শুক্রাণু

জীবের পুংজননকোষ

শুক্রাণু (ইংরেজি: Sperm) হলো পুংজননকোষ বা গ্যামেট যা যৌন জননের অ্যানাইসোগ্যামি প্রকারে দেখা যায় (যে প্রকারের জননে পুং গ্যামেট আকারে ছোটো কিন্তু সক্রিয় এবং স্ত্রী গ্যামেট আকারে বড়ো কিন্তু নিস্ক্রিয় হয়)। প্রাণীরা স্পার্মাটোজোয়া নামক চলনশীল শুক্রাণু তৈরি করে যার সাথে ফ্ল্যাজেলাম নামক একটি লেজ থাকে। অন্যদিকে, কিছু লাল শৈবাল এবং ছত্রাক চলনহীন শুক্রাণু কোষ তৈরি করে যা স্পার্মেশিয়া নামে পরিচিত।[১] সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগের পরাগরেণুতে চলনহীন শুক্রাণু থাকে, আবার ফার্নের মতো আরও কিছু মূলগত উদ্ভিদ এবং কিছু জিমনোস্পার্মে চলনশীল শুক্রাণু থাকে।[২]

শুক্রাণুকোষের চিত্র

শুক্রাণু কোষগুলি স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া চলাকালে তৈরি হয়, যা অ্যামনিওটে (সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ী) শুক্রাশয়ের সেমিনিফেরাস নালিকায় সংঘটিত হয়।[৩] এই প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত বেশ কয়েকটি শুক্রাণু কোষের পূর্বসূরীর উৎপাদন জড়িত। এর শুরু হয় স্পার্মাটোগোনিয়ার মধ্য দিয়ে যা পৃথকীকৃত হয়ে স্পার্মাটোসাইটে পরিণত হয়। স্পার্মাটোসাইটগুলি তারপর মিয়োসিসের মধ্য দিয়ে যায় এবং তাদের ক্রোমোসোমের সংখ্যা অর্ধেক কমে যায় যা স্পার্মাটিড তৈরি করে। স্পার্মাটিডগুলি তখন পরিণত বয়স্ক হয় এবং, প্রাণীদের মধ্যে, একটি লেজ বা ফ্ল্যাজেলাম তৈরি করে যার ফলে অবশেষে পরিণত, চলনহীন শুক্রাণু কোষের গঠন সম্পন্ন হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি ক্রমাগত ঘটে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস সময় লাগে।

শুক্রাণু কোষগুলি বিভাজিত হতে পারে না এবং তাদের একটি সীমিত জীবনকাল থাকে। কিন্তু নিষিক্তকরণের সময় ডিম্বাণু কোষের সাথে মিলিত হওয়ার পরে একটি নতুন জীব বিকাশ লাভ করে, যা একটি টোটিপোটেন্ট জাইগোট হিসাবে শুরু হয়। মানব শুক্রাণু হ্যাপ্লয়েড কোষ অর্থাৎ এতে ক্রোমোসোমের সংখ্যা এর উৎপাদক কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক। মানব শুক্রাণুতে ২৩টি ক্রোমোসোম থাকে যা ডিম্বাণুর ২৩টি ক্রোমোসোমের সাথে যুক্ত হয়ে ৪৬টি ক্রোমোসোম বিশিষ্ট ডিপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে শুক্রাণু এপিডিডিমিসে সঞ্চিত থাকে এবং শিশ্ন থেকে বীর্যস্খলনের সময় বীর্য নামের তরলের মাধ্যমে নির্গত হয়।

শুক্রাণুর ইংরেজি প্রতিশব্দ স্পার্ম (Sperm) গ্রীক শব্দ σπέρμα, স্পার্মা, থেকে এসেছে, যার অর্থ "বীজ"।

অনুবিক্ষণ যন্ত্রের নিচে মানব শুক্রাণু কোষের ভিডিও

বিবর্তন

এটা সাধারণত গৃহীত যে আইসোগ্যামি হল শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর পূর্বপুরুষ। তবুও, আইসোগ্যামি থেকে শুক্রাণু এবং ডিমের বিবর্তনের জন্য কোন জীবাশ্ম রেকর্ড নেই। যার ফলে শুক্রাণুর বিবর্তন বোঝার জন্য গাণিতিক মডেলের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়।[৪]

