রয়েল এক্সিবিশন প্রাসাদ

মেলবোর্নের একটি প্রাসাদ, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া

রয়েল এক্সিবিশন প্রাসাদ একটি তালিকাভূক্ত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে অবস্থিত, যার নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় ১৮৮০ সালে। এই প্রাসাদটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক জেলার কার্লটন গার্ডেনের ৯ লিকলসন রোডে অবস্থিত। যার পার্শ্ববর্তী রোডসমূহ হল ভিক্টোরিয়া রোড, কার্লটন রোড, নিকলসন রোড এবং র‍্যাথডাউনি রোড। ১৮৮০-১৮৮১ সালে এটি নির্মাণ করা হয় মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য। পরবর্তীতে ১৯০১ এই প্রাসাদে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সংসদ অধিবেসন বসে। বিংশ শতাব্দী ধরে এই প্রাসাদের ছোট ছোট অনেক বিভাগ, হলরুম অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন দূর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও প্রধান ভবন, যা গ্রেট হল নামে পরিচিত। তা এখনো বিদ্যমান।

রয়েল এক্সিবিশন প্রাসাদ
রয়েল এক্সিবিশন ভবন, ভবনের দক্ষিণ বা কার্লটন গার্ডেনস দিকে ঝরনা দেখা যাচ্ছে
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
অবস্থান৯ নিকোলসন স্ট্রিট, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
স্থানাঙ্ক৩৭°৪৮′১৭″ দক্ষিণ ১৪৪°৫৮′১৬″ পূর্ব / ৩৭.৮০৪৭২৮° দক্ষিণ ১৪৪.৯৭১২২৫° পূর্ব / -37.804728; 144.971225
নির্মাণকাজের আরম্ভ১৮৭৯ (1879)
নির্মাণকাজের সমাপ্তি১৮৮০ (1880)
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিজোসেফ রীড
প্রাতিষ্ঠানিক নামরয়েল এক্সিবিশন ভবন ও কার্লটন গার্ডেন
ধরনসাংস্কৃতিক
মানক
অন্তর্ভুক্তির তারিখ২০০৪ (২৮ তম সেশন)
রেফারেন্স নং১১৩১
State Party অস্ট্রেলিয়া
Regionএশিয়া মহাদেশ

এটি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয় ১৯৯০ সালে নাগাদ এবং ২০০৪ সালে এটি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ভবন যা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি লাভ করে। যা বিশ্বের ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রদর্শনীর ভবনগুলোর নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম। এটি ঠিক মেলবোর্ন যাদুঘরের সন্নিকটে অবস্থিত। বর্তমানে এই প্রাসাদে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী, অন্যান্য অনুষ্ঠান সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।

ইতিহাস

১৮৮০ সালের একটা ছবি যখন "ওয়াল্ড ফেয়ার" অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, এতে ভবনের পেছনের অংশ দেখা যাচ্ছে, যা বর্তমানে নেই
৯ মে ১৯০১ সালের অস্ট্রেলিয়ার সংসদের প্রথম অধিবেসনের একটি টম রবার্টসের আকা ছবি
মেলবোর্নের কার্লটোন গার্ডেনের প্রধান রাস্তা থেকে রয়্যাল এক্সিবিশন ভবন

রয়েল এক্সিবিশন প্রাসাদটির ডিজাইন করেন স্থপতি জোসেফ রীড, যিনি মেলবোর্ন টাউন হল ভিক্টোরিয়ার স্ট্যাট্য অব লিবার্টির ডিজাইনও করেন। রীডের মতে, বিভিন্ন উৎস হতে এই প্রাসাদের ডিজাইন নির্বাচন করা হয়। এই প্রাসাদের গম্ভুজের মডেল ফ্লোরেন্স ক্যাথেড্রাল এর মত, যদিও এর প্রধান প্যাভিলিয়নের ধরন রান্ডবোজেন্সটিল, নরম্যান্ডি কিন এবং প্যারিসের অনেক ভবনের ডিজাইনের সমন্বয়ে তৈরী।[১]১৮৭৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন ভিক্টোরিয়ান গভর্নর জর্জ বোউনী এওবং এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় ১৮৮০ সালে, তৈরী হয় মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে। এই ভবনে সবগুলো হলের আয়তনের সমষ্টি ১২,০০০ বর্গ মিটারেরও বেশি এবং এর অনেকগুলো সাময়িক বর্ধিত হল আছে।[২]

