধ্যে, বেরিয়াম-১৩৮ সমস্ত বেরিয়ামের শতকরা ৭১.৭ ভাগ। ভর সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য আইসোটোপের প্রাচুর্য কমতে থাকে।[১৩]

ভর সংখ্যা ১১৪ এবং ১৫৩ এর মধ্যে বেরিয়ামের মোট ৪০টি পরিচিত আইসোটোপ রয়েছে। সবচেয়ে স্থিতিশীল কৃত্রিম রেডিওআইসোটোপ হল বেরিয়াম-১৩৩। এর অর্ধ-জীবন প্রায় ১০.৫১ বছর। অন্য পাঁচটি আইসোটোপের অর্ধ-জীবন এক দিনের চেয়ে বেশি।[১২] বেরিয়ামের ১০টি মধ্য অবস্থার আইসোটোপ রয়েছে। এগুলির মধ্যে বেরিয়াম-১৩৩এম১ আইসোটোপটি সবচেয়ে স্থিতিশীল। এর অর্ধ-জীবন প্রায় ৩৯ ঘন্টা।[১২]

ইতিহাস

স্যার হামফ্রি ডেভি, প্রথম বেরিয়াম ধাতু আলাদা করেছিলেন

মধ্যযুগের প্রথমের দিকেই আলকেমিস্টরা বেরিয়াম খনিজ সম্পর্কে জানতেন। ইতালির বোলোগনার কাছে আগ্নেয়গিরির শিলায় মসৃণ নুড়ির মতো খনিজ ব্যারাইটের পাথর পাওয়া গিয়েছিলো। তাই একে "বোলোগনা পাথর" বলা হয়। আলকেমিস্টরা এইসব মসৃণ নুড়ির পাথরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তার কারণ আলোর সংস্পর্শে এইসব নুড়ি বছরের পর বছর ধরে জ্বলজ্বল করতো।[১৪] ১৬০২ সালে ভি. ক্যাসিওরোলাস ব্যারাইটের সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশিয়ে উত্তপ্ত করে এর অনুপ্রভা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিলেন।[৪]:

১৭৭২ সালে কার্ল ভিলহেল্ম শেলে ব্যারাইট খনিজে একটি নতুন উপাদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি এই খনিজ থেকে শুধুমাত্র বেরিয়াম অক্সাইড তৈরি করেন। কিন্তু ধাতব বেরিয়ামকে আলাদা করতে পারেনি। দুই বছর পর একই ধরনের গবেষণায় জোহান গটলিব গাহনও বেরিয়াম অক্সাইডকে আলাদা করেন। গাইটন দে মরভেউ সর্বপ্রথম বেরিয়াম অক্সাইডকে "ব্যারোট" নাম দেন। আন্টোইন ল্যাভয়েসিয়ার এই নামটি পরিবর্তন করে ফরাসি ভাষায় ব্যারাইট রাখেন। ল্যাটিন ভাষায় এটি আবার পরিবর্তিত হয়ে ব্যারইটা হয়। এছাড়াও ১৮ শতকে ইংরেজ খনিজবিদ উইলিয়াম উইথারিং, কম্বারল্যান্ড নামে সীসার একটি খনিতে ভারী খনিজের উল্লেখ করেন, যা এখন উইথেরিট হিসাবে পরিচিত। ১৮০৮ সালে ইংল্যান্ডের স্যার হামফ্রি ডেভি গলিত বেরিয়াম লবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ করে ধাতব বেরিয়ামকে সর্বপ্রথম আলাদা করতে সক্ষম হন।[১৫] ক্যালসিয়াম ধাতুর সাথে সাদৃশ্য রেখে ব্যারাইটার নামানুসারে ডেভি এই ধাতুটির নামকরণ করেন "বেরিয়াম"।[১৪] রবার্ট বুনসেন এবং অগাস্টাস ম্যাথিসেন বেরিয়াম ক্লোরাইড এবং অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের গলিত মিশ্রণের তড়িৎ বিশ্লেষণ করে বিশুদ্ধ বেরিয়াম তৈরি করতে সক্ষম হন।[১৬][১৭]