একটি সুদূরপ্রসারী মতবাদ বলে যে শুক্রাণু দ্রুত বিকশিত হয়েছে। কিন্তু শুক্রাণু দ্রুত হারে বা অন্যান্য পুরুষ বৈশিষ্ট্যের আগে বিবর্তিত হয়েছিল তার কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই।[৫]

প্রাণীদের মধ্যে শুক্রাণু

কাজ

শুক্রাণুর প্রধান কাজ হল ডিম্বাণুতে পৌঁছানো এবং এটির সাথে নিষিক্ত হয়ে দুটি উপ-কোষীয় কাঠামো তৈরি: (১) পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াস যেখানে জেনেটিক উপাদান রয়েছে এবং (২) সেন্ট্রিওলগুলি যাদের গঠন মাইক্রোটিউবুল সাইটোস্কেলটনকে সংগঠিত করতে সহায়তা করে।

গঠন

শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ
একজন ৩৯ বছর বয়সী সুস্থ মানুষ থেকে মানব শুক্রাণুর মাথার আয়তন পরিমাপ করা হয়েছে।

স্তন্যপায়ী শুক্রাণু কোষকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়:

মস্তক: শুক্রাণুর সম্মুখ ভাগের উপবৃত্তাকার অংশকে মাথা বা মস্তক বলে। মস্তকে তুলনামূলক ভাবে বড় একটি নিউক্লিয়াস থাকে এবং নিউক্লিয়াসে হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমােসােম এবং ঘন কুণ্ডলীকৃত ক্রোমাটিন তন্তু থাকে। মস্তকের অগ্রপ্রান্তে টুপির ন্যায় থলি বিশেষ অ্যাক্রোসােম নামক একটি গঠন থাকে। অ্যাক্রোসােমে উপস্থিত টিস্যু গলনকারী এনজাইমসমূহ ডিম্বাণুর ঝিল্লী ভেদ করে ভেতরে প্রবেশে সাহায্য করে। এটিতে ভ্যাকিউলও থাকে।[৬]

লেজ: শুক্রাণুর দীর্ঘতম অংশটি লেজ নামে পরিচিত। এটিকে ফ্ল্যাজেলামও বলা হয়। লেজ শুক্রাণুর চলনে এবং ডিমে অনুপ্রবেশে সহায়তা করে।[৭][৮][৯] পূর্বে মনে করা হত লেজটি স্ক্রুর ন্যায় প্যাঁচানো আকৃতিতে প্রতিসমভাবে চলাচল করে।

গ্রীবা বা সংযোগকারী অংশে পরস্পরের সাথে সমকোণে দুটি সেন্ট্রিওল (প্রক্সিমাল সেন্ট্রিওল ও ডিস্টাল সেন্ট্রিওল) থাকে।[১০][১১] মধ্যম অংশে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া অক্ষীয় তন্তুকে সর্পিলাকারে ঘিরে থাকে, যা মহিলাদের জরায়ুমুখ, জরায়ু এবং ফ্যালোপিয়ান নালির মধ্য দিয়ে গমনের জন্য এটিপি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

নিষিক্তকরণের সময়, শুক্রাণু উওসাইটকে তিনটি অপরিহার্য অংশ প্রদান করে: (১) একটি সংকেত বা সক্রিয়কারী ফ্যাক্টর, যা বিপাকীয়ভাবে সুপ্ত উওসাইটকে সক্রিয় করে তোলে; (২) হ্যাপ্লয়েড পৈতৃক জিনোম; (৩) সেন্ট্রিওল যা সেন্ট্রোসোম এবং মাইক্রোটিউবিউল সিস্টেম গঠনের জন্য দায়ী।[১২]

