মদিনার সনদ

মদিনায় শান্তিস্থাপনের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ কর্তৃক প্রণয়নকৃত একটি লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সং

মদিনার সনদ (আরবি: صحيفة المدينة, সাহিফাত আল-মাদিনাহ বা ميثاق المدينة, মীছাক্ক আল-মাদিনাহ) হলো ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে (অথবা ১লা হিজরি সালে) মক্কা থেকে মদিনায় গমনের (হিজরত) পর ইসলামের নবী মুহাম্মাদ কর্তৃক প্রণয়নকৃত শান্তিস্থাপনের একটি প্রাথমিক সংবিধান[১] এটি মদিনার সংবিধান (دستور المدينة, দাস্তুর আল-মাদিনাহ) নামেও পরিচিত।

ইতিহাস

৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বানু আউস এবং বানু খাযরাজ সম্প্রদায় দুটির মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ।[২] তাই কলহে লিপ্ত এ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন ও মদিনায় বসবাসরত সকল গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত।[৩][৪][৫] এটিই পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান। ইবনে হিশামের মতে এ সনদের ৫৩টি ধারার রয়েছে। উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের মতে এই সনদের ধারার সংখ্যা ৪৭টি।[৬][৭][৮]

গঠন ও প্রভাব

এর প্রথম ১০ ধারায় বলা হয় যে, মুহাজির (দেশত্যাগী বা যারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল) বানু আউফ, বানু কায়নুকা, বানু মাকয়ূম, বানু হানিফা, বানু ইয়ারবু,বানু খাযরাজ, বানু সালাবা (জাফনা উপগোত্রের একটি শাখাগোত্র), বানু নাযির, বানু শুতাইবা, বানু জুরহাম, বানু সাঈদা, বানু হারিস, বানু জুশাম, বানু নাজ্জার, বানু আমর, বানু নাবিত,বানু আব্বাস,আব্দুল কায়েস,বানু আবদে শামস,বানু আউস,বানু ক্বায়লাহ,বানু খাযরাজ,বানু আদি, বানু আজলান,বনি আমির,বানু আমর,বানু আসাদ,বানু আতিয়াহ,বানু মাখজুম,আনাজাহ,আদ,আসির,জাফনা,বানু সালাবা,আল আওয়াজিম,আজদ,বানু আউফ,বানু ইয়াম,ইয়াফি,বানু উমাইয়া,আল উবাইদ,উতাইবা,বনি উতবা,বানু কাব,বানু কালব,বানু কানজ,আল করিম,কিন্দাহ,কাসিরি,বানু কিনানা,বানু হাশিম,বানু কায়নুকা,বানু কুদা,বানু কুরাইযা,বানু হথাইল,বানু সুলায়ম,থাকিফ,বানু তামিম,বানু হাওয়াজিন,বানু ঘাতাফান,কুরাইশ, বানু খোজায়া,বানু নাযির, বানু শুতাইবা, বানু জুরহাম,কাদারি,খাওলান,খাওয়াজা, বানু খুদির, বানু খুতাইর,বনি খালিদ,আল খলিফা,বানু সাদ,খালিলি, বানু শাইয়ান,বানু আকিয়াশ,আল খারুসি, বানু খাশাম,আল গাইন,গামদ, বানু আবস, বানু আশগা, বানু সিবয়ান, বানু গাজান, বানু গিফার,বিন গাইস,আল জাআলিয়িন, বানু জাবার,আল জিবুরি, বানু জালাফ,আল জাইদি, বানু জুজাম, বানু জুহাইনা,বানু মুস্তালিক,বানু বকর,বানু তাগলিব, বানু জুমাহ,জাহরান, বানু জাহরা, বানু জুহরা, বানু জাইদ,আল জাফির, বানু জুবাইন,রাবিয়াহ,আল দাওয়াসির,আল নাবহানি, বানু নওফাল,আল নুমান,আল ফারাহিদি, বানু ফাজারা,বারিক,বালি,আল বাক্কারা,বাহিলা, বানু বাহর, বানু বকর ইবনে আবদ মানাত,আল বুয়াইনাইন,আল মাদিদ,আল মাহরা,আল মাহরুকি, বানু মালিক, বানু মুস্তাফা, বানু মুত্তালিব,মুতাইর,বনি রশিদ, বানু লাখম,লাখমি,লারজি,শাহরান,আল শাবিব,শামার,বনি শাহর,শুরাইফ,সাবা,আল সাইদ,সাইয়িদ, বানু সাহম, বানু সালামা,আল সালতি,সুবাই,আল সুয়াইদি,বিন সুমাইদা,হাময়ার ইরাক-জাবর দিয়াব,হাকামি,হুমাইদা, বানু হুজাইল,বনি হামিদা, বানু হারিস,হারব,আল হাওয়াজির আল হাজরি, বনু হাজর,বনু হিলাল,বনি হারিস,বানু নাদির,নুসাইবা,লুয়া,বানু জুরহুম,শানূয়া,বনু গাসাসিনাহ্,সাবাঈ ও বানু আউস পূর্বহারে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পণের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করবে। ১১ থেকে ২০ ধারায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কিত আইন বিধৃত হয়। ২১ থেকে ২৬ ধারায় হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি, কোনো মুসলমান কোনো অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিলে তার উপযুক্ত শাস্তি, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা পদ্ধতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ক আইন সন্নিবেশিত হয়। ২৭ থেকে ৪৭(৫০) ধারায় সন্নিবেশিত হয় বিভিন্ন গোত্রের স্বরূপ সম্পর্কিত বিধান। পরবর্তী ধারাসমূহে যুদ্ধনীতি, নাগরিকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, নিজ নিজ আয়ব্যয় ও জীবিকা নির্বাহ, এ সনদে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ ও ব্যয়ভার বহন, সুনাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দাতা ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদিনার উপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই প্রথম লিখিত সন্ধিচুক্তি ও সংবিধান। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টির মতে- "সমস্ত মদিনার ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে পরবর্তী এবং বৃহত্তম ইসলামী রাষ্ট্রের উত্থান হয়েছিল" অর্থাৎ মদিনা প্রজাতন্ত্রই পরবর্তীকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল স্থাপন করে। উক্ত সংবিধানে সকল পক্ষ মেনে নিয়ে স্বাক্ষর দান করেছিল। এই সনদে মদিনাকে একটি হারাম (حرم, "পবিত্র ভূমি") স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যেখানে কোনো অস্ত্র বহন করা যাবেনা এবং কোনো প্রকার রক্তপাত ঘটানো যাবেনা।

