ভারতের কৃষি

ভারতে কৃষির ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রায় দশ হাজার বছর আগে এই ভূখণ্ডে কৃষিকাজের সূচনা হয়।

ভারতের কৃষক
ভারতের প্রধান কৃষি অঞ্চল: P ডাল, S আখ, J পাট, Cn নারকেল, C তুলা, ও T চা.
ভারতের কৃষক, দুর্গাপূজার মণ্ডপচিত্র, কলকাতা, ২০১০

বর্তমানে ভারত কৃষি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের জিডিপি-তে কৃষি এবং বনবিদ্যা, কাষ্ঠশিল্প ইত্যাদি কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলির অবদান ১৬.৬ শতাংশ। ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশই এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত।[১] জিডিপি-তে কৃষিক্ষেত্রের অবদান বর্তমানে অনেকটা কমলেও, এই ক্ষেত্র আজও ভারতের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী।

দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারকেল, চা,পাট, আদা, হরিদ্রা ও কালো মরিচ,আম, লেবু,পেঁপে,ফুলকপি, উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম।[২] কফি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে ষষ্ঠ।[৩] গবাদি পশুর সংখ্যার হিসেবেও ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম (২৮১,০০০,০০০)।[৪] গম, ধান, আখ, চিনাবাদাম,পেঁয়াজ ও অন্তর্দেশীয় মৎস্য উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। [৫] তামাক উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়।[৫] বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়। কলা ও সাপোটা উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম।[৫]

ভারতে ধান ও গম উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।[৬]

ভারতের কৃষির বৈশিষ্ট্য

1 জীবসত্তা ভিত্তিক কৃষি

2 জনসংখ্যার চাপ

3 কৃষিতে পশুশক্তির প্রধান

ওও

ইতিহাস

আনুমানিক ৯০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ ভারত ভূখণ্ডে কৃষিব্যবস্থার সূচনা ঘটে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৃক্ষরোপণ এবং শস্য উৎপাদন ও পশুপালন ছিল এই ব্যবস্থার মূল উৎস।[৭] উন্নততর প্রযুক্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে কৃষিকাজের উন্নতি ঘটতে থাকলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা সুস্থিত হয়।[৮][৯] বছরে দুইবার বর্ষাকাল হওয়ার দরুন সেই যুগে বছরে দুইবার চাষ আবাদ করা হত।[১০] তৎকালীন বাণিজ্যপথের মাধ্যমে ভারতে উৎপাদিত দ্রব্যাদি পৌঁছে যেত বিশ্বের বাজারে এবং ভারতীয়রাও বিদেশী পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হত।[১০][১১] ভারতীয়দের জীবনযাত্রা শস্য ও পশুদের উপর এতটাই নির্ভরশীল ছিল যে তারা এগুলিকে পূজা করত।[১২]

মধ্যযুগে খাল নির্মাণ প্রযুক্তি বিশেষ উন্নতি লাভ করায় কৃষিব্যবস্থাও বিশেষ উন্নত হয়।[১৩][১৪] সামঞ্জস্যপূর্ণ শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে ভূমি ও জল সরবরাহ ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি ঘটানো হয়।[১৫][১৬] আধুনিক কালে ভারত কৃষিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও, স্বাধীনতার পর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে একটি সুসংহত কৃষি কর্মসূচি গৃহীত হয় এবং তার ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটে।[১৭][১৮]

উদ্যোগ

কৃষিবিপণন, মজুত ও হিমঘর পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন। সরকার একাধিক স্কিমের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের অর্থ তোলার জন্য উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি।[১৯]

১৯০৫ সালে ভারতীয় কৃষি গবেষণা সংস্থা (আইএআরআই) স্থাপিত হয়। এই সংস্থায় ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয় সবুজ বিপ্লবের জন্য দায়ী। ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ (আইসিএআর) দেশের কৃষি ও গবেষণা ও শিক্ষা সহ কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলির সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।[২০]কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী আইসিএআর-এর সভাপতি। ভারতীয় কৃষি পরিসংখ্যান গবেষণা সংস্থা কৃষিক্ষেত্রে নানান প্রযুক্তিগত পরীক্ষনিরীক্ষা চালায়, কৃষি পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে এবং পশুপালন ও বাগিচানির্মানের পরিসংখ্যানও প্রস্তুত করে। কৃষি ঋণ নিয়ন্ত্রিত হয় জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাংক বা নাবার্ডের মাধ্যমে। নাবার্ড দেশের গ্রামোন্নয়নের সর্বোচ্চ বিধিবদ্ধ সংস্থা।