উৎপত্তি

প্রাণীদের শুক্রাণু পুরুষ অন্ডকোষের (শুক্রাশয়) অভ্যন্তরে মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে স্পার্মাটোজেনেসিসের দ্বারা উৎপাদিত হয়। প্রাথমিক স্পার্মাটোজাওন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় ৭০ দিন সময় লাগে। প্রক্রিয়াটি বীজ কোষের পূর্বসূরীদের থেকে স্পার্মাটোগোনিয়া উৎপাদনের সাথে শুরু হয়। এগুলি বিভাজিত এবং পৃথকীকৃত হয়ে স্পার্মাটোসাইটে পরিণত হয় যা মিয়োসিসের মধ্য দিয়ে গিয়ে স্পার্মাটিড গঠন করে। স্পার্মাটিড পর্যায়ে শুক্রাণুর পরিচিত লেজের বিকাশ ঘটে। পরবর্তী পর্যায়ে এটি সম্পূর্ণরূপে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হতে প্রায় ৬০ দিন সময় লাগে। তখন একে স্পার্মাটোজাওন বলা হয়।[১৩] শুক্রাণু কোষগুলি পুরুষের দেহ থেকে বীর্য নামে পরিচিত একটি তরলে নির্গত হয়। মানব শুক্রাণু নারীর প্রজননতন্ত্রের মধ্যে ৫ দিনের বেশি সময় পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। বীর্য সেমিনাল ভেসিকল, প্রোস্টেট এবং মূত্রনালী গ্রন্থিতে উৎপাদিত হয়।

২০১৬ সালে নানজিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন যে তারা কৃত্রিমভাবে ইঁদুরের ভ্রূণের স্টেম সেল থেকে ইঁদুর স্পার্মাটিডের মতো কোষ তৈরি করেছেন। তারা এই স্পার্মাটিডগুলিকে ইঁদুরের ডিমে ইনজেকশন দিয়ে প্রবেশ করায় এবং ইঁদুরছানা তৈরি করে।[১৪]

শুক্রাণুর গুণমান

বীর্যের গুণমান পরীক্ষার জন্য মানব শুক্রাণু স্টেইনিং

শুক্রাণুর পরিমাণ এবং গুণমান হল বীর্যের মানের প্রধান পরামিতি যা নিষিক্তকরণ সম্পন্ন করার জন্য বীর্যের ক্ষমতার একটি পরিমাপ। সুতরাং, মানুষের মধ্যে এটি একজন পুরুষের উর্বরতার একটি পরিমাপ। শুক্রাণুর জিনগত গুণমান, আয়তন এবং চলনশীলতা সাধারণত বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পায়।

মিয়োসিসের পরে শুক্রাণু কোষে বিদ্যমান ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ থাকে তাহলে সেটি নিষিক্তকরণের আগে নিষিক্ত ডিম্বাণুতে সংশোধন করা যেতে পারে। কিন্তু যদি সংশোধন না করা হয় তবে তা উর্বরতা এবং বিকাশমান ভ্রূণের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। মানব শুক্রাণু কোষগুলি বিশেষত মুক্ত সহজাত আক্রমণ এবং অক্সিডেটিভ ডিএনএ ক্ষতির প্রজন্মের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।[১৫]

ইঁদুরের স্পার্মাটোজেনেসিসের মিয়োসিস-পরবর্তী পর্যায়টি পরিবেশগত জিনোটক্সিক ঘটকগুলির জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ পুরুষ বীজ কোষগুলি পরিণত শুক্রাণু গঠন করার মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে ডিএনএ ক্ষতি শোধনের ক্ষমতা হারায়।[১৬] স্পার্মাটোজেনেসিসের পশ্চাদ্বর্তী সময়ে পুরুষ ইঁদুরে বিকিরণ সংঘটিত করলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে যা নিষিক্ত শুক্রাণু কোষে কমপক্ষে ৭ দিন ধরে পরিব্যপ্ত থাকে এবং মাতৃ ডিএনএর ভগ্ন দ্বৈত-তন্তুর সংশোধন পথের ব্যাঘাত শুক্রাণু কোষ থেকে প্রাপ্ত ক্রোমোজমীয় বিকৃতি বাড়ায়।[১৭] পুরুষ ইঁদুরের চিকিৎসায় মেলফালানের ব্যবহার (মেলফালান হচ্ছে কেমোথেরাপিতে প্রায়শই নিযুক্ত একটি দ্বি-কার্যকরী অ্যালকাইলীয় ঘটক) মিয়োসিসের সময় ডিএনএ ক্ষত তৈরি করে। যখন বীজ কোষগুলি শুক্রাণুগত বিকাশের ডিএনএ সংশোধন-সক্ষম পর্যায়গুলিতে অগ্রসর হয় তখন ডিএনএ ক্ষতগুলো অসংশোধিত অবস্থায় থাকতে পারে।[১৮] নিষিক্তকরণের পরে শুক্রাণু কোষে এই ধরনের অসংশোধিত ডিএনএ ক্ষতি সন্তানের বিভিন্ন অস্বাভাবিকতার কারণ হতে পারে।