মদিনা সনদের মূল বিষয়বস্তু

পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে। এটা হচ্ছে নবী মুহাম্মদ-এর পক্ষ থেকে লিপি। কুরাইশ ও ইয়াসরিবের মুমিন ও মুসলমানদের মধ্যে এবং যারা তাদের অধীনে, তাদের সাথে শামিল হবে বা তাদের সাথে জিহাদে মিলেমিশে কাজ করবে। মদিনা শরীফ পূর্ববর্তী নাম হলো "ইয়াসরীব" ছিল।[৯]

নবীর সময়ে মদীনার নগর-রাষ্ট্রের সংবিধানের অনুবাদ

(1) এটি কুরাইশ ও মদীনার জনগণ এবং তাদের অধীন হতে পারে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে বিশ্বস্ত ও ইসলামের অনুসারীদের ("মুসলিম") মধ্যে কাজ করার জন্য (চালনা করার জন্য) মুহাম্মদ, আল্লাহর নবী ও রসূল, তাদের সাথে যোগ দিতে পারে এবং তাদের কোম্পানিতে যুদ্ধে অংশ নিতে পারে।

(২) তারা একটি পৃথক রাজনৈতিক ইউনিট ( উম্মত ) গঠন করবে যা সমস্ত মানুষের (বিশ্বের) থেকে আলাদা।

