শতদ্রু নদী

ভারতের নদী

শতদ্রু নদী বা শতলুজ নদী (ইংরেজি: Sutlej; হিন্দি: सतलुज; পাঞ্জাবি: ਸਤਲੁਜ; সংস্কৃত: शतद्रु; উর্দু: درياۓ ستلج) হল পাঁচটি নদীর দীর্ঘতম যা উত্তর ভারতের পাঞ্জাব ও পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটা সিন্ধু নদীর পূর্বপ্রান্তের উপনদী।

শতদ্রু
सतलुज / ستلُج
River
দেশ ভারত,  পাকিস্তান
উপনদী
 - বাঁদিকেবাস্পা
 - ডানদিকেস্পিতি, বিপাশা
উৎসLake Rakshastal
 - উচ্চতা৪,৫৭৫ মিটার (১৫,০১০ ফিট)
 - স্থানাঙ্ক৩০°৫০′৩৯″ উত্তর ৮১°১২′১৭″ পূর্ব / ৩০.৮৪৪১৭° উত্তর ৮১.২০৪৭২° পূর্ব / 30.84417; 81.20472
মোহনাConfluence with Chenab to form the Panjnad River
 - অবস্থানBahawalpur district, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
 - উচ্চতা০ মিটার (০ ফিট)
 - স্থানাঙ্ক২৯°২০′৫৭″ উত্তর ৭১°১′৪১″ পূর্ব / ২৯.৩৪৯১৭° উত্তর ৭১.০২৮০৬° পূর্ব / 29.34917; 71.02806
দৈর্ঘ্য১,৫০০ কিলোমিটার (৯৩২ মাইল) approx.
অববাহিকা৩,৯৫,০০০ বর্গকিলোমিটার (১,৫২,৫১০ বর্গমাইল) approx.
প্রবাহfor Ropar
 - গড়৫০০ m³/s (১৭,৬৫৭ ft³/s) [১]
সিন্ধু নদের একটি উপনদী শতুদ্রু
সিন্ধু নদের একটি উপনদী শতুদ্রু
সিন্ধু নদের একটি উপনদী শতুদ্রু

সিন্ধু জল চুক্তির অধীনে, শতদ্রুর জল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভারতের জন্য বরাদ্দ করা হয় এবং বেশিরভাগটি ভারতের সেচ খালগুলিতে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। শতদ্রু উপর ১০০০ মেগাওয়াট ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ, ১০০০ মেগাওয়াট করচম ওয়াংতু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ১৫৩০ মেগাওয়াট নাথপা ঝাকরি বাঁধ সহ বেশ কয়েকটি প্রধান জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আছে।[২]

ইতিহাস

শতদ্রু নদীর উল্লেখ আমরা পাই ঋগ্বেদে। নদীর বৈদিক সংস্কৃতে নাম শুতুদ্রী। এই নামটাই সময়ের চলার পথে শতদ্রু হল এবং অপভ্রংশ হয়ে শতলুজ বা সুতলেজ হল।

ইমং মে গঙ্গে যমুনে সরস্বতি শুতুদ্রি স্তোমং সচতা পরুষ্ণ্যা।

অসিক্নয়া মরুদ্বৃধে বিতস্তয়ার্জীকীয়ে শৃণুহ্যা সুষোময়া॥

তৃষ্টাময়া প্রথমং যাতবে সজূঃ সুসর্ত্বা রসয়া শ্বেত্যা ত্যা।

ত্বং সিন্ধো কুভয়া গোমতীং ক্রুমুং মেহৎন্বা সরথং যাভিরীয়সে॥ (ঋক্‌ ১০.৭৫.৫/৬)

অর্থাৎ হে গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, শুতুদ্রী (শতলুজ/শতদ্রু) ও পরুষ্ণি (রাবী/ইরাবতী), আমার এই স্তোত্রটির (ইমং মে স্তোমম্) সঙ্গে একসঙ্গে এগিয়ে চলো (আ সচতা), অসিক্নীর (চেনাব/চন্দ্রভাগা) সঙ্গে হে মরুদ্বৃধা। বিতস্তার (ঝেলম) সঙ্গে হে আর্জীকীয়া, ভালো করে শোনো (আ শৃণুহি) সুষোমার (সোহান) সঙ্গে। যাওয়ার জন্যে (যাতবে) প্রথমে তৃষ্টামার সঙ্গে, (তারপর) সুসর্তু, রসা, ও শ্বেত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে (সজূঃ < সজুস্‌), হে সিন্ধু, কুভার (কাবুল নদী) সঙ্গে গোমতীর (গুমাল) দিকে, ক্রুমুর (কুর‌রম) দিকে মেহৎনুর সঙ্গে এক রথে (সরথম্‌) এগিয়ে যাচ্ছ (ঈয়সে)।

উচ্চ শতদ্রু উপত্যকাকে তিব্বতে লাংকেন জাংবো বলা হয়। পশ্চিম তিব্বতের প্রাচীন সভ্যতা ঝাংঝুং দ্বারা এটি গরুড় উপত্যকা নামে পরিচিত ছিল। গরুড় উপত্যকা তাদের সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল যা নিকটবর্তী হিমালয়ের মাঝে বহু মাইল বিস্তৃত ছিল। ঝাংঝুংরা উচ্চ শতদ্রু উপত্যকায় একটি অত্যুচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করে যেটি ক্যুংলুং নামে পরিচিত ছিল, যার ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব আজও কৈলাশ পর্বতের (মাউন্ট টি-সে) দক্ষিণপশ্চিমে মৈন্সার গ্রামের কাছাকাছি আছে।পরে তিব্বতি সাম্রাজ্য ঝাংঝুংদের জয় করে।