১৮৮০-এর দশকে ব্রিন পদ্ধতিতে বেরিয়াম পারক্সাইড থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে বেরিয়াম পারক্সাইড ব্যবহার করা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে বেরিয়াম অক্সাইড ৫০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসের সাথে বিক্রিয়া করে বেরিয়াম পারক্সাইড তৈরি করে। পরে এটি ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভেঙ্গে গিয়ে অক্সিজেন নির্গত হয়:[১৮][১৯]

2 BaO + O2 ⇌ 2 BaO2

তবে ১৯০০-এর দশকের গোড়ার দিকে তরলীকৃত বাতাসের আংশিক পাতন দ্বারা বিশুদ্ধ অক্সিজেন তৈরির পদ্ধতি চালু হওয়ায় বিশুদ্ধ অক্সিজেনের উৎপাদনে বেরিয়াম পারক্সাইডের ব্যবহার কমে আসে।

১৯০৮ সালে পাচনতন্ত্রের এক্স-রে ইমেজিং এ রেডিওকনট্রাস্ট এজেন্ট হিসাবে বেরিয়াম সালফেট প্রথম প্রয়োগ করা হয়।[২০]

ভূত্বকে প্রাচুর্য ও উৎপাদন

পৃথিবীর ভূত্বকে বেরিয়ামের প্রাচুর্য শতকরা ০.০৪২৫ ভাগ এবং সমুদ্রের জলে বেরিয়ামের মাত্রা প্রতি লিটারে ১৩ মাইক্রো গ্রাম। বেরিয়ামের প্রধান বাণিজ্যিক উৎস হল ব্যারাইট খনিজ। একে হেবি স্পারও বলা হয়। এটি একটি বেরিয়াম সালফেট খনিজ।[৪]: বিশ্বের অনেক জায়গায় এই খনিজটি পাওয়া যায়। বেরিয়ামের আরেকটি বাণিজ্যিক উৎস হলো উইথারাইট। যদিও এটি ব্যারাইটের চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি বেরিয়াম কার্বনেট খনিজ। এই খনিজটি প্রধানত ব্রিটেন, রোমানিয়া এবং সাবেক ইউএসএসআর-এ পাওয়া যায়।[৪]:

ব্যারাইট, বাম থেকে ডানে: সময়ের সাথে সাথে উৎপাদনের পরিমাণের রেখাচিত্র এবং ২০১০ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদক দেশগুলির উৎপাদনের অংশ মানচিত্রে দেখানো হয়েছে।

ব্যারাইটের মজুদ ভাণ্ডার ৭০ কোটি থেকে ২০০ কোটি টন অনুমান করা হয়। ১৯৮১ সালে সর্বাধিক উৎপাদন ৮৩ লক্ষ টন হয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ৭-৮% বেরিয়াম ধাতু বা এর যৌগগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।[৪]: ব্যারাইটের উৎপাদন ১৯৯৬ সালে ৫৬ লক্ষ টন থেকে বেড়ে ২০০৫ সালে হয় ৭৬ লক্ষ টন। ২০১১ সালে বেড়ে হয় ৭৮ লক্ষ টন।এই উৎপাদনের শতকরা ৫০ ভাগের বেশি চীন উৎপাদন করেছিলো। তারপরে ভারত (২০১১ সালে ১৪%), মরক্কো (৮.৩%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৮.২%), তুরস্ক (২.৫%), ইরান এবং কাজাখস্তান (২.6৬% প্রত্যেকে)।[২১]