(3) কুরাইশ থেকে হিজরতকারীরা তাদের ওয়ার্ডের জন্য (দায়িত্বশীল) হবে; এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং নিজেদের কাছ থেকে মুক্তিপণ প্রদান করে তাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে যাতে মুমিনদের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন কল্যাণ ও ন্যায়বিচারের নীতি অনুসারে হয়।

(4) এবং বনু আউফ তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক দল তাদের নিজেদের মুক্তিপণ দিয়ে তাদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে যাতে মুমিনদের মধ্যে লেনদেন হয়। ধার্মিকতা এবং ন্যায়বিচারের নীতি অনুসারে।(5) এবং বনু আল-হারিস-ইবন-খাজরাজ তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক দল তাদের নিজেদের মুক্তিপণ পরিশোধ করে তাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে, যাতে বিশ্বাসীদের মধ্যে লেনদেন হবে কল্যাণ ও ন্যায়ের নীতির সাথে।

(6) এবং বনু সায়িদা তাদের নিজস্ব ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি দল তাদের নিজেদের মুক্তিপণ দিয়ে তাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে, যাতে উভয়ের মধ্যে লেনদেন হয়। বিশ্বাসীদের ধার্মিকতা এবং ন্যায়বিচারের নীতি অনুযায়ী হতে হবে.

(7) এবং বনু জুশাম তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি দল তাদের মুক্তিপণ প্রদান করে তাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে যাতে মুমিনদের মধ্যে লেনদেন হয়। ধার্মিকতা এবং ন্যায়বিচারের নীতি।

(8) এবং বনু আন-নাজ্জার তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি দল তাদের মুক্তিপণ প্রদান করে তাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে যাতে মুমিনদের মধ্যে লেনদেন হয়। ধার্মিকতা এবং ন্যায়বিচারের নীতির সাথে।

(9) এবং বনু আমর-ইবন-আওফ তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি দল তাদের মুক্তিপণ পরিশোধ করে তাদের নিজস্ব বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে, যাতে তাদের মধ্যে লেনদেন হয়। মুমিনদের কল্যাণ ও ন্যায়বিচারের নীতি অনুযায়ী হতে হবে.

(10) এবং বনু-আল-নাবিত তাদের নিজস্ব ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রতিটি দল তাদের মুক্তিপণ দিয়ে তাদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে যাতে মুমিনদের মধ্যে লেনদেন হয়। ধার্মিকতা এবং ন্যায়বিচারের নীতি অনুসারে।

(11) এবং বনু-আল-আউস তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের জন্য দায়ী থাকবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় তাদের রক্তের অর্থ পরিশোধ করবে এবং প্রত্যেক দল তাদের মুক্তিপণ প্রদান করে তাদের নিজেদের বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করবে, যাতে মুমিনদের মধ্যে লেনদেন হয়। ধার্মিকতা এবং ন্যায়বিচারের নীতি অনুসারে।

(12) (ক) এবং ঈমানদাররা ঋণে জর্জরিত কাউকে কিছু ত্রাণ না দিয়ে ছাড়বে না, যাতে মুমিনদের মধ্যে লেনদেন সৎ ও ন্যায়ের নীতি অনুসারে হয়।(খ) এছাড়াও কোন বিশ্বাসী এমন একজনের সাথে মক্কেলের চুক্তিতে প্রবেশ করবে না যে ইতিমধ্যেই অন্য বিশ্বাসীর সাথে এই ধরনের চুক্তিতে রয়েছে।

(13) এবং ধার্মিক মুমিনদের হাত এমন প্রত্যেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠানো হবে যারা বিদ্রোহ করে বা বলপ্রয়োগ করে কিছু অর্জনের চেষ্টা করে বা কোন পাপ বা বাড়াবাড়িতে দোষী হয় বা মুমিনদের মধ্যে ফাসাদ ছড়ানোর চেষ্টা করে; এই ধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের হাত একসাথে উঠানো হবে, যদিও সে তাদের কারোরই পুত্র হয়।(14) একজন আস্তিক একজন অবিশ্বাসীর জন্য [প্রতিশোধের জন্য] কোন মুমিনকে হত্যা করবে না এবং একজন অবিশ্বাসীকে একজন মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না।

