মসজিদ

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার স্থান

মসজিদ (আরবি: المسجد; উচ্চরণ: mæsdʒɪd)[১] হল মুসলমানদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত একটি ধর্মীয় স্থাপনা। শব্দটির উৎপত্তি আরবি السجود (সুজুদ) শব্দ থেকে, যার আভিধানিক অর্থ "শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থাৎ সিজদা করা। সাধারণভাবে, যে সকল ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (আরবি: الصلاة সালাত) আদায় করেন, তাকে মসজিদ বলে। আবার যেসব বড় বড় মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়ের সাথে সাথে শুক্রবারের জুম'আর নামাজ আদায় হয় এবং অন্যান্য ইসলামি কার্যাবলী (যেমন: কুরআন শিক্ষা) সম্পাদিত হয়ে থাকে, সেগুলি জামে মসজিদ (مسجد جامع) নামে অভিহিত হয়। মসজিদে সাধারণত একজন ইমাম বা নেতা থাকেন যিনি নামাজের ইমামতি করেন বা নেতৃত্ব দেন।

কাবা শরিফ, মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা বা মসজিদ।

মসজিদ হলো মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র। এখানে প্রার্থনা করা ছাড়াও শিক্ষা প্রদান, তথ্য বিতর়ণ ও বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। মসজিদের উৎকর্ষের ক্ষেত্রে সেই সপ্তম শতাব্দির সাদাসিধে খোলা প্রাঙ্গণবিশিষ্ট মসজিদে কাবা বা মসজিদে নববী থেকে বর্তমানে এর প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে এবং এখন অনেক মসজিদেরই সুবিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার ও বৃহদাকার প্রাঙ্গণ দেখা যায়। মসজিদের উৎপত্তি আরব উপদ্বীপে হলেও ইসলাম প্রসারের সাথে সাথে বর্তমান পৃথিবীর সব দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতিহাস

আরব উপদ্বীপে নির্মাণ হওয়া প্রথম তিনটি মসজিদের গঠন ছিলো বেশ সাদাসিধে। সময়ের আবর্তনে পরবর্তি হাজার বছরে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিত্যনতুন কৃষ্টি ও স্থাপত্যশৈলীর ধারক হয়।

বিস্তার ও বিবর্তন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের আভিযানের সাথে সাথে মসজিদ আরব উপদ্বীপের সীমা ছাড়িয়ে বিস্তারলাভ করতে থাকে। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে মিসরে অনেক মুসলমানের সমাগম ঘটে। তখন এই দেশে এতো মসজিদ নির্মিত হয় যে, রাজধানী কায়রোকে ডাকা হত হাজার মিনারের শহর বলে।[২]

মিশরীয় মসজিদগুলোতে সু্যোগ-সুবিধার ভিন্নতা ছিলো, যেমন, কিছু মসজিদে ছিলো মাদ্রাসার মতো স্কুল, আবার অন্য মসজিদগুলোতে হাসপাতাল কিংবা কবরস্থান।[৩]

সিসিলি এবং স্পেনের মসজিদগুলোতে তাদের পূর্বতন ভিসিগোথিক স্থাপত্যশৈলীর চিহ্ন মিলে না, বরং মোরদের ইসলামী স্থাপত্যের প্রতিফলন দেখা যায়।[৪]

চীনের জি-এন মসজিদের মিনারে চীনা স্থাপত্যের নিদর্শন

চীনে অষ্টম শতাব্দিতে প্রথম জি-আন মসজিদটি নির্মিত হয়। সচরাচর মসজিদগুলোর আদল যেমন হয়, জি-আন মসজিদটি তার ব্যতিক্রম। এতে অনেক সনাতন চীনা স্থাপত্যিক ঐতিহ্য পরিস্ফুটিত হয়েছে। এর সবুজ ছাদের জন্য সহজেই অন্যান্য ইমারত থেকে একে আলাদাভাবে চেনা যায়। চীনের পশ্চিমের মসজিদগুলোতে আনেক প্রথাগত উপকরণের ব্যবহার হয় যা বিশ্বের আর অন্য কোথাও দেখা যায় না। এই মসজিদগুলোতে মিনার এবং গম্বুজের বহুল উপস্থিতি রয়েছে, অন্যদিকে পূর্ব চীনের মসজিদগুলো দেখতে অনেকটা প্যাগোডার মতো।[৫]