খননকৃত আকরিক ধুয়ে, চূর্ণ করে কোয়ার্টজ থেকে আলাদা করা হয়। যদি বেরিয়ামের আকরিক কোয়ার্টজের মধ্যে খুব গভীরভাবে প্রবেশ করে থাকে বা লোহা, দস্তা বা সীসার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়, তাহলে আকরিক গাঢ়ীকরণে ফ্রথ ফ্লোটেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এখানে ব্যারাইটের ৯৮% বিশুদ্ধতা থাকে। লোহা এবং সিলিকন-ডাই-অক্সাইডের অশুদ্ধিসহ বিশুদ্ধতা ৯৫% এর কম হওয়া উচিত নয়।[৪]: গাঢ়ীকৃত আকরিককে কার্বন দ্বারা বিজারিত করে বেরিয়াম সালফাইডে পরিণত করা হয়:[৪]:

3 BaO + 14 Al → 3 BaAl4 + Al2O3

জলে দ্রবণীয় বেরিয়াম সালফাইড থেকে সাধারণত অন্যান্য বেরিয়াম যৌগ তৈরি করা হয়। অক্সিজেনের সঙ্গে বেরিয়াম সালফাইডের বিক্রিয়া করলে বেরিয়াম সালফেট উৎপন্ন হয়। নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় তৈরি হয় বেরিয়াম নাইট্রেট। আবার জলীয় কার্বন ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে বেরিয়াম সালফাইডের বিক্রিয়া করলে বেরিয়াম কার্বনেট তৈরি হয়। এই ভাবে নানা বেরিয়াম যৌগ তৈরি করা যায়।[৪]: বেরিয়াম নাইট্রেটকে উচ্চ তাপে ভেঙ্গে বেরিয়াম অক্সাইড উৎপাদন করা যেতে পারে।[৪]: বেরিয়াম অক্সাইডকে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর সাহায্যে ১,১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিজারিত করে বেরিয়াম ধাতু তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তঃধাতু যৌগ বেরিয়াম টেট্রাঅ্যালুমিনিয়াম (BaAl4) প্রথমে উৎপন্ন হয়:[৪]:

3 BaO + 14 Al → 3 BaAl4 + Al2O3

BaAl4 হলো বেরিয়াম ধাতু তৈরির সময় বেরিয়াম অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করা একটি অন্তর্বর্তী যৌগ। উল্লেখ্য যে সমস্ত বেরিয়াম অক্সাইডকে কিন্তু এভাবে বিজারিত যায় না।[৪]:

8 BaO + BaAl4 → Ba↓ + 7 BaAl2O4

বিক্রিয়ায় যে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড গঠিত হয় তার সাথে অবশিষ্ট বেরিয়াম অক্সাইড বিক্রিয়া করে:[৪]:

BaO + Al2O3 → BaAl2O4

এবং সামগ্রিক বিক্রিয়াটি হলো:[৪]:

4 BaO + 2 Al → 3 Ba↓ + BaAl2O4

উৎপন্ন বেরিয়াম বাষ্পকে আর্গন বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতিতে ঘনীভূত করে ছাঁচে ঢেলে ধাতুকে প্যাকেটজাত করা হয়।[৪]: এই পদ্ধতিটি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে অতি বিশুদ্ধ বেরিয়াম পাওয়া যায়।[৪]: সাধারণভাবে বিক্রি হওয়া ধাতব বেরিয়াম প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ। যার প্রধান অবিশুদ্ধি হলো স্ট্রনশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম (০.৮% এবং ০.২৫% পর্যন্ত) এবং অন্যান্য অবিশুদ্ধিগুলি ০.১% এর কম থাকে।[৪]:

১,২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সিলিকনের সাথে বিক্রিয়ায় বেরিয়াম মেটাসিলিকেট তৈরি হয়।[৪]: ধাতব বেরিয়াম তৈরি করতে সাধারণত তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না কারণ বেরিয়াম সহজেই গলিত হ্যালাইডে দ্রবীভূত হয়ে অশুদ্ধির মাত্রা বাড়ায়।[৪]:

ন্যাট্রোলাইটে বেনিটোয়েট স্ফটিক। খনিজটির নামকরণ করা হয়েছে সান বেনিটো কাউন্টির সান বেনিটো নদীর জন্য, যেখানে এটি প্রথম পাওয়া গিয়েছিল।

