মোবাইল ফোন

তারবিহীন টেলিফোন যার সাহায্যে অপরের সাথে যোগাযোগ করা যায়

মোবাইল ফোন এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। “মোবাইল ফোন” শব্দদ্বয় দ্বারা একই সঙ্গে মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন ব্যবস্থা এবং গ্রাহকের ব্যবহার্য হ্যাণ্ডসেট বোঝানো হয়ে থাকে। এই হ্যাণ্ডসেটকে মোবাইল ফোন ছাড়াও সেলফোন, হ্যান্ড ফোন এবং মুঠোফোন হিসাবে অভিহিত করা হয়। এই ফোনসেট "স্থানান্তরযোগ্য" বা মোবাইল। এই ফোন সহজে যেকোনও স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে “মোবাইল ফোন” নামকরণ করা হয়েছে। মোবাইল হলো বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে একটি অপরিহার্য ইলেকট্রিক যন্ত্র । এর মাধ্যমে বর্তমানে সব ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব এবং এটি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া যায় এবং পৃথিবীর অপর প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায় ।

৯০ এর দশকে ব্যবহৃত বার স্টাইলের কোয়ালকম কিউসিপি-২৭০০ (QCP-2700) মোবাইল ফোন এবং হাল আমলের স্মার্ট ফোন আইফোন

মোবাইল ফোন-এ কথা বলার জন্য বেতার তরঙ্গের সঙ্গে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফলে কথা বলার অতিরিক্ত অন্যান্য সেবা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়েছে, যেমন: খুদে বার্তা -এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রা-রেড, ব্লু টুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এইসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্টফোন নামে ডাকা হয়।

ইতিহাস

মোবাইল ফোনের বিবর্তন

সেলুলার ফোন প্রারম্ভিকভাবে পূর্বসুরীরা জাহাজ এবং ট্রেন থেকে এনালগ রেডিও কমিউনিকেশনের সাহায্যে ব্যবহার করত। মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ডঃ মার্টিন কুপার[১] এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে[২][৩][৪] প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। তাঁরা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ২ কেজি (৪.৪ পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন[৫]

ডঃ মার্টিন কুপার

মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে, ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x)।

ব্যবহার প্রসারণ

১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ বিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় এসেছে[৬][৭][৮][৯]

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক

মোবাইল ফোন ব্যবস্থার অপারেটররা তাদের সেবা অঞ্চলকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেকগুলো ক্ষেত্র বা কোষে বিভক্ত করে। সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির কোষই বেশি দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মোবাইল সেবা সরবরাহ করা হয় কয়েকটি নেটওয়ার্ক স্টেশন (সচরাচর যেগুলোকে আমরা মোবাইল ফোন কোম্পানির এন্টেনা হিসেবে জানি) দিয়ে। নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো আবার সাধারণত সেলগুলোর প্রতিটি কোণে অবস্থান করে। এভাবে অনেকগুলো সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি "সেলফোন" নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে ।

বৈশিষ্ট্য

যদিও মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের ফোনকে বিশেষায়িত করার জন্য অনেক আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করছে প্রতিনিয়ত, তবুও সকল মোবাইল ফোনেরই কয়েকটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এদের অপরিহার্য অঙ্গ। এগুলো হচ্ছে -

  • তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারী - ফোনের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • কোন ইনপুট পদ্ধতি যার সাহায্যে ফোন ব্যবহারকারীর সাথে ফোনের মিথস্ক্রিয়া বা দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ইনপুট পদ্ধতি হচ্ছে কী প্যাড তবে ইদানীং স্পর্শ কাতর পর্দা বা টাচ স্ক্রীন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
  • সাধারণ মোবাইল ফোন সেবা যার দ্বারা ব্যবহারকারী কথা বলতে বা খুদে বার্তা পাঠাতে পারেন।
  • জিএসএম ফোনগুলোয় সিম কার্ড থাকে। কিছু কিছু সিডিএমএ ফোনে রিম কার্ড থাকে।
  • প্রতিটি স্বতন্ত্র ফোনের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র আইএমইআই (IMEI) নাম্বার যার সাহায্যে ওই ফোনটিকে সনাক্ত করা যায়।

নিম্নস্তরের মোবাইল ফোনকে প্রায়ই ফিচার ফোন বলে ডাকা হয় এবং এগুলো শুধুমাত্র প্রাথমিক টেলিফোন যোগাযোগ সুবিধা দেয়। আর কিছু মোবাইল ফোন আরও অগ্রসর সুবিধা এবং কম্পিউটারের মত সেবা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্ট ফোন বলে।

বেশ অনেক মোবাইল ফোনের পরম্পরা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীকে উদ্দেশ্য করে তৈরী করা হয়েছে। যেমন বহুজাতিক বা কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষায়িত ই-মেইল সুবিধা নিয়ে এসেছিল ব্ল্যাকবেরি। সনি-এরিক্সনের গান শোনার বিশেষায়িত 'ওয়াকম্যান' সিরিজ বা 'সাইবারশট' ক্যামেরা ফোন, নকিয়ার এন সিরিজ মাল্টি মিডিয়া ফোন এবং আইফোন সিরিজ বা স্যামসাং এর গ্যালাক্সী এস সিরিজ।

ব্যবহার

অনেক মোবাইল ফোনই স্মার্ট ফোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কথা বলার পাশাপাশি এ ধরনের ফোনগুলো অন্যান্য বিষয়েও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

  • ই-মেইল, এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা, প্রেরণ ও গ্রহণ;
  • ক্যালকুলেটর, মুদ্রা, সঙ্কেত বিষয়ক কার্যাবলী;
  • ইন্টারনেট;
  • গেমস খেলা;
  • ছবিভিডিও তোলা;
  • ঘড়ির সময় দেখা;
  • কথা রেকর্ড করা;
  • ট্রেনের টিকিট বুকিং করা;
  • বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল দেয়া ইত্যাদি।
  • টাকার আদানপ্রদান করা।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে।

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৪টি মোবাইল ফোন কোম্পানী রয়েছে। এদের মধ্যে ৪টি জিএসএম তবে একটি সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল সেবা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সব জিএসএম মোবাইল কোম্পানি ২০১৩ সাল থেকে তৃতীয় প্রজন্মের ৩জি সেবা দেওয়া শুরু করেছে। মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে একমাত্র টেলিটক দেশিয় কোম্পানি। বর্তমানে রবি ও এয়ারটেল একীভূত হয়ে রবি হবার কাজ করছে। দেশে মোবাইল নম্বর গুলো ০১ দিয়ে শুরু। কান্ট্রি কোড সহ নম্বর হয় +৮৮০১********* । কান্ট্রি কোড ব্যতীত মোট ১১ ডিজিটের নম্বর ব্যবস্থা চালু এখন। মোবাইল কোম্পানীগুলো হল:

  • সিটিসেল কোড - ০১১(সিডিএমএ) [বর্তমানে বন্ধ]
  • রবি কোড -০১৮(পূর্ব নাম একটেল)

এয়ারটেল (বাংলাদেশ) কোড - ০১৬(ওয়ারিদকে কিনে নেয় )- বর্তমানে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পরিচালিত একটি স্বাধীন ব্যান্ড, যেটি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের লাইসেন্সের অধীনে পরিচালিত।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে মোবাইল সিমের গ্রাহক সংখ্যা ১৯ কোটি ৩৬ লাখ। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৮ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার, রবির ৫ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ও টেলিটকের গ্রাহক ৬৪ লাখ ৬০ হাজার।[১০]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