জাভানিজ আদলে ওগিয়াকারতা জামে মসজিদ, ইন্দোনেশিয়া

পনেরো শতাব্দিতে, ইন্দোনেশিয়ার দুইটি জনবহুল দ্বীপ; সুমাত্রাজাভাতে ইসলাম নেতৃস্থানে চলে আসে। বহিরাগত এই মুসলমানদের নিজস্ব ভাবধারার সাথে স্থানীয় বুদ্ধ এবং হিন্দুয়ানী শিল্পের এক সংমিশ্রণ ঘটে, যার প্রতিফলন এখানকার মসজিদগুলো্র নির্মাণে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। মুসলিম বিশ্বের সর্বব্যাপী মসজিদে গম্বুজের যে বহুল উপস্থিতি আছে তা এখানে উনিশ শতাব্দির পূর্বে দেখা যায়নি। বরং অনেক মসজিদে কাঠের তৈরি বহুতল উঁচু ছাদ দেখা যায়, যা সাথে বালি দ্বীপের পেগোডার অনেকটা মিল আছে। জাভার উত্তর তীরে এখনও এই ধরনের অনেক পুরাতন মসজিদ দেখা যায়। এর মধ্যে ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত আগুং মসজিদ এবং ইয়গ্যাকারতা জামে মসজিদে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একাধিক তলা রয়েছে। জাভার মসজিদগুলোর এই স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনের মসজিদেও প্রভাব ফেলে।

ষোল এবং সতেরো শতাব্দিতে মুঘল সাম্রাজ্যের সময় ভারতে মসজিদের বিস্তার ঘটে। মোঘলরা তাদের নিজস্ব স্থাপত্যকলার ব্যবহার করে। দিল্লীর জামে মসজিদের পেঁয়াজ আকৃতির সূঁচালো শীর্ষবিশিষ্ট গম্বুজ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মুঘলদের এই স্থাপত্য ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের অনেক পুরাতন মসজিদে মূখ্য প্রভাব রাখে।

৬৭০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত কাইরোয়ান জামে মসজিদ, কাইরোয়ান, তিউনিসিয়া। এটি পশ্চিমা মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ।
প্যারিস জামে মসজিদ, ফ্রান্স

এগারো শতাব্দিতে, অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় তুরস্কের অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন সেখানে অনেক মসজিদের আবির্ভাব ঘটে। অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রথমদিকের বেশকিছু মসজিদ (যেমন: হায়া সফিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল) তৈরি হয়, যা পূর্বে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের গির্জা বা ক্যাথেড্রাল ছিলো। অটোম্যানরা এই মসজিদগুলোতে তাদের নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করেন, যেমন: বিশাল কেন্দ্রীয় গম্ভুজ, একাধিক মিনার, খোলা সম্মুখভাগ, ইত্যাদি। তাদের মসজিদগুলোতে কারুকাজময় থাম, এর মাঝে সুপরিসর স্থান, উঁচু ছাদ এবং মিহরাবও দেখা যায়।[৬] বর্তমান তুরস্কের অনেক মসজিদই অটোম্যানদের সেই স্থাপত্যশৈলীর ধারক।

ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে মসজিদের বিস্তার ধীরে ধীরে হয়। তবে বিগত শতাব্দিতে অনেক মসুলমানদের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে মসজিদের দ্রুত প্রসার ঘটে। ইউরোপের প্রধান শহরগুলোতে (যেমন: রোম, লন্ডন, মিউনিখ) গতানুগতিক গম্ভুজ আর মিনারবিশিষ্ট অনেক মসজিদই তাদের স্থান করে নিয়েছে। শহর অঞ্চলের এই সুবিশাল মসজিদগুলো এখানকার বিপুলসংখ্যক মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিক কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পরিগণিত। তবে যেসব মফস্বল কিংবা গ্রামাঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, সেখানেও অনেক মসজিদের দেখা মিলে। যুক্তরাজ্যের ওয়কিংয়ে অবস্থিত এধরনের প্রথম মসজিদটি হল শাহ জাহান মসজিদ।

যুক্তরাষ্ট্রে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ মসজিদ আছে। এখানে বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে মাইনিতে প্রথম মসজিদের আবির্ভাব হয়, যা ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে আলবেনীয় আভিবাসী দ্বারা তৈরি বলেই মনে হয়।[৭] বাহিরাগত আভিবাসি বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের খুব দ্রুত বিস্তার হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিলো এই দেশের মসজিদের সংখ্যার ২ শতাংশ এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭ শতাংশে। এখানে ৫০ শতাংশের বেশি মসজিদ নির্মিত হয় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে পর।[৮]