(15) আল্লাহর নিরাপত্তা ( ধীমাহ ) এক, তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন [অর্থাৎ মুমিনদের] সুরক্ষা প্রদানের অধিকারী ( যুজির ) যা তাদের সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। অন্যান্য লোকদের বাদ দিয়ে মুমিনরা একে অপরের মিত্র ( মাওয়ালি )।

(16) এবং ইহুদীদের মধ্যে যারা আমাদের আনুগত্য করবে, তাদের সাহায্য ও সমতা থাকবে। তাদের উপর অত্যাচার করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন সাহায্যও করা হবে না।

(17) আর মুমিনদের শান্তি হবে এক। যদি আল্লাহর পথে কোন যুদ্ধ হয়, তবে কোন মুমিন অন্য মুমিনদের ছাড়া (শত্রুর সাথে) শান্তির অধীনে থাকবে না, যদি না তা (এই শান্তি) সকলের জন্য সমান এবং সমানভাবে বাধ্যতামূলক হয়।

(18) এবং যে সমস্ত সৈন্যদল আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করবে তারা পালাক্রমে উপশম হবে।

(19) আর ঈমানদাররা দেহরূপে আল্লাহর পথে রক্তের প্রতিশোধ নেবে।

(20) (ক) এবং নিঃসন্দেহে ধার্মিক মুমিনগণ সর্বোত্তম এবং সঠিক পথে।(খ) এবং কোন শরীক (অমুসলিম প্রজা) কোন কুরাইশের জান ও মাল রক্ষা করবে না এবং এ ব্যাপারে কোন মুমিনের পথে আসবে না।

(21) এবং যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে, এবং এটি প্রমাণিত হয়, তবে তাকে প্রতিশোধ হিসাবে হত্যা করা হবে, যদি না নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী রক্তের টাকায় সন্তুষ্ট হয়। এবং সমস্ত বিশ্বাসী প্রকৃতপক্ষে এই অধ্যাদেশের পক্ষে দাঁড়াবে এবং তাদের জন্য অন্য কিছু করা উপযুক্ত হবে না।

(22) এবং যে ব্যক্তি এই কোডে বর্ণিত বিধানগুলি পালন করতে সম্মত হয়েছে এবং ঈশ্বর ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, কোনো হত্যাকারীকে সাহায্য বা সুরক্ষা দেওয়া বৈধ হবে না, এবং যদি সে এমন ব্যক্তিকে কোন সাহায্য বা সুরক্ষা দেয়, কেয়ামতের দিন তার উপর আল্লাহর অভিশাপ ও গজব থাকবে এবং এমন ব্যক্তির কাছ থেকে কোন অর্থ বা ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না।

(23) আর যখনই তোমাদের কোন বিষয়ে মতভেদ হয়, তখন তা আল্লাহ ও মুহাম্মাদের দিকে প্রত্যর্পণ কর

(24) আর ইহুদীরা মুমিনদের সাথে যুদ্ধের খরচ ভাগ করে নেবে যতদিন তারা একত্রে যুদ্ধ করবে।

(25) এবং বনু আউফের ইহুদীরা মুমিনদের সাথে এক সম্প্রদায় ( উম্মত ) হিসাবে বিবেচিত হবে - ইহুদীদের জন্য তাদের ধর্ম এবং মুসলমানদের জন্য তাদের এক মক্কেল বা পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্যায় করে বা বিশ্বাসঘাতকতা করে সে কেবল নিজের এবং তার পরিবারের জন্যই মন্দ নিয়ে আসে।(26) আর বনু-নাজ্জারের ইহুদীদেরও বনু আওফের ইহুদীদের মতই অধিকার থাকবে।

