মহাপজাপতি গোতমী
মহাপজাপতি গোতমী (পালি: महापजापति गोतमी) বা মহাপ্রজাপতি গৌতমী (সংস্কৃত: महाप्रजापति गौतमी) বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে প্রথম নারী, যাকে বৌদ্ধ সংঘে ভিক্ষুণী হিসেবে জীবন যাপন করার অনুমতি প্রদান করা হয়।[১] তিনি সম্পর্কে গৌতম বুদ্ধের বিমাতা ও মাসি ছিলেন।
প্রথম জীবন
মহাপজাপতি গোতমী কোলীয় গণের একজন রাজকন্যা ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল অঞ্জন এবং মাতার নাম ছিল যশোধরা। তিনি ও তার ভগিনী মায়াদেবী[২][৩] উভয়েই তাদের খুড়তুতো ভ্রাতা ও শাক্য প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধান শুদ্ধোধনকে বিবাহ করেন।[৪][৫] সিদ্ধার্থ গৌতমকে জন্ম দিয়ে মায়াদেবী মৃত্যুবরণ করলে মহাপজাপতি গোতমী তাকে লালন পালন করেন।[৫] শুদ্ধোধনের ঔরসে তার গর্ভে নন্দা ও নন্দ নামক দুই সন্তানের জন্ম হয়।
পরবর্তী জীবন
সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করার কয়েক বছর পরে তার পিতা শুদ্ধোধন মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মহাপজাপতি গোতমী সংসারধর্ম ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন[৫] এবং গৌতম বুদ্ধের নিকট সংঘে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেন, কিন্তু বুদ্ধ কোন নারীকে সংঘে যোগ করার ব্যাপারে প্রস্তুত ছিলেন না।[১] হতাশ না হয়ে মহাপজাপতি গোতমী মুণ্ডিতমস্তক হয়ে পীতবর্ণের বস্ত্র পরিধান করে শাক্য ও কোলীয় প্রজাতন্ত্রের বহুসংখ্যক নারীকে একত্র করে বুদ্ধের অনুসরণ করে পদব্রজে বৈশালী যাত্রা করেন।[১][৬] বৈশালীতে পুনরায় তিনি বুদ্ধের নিকট তার আবেদন জানান। এই সময় বুদ্ধের অন্যতম প্রিয় শিষ্য ও সহায়ক আনন্দ মহাপজাপতির হয়ে বুদ্ধকে সংঘে নারীদের ভিক্ষুণী হিসেবে যোগদানের অনুরোধ করেন ও অবশেষে গৌতম বুদ্ধ এই প্রস্তাবে রাজী হন কিন্তু ভিক্ষুণীদের জন্য তিনি আটটি কঠিন নিয়মাবলীর প্রচলন করেন।[১] ধম্মপদত্থকথা অনুসারে, গোতমীর উপসম্পদা আনুষ্ঠানিক ভাবে না হওয়ায় পরবর্তীকালে ভিক্ষুণীরা তার সঙ্গে উপোসথ করতে অরাজী হন, কিন্তু গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং তাকে নিয়মনিষ্ঠ উপসম্পদাপ্রদান করেছিলেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের দ্বারা ধর্মশিক্ষা লাভ করে তিনি অর্হত হন।[৭] জীবনের বাকি সময় ভিক্ষুণী হিসেবে কাটানোর পর ১২০ বছর বয়সে মহাপজাপতি গোতমী মৃত্যুবরণ করেন।[৮]