১৮০৯ সালে কাংড়ার রাজা, মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের সহায়তায় গোর্খা সৈন্যদের পশ্চিমাভিমুখী অভিযান রুখে তাদের পূর্বদিকে ফেরত পাঠানর পূর্বে, বৃহত্তর নেপালের সীমানা পশ্চিমে শতদ্রু নদীর আগে অবধি ছিল।আজ শতদ্রু উপত্যকা ঝাংঝুংদের বংশধর যাযাবর দ্বারা  অধ্যুষিত যাঁরা ছোট ছোট গ্রামে বাস করেন এবং ইয়াক ইত্যাদি পশুপালন করেন।সেই সময়ে রাজাদের পরিবহনের জন্য, শতদ্রু ছিল প্রধান মাধ্যম। ১৮শ শতাব্দীর শুরুর দিকে  শতদ্রু নদীর মাধ্যমে বিলাসপুর জেলা, হামিরপুর জেলা ও শতদ্রু নদীর তীরবর্তী অন্যান্য স্থানে  দেবদারুর কাঠ পরিবাহিত হত।

গতিপথ

শতদ্রুর উৎস তিব্বতের  রাক্ষসতাল হ্রদের নিকট। সেখান থেকে লাংকেন জাংবো (এলিফ্যান্ট নদী) তিব্বতি নামে, এটি প্রথমে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) প্রবাহিত হয়ে সীমান্তের শিপকী লা পাস পার করে ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। ভারতে প্রবেশ করার পর, এটি পশ্চিমে -দক্ষিণপশ্চিমে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার ( ২২০ মাইল) প্রবাহিত হয়ে, পাঞ্জাব রাজ্যের ফিরোজপুর জেলার মাখু নামের একটি গ্রামে বিপাশা নদীর সাথে মিলিত হয। হরিয়ানা রাজ্যের পাঁচকুলার জেলার উত্তর পশ্চিম অংশ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ের পশ্চিম অংশ শতদ্রু নদীর অববাহিকায় অবস্থিত।[৩] .এভাবে হরিয়ানা ও চণ্ডীগড় সিন্ধু অববাহিকার নদীতীরবর্তী রাজ্য। 

পশ্চিম -দক্ষিণপশ্চিমে গতিপথ অব্যাহত রেখে, শতদ্রু পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর জেলার ভেদিয়ান কালানের প্রায় ১৫ কিলোমিটার (৯.3 মাইল) পূর্বে, পাকিস্তানে প্রবেশ করে। পরে আরো দক্ষিণ-পশ্চিমে এগিয়ে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন শহরবাহাওয়ালপুর দেশীয় রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইউসিএইচ শরীফের ১৭ কিলোমিটার (১১ মাইল) উত্তরে, শতদ্রু, চন্দ্রভাগা নদীর সঙ্গে মিলিত হবার পর পাঞ্জনাদ নদী নামে, বাহাওয়ালপুর নগরীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে সিন্ধু নদে মিলিত হয়। ভারতীয় সীমান্তের পাকিস্তানের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এলাকাটিকে চলিস্তান মরুভূমি ও ভারতীয় দিককে থর মরুভূমি বলা হয়।

ভূগোল

মনে করা হয় ৫০ লক্ষ বছর আগে শতদ্রু, পাঞ্জাবের অন্যান্য সব নদীসহ  পূর্বে গঙ্গা নদীতে  এসে মিলত।  [৪]

অনেক উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ  নির্দেশ করছে, ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং তারও অনেক আগে, শতদ্রু, সিন্ধুর বদলে সম্ভবত ঘাঘর-হাকরা নদীর (কাল্পনিক সরস্বতী নদী বলে মনে করা হয়), একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী ছিল। বিভিন্ন লেখক নদীর এই ঘুরে যায়টা কে ২৫০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ মনে করে।[৫] ৫০০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ[৬] বা আগে ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।[৭] ভূতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন  যে ভূমিকম্পের কারণে নির্মিত উচ্চতার পরিবর্তনের কারণে শতদ্রুর প্রবাহ দক্ষিণ-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে হয়ে থাকতে পারে।.[৮] [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যদি  নদীর এই ঘুরে যাওয়া সম্প্রতি ঘটেছে (প্রায় 4000 বছর আগে), তাহলে এটি ঘাঘর—হাকরা(সরস্বতী) নদীর শুকিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী,  চোলিস্তান এবং  সিন্ধুর আধুনিক রাষ্ট্রের পূর্ব অংশের মরুকরণের কারণ।এর ফলে ঘাঘরের পার্শ্ববর্তী  হরপ্পান সভ্যতার জনবসতি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। যাইহোক, ইতিমধ্যে হাজার বছর আগেই শতদ্রু সিন্ধুতে গিয়ে মিলিত হয়ে ছিল।

কিছু প্রমাণ যে আধুনিক শতদ্রুএর দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়ের উচ্চহার, স্থানীয় ভূ-চ্যুতি প্রভাবিত করেছে এবং  দ্রুত রামপুরের ওপরে ভূতল থেকে শিলা উত্তোলন।.[৯] এই শিলা উত্তোলন, সিন্ধু নদের দ্বারা পাকিস্তানের নাঙ্গা পর্বতের শিলা উত্তোলনের ঘটনাটির অনুরূপ, কিন্তু অনেক ছোট মাপের। এছাড়াও শতদ্রু নদী একটি   একটি দ্বিগুন বিপর্যস্ত রূপান্তরকরণ অনাবৃত করেছে।[১০]

চিত্রসমূহ

আরও দেখুন

  • List of rivers of India
  • List of rivers of Pakistan
  • Cis-Sutlej states

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