(27) আর বনু-আল-হারিসের ইহুদীদেরও বনু আওফের ইহুদীদের মতই অধিকার থাকবে।

(28) আর বনু সায়িদার ইহুদীদেরও বনু আওফের ইহুদীদের সমান অধিকার থাকবে।

(29) এবং বনু জুশামের ইহুদীদেরও বনু আওফের ইহুদীদের মতই অধিকার থাকবে।

(30) এবং বনু আল-আউসের ইহুদীদেরও বনু আওফের ইহুদীদের মতই অধিকার থাকবে।

(31) এবং বনু থা'লাবার ইহুদীদেরও বনু আওফের ইহুদীদের মতই অধিকার থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্যায় করে বা বিশ্বাসঘাতকতা করে সে কেবল নিজের এবং তার পরিবারের জন্যই মন্দ নিয়ে আসে।

(32) এবং জাফনা, যারা থা'লাবা গোত্রের একটি শাখা, তাদের মাতৃ গোত্রের মতোই অধিকার থাকবে।

(33) এবং বনু-আশ-শুতাইবারও বনু আউফের ইহুদীদের মতই অধিকার থাকবে। এবং তারা বিশ্বস্ত হবে, এবং চুক্তি লঙ্ঘনকারী নয়।

(34) এবং থা'লাবার মাওলাদের (ক্লায়েন্ট) এর মূল সদস্যদের মতোই অধিকার থাকবে।

(35) এবং ইহুদি উপজাতিদের উপ-শাখার অধিকার থাকবে মাতৃ গোত্রের মতো।

(36) (ক) এবং তাদের কেউ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমতি ব্যতীত মুসলিম সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধ করতে বের হবে না।(খ) এবং মারধর বা আঘাতের জন্য কারও প্রতিশোধ নেওয়ার পথে কোনও বাধা দেওয়া হবে না; এবং যে কেউ রক্তপাত করে সে তা নিজের এবং তার পরিবারের উপর বয়ে আনে, তবে যার উপর জুলুম করা হয়েছে, এবং আল্লাহ এই [চুক্তির] সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত পরিপূর্ণতা দাবি করেন।

(37) (ক) এবং ইহুদীরা তাদের খরচের ভার বহন করবে এবং মুসলমানরা তাদের।(খ) এবং যদি কেউ এই কোডের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তবে তাদের (অর্থাৎ, ইহুদি ও মুসলমানদের) পারস্পরিক সাহায্য কার্যকর হবে এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শ এবং আন্তরিক আচরণ থাকবে; এবং বিশ্বস্ততা এবং চুক্তি লঙ্ঘন না।

(38) আর ইহুদীরা তাদের নিজেদের খরচ বহন করবে যতক্ষণ না তারা মুমিনদের সাথে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করবে।

(39) এবং ইয়াসরিব (মদিনা) উপত্যকা এই নিয়মের লোকদের জন্য একটি হারাম (পবিত্র স্থান) হবে।

(40) ক্লায়েন্টদের (মাওলা) মূল ব্যক্তিদের (অর্থাৎ, মক্কেল গ্রহণকারী ব্যক্তিদের) মতো একই আচরণ করতে হবে। তার কোন ক্ষতি হবে না বা সে নিজেও চুক্তি ভঙ্গ করবে না।

(41) এবং স্থানের লোকদের অনুমতি ব্যতীত কাউকে আশ্রয় দেওয়া যাবে না (অর্থাৎ, শরণার্থীর অন্যকে আশ্রয় দেওয়ার অধিকার থাকবে না)।

(42) এবং যদি এই কোডের লোকদের মধ্যে কোন খুন বা ঝগড়া সংঘটিত হয়, যা থেকে কোন ঝামেলার আশংকা করা যেতে পারে, তবে তা ঈশ্বর ও আল্লাহর রসূল মুহাম্মদের কাছে পাঠানো হবে; এবং ঈশ্বর তার সাথে থাকবেন যে এই কোডে যা লেখা আছে সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি বিশেষ হবে এবং সবচেয়ে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করবে।