রত্নপাথর

বেরিয়াম খনিজ বেনিটোইটকে (বেরিয়াম টাইটানিয়াম সিলিকেট) একটি খুব বিরল নীল ফ্লুরোসেন্ট রত্ন পাথর। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার সরকারী রাষ্ট্রীয় রত্ন।

সমুদ্রের জলে বেরিয়াম

সমুদ্রের জলে বেরিয়াম Ba2+ আয়ন হিসাবে থাকে। সমুদ্রের জলে বেরিয়ামের মাত্রা প্রায় ১০৯ মোল/কিলোগ্রাম।[২২] বেরিয়াম সমুদ্রের জলে বেরিয়াম সালফেট বা ব্যারাইট হিসাবে থাকে।[২৩] সমুদ্রের জলে বেরিয়াম জীবজগৎকে পুষ্টি যোগায় বলে মনে করা হয়।[২৪] সমুদ্রের জলে বেরিয়ামের স্থিতি প্রায় দশহাজার সাল।[২২]

উচ্চ নদী সঙ্গম এবং শক্তিশালী উত্থান অঞ্চলগুলি ছাড়া সমুদ্রের জলে বেরিয়ামের ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।[২৫] তবে মহাসাগরে উপরের দিকে বেরিয়ামের ঘনত্বের সামান্য হ্রাস দেখা যায়।[২৫] বেরিয়ামের আইসোটোপিক মানে স্থানীয় বা স্বল্পমেয়াদী প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বেসিন-স্কেল ব্যালেন্স দেখায়।[২৫]

ব্যবহার

ধাতু এবং সংকর ধাতু

বেরিয়াম ধাতু হিসাবে বা অ্যালুমিনিয়ামের সাথে মিশিয়ে টিভির পিকচার টিউব বা এর মতন ভ্যাকুয়াম টিউব থেকে অবাঞ্ছিত গ্যাস অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়।[৪]: বেরিয়ামের কম বাষ্প চাপ এবং অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলের প্রতি বিক্রিয়াশীলতার কারণে এটি এই উদ্দেশ্যে উপযুক্ত। এমনকি এটি আংশিকভাবে নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলিকে নিজের স্ফটিক জালিতে দ্রবীভূত করে অপসারণ করতে পারে। নলবিহীন এলসিডি, এলইডি এবং প্লাজমা সেটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে এই ব্যবহারটি ধীরে ধীরে কমে আসছে।[৪]:

ধাতব বেরিয়ামের একটি গৌণ ব্যবহার হলো সিলুমিন (অ্যালুমিনিয়াম-সিলিকন সংকর) তৈরি করতে। ধাতব বেরিয়ামের সংযোজনে সিলুমিনের গঠন পরিমার্জিত হয়। এছাড়া[৪]:

  • যন্ত্রে ব্যবহৃত বিয়ারিং-এর সংকর ধাতুতে;
  • সীসা-টিন সোল্ডারযুক্ত ধাতুর ভৌত ধর্মের উন্নতি করতে;
  • স্পার্ক প্লাগে নিকেল সংকর ধাতুর সঙ্গে;
  • ইস্পাত এবং ঢালাই লোহা শিল্পে সংযোজক হিসাবে;
  • ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন এবং অ্যালুমিনিয়াম সহ উচ্চ-গুণসম্পন্ন ইস্পাত তৈরিতে;

