লেহ

লেহ (/l/ ()) (তিব্বতি: གླེ་), বর্তমান ভারতের লাদাখ রাজ্যের ও পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লেহ জেলার সদরদপ্তর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৫২৪ মিটার (১১,৫৬২ ফু) উঁচুতে অবস্থিত এই শহর চারিদিকে হিমালয়ের পর্বত দ্বারা বেষ্টিত।

লেহ
শহর
লেহ প্রাসাদ
লেহ প্রাসাদ
লেহ জম্মু ও কাশ্মীর-এ অবস্থিত
লেহ
লেহ
স্থানাঙ্ক: ৩৪°০৮′৪৩.৪৩″ উত্তর ৭৭°৩৪′০৩.৪১″ পূর্ব / ৩৪.১৪৫৩৯৭২° উত্তর ৭৭.৫৬৭৬১৩৯° পূর্ব / 34.1453972; 77.5676139
দেশভারত
রাজ্যলাদাখ
জেলালেহ
সরকার
 • ধরনস্বায়ত্ত্বশাসিত পার্বত্য পরিষদ
 • শাসকলাদাখ স্বায়ত্ত্বশাসিত পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ, লেহ
আয়তন
 • মোট৯.১৫ বর্গকিমি (৩.৫৩ বর্গমাইল)
উচ্চতা৩,৫০০ মিটার (১১,৫০০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৩০,৮৭০
 • জনঘনত্ব৩,৪০০/বর্গকিমি (৮,৭০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
ওয়েবসাইটwww.leh.nic.in

ইতিহাস

বহু শতাব্দী ধরে পূর্বে তিব্বতচীন এবং পশ্চিমে কাশ্মীর ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের ও ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে লেহ শহর পরিচিত। এই স্থানের ওপর দিয়ে পশমিনা, কাশ্মীরি উল, চরস, তুঁত প্রভৃতি জিনিসের ব্যবসা চলত। লাদাখের ওপর দিয়ে এই ব্যবসার রাস্তার কথা প্রথম থেকে তৃতীয় শতাব্দীতে কুষাণযুগে চীনের লোকেরা জানত। [১][২] কিন্তু ৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত সাম্রাজ্যের পতন হলে অন্তিম তিব্বত সম্রাট গ্লাং-দার-মার পৌত্র স্ক্যিদ-ল্দে-ন্যিমা-গোন মাত্র তিনশ জন সৈন্য নিয়ে পশ্চিম তিব্বত বিজয় না করা পর্যন্ত এই স্থানের ইতিহাস সম্বন্ধে বেশি কিছু জানা যায় না। এই রাজকুমার শে সহ লাদাখ ও পশ্চিম তিব্বতের বহু শহর ও দুর্গ তৈরী করেন। [৩]

১৫৫৫ থেকে ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত লাদাখের শাসনকর্তা রাজা তাশি নামগ্যাল লেহ শহরে প্রথম রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই অধুনাধ্বংসপ্রাপ্ত রাজপ্রাসাদটি নামগ্যাল পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া রাজা তাশি নামগ্যাল এই শহরে গোন-খাং বা স্বর্গীয় অভিভাবকদের মন্দির এবং সেমো গোম্পা [৩] নামক বৌদ্ধ মন্দির স্থাপন করেন। [৪] ১৬১২ থেকে ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত লাদাখের শাসনকর্তা রাজা সেংগে নামগ্যাল আনুমানিক ১৬৩১ থেকে ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে নয়তল বিশিষ্ট লেহ প্রাসাদ নির্মাণ করেন। [৪] রাজা দেলেগ নামগ্যালের শাসনকালে কাশ্মীরের নবাব লাদাখ আক্রমণকারী তিব্বতী সৈন্যকে প্রতিরোধে সহায়তা করার শর্ত স্বরূপ ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে লেহ প্রাসাদের নিচে এক বিরাট সুন্নি মসজিদ স্থাপন করা হয়। [২]

১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে লাদাখের রাজা সেপাল নামগ্যালের সামন্ত টিম্বুসের রাজা লাদাখের বিরুদ্ধে জোরাওয়ার সিং কাহলুরিয়ার সাহায্য চাইলে জোরাওয়ার লাদাখের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করলে সেপাল নামগ্যাল যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০,০০০ টাকা ও বার্ষিক ২০,০০০ টাকা কর দিতে সম্মত হন। পরে লাদাখের সামন্তরা জোরাওয়ারের বিরুদ্ধে দুইবার বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি লেহতে এক দুর্গ তৈরী করেন।

প্রশাসন

লেহ জেলার অংশ হিসেবে লেহ শহরের প্রশাসন লাদাখ স্বায়ত্ত্বশাসিত পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়।

সামরিক গুরুত্ব

এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ডের গুরুত্বপূর্ণ XIV কর্পস-এর সদরদপ্তর অবস্থিত।

জনসংখ্যাতত্ত্ব

লেহ শহরের ধর্ম
ধর্মশতাংশ
হিন্দু
  
মুসলমান
  
বৌদ্ধ
  
৯২
অন্যান্য†
  
০.৩
শিখ (০.২%).