শুক্রাণুর আকার

শুক্রাণুর মানের সাথে সম্পর্কিত হল শুক্রাণুর আকার যা অন্তত কিছু প্রাণীর জন্য সত্য। উদাহরণস্বরূপ, কিছু প্রজাতির ফলের মাছির (ড্রসোফিলা) শুক্রাণু ৫.৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় যা মাছির চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বড়ো। খাটো শুক্রাণু কোষদের চেয়ে লম্বা শুক্রাণু কোষগুলি স্ত্রীবীর্যাধার থেকে প্রতিযোগীদের স্থানচ্যুত করতে দক্ষ। মহিলাদের জন্য সুবিধা হলো যে শুধুমাত্র সুস্থ পুরুষরা 'ভালো' জিন বহনকারী দীর্ঘ শুক্রাণু উৎপন্ন করতে পারে যা তাদের প্রতিযোগীদের পরাজিত করে।[১৯][২০]

মানব শুক্রাণুর জন্য বাজার

কিছু স্পার্ম ব্যাঙ্ক ১৭০ লিটার পর্যন্ত শুক্রাণু ধারণ করে।[২১]

বীর্যপাত ছাড়াও টেস্টিকুলার স্পার্ম এক্সট্রাকশনের মাধ্যমে শুক্রাণু বের করা সম্ভব।

বিশ্ববাজারে ডেনমার্কের মানব শুক্রাণু রপ্তানির একটি উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। এই সাফল্যের মূল কারণ ড্যানিশ শুক্রাণু দাতাদের উচ্চ মানের হওয়ার খ্যাতি এবং অন্যান্য নর্ডিক দেশগুলির আইনের তুলনায় দাতাদের গ্রহীতা দম্পতিদের কাছে বেনামী বা স্বনামী হওয়ার পছন্দ দেয়।[২২] এছাড়া, নর্ডিক শুক্রাণু দাতারা লম্বা এবং উচ্চ শিক্ষিত হয়ে থাকে[২৩] এবং তাদের দান করার উদ্দেশ্য পরোপকারীমূলক থাকে যার আংশিক কারণ নর্ডিক দেশগুলিতে এই জন্য তুলনামূলকভাবে কম আর্থিক সম্মানী দেওয়া হয়। প্যারাগুয়ে, কানাডা, কেনিয়া এবং হংকংসহ বিশ্বব্যাপী ৫০টিরও বেশি দেশ ড্যানিশ শুক্রাণুর আমদানিকারক।[২২] কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সব ধরনের শুক্রাণুর আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।[২৪] ক্রুটজফেল্ড-জ্যাকব রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি এই সিদ্ধান্তকে অনুপ্রাণিত করেছে। যদিও এই ধরনের ঝুঁকির মাত্রা নগণ্য কারণ ক্রুটজফেল্ড-জ্যাকব রোগের সংক্রমণের পথ থেকে কৃত্রিম প্রজনন খুব আলাদা। দাতাদের মধ্যে ক্রুটজফেল্ড-জ্যাকব রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার সম্ভাবনা প্রতি ১০ লাখে একজন এবং দাতা যদি বাহক হন তবুও সংক্রামক প্রোটিনগুলিকে সংক্রমণ সম্ভব করার জন্য রক্ত-শুক্রাশয়ের বাধা অতিক্রম করতে হবে।[২৪]