ধাতব বেরিয়ামের ব্যবহার দেখা যায়।

বেরিয়াম সালফেট ও ব্যারাইট

বেরিয়াম-ভরা অন্ত্রের রেডিওগ্রাফে অ্যামিবিয়াসিস দেখা যাচ্ছে

বেরিয়াম সালফেট (খনিজ ব্যারাইট, BaSO4) তেল ও গ্যাস কূপের ড্রিলিং তরল হিসাবে পেট্রোলিয়াম শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[৫]:৪–৫ অধঃক্ষিপ্ত বেরিয়াম সালফেট যৌগকে "ব্ল্যাঙ্ক ফিক্স" বলা হয়। শব্দটি ফরাসি শব্দ থেকে এসেছে। এর মানে হলো "স্থায়ী সাদা"। বেরিয়াম সালফেট যৌগ রঙ এবং বার্নিশে ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিক এবং রাবারশিল্পে ফিলার হিসাবে, কাগজ শিল্পে রঙ্গক হিসাবে এবং ন্যানো প্রযুক্তিতে বেরিয়াম সালফেটের ব্যাবহার দেখা যায়। কিছু পলিমার পদার্থ যেমন ইপোক্সির ভৌত ধর্মের বৈশিষ্ট্য উন্নত করতে বেরিয়াম সালফেট যৌগ ব্যবহার করা হয়।[৪]:

বেরিয়াম সালফেটের বিষাক্ততা কম এবং ঘনত্ব (৪.৫ গ্রাম/সেমি3) তুলনামূলকভাবে বেশি। এই কারণে চিকিৎসাবিদ্যায় বিশুদ্ধ বেরিয়াম সালফেট পাচনতন্ত্রের এক্স-রে চিত্র তুলতে ব্যবহৃত হয়। মানুষের পরিপাকযন্ত্রের এক্স-রে চিত্র তুলতে রোগীকে বেরিয়াম সালফেটের লেই খেতে হয়।[৫]:৪–৫লিথোপোন, একটি রঙ্গক। এতে বেরিয়াম সালফেট এবং জিঙ্ক সালফাইড যৌগ থাকে। এটি একটি স্থায়ী সাদা পদার্থ যা সালফাইডের সংস্পর্শে কালো রঙে পরিণত হয় না।[২৬]

অন্যান্য বেরিয়াম যৌগ

বেরিয়াম যৌগ মেশানো সবুজ রঙের আতশবাজি

বেরিয়াম সালফেটের তুলনায় বেরিয়ামের অন্যান্য যৌগগুলির ব্যবহার বেশ কম। এর একটি কারণ হলো দ্রবণীয় বেরিয়াম যৌগ বিষাক্ত। বেরিয়াম সালফেট জলে অদ্রবণীয় বলে বিষাক্ততা নেই। বেরিয়াম কার্বনেট ইঁদুরের বিষ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

  • ইলেকট্রনের নির্গমন সহজ করতে ফ্লুরোসেন্ট বাতির তড়িৎদ্বারের উপর বেরিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ দেওয়া হয়।
  • বেরিয়ামের পারমাণবিক ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বেরিয়াম কার্বনেট কাচের প্রতিসরণকারী সূচক এবং দীপ্তি বাড়ায়।[৫]:৪–৫ এবং ক্যাথোড রশ্মি নলে (সিআরটি) টিভি সেট থেকে এক্স-রে অবাঞ্ছিত নির্গমণ কমায়।[৪]:১২–১৩
  • আতশবাজিতে হলুদ বা "আপেল" সবুজ রঙ দেখাতে সাধারণত বেরিয়াম নাইট্রেট মেশানো হয়।[২৭] উজ্জ্বল সবুজের জন্য বেরিয়াম মনোক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়।
  • রেললাইন ওয়েল্ডিং করে জোড়া লাগাতে যে অ্যালুমিনোথার্মিক (থার্মাইট) পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় তাতে বেরিয়াম পারঅক্সাইড অনুঘটক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। গোলাবারুদে সবুজ রঙের ছটা আনতে বেরিয়াম পারঅক্সাইড মেশানো হয়। বেরিয়াম পারঅক্সাইড বিরঞ্জক পদার্থ হিসাবেও কাজে লাগে।[২৮]
  • ইলেক্ট্রোসিরামিক শিল্পে বেরিয়াম টাইটানেটের ব্যবহার দেখা যায়।[২৯]
  • বেরিয়াম ফ্লোরাইডের বিস্তৃত স্বচ্ছতার কারণে আলোক বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়।[৩০]
  • তরল নাইট্রোজেন দ্বারা শীতল করা প্রথম উচ্চ-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টর ছিল ইট্রিয়াম বেরিয়াম কপার অক্সাইড (YBCO)। যার অবস্থান্তর তাপমাত্রা ছিল ৯৩ ডিগ্রি কেলভিন (−১৮০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) যা নাইট্রোজেনের স্ফুটনাঙ্কের তাপমাত্রা (৭৭ ডিগ্রি কেলভিন বা −১৯৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অতিক্রম করেছে।[৩১]

