রূপকথা

গল্পের একটি ধরন

রূপকথা হলো ছোট গল্পের একটি ধরন, যাতে মূলত লোককথা ও কাল্পনিক ধরনের চরিত্র; যেমন: বামন, ড্রাগন, ক্ষুদ্র পরী, পরী, দৈত্য, যক্ষ, গবলিন, গ্রিফিন, মৎস্যকন্যা, সবাক প্রাণী, ট্রোল, কাল্পনিক ঘোড়া বা ডাইনি, জাদু বা জাদুমন্ত্র ইত্যাদি তুলে ধরা হয়। রূপকথা অন্যান্য লোককাহিনী; যেমন : কিংবদন্তি (যা মূলত কোন ঘটনার সত্যনিষ্ঠার বিশ্বাসের ধারণা দেয়)[১] ও প্রাণীদের ভাষ্যে উপকথামূলক নীতিকথা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। এই শব্দটি দিয়ে প্রধানত ইউরোপীয় রীতির গল্প বর্ণিত হয়ে থাকে এবং সাম্প্রতিক শতাব্দীর গল্প, বিশেষ করে শিশু সাহিত্যের সাথে এটি জড়িত।

সংজ্ঞা

যদিও রূপকথা লোককাহিনীর বিশদ শ্রেণিবিভাগের মধ্যে ভিন্নধর্মী, রূপকথা বিষয়ক কাজের সংজ্ঞার মধ্যে বিস্তর মতবিরোধ রয়েছে। এই বিষয়টির ব্যবহার সর্বপ্রথম লক্ষ্য করা যায় ১৬৯৭ সালের মাদাম দাউলনয়ের কন্তে দ্য ফিস বইয়ের অনুবাদে।[২] রূপকথার সাধারণ পরিভাষা পশুদের জবানীতে উদ্ধৃত উপকথা এবং লোককাহিনীর সাথে মিশে যায়, পণ্ডিতগণ অবশ্য রূপক বিষয়সমূহ বা পৌরাণিক জন্তু, যেমন ক্ষুদ্র পরী, গবলিন, ট্রোল, দৈত্য, বা অতিকায় দানব) এর উপস্থিতিকে পার্থক্য সৃষ্টিকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ভ্লাদিমির প্রপ তার লোককাহিনীর গঠনতত্ত্বে অনেক রূপকথায় কাল্পনিক উপাদানের সাথে পশুও বিদ্যমান থাকার ভিত্তিতে "রূপকথা" ও "পশুদের জবানীতে উদ্ধৃত উপকথা" মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকরণের সমালোচনা করেন।[৩]

ধরনের ইতিহাস

লোককাহিনীর এই ধরন মূলত ইউরোপীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন কথ্য গল্প থেকে এসেছে। এই ধরনটিকে প্রথম আবিষ্কার করেন রেনেসাঁ যুগের লেখকগণ, যেমন জোভান্নি ফ্রান্সেস্কো স্ত্রাপারোলা ও জিয়ামবাতিস্তা বাসিলে এবং পরবর্তীতে শার্ল পেরোগ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় এর সংগ্রহের ফলে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।[৪] এই ক্রমবিকাশকালে এই নামটির ব্যবহার শুরু হয় যখন সাহিত্যিক লেখনীতে প্রেসিওজিতে জায়গা করে নেয়। মাদাম দোলনয়া ১৭শ শতাব্দীর শেষের দিকে কোন্তে দ্য ফি বা রূপকথা বিষয়টির উদ্ভাবন করেন।[৫]

লোককথা ও সাহিত্য

মুখে মুখে বর্ণিত রূপকথা লোককথার একটি উপধরন। অনেক লেখক রূপকথার ধরনে গল্প রচনা করেছেন। সেগুলো সাহিত্যিক রূপকথা।[২] সবচেয়ে প্রাচীন ধরন পঞ্চতন্ত্র থেকে শুরু করে পেন্তামেরোন পর্যন্ত কথ্য রূপের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়।[৬] গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় কথ্য কাহিনীসমূহকে সংরক্ষণ করার প্রথম প্রয়াস গ্রহণ করেন। লিখিত রূপের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের নামে মুদ্রিত গল্পসমূহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।[৭]

সাহিত্যিক রূপকথা ও কথ্য রূপকথা একে অপরের কাহিনী, উদ্দেশ্য ও উপাদান ব্যবহার করে থাকে এবং বিদেশি গল্পের কাহিনীও মাঝে মাঝে গৃহীত হয়ে থাকে।[৮] সাহিত্যিক রূপকথার প্রচলন শুরু হয় ১৭শ শতাব্দীতে।[৯] ১৮শ শতাব্দীর লোকাচারবিদগণ সাহিত্যিক সংস্করণের সাথে না গুলিয়ে "খাঁটি" লোককথা পুনরুদ্ধার করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। রূপকথার কথ্য রূপ সাহিত্যিক রূপের হাজার বছর পূর্ব থেকে বিদ্যমান ছিল, কিন্তু খাঁটি লোককথার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।[১০] ফলে রূপকথার রুপান্তরের ধরন অনুসন্ধান করা অসম্ভব হয়ে গেছে। কথ্য গল্পকথকগণ তাদের গল্পের ভাণ্ডার বৃদ্ধির জন্য সাহিত্যিক রূপকথা পাঠ করেন বলে জানা যায়।[১১]