১৮৮০-১৯০১

১৮৮০’র দশকে এই প্রাসাদটিতে দুইটি বৃহৎ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। একটি ১৮৮০ সালে মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং অন্যটি ১৮৮৮ সালে মেলবোর্ন শতবর্ষ প্রদর্শনী, যা অস্ট্রেলিয়াতে ইউরোপিয়ানদের উপনিবেশের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়। ১৯০১ সালে ৯ মে এই প্রাসাদে অস্ট্রেলিয়ার সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশন আয়োজন করা হয়। ঠিক পরের বছরের জানুয়ারীর ১ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথের সদস্যপদ প্রাপ্তির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর ফেডারেল পার্লামেন্ট ভিক্টোরিয়ান স্টেট পার্লামেন্ট হাউজে স্থানান্তরিত হয়। যদিও ভিক্টোরিয়ান পার্লামেন্ট ২৬ বছরের জন্য প্রদর্শনী ভবনে স্থানান্তরিত হলেও, স্থানান্তরের মাত্র আট বছরের মধ্যে ভিক্টোরিয়ান পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ করা হয়।

১৯০১-১৯৭০

ফোয়ারার দিক থেকে তোলা ভবনের ছবি

১৯০২ সালে এই ভবনে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই সময়ের পর থেকে এই প্রাসাদটি বিভিন্ন উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[৩]

এটি ১৯৫৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট ছিল বাস্কেটবল, ভারোত্তলন, কুস্তি।[৪][৫]১৯৪০ সাল নাগাদ স্থানীয়দের কাছে এটি হোয়াইট ইলিফ্যান্ট নামে পরিচিতি লাভ করে।[৬] পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের দিকে এই ভবনকে সরকারি কাজে ব্যবহৃত করা হয়, যা মেলবোর্নের অনেক ঐতিহ্যবাহী ভবনের একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে মেলবোর্ন সিটি কাউন্সিলের সদস্যরা এই প্রাসাদের পক্ষে ভোট দেয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে স্বল্প আকারে এই ভবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা হবে। এই ভবনের যে অংশে মেলবোর্নের অ্যাকুতিয়াম ছিল তা ১৯৫৩ সালের অগ্নিকান্ডে ধ্বংস হয় যায়। ১৯৪০-১৯৫০ এর দশকে এই ভবনটি নিয়মইত সাপ্তাহিক নাচের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কিছু দশক পরে এখানে নৌকা প্রদর্শনী, গাড়ি প্রদর্শনী এবং নিয়মিত শিল্পীয় পণ্যের প্রদর্শনীর কাজে ব্যববৃত হয়। ভবনের অন্যান্য ব্যবহারের পাশাপাশি ১৯৫০, ১৯৬০ এবং ১৯৭০ দশকে এই ভবন স্টেট হাই স্কুল মেট্রিকুলেশন ভিক্টোরিয়ান সার্টিফিকেট পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যদিও প্রধান বলরুমটি ১৯৭৯ সালে ধ্বংস হয়ে যায়। প্রাসাদের প্রধান গঠন অপরিবর্তিত রেখে ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে[৭] এই প্রাসাদের বিভিন্ন অংশ পুনঃনির্মাণ করা হয়। প্রধান বলরুমের ধ্বংসের পর একটি গণজাগরণ ঘটে এই প্রাসাদটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা জন্য।