বিষাক্ততা

বেরিয়াম
ঝুঁকি প্রবণতা
জিএইচএস চিত্রলিপি
জিএইচএস সাংকেতিক শব্দবিপদজনক
জিএইচএস বিপত্তি বিবৃতিH228, H260, H301, H314
জিএইচএস সতর্কতামূলক বিবৃতিP210, P231+232, P260, P280, P303+361+353, P304+340+310, P305+351+338
এনএফপিএ ৭০৪
Health code 0: Exposure under fire conditions would offer no hazard beyond that of ordinary combustible material. E.g., sodium chlorideFlammability code 3: Liquids and solids that can be ignited under almost all ambient temperature conditions. Flash point between 23 and 38 °C (73 and 100 °F). E.g., gasoline)Reactivity (yellow): no hazard codeSpecial hazard W: Reacts with water in an unusual or dangerous manner. E.g., cesium, sodium
W

বেরিয়াম ধাতু রাসায়নিকভাবে খুব সক্রিয়। সেই কারণে শুধুমাত্র বেরিয়াম যৌগগুলির বিষাক্ততার তথ্য পাওয়া যায়।[৩৩] দ্রবণীয় বেরিয়াম যৌগগুলি বিষাক্ত। কম মাত্রায়, বেরিয়াম আয়ন পেশী উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। উচ্চ মাত্রায় বেরিয়াম আয়ন স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের অনিয়মতা, কাঁপুনি, দুর্বলতা, উদ্বেগ, শ্বাসকষ্ট এবং পক্ষাঘাত হয়। বেরিয়াম আয়ন পটাশিয়াম আয়ন চ্যানেল ব্লক করার কারণে এই বিষাক্ততা হতে পারে, যা স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।[৩৪] জলে দ্রবণীয় বেরিয়াম যৌগ (অর্থাৎ বেরিয়াম আয়ন) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য অঙ্গ হল চোখ, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, হৃৎপিণ্ড, শ্বাসতন্ত্র এবং ত্বক।[৩৩] জলে দ্রবণীয় বেরিয়াম যৌগের ফলে অন্ধত্বও হতে পারে। [৩৩]বেরিয়াম ক্যান্সারসৃষ্টিকারী পদার্থ নয়।[৩৩] এর উপস্থিতিতে জৈব পদার্থ জমা হয় না।[৩৫][৩৬] তবে জলে অদ্রবণীয় মিহি বেরিয়াম যৌগ শ্বাস-প্রশ্বাসের ধুলোর সঙ্গে ফুসফুসে জমা হতে পারে। এর ফলে ব্যারিটোসিস নামক পেশাগত রোগের অবস্থার সৃষ্টি হয়।[৩৭] বেরিয়ামের অদ্রবণীয় সালফেট যৌগ বিষাক্ত নয়। তাই পরিবহন নিয়মে বিপজ্জনক পণ্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় না।[৪]:বেরিয়াম ধাতু রাসায়নিকভাবে খুব সক্রিয় হওয়ায় দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া এড়াতে বেরিয়াম ধাতুকে আর্গন বায়ুমণ্ডলে বা খনিজ তেলের নিচে রাখা হয়। বাতাসের সাথে থাকলে বেরিয়াম ধাতুতে আগুন লেগে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। আর্দ্রতা, ঘর্ষণ, তাপ, স্ফুলিঙ্গ, শিখা, স্থির বিদ্যুৎ, জারক এবং অ্যাসিডের সংস্পর্শ এড়ানো উচিত।[৩৩]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