সমসাময়িক গল্প

সাহিত্য

জন বাউয়েরের আঁকা ট্রোলের চিত্র, সুইডিশ রূপকথার গল্প থেক নেওয়া।

সমসাময়িক সাহিত্যে অনেক লেখক বিভিন্ন কারণে রূপকথা ধরনটির ব্যবহার করেছেন। একটি কারণ হল রূপকথার সাধারণ কাঠামো থেকে মানবীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।[১২] কয়েকজন লেখক সমসাময়িক আলোচনায় কাল্পনিক ভাবধারার পুনঃপ্রবর্তন করতে চেয়েছেন।[১৩] কয়েকজন লেখক আধুনিক বিষয়ের ক্ষেত্রে রূপকথার ব্যবহার করে থাকেন;[১৪] গল্পে দ্বিধাহীন মনস্তাত্ত্বিক নাট্যের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় যখন রবিন ম্যাককিনলি ডঙ্কিস্কিন গল্পটিকে তার ডিয়ারস্কিন উপন্যাসে কন্যার প্রতি বাবার অত্যাচারের গল্প পুনরায় বিবৃত করেন।[১৫] মাঝে মাঝে, বিশেষ করে শিশু সাহিত্যে কমিক ভাব আনার জন্য রূপকথাসমূহে বাঁক যোগ করা হয়, যেমন জন শেশ্‌কা রচিত দ্য স্টিঙ্কি চিজ ম্যান অ্যান্ড আদার ফেয়ারি স্টুপিড টেল্‌স এবং ক্রিস পিলবিমের দি এএসবিও ফেয়ারি টেল্‌স। একটি সাধারণ কমিক বিশেষত্ব হল রূপকথার ঘটনাবলী একটি কাল্পনিক জগতে ঘটে থাকে এবং গল্পের চরিত্রসমূহ তাদের ভূমিকার ব্যাপারে সচেতন,[১৬] যেমন চলচ্চিত্র ধারাবাহিক শ্রেক।

চলচ্চিত্র

রূপকথা নাটকীয়ভাবে অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, এর প্রথম নথি পাওয়া যায় কমেদিয়া দেলার্তে-এ,[১৭] এবং পরে পান্তোমিমে-এ।[১৮] চলচ্চিত্রের উদ্ভাবের ফলে দেখা যায় যে এই গল্পগুলো আরও সঙ্গত উপায়ে, বিশেষ ইফেক্ট ও অ্যানিমেশন ব্যবহার করে, উপস্থাপন করা সম্ভব। রূপকথার গল্পগুলোকে চলচ্চিত্রে নির্মাণে নিয়ে আসার পিছনে দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির ব্যাপক অবদান রয়েছে। ডিজনি স্টুডিও থেকে নির্মিত প্রারম্ভিক সময়কালের কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র রূপকথার গল্প অবলম্বনে নির্মিত, এবং কিছু রূপকথা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে সঙ্গীতধর্মী হাস্যরসাত্মক ধারাবাহিক সিলি সিম্ফোনিজ, যেমন থ্রি লিটল পিগ্‌স (১৯৩৩) এ গৃহীত হয়। ওয়াল্ট ডিজনির প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফ্‌স ১৯৩৭ সালে মুক্তি পায় এবং রূপকথার ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র হয়ে দাঁড়ায়।[১৯] ডিজনি এবং তার পদাঙ্ক অনুসারী সৃজনশীল পরিচালকগণ এই ধরনের প্রথাগত ও সাহিত্যিক রূপকথার গল্প নিয়ে আরও কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, যেমন সিনড্রেলা (১৯৫০), স্লিপিং বিউটি (১৯৫৯), এবং বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৯১)। ডিজনির প্রভাব রূপকথা ধরনটিকে শিশুতোষ ধরন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে এবং [১৫] অনেকেই উল্লেখ করেন রূপকথার সরলীকরণ ডিজনির অনেক পূর্বে হয়েছে, এর কিছু কিছু আবার গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় নিজেরাই করে গেছেন।[২০][২১]

আরও দেখুন

  • নার্সারি ছড়া

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

আরও পড়ুন

  • Heidi Anne Heiner, "The Quest for the Earliest Fairy Tales: Searching for the Earliest Versions of European Fairy Tales with Commentary on English Translations".
  • Heidi Anne Heiner, "Fairy Tale Timeline".
  • Vito Carrassi, "Il fairy tale nella tradizione narrativa irlandese: Un itinerario storico e culturale", Adda, Bari 2008; English edition, "The Irish Fairy Tale: A Narrative Tradition from the Middle Ages to Yeats and Stephens", John Cabot University Press/University of Delaware Press, Roma-Lanham 2012.
  • Antti Aarne and Stith Thompson: The Types of the Folktale: A Classification and Bibliography (Helsinki, 1961).
  • Stith Thompson, The Folktale.

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