উপাসনালয়ের রূপান্তর

সুলতান আহমেদ মসজিদ ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
আল আব্বাস মসজিদ, কারবালা, ইরাক

পূর্বতন মুসলিম ইতিহাসবিদদের তথ্যানুসারে, যেসব শহর মুসলিম আভিযানে সময় বিনা প্রতিরোধে বিজিত হয় এবং মুসলমাদের সাথে চুক্তি করে তাদের উপাসনাগুলো মসজিদের জন্য দিয়ে দেয়।এ ই ধরনের রূপান্তরের একটি প্রথমিক উদাহরণ হলঃ ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খেলাফতের আল-ওয়ালিদ জন ব্যপ্টিস্ট চার্চ (দামস্কস, সিরিয়া) খ্রষ্টানদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে তা মসজিদ হিসাবে পুনঃনির্মাণ করেন এবং দামস্কসে খ্রিষ্টানদের জন্য আরো কিছু চার্চ নির্মাণ করেন। বলা হয় যে, আদ্‌ আল-মালিক (আল-ওয়ালিদের পিতা) এই ধরনের দশটি মসজিদের নির্মাণ করেন।

ধর্মীয় কার্যাবলী

প্রার্থনা

ইসলামের দুইটি বড় ধর্মীয় উৎসব (ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা) দিনে মসজিদগুলোতে সকাল বেলায় বিশেষ নামাজ পড়া হয়। এই ঈদের নামাজে বহু মুসল্লির সমাবেশ হয় এবং বড় মসজিদ্গুলো এই ঈদের জামাতের আয়োজন করে। এর জন্য কিছু মসজিদ বড় সমাবেশ কেন্দ্র কিংবা সাধারণ জনগনের জন্য সহজগম্য এমন ইমারত ভাড়া করে নেয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশের মসজিদগুলো সাধারণত বড় মাঠে বা শহরের প্রধান প্রাঙ্গণে ঈদের নামাজের আয়োজন করে।[৯]

রমজান পর্ব

ইসলামের পবিত্র মাস রমজানে মুসলমানেরা দিনের বেলায় রোজা রাখে। তাই অনেক মসজিদে সূর্যাস্তের পর মাগরিব নামাজের শেষে ইফতারের আয়োজন থাকে। এই ইফতারের খাদ্য সাধারণত এলাকার জনসাধারণ নিয়ে আসে এবং একত্রে বসেই খাওয়া দাওয়া হয়। রমজানে দান-খয়রাত করা আনেক ফজিলতপূর্ণ বলে অনেকেই মসজিদে অর্থ দান করে এবং তা দিয়ে গরীব দুঃস্থদের জন্য সেহেরী ও ইফতারের আয়োজন হয়।[১০]

রমজান মাসে প্রতিরাতের এশার নামাজের পর বিশেষ নামাজ (তারাবিহ নামাজ) পড়া হয়। এই নামজ ঘণ্টাখানেক সময় নেয়। সাধারণত যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ রাখেন (এদেরকে কুরআনের হাফেজ বলে) তিনি ইমামতি করেন এবং প্রতিদিন ক্রমানুসারে কুরআনের অংশবিশেষ তিলাওয়াত (আবৃতি) করেন।[১১] কখনো কখনো একাধিক ব্যক্তি উপর্যুক্ত কাজটি পালাক্রমে সম্পূর্ণ করেন।

রমজানের শেষ দশদিনে বড় মসজিদগুলোতে লাইলাতুল কদরের সারারাতব্যপী ইবাদত বন্দিগীর করা হয়। লাইলাতুল কদরের রাত্রে মুহাম্মাদ -এর উপর প্রথম কোরআন অবতীর্ণ হয়।[১১] তাই সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, মসজিদগুলোতে সমবেত মুসলমানদের সারা রাতব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামী শিক্ষা দেওয়া হয় এবং পালাক্রমে খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