(43) কুরাইশদের কোন সুরক্ষা দেওয়া হবে না এবং যারা তাদের সাহায্য করবে তাদেরও।

(44) এবং তারা (অর্থাৎ, ইহুদী ও মুসলমান) ইয়াসরিব আক্রমণ করার ক্ষেত্রে একে অপরের সাহায্য করবে।

(45) (ক) এবং যদি তারা (অর্থাৎ, ইহুদীদের) কোন শান্তিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তারাও শান্তির প্রস্তাব দেবে এবং তাতে অংশীদার হবে; এবং যদি তারা মুমিনদেরকে এ ধরনের কোনো বিষয়ে আমন্ত্রণ জানায়, তবে তাদের (মুসলিমদের) দায়িত্ব হবে লেনদেনের প্রতিদান দেওয়া, ব্যতীত যে কেউ ধর্মীয় যুদ্ধ করে।(খ) শহরের অংশের মুখোমুখী স্থান থেকে শত্রুকে বিতাড়িত করার দায়িত্ব প্রত্যেক দলের উপর বর্তায়।(46) এবং আল-আউস গোত্রের ইহুদিদের, গ্রাহকদের পাশাপাশি মূল সদস্যদেরও এই কোডের লোকদের মতো একই অধিকার থাকবে: এবং তারা পরবর্তীদের প্রতি আন্তরিক এবং বিশ্বস্ততার সাথে আচরণ করবে, চুক্তির কোন লঙ্ঘন করবে না। কেউ যেমন বপন করবে তেমনি কাটবে। এবং ঈশ্বর তার সাথে আছেন যিনি সবচেয়ে আন্তরিকভাবে এবং বিশ্বস্ততার সাথে এই কোডের বিধানগুলি পালন করবেন।

(47) এবং এই ব্যবস্থাপত্র কোন অত্যাচারী বা চুক্তি ভঙ্গকারীর কোন কাজে আসবে না। আর কেউ অভিযানে বের হোক বা মদীনায় অবস্থান করুক না কেন তার নিরাপত্তা থাকবে, অন্যথায় তা হবে যুলুম ও চুক্তি লঙ্ঘন। এবং আল্লাহ তার রক্ষক যিনি বিশ্বস্ততা এবং যত্ন সহকারে দায়িত্ব পালন করেন, এবং তাঁর রসূল মুহাম্মদও।

বানু কায়নুকা গোত্রের নির্বাসন

ইসলামের ঐতিহ্যগত ইতিহাস অনুসারে, ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বানু কায়নুকা আক্রমণ সঙ্ঘটিত হয়[১০] যা বানু কায়নুকার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান নামেও পরিচিত।[১১] বানু কায়নুকা ছিল একটি ইহুদি গোত্র যাকে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ মদিনা সনদ নামক চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছিলেন,[১২][১৩] কারণ তারা এক মুসলিম মহিলার কাপড় পেরেকের সাথে আটকে দিয়েছিল, যার ফলে তার কাপড় সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গিয়ে তিনি বিবস্ত্র হয়ে পড়েন। এর প্রতিশোধে এক মুসলিম যুবক এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ইহুদিকে হত্যা করেন, এবং তা দেখে ইহুদিরা ওই মুসলিম যুবকটিকে মেরে ফেলে। এই ঘটনায় প্রতিহিংসার আগুন দুই দলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলিম ও বনু কায়নুকার মাঝে শত্রুতা ফুলে ফেঁপে উঠে, যার ফলে মুসলিমগণ বানু কায়নুকার দুর্গ অবরোধ করে।[১২][১৪][১৫]:১২২ গোত্রটি অবশেষে নবী মুহাম্মাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, মুহাম্মাদ প্রথমে গোত্রের সকল সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে চাইলেও পরবর্তীতে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের গোত্রীয় ব্যক্তিগত আনুগত্যের দায়িত্ব ও অনুরোধে তিনি এই সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করেন এবং তাদের শুধুমাত্র বহিষ্কার করেন।[১৬]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