২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় জনগণনা অনুযায়ী লেহ শহরের জনসংখ্যা ২৭,৫১৩। এদের মধ্যে পুরুষ ৬১% ও মহিলা ৩৯%। এই শহরের শিক্ষার হার ৭৫%, পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৮২% ও মহিলাদের মধ্যে ৬৫%। মোট জনসংখ্যার ৯% ছয় বছরের নিচে। এখানকার মানুষ তিব্বতী ভাষায় কথা বলেন।

ধর্ম

এই শহর বৌদ্ধ প্রধান হলেও কিছু মুসলমানের বসবাস রয়েছে। পঞ্চম দলাই লামা লাদাখ আক্রমণ করলে কাশ্মীরের নবাবের দ্বারা লাদাখের রাজাকে সহায়তার শর্ত অনুযায়ী লেহ শহরে কাশ্মীর থেকে এসে মুসলমানেরা বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘকাল ধরে এই শহরে বৌদ্ধমুসলমান সম্প্রদায় শান্তিতে বসবাস করলেও বহির্জগতের জন্য লাদাখ খুলে দেওয়া হলে এই দুই ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে দলাই লামা লেহ শহরে এসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আবেদন করলে পরিস্তিতি স্বাভাবিক হয়। এই অঞ্চলে বসবাসকারী খ্রিষ্টানরা জার্মান মেরোভিয়ান মিশনারীদের দ্বারা বৌদ্ধ থেকে খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিতদের বংশধর।[৪]

আবহাওয়া

লেহ শহরের আবহাওয়া শীতল মরুভূমির মতো। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীতকালের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে অবস্থান করে ও মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়। বছরের বাকি সময়ের আবহাওয়া গরম থাকে। তাপমাত্রার বিস্তার শীতকালে -২৮ ° সেন্টিগ্রেড থেকে গ্রীষ্মকালে ৩৩ ° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ১০.২ মিলিমিটার। [৫] ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে লেহ শহরে হড়কা বানে প্রায় ১০০ জনের ওপর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। [৬]

লেহ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাসজানুফেব্রুমার্চএপ্রিলমেজুনজুলাইআগস্টসেপ্টেঅক্টোনভেডিসেবছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা)
(৪৬)
১২
(৫৪)
১৯
(৬৬)
২৩
(৭৩)
২৮
(৮২)
২৯
(৮৪)
৩৩
(৯১)
৩২
(৯০)
৩১
(৮৮)
৩০
(৮৬)
২০
(৬৮)
১৩
(৫৫)
৩৩
(৯১)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা)−২
(২৮)

(৩৪)

(৪৩)
১২
(৫৪)
১৬
(৬১)
২১
(৭০)
২৫
(৭৭)
২৫
(৭৭)
২১
(৭০)
১৪
(৫৭)

(৪৫)

(৩৬)
১২.৩
(৫৪.১)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)−১৪
(৭)
−১১
(১২)
−৫
(২৩)
−১
(৩০)

(৩৭)

(৪৫)
১০
(৫০)
১০
(৫০)

(৪১)
−১
(৩০)
−৬
(২১)
−১১
(১২)
১.২
(৩৪.২)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা)−২৮
(−১৮)
−২৫
(−১৩)
−১৯
(−২)
−১২
(১০)
−৭
(১৯)
−১
(৩০)

(৩২)
−৩
(২৭)
−৬
(২১)
−১২
(১০)
−২০
(−৪)
−২৫
(−১৩)
−২৮
(−১৮)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি)
(০.৪)

(০.৩)
১১
(০.৪)

(০.৪)

(০.৪)

(০.১)
১৫
(০.৬)
১৫
(০.৬)

(০.৪)

(০.৩)

(০.১)

(০.২)
১০২
(৪.০)
উৎস: [৭]

দর্শনীয় স্থান

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে লেহ শহর

লেহ শহরে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল শান্তি স্তূপ, লাদাখের রাজা সেংগে নামগ্যাল দ্বারা নির্মিত লেহ প্রাসাদ, কাশ্মীরের রাজা গুলাব সিংয়ের ডোগরা সেনাপতি জোরাওয়ার সিং কাহলুরিয়া দ্বারা নির্মিত জোরাওয়ার দুর্গ প্রভৃতি।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

লেহ শহর আকাশ ও সড়কপথে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত। জোজি, ফোতু, নামিকা প্রভৃতি উচ্চ গিরিবর্ত্মের ওপর দিয়ে নির্মিত ১ডি নং জাতীয় সড়ক শ্রীনগর, দ্রাসকার্গিল শহরের সঙ্গে লেহ শহরকে যুক্ত করেছে। অপরদিকে রোহটাং, তাংলাং প্রভৃতি উচ্চ গিরিবর্ত্মের ওপর দিয়ে নির্মিত লেহ-মানালি মহাসড়ক লেহকে হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই দুইটি সড়কপথ অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে শীতকালে বন্ধ থাকে। এছাড়াও এই শহরে অবস্থিত কুশোক বাকুলা রিনপোছে বিমানবন্দর থেকে নতুন দিল্লী, শ্রীনগরজম্মু পর্যন্ত অসামরিক বিমান পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এই শহরে এখনো পর্যন্ত রেল পরিষেবা চালু হয়নি।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