সাম্প্রতিক কালে ভারত সরকার কৃষি কর্মসূচির উন্নতি ঘটাতে কৃষক কমিশন স্থাপন করেছেন।[২১] এই কমিশনের প্রস্তাবগুলি নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

সমস্যা

ভারতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ জীবনধারণের জন্য গ্রামীণ কর্মনিয়োগের উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় ধীর কৃষি অগ্রগতি দেশের নীতিনির্ধারকদের একটি দুশ্চিন্তার কারণ। চাষাবাদের অধুনা প্রচলিত প্রথাগুলি আর্থিক বা পরিবেশগত কোনো দিক থেকেই স্থিতিশীল নয়। এবং অনেক ফসলের ক্ষেত্রেই ভারতের উৎপাদন কম। অবহেলিত সেচব্যবস্থা ও সম্প্রসারণ ব্যবস্থার বিশ্বজনীন অভাব এই দুরবস্থার অন্যতম কারণ। খারাপ সড়ক, মৌলিক বাজার পরিকাঠামো ও অতিরিক্ত শুল্কের ফলে কৃষকরা বাজারে ঠিকমতো শস্য বিক্রি করতে পারেন না।

— বিশ্বব্যাঙ্ক: "ইন্ডিয়া কান্ট্রি ওভারভিউ ২০০৮"[২২]
উর্বর গাঙ্গেয় বদ্বীপ—ভয়াল বন্যা ও ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রসিদ্ধ—এখানে প্রচুর পরিমানে পাট, চা ও ধান উৎপাদিত হয়। এখানে মাছের উৎপাদন ও রফতানি দুইই চলে।

ভারতের কৃষিক্ষেত্রে কম উৎপাদন জনিত সমস্যাটির মূল কারণ নিম্নরূপ:

  • বিশ্বব্যাঙ্কের ভারতীয় শাখার কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন মূল লক্ষ্য বিভাগের মতে, ভারতে যে পরিমাণে কৃষি ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা দেশের উৎপাদন-বৃদ্ধি সহায়ক বিনিয়োগের পথের প্রধান বাধা। অতিরিক্ত শুল্কের ফলে মূল্য, দামে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায়। সরকার শ্রমিক, জমি ও ঋণের বাজারে হস্তক্ষেপ করে থাকে। তাছাড়া ভারতে পরিকাঠামো ও পরিষেবা অপ্রতুল।[২৩] বিশ্বব্যাঙ্ক আরও বলেছে, কৃষিক্ষেত্রে জলের জোগান অপ্রতুল, অস্থিতিশীল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেচব্যবস্থার মান ক্রমেই নিম্নগামী হচ্ছে।[২৩] অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হ্রাস পাচ্ছে ভৌমজলের পরিমাণও।[২৪]
  • নিরক্ষরতা, সাধারণ আর্থসামাজিক অনগ্রসরতা, ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার শ্লথ প্রয়োগ এবং অপ্রতুল অর্থ জোগান ও উৎপাদিত ফসলের বাজারকরণে অব্যবস্থা।
  • ভ্রান্ত সরকারি নীতি। সাময়িক রাজনৈতিক লাভের আশায় বেহিসেবি কৃষি ভর্তুকি ও শুল্ক নীতি গ্রহণ।
  • জোতের গড় আয়তন খুবই কম (২০,০০০ বর্গমিটারেরও কম) এবং ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট, বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক বিবাদের কারণে তাও ভেঙে যায়, এই সব ছোটো ছোটো জোতে অতিরিক্ত লোক দিয়ে কাজ করানো হয়। যার ফলে ছদ্ম বেকারত্ব ও শ্রমশক্তির কম উৎপাদন অব্যাহত থাকে।
  • আধুনিক কৃষি প্রথা ও প্রযুক্তির ব্যবহার অপ্রতুল। অনেক ক্ষেত্রে খরচ বা ছোটো জোতের কারণে এই প্রযুক্তি ব্যবহারও করা যায় না।
  • সেচব্যবস্থা অপ্রতুল। ২০০৩-০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী মাত্র ৫২.৬ শতাংশ জমি সেচসেবিত।[২৫] এর ফলে কৃষকদের বৃষ্টি ও মূলত বর্ষাকালের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। বৃষ্টি ভাল হলে সামগ্রিকভাবে তাতে অর্থনীতির উন্নতি হয়, তেমনি বৃষ্টি কম হলে বৃদ্ধি শ্লথ হয়।[২৬] বিদ্যুতে ভর্তুকি থাকার ফলে ওভারপাম্পিং করা হয়। তার ফলে ভৌমজলের পরিমাণ হ্রাস পায়।[২৭][২৮][২৯]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