মাক্সিম গোর্কি

রুশ লেখক

আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ (রুশ: Алексей Максимович Пешков)[১] বা মাক্সিম গোর্কি (মার্চ ২৮, ১৮৬৮ – জুন ১৮, ১৯৩৬) ছিলেন একজন রুশ, সোভিয়েত লেখক, সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী।[২] তিনি নিজেই তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম হিসেবে 'গোর্কি' অর্থাৎ 'তেতো' নামকে বেছে নেন। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে 'মা' একটি কালজয়ী উপন্যাস। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঁচবারের মনোনীত হয়েছিলেন।[৩]

মাক্সিম গোর্কি
Maxim Gorky
আনুমানিক ১৯০৬ সালের সংগৃহীত প্রতিকৃতিতে ম্যাক্সিম গোর্কি
আনুমানিক ১৯০৬ সালের সংগৃহীত প্রতিকৃতিতে ম্যাক্সিম গোর্কি
জন্মআলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ
28 March [পুরোনো শৈলীতে 16 March] 1868
নিঝনি নোভগরদ, নিঝনি নোভগরদ ওব্লাস্ট, রুশ সাম্রাজ্য
মৃত্যু১৮ জুন ১৯৩৬(1936-06-18) (বয়স ৬৮)
গোর্কি লেনিনস্কি, মস্কো ওব্লাস্ট, রুশ প্রজাতন্ত্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন
ছদ্মনামম্যাক্সিম গোর্কি
পেশালেখক, নাট্যকার, রাজনৈতিক লেখক
জাতীয়তারুশ, সোভিয়েত
সময়কালআধুনিকতাবাদ
ধরনউপন্যাস, নাটক
সাহিত্য আন্দোলনসমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ

স্বাক্ষর

একজন লেখক হিসেবে সফল হওয়ার প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে তিনি প্রায়শই চাকরি পরিবর্তন করেছিলেন এবং রাশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে বেড়াতেন; এই অভিজ্ঞতাগুলি পরে তাঁর লেখার উপর প্রভাব ফেলেছে। গোর্কি উদীয়মান মার্কসবাদী সামাজিক-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি বলশেভিক পার্টির সাথে কিছুদিন যুক্ত থেকে কাজ করেছিলেন। তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য তিনি রাশিয়া এবং পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

পারিবারিক জীবন

মাক্সিম গোর্কি নিঞ্জি নভগরদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। গোর্কির বাবার নাম ছিলো মাক্সিম পেশকভ ও মায়ের নাম ভারিয়া। তাদের প্রথম সন্তান আলেক্সেই পেশকভের জন্ম হয় ১৮৬৮ সালের ২৮শে মার্চ। পিতৃদত্ত নাম মুছে গোর্কি নামেই উত্তরকালে জগৎবিখ্যাত হন। তিনি ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। বাবা মারা যাবার পর মায়ের সঙ্গে এসে আশ্রয় নিলেন মামার বাড়ি নিজনি নভগরোদ শহরে। তারপরে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হলেন। ইতোমধ্যে মা আরেকজনকে বিয়ে করেছেন। হঠাৎ করে একদিন মা মারা যান। এরপরে গোর্কির দাদা আর দায়িত্ব নিতে চান না। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার দাদীমাকে খুঁজতে গৃহত্যাগ করেন।

কর্ম ও সাহিত্যজীবন

১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমণ করেন।[২] ১৮৮২ সালে সাহিত্য রচনা শুরু করেন। তিনি জেহুদিয়েল কামিদা ছদ্মনামে লিখেছিলেন।[৪] ম্যাক্সিম গোর্কীর সর্বপ্রথম রচনা গল্প 'মাকার চুদ্রা'। সেটি প্রকাশিত হয় তিবিলিসির সংবাদপত্র কাভকাজে। যেখানে বেশিরভাগ সময় ককেশীয় রেলওয়ে কর্মশালার জন্য তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ কাজ করেছিলেন। সাংবাদিক হিসাবে প্রাদেশিক সংবাদপত্রে কাজ করছিলেন।[৫][৬][৭]

গোর্কির স্বাক্ষর সংবলিত ছবি

শিক্ষা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন গোর্কি। কিন্তু স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। প্রথম কারণ, তার নানা কোনো খরচ দিতে রাজি হননি। দ্বিতীয় কারণ, নানার বাড়িতে পড়াশোনার কোনো পরিবেশই ছিল না বা পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তার কথা কেউ ভাবত না। আর তৃতীয় কারণ হচ্ছে, মামারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে এমন নারকীয় পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন যে কিশোর গোর্কির পক্ষে বাড়িতে তিষ্টানো ছিল খুব কঠিন। ফলে তিনি বখাটেদের সঙ্গে মিশে ঘুরে বেড়ানোর পথটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের বাঁধন ছিন্ন হলেও কোনো এক অজ্ঞেয় কারণে বইয়ের প্রতি তার আসক্তি তৈরি হয় এবং তিনি নিজে নিজেই লেখাপড়া করতে থাকেন। সম্পূর্ণই স্বশিক্ষিত এক মানুষ বলা যায় গোর্কিকে।

সাহিত্যের বিকাশ

প্রথাগত রচনার বাইরে গোর্কি তার লেখায় প্রাধান্য দেন সমাজের নিচুশ্রেণীর খেঁটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জীবনের গল্পকে। ১৮৯৮ সালে তার লেখা প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি সংকলন রেখাচিত্র ও কাহিনী প্রকাশিত হয়। ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় তার সার্থক উপন্যাস ফোমা গর্দিয়েভ। ১৯০০ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত গোর্কির লেখা আরও আশাবাদী হয়ে ওঠে।[৮] ১৯০১ সালে বিপ্লবী ছাত্রদের হত্যার করার জন্য প্রতিবাদ জানিয়ে গোর্কি রচনা করলেন ঝোড়ো পাখির গান নামের কবিতা। ১৯০৭ সালে তিনি রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস 'মা'[৯]

পোভোলজিয়ে দুর্ভিক্ষ

১৯২১ সালের জুলাইয়ে গোর্কি বাইরের বিশ্বের কাছে একটি আবেদন প্রকাশ করেছিলেন,বলছেন যে ফসলের উৎপাদন কম হওয়ায় লক্ষ লক্ষ জীবন দুর্ভোগে পতিত হয়েছিল। ১৯২২-২২ সালের রাশিয়ান দুর্ভিক্ষ, যা পোভোলজিয়ে দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। প্রায় আনুমানিক ৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়, যা মূলত ভোলগা এবং ইউরাল নদীর অঞ্চলগুলিতে ছিল।[১০]

মৃত্যু

ক্রেমলিন ওয়াল নেক্রোপলিসে গোর্কির সমাধি

স্ট্যালিনবাদীদের উপর দমন-পীড়া বৃদ্ধির পেতে থাকে এবং ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বরে সের্গেই কিরভকে হত্যার পরেমস্কোর কাছে গোর্কিকে তাঁর বাসায় অঘোষিতভাবে গৃহবন্দী করা হয়েছিল।[১১] ১৯৩৪ সালের মে মাসে গোর্কির ছেলে ম্যাক্সিম পেশকভের আকস্মিক মৃত্যুর পরে ম্যাক্সিম গোর্কি ১৯৩৬ সালের জুনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[১২]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • https://m.ntvbd.com/arts-and-literature/232217/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B8/[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