ইতিহাস

১৬৭৭ সালে অ্যান্থনি ভন লিউয়েনহুক একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে সর্বপ্রথম শুক্রাণু পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।[২৫] তিনি তাদের এনিম্যালকুলেস (অণুজীব) হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি সম্ভবত তার পূর্বরূপবাদে বিশ্বাসের কারণে এরকম ভেবেছিলেন যা অনুযায়ী প্রতিটি শুক্রাণুতে একটি সম্পূর্ণরূপে গঠিত কিন্তু ছোট মানব থাকে।

ফরেনসিক বিশ্লেষণ

নির্গত তরল পৃষ্ঠের গঠন বা রঙ নির্বিশেষে অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা সনাক্ত করা যায়।[২৬] যোনিপথ থেকে সোয়াবের পর আণুবিক্ষণিকভাবে "ক্রিসমাস ট্রি স্টেইন" পদ্ধতি, যেমন, কার্নেক্ট্রট-পিক্রোইন্ডিগোকার্মাইন স্টেইনিং (কেপিআইসি) ব্যবহার করে শুক্রাণুর মাথা শনাক্ত করা যায়।[২৭][২৮]

উদ্ভিদের মধ্যে শুক্রাণু

মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে পুরুষ গেমটাঙ্গিয়াতে (অ্যানথেরিডিয়া) অ্যালগাল এবং অনেক উদ্ভিদের শুক্রাণু কোষ গেমটোফাইট তৈরি হয়। ফুলের গাছগুলিতে পরাগের ভিতরে শুক্রাণু নিউক্লাই উৎপাদিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

চলনশীল শুক্রাণু কোষ

শৈবাল এবং বীজবিহীন উদ্ভিদের গতিময় শুক্রাণু কোষ[২৯]

গতিময় শুক্রাণু কোষগুলি সাধারণত ফ্ল্যাজেলার মাধ্যমে চলাচল করে এবং নিষেকের জন্য ডিম্বানুর দিকে সাঁতার কাটার জন্য একটি জলীয় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। প্রাণীদের মধ্যে শুক্রাণুর চলাচলের জন্য বেশিরভাগ শক্তিই সেমিনাল ফ্লুইডে বহন করা ফ্রুক্টোজ বিপাক থেকে আসে। এটি শুক্রাণুর মধ্যাংশে (শুক্রাণুর মাথার গোড়ায়) অবস্থিত মাইটোকন্ড্রিয়ায় স্থান পায়। এই কোষগুলি তাদের প্রবর্তনের প্রকৃতির কারণে পিছনে দিকে সাঁতার কাটতে পারে না। প্রাণীদের একক ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণু কোষকে স্পার্মাটোজোয়া বলা হয় এবং এগুলো আকারের তারতম্যের জন্য পরিচিত।

সচল শুক্রাণু অনেক ধরনের প্রোটিস্ট এবং ব্রায়োফাইট ও ফার্নের গ্যামেটোফাইট এবং সাইকাডস ও গিংকোর মতো কিছু নগ্নবীজী উদ্ভিদও উৎপাদন করে। শুক্রাণু কোষগুলি এই উদ্ভিদের জীবনচক্রের একমাত্র ফ্ল্যাজিলেটেড কোষ। অনেকগুলি ফার্ন এবং লাইকোফাইট, সাইক্যাড এবং গিংকোতে এরা বহু-ফ্ল্যাজিলেটেড হয় (একাধিক ফ্ল্যাজেলাম বহন করে)।[২৯]

নেমাটোডে শুক্রাণু কোষগুলো সাঁতার না কেটে ডিম্বাণু কোষের দিকে অ্যামিবয়েড পদ্ধতিতে ও হামাগুড়ি দিয়ে চলে।[৩০]

চলনহীন শুক্রাণু কোষ

চলনহীন শুক্রাণু কোষের নাম স্পার্মাটিয়া যার ফ্লাজেলা না থাকায় এটি সাঁতার কাটতে পারে না। স্পার্মাটিয়া স্পার্মাট্যানজিয়াম অঙ্গতে উৎপাদিত হয়।[২৯]