১৯৮০-বর্তমান

১৯৮০ সালের ১৩ আগস্ট, হামার সরকারের শিল্পকলা মন্ত্রী হন নরমান লেসি এই প্রদর্শনী ভবনের ২৯ মে, ১৮৮০ সালে জনগণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার শতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি প্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন ( যা পূর্ব তৌরণে অবস্থিত)।[৮][৯]১৯৮৪ সালে ভিক্টোরিয়া পরিভ্রমনের সময় প্রিন্সেস অ্যালেক্সজান্দ্রিয়া (রাণী ইলিজাবেথ II এর চাচাতো বোন) এই ভবনকে রাজকীয় উপাধী দেন এবং এর পর থেকে এই ভবনের নামকরণ হয় রয়েল এক্সিবিশন প্রাসাদ। ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের[১০] শেষের দিকে এর অতিরিক্ত অংশে বাইরের কাচের পুনঃনির্মাণ করেন অ্যালান ইউলিংহাম যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে প্রিমিয়ার অব ভিক্টোরিয়া এবং জেফ কেনেট এই প্রাসাদের পার্শ্ববর্তী স্থানে মেলোবোর্ন স্টেট জাদুঘর স্থাপনের প্রাস্তাব দেয়। প্রাসাদের অস্থায়ী অতিরিক্ত অংশ তৈরী হয় ১৯৬০ এর দশকে এবং যা সরিয়ে ফেলা হয় ১৯৯৭। ১৯৯৮ সালে দ্রুত এই প্রাসাদের বাইরের অংশ পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।

Melbourne রয়েল এক্সিবিশন ভবন (পূর্বদিক)
ভবনের অভ্যন্তরে প্রধান হল

জন ব্রাম্বি রাজ্যের বিরোধী নেতা মেলবোর্ন সিটি কাউন্সিলের সমর্থনে রয়েল এক্সিবিশন বিল্ডিংকে বিস্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভূক্ত করার প্রস্তাব দেয়। ১৯৯৯ সালে ভিক্টোরিয়ান লেবার পার্টি দেশপরিচালনার ক্ষমতা না পাওয়া পর্যন্ত এই মনোনয়নের কোন অগ্রগতি হয় নি।২০০৪ সালের ১ জুলাই, রয়েল এক্সিবিশন বিল্ডিং ও কার্লটন বাগান বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভূক্ত স্বীকৃতি পায়, যা অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ভবন হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নেয়। এই স্বীকৃতিপত্রে বলা হয়, এই প্রদর্শনী ভবনটি ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রদর্শনী ভবন।

রয়েল এক্সিবিশন ভবনের ফোয়ারা

২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে ভিক্টোরিয়া যাদুঘরের পাশাপাশি জার্মান বাগান পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য একটা বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই বাগানটি ১৯৫০ সাল থেকে গাড়ি পার্কিং এর কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[১১]

বর্তমান ব্যবহার

রয়েল এক্সিবিশন বিল্ডিং এখনো বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর কিছু নিয়মিত প্রদর্শনীর অন্যতম হল মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক ফুল ও বাগান মেলা। মেলবোর্ন যাদুঘরেরও কিছু প্রদর্শনী এখানে অনুষ্ঠিত হয়।রয়েল এক্সিবিশন বিল্ডিংটি ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, রয়্যাল মেলবোর্ন ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজী, মেলবোর্ন হাই স্কুল, ম্যাক রবার্টসন গার্লস হাই স্কুল, নিস্যাল হাই স্কুল এবং সুজান কোরি হাই স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।যাহোক, এটা এখন মেলবোর্ন এর বৃহত্তম বাণিজ্যিক প্রদর্শনী কেন্দ্র। রয়েল এক্সিবিশন বিল্ডিং আধুনিক বিকল্প মেলবোর্ন এক্সিবিশন এবং কনভেনশন সেন্টার হল। এটা কেন্দ্রীয় শহর এলাকার দক্ষিণে সাউথব্যাঙ্কে মধ্যে অবস্থিত

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

আরো দেখুন

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