ইসলামের বিধান অনুসারে, বড় মসজিদগুলোতে, আশেপাশের মুসলমান সম্প্রদায় থেকে অন্তত একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফ করতে হয়। ইতিকাফকারী সাধারণত রমজানের শেষ দশদিন মসজিদেই অবস্থান করেন এবং প্রার্থণা ও ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে নিয়োজিত থাকেন। তাই সম্প্রদায়ের অন্যান্য মুসলিমরা এইসময় তার খাদ্য বা অন্যান্য প্রয়োজন মিটানোর দায়িত্ব পালন করে।[১১]

সমসাময়িক রাজনৈতিক অবদান

জনসংযোগ

সামাজিক সংঘাত

মসজিদ মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ের মতো মসজিদকেন্দ্রিক সামাজিক সংঘাতের ঘটনাও ব্যতিক্রম নয়। বাবরি মসজিদকে নিয়ে এই ধরনের এক সংঘাত ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল, ফলস্বরূপ মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধানের পূর্বেই; ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর, প্রায় ২,০০,০০০ হিন্দু, মসজিদটি আক্রমণ করে ভেঙ্গে ফেলে। তাদের অভিযোগ হলো, এইস্থানে সম্রাট বাবরের দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটির পূর্বে, অবতার রামের জন্মস্থান নির্দেশক একটি হিন্দু মন্দির ছিলো। এই বিরোধ পরবর্তিতে বোম্বের দাঙ্গা (বর্তমানে মোম্বাই) এবং ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের বোমা হামলার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এর ফলে ২৫৭ জন লোক প্রাণ হারায়।

১১ই সেপ্টেম্বর হামলার পরবর্তিতে আমেরিকার বেশ কিছু মসজিদে হামলাজনিত সামান্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে আগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও কিং ফাহদ মসজিদে (কুলভার শহর, ক্যালিফোর্নিয়ার) বোমাপাতার জন্য ইহুদি প্রতিরক্ষা লীগ নামে একটি সংস্থাকে সন্দেহ করা হয়। আবার লন্ডনের ৭ই জুলাই ২০০৫-এর বোমা হামলার পর যুক্তরাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মসজিদ নানা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। পশ্চিমা বিশ্বের বাহিরে, জুলাই ২০০১ সালে শত শত ইহুদি হাসান বেগ মসজিদটি ক্ষতিসাধন করে।

স্থাপত্যশৈলী

গঠন

প্রকারভেদ

মসজিদ প্রধানত দুপ্রকারের। যথা:

পাঞ্জেগানা মসজিদ

যেকোনো বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে দলবদ্ধভাবে নামায আদায়ের সুবিধা দিতে প্রতিষ্ঠা করা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন, আবেষ্টনযুক্ত স্থান বা ঘরকে পাঞ্জেগানা মসজিদ বলে। এ মসজিদে জুমার নামাজ ব্যতীত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হয়।

জামে মসজিদ

যে মসজিদে জুম'আর নামায আদায়ের ব্যবস্থা থাকে তাকে জামে মসজিদ বলে।কোন স্থানে জুমআর নামায বিশুদ্ধ হবার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

  • শহর বা উপশহর হতে হবে। গ্রামে বা জনমানবহীন বিয়াবানে জুমআর নামায শুদ্ধ হবে না।
  • জামাআত হতে হবে।
  • যোহরের সময় হতে হবে।
  • সকলের জন্য আম অনুমতি থাকতে হবে।
  • খুতবা দিতে হবে।

[১২]

অবকাঠামো

মসজিদ হবার জন্য শ্রেফ নির্ধারিত পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র স্থান হলেই হয়ে যায়। তবে সেই মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগ থেকে মসজিদের একটা অবকাঠামোগত আলাদা বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেছে। একটা মসজিদে সাধারণত নামায আদায়ের জন্য নির্ধারিত একটি অংশ বা ঘর থাকে। তার সম্মুখভাগে একটা বর্ধিত অংশ থাকে, যাকে বলে মিহরাব। অনেক মসজিদেরই সুবিশাল গম্বুজ, উঁচু মিনার এবং বৃহদাকার প্রাঙ্গণ দেখা যায়। মসজিদে আযান দেয়ার জন্য নির্ধারিত একটি অংশ বা ঘর থাকে। এইখানে আযানের মাধ্যমে প্রথমত মুয়াযযিন নামাযের সময় হলে জামাতে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়ে মসজিদ থেকে উচ্চস্বরে আযান দিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তারপর ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে পিছনের লোকদিগকে (মুক্তাদি) নামাযে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া জামাতে ফরয নামায আদায়ের ক্ষেত্রে মুয়াযযিন সাহেব ইক্বামাহ্‌ দিয়ে থাকেন। আর খাদিম ইমাম সাহেব, মুয়াযযিন সাহেব, মোক্তাদিদের এবং মসজিদের খেদমতে নিয়োজিত থাকেন। নামাযের স্থলের বাইরের দিকে বারান্দা থাকে। যেহেতু ইসলামে মসজিদ কেবল নামায আদায়ের জন্যই নয়, বরং একইসাথে রাজনীতি ও সমাজ পরিচালনার কেন্দ্র, তাই এই বারান্দাও মসজিদের স্থাপত্য কাঠামোর আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।

মসজিদের তালিকা

এলাকার ভিত্তিতে

আয়তনের ভিত্তিতে

বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদসগুলোর তালিকা
ক্রমবিন্যাসমসজিদঅবস্থানধারনক্ষমতাআয়তন (মিটার²)বছরমুসলিম শাখা
মসজিদ আল-হারামমক্কা, মক্কা প্রদেশ, সৌদি আরব৪০,০০,০০০*৪,০০,৮০০৬৩৮সুন্নি
মসজিদে নববীমদিনা, মদিনা প্রদেশ, সৌদি আরব১০,০০,০০০*৪,০০,৫০০৬২২সুন্নি
ইমাম রেজার মাজারমাশহাদ, রাজাভি খোরাসান প্রদেশ, ইরান৭,০০,০০০৫,৯৮,৬৫৭৮১৮শিয়া
ইস্তিকলাল মসজিদজাকার্তা,ইন্দোনেশিয়া১,২০,০০০৯৫,০০০১৯৭৮সুন্নি
দ্বিতীয় হাসান মসজিদকাসাব্লাঙ্কা, গারাব-ছাররাদা-বেনি হসসেন, মরোক্কো১,০৫,০০০৯০,০০০১৯৯৩সুন্নি
ফয়সাল মসজিদইসলামাবাদ,পাকিস্তান৭৪,০০০৪৩,২৯৫.৮১৯৮৬সুন্নি
বাদশাহী মসজিদলাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান১,১০,০০০২৯,৮৬৭.২১৬৭৮সুন্নি
জামে মসজিদ দিল্লীপুরাতন দিল্লী, দিল্লী, ভারত৮৫,০০০-১৬৫৬সুন্নি
শেখ যায়েদ মসজিদআবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত৪০,০০০২২,০০০২০০৭সুন্নি
১০বায়তুল মুকাররমঢাকা, ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশ৩০,০০০-১৯৬০সুন্নি
১১সুলতান কাবুসমাস্কট, মাস্কট সরকার , ওমান২০,০০০-২০০১সুন্নি
১২আদ্‌ খ মসজিদখাস্‌গর, জিংজেঙ্গ, চায়না২০,০০০-১৪৪২সুন্নি
১৩মসজিদ নিগারাকুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া১৫,০০০-১৯৬৫সুন্নি
১৪মসজিদ-ই-আক্‌সারাবওয়া, পাকিস্তান১২,০০০-১৯৭২আহমদীয়া
১৫বায়তুল ফুতুহ্‌লন্ডন,যুক্তরাজ্য১০,০০০-২০০৩আহমদীয়া
১৬সুলতান আহ্‌মেদ মসজিদইস্তাম্বুল, ইস্তাম্বুল প্রদেশ, তুরস্ক১০,০০০-১৬১৬সুন্নি
১৭আল ফতেহ্‌ জামে মসজিদমানামা, বাহরাইন৭,০০০-১৯৮৭সুন্নি
১৮আল-আকসা মসজিদজেরুজালেম, ইসরায়েল / ফিলিস্তিন অধিকৃত৫,০০০-আনুমানিক৭০০সুন্নি
* এই দুই মসজিদের ধারণক্ষমতা হজ্জ চলাকালে সমন্বিত আকারে দেয়া হলো।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • উইকিসংকলনে পাঠ্য:
    • "Mosque"। এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা। ১৯২০। 
    • R. Phené Spiers (১৯১১)। "Mosque"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। 
    • "Mosque"। New International Encyclopedia। ১৯০৫। [[Category:উইকিপিডিয়া নিবন্ধ যাতে নিউ ইন্টারন্যাশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে একটি উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে]]
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