স্পার্মাটিয়া সাঁতার কাটতে পারে না বলে তারা ডিম্বানু কোষে যাওয়ার জন্য তাদের পরিবেশের উপর নির্ভর করে। কিছু লাল শৈবাল, যেমন পলিসিফোনিয়া, চলনহীন স্পার্মাটিয়া উৎপাদন করে যা নির্গমনের পর পানির স্রোতে ছড়িয়ে পড়ে।[২৯] মরিচা ছত্রাকের শুক্রাণু একটি আঠালো পদার্থ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। তারা ফ্লাস্ক আকৃতির কাঠামোতে উৎপাদিত হয় যার ভিতর ফুলের রস থাকে যা মাছিকে আকৃষ্ট করে। এইসব মাছি সপুষ্পক উদ্ভিদের পতঙ্গবাহী পরাগায়নের মতো স্পার্মাটিয়াকে নিষেকের জন্য নিকটবর্তী হাইফায় স্থানান্তর করে।[৩১]

ছত্রাকের স্পার্মাটিয়াকে (যাকে পিকনিওস্পোরস নামেও ডাকা হয়, বিশেষ করে ইউরেডিন্যালসে) কনিডিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হতে পারে। কনিডিয়া হল বীজ যা নিষেক ছাড়াই স্বাধীনভাবে অঙ্কুরিত হয়, অন্যদিকে স্পার্মাটিয়া হলো গ্যামেট যা নিষেকের জন্য প্রয়োজনীয়। কিছু ছত্রাকের মধ্যে, যেমন নিউরোস্পোরা ক্র্যাসায়, স্পার্মাটিয়া মাইক্রোকনিডিয়ার অনুরূপ কারণ তারা নিষেকের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করতে পারে এবং এর পাশাপাশি নিষেক ছাড়াই নতুন প্রাণীর জন্ম দিতে পারে।[৩২]

শুক্রাণু নিউক্লাই

বেশিরভাগ জিমনোস্পার্ম এবং সমস্ত এনজিওস্পার্মসহ প্রায় সমস্ত এমব্রিওফাইটে পুরুষ গ্যামেটোফাইট (পরাগ শস্য) হল বিস্তারের প্রাথমিক উপায়। উদাহরণস্বরূপ, বায়ু বা পতঙ্গবাহী পরাগায়ন দিয়ে পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে ব্যবধান কমাতে পানির প্রয়োজনীয়তা দূর করে। প্রতিটি পরাগ শস্য একটি স্পার্মাটোজেনাস (উৎপাদনশীল) কোষ ধারণ করে। পরাগ একটি গ্রহনযোগ্য ফুলের গর্ভমুন্ডের উপর অবতরণ করার পর অঙ্কুরিত হয় এবং গর্ভদন্ডের মধ্য দিয়ে একটি পরাগ নালিকা জন্মাতে শুরু করে। নালিকাটি গর্ভাশয়ে পৌঁছানোর আগে পরাগ শস্যের উৎপাদক কোষের নিউক্লিয়াস বিভক্ত হয়ে দুটি শুক্রাণু নিউক্লাইয়ের জন্ম দেয়, যেগুলি নালিকার মাধ্যমে ডিম্বাণুতে নিষিক্তকরণের জন্য নিঃসৃত হয়।[২৯]

কিছু প্রোটিস্টের মধ্যে নিষিক্তকরণের সাথে কোষের পরিবর্তে শুক্রাণু নিউক্লাই জড়িত থাকে যা একটি নিষিক্তকরণ নালিকার মাধ্যমে ডিম্বাণু কোষের দিকে স্থানান্তরিত হয়। উমাইসিট ডিম্বাণু কোষের চারপাশে একটি সিনসিটিকাল অ্যানথেরিডিয়ামে শুক্রাণু নিউক্লাই গঠন করে। শুক্রাণু নিউক্লাই উদ্ভিদের পরাগ নালিকার প্রক্রিয়ার মতো নিষিক্তকরণ নালিকার মাধ্যমে ডিম্বাণুতে পৌঁছায়।[২৯]

শুক্রাণু সেন্টিওল

বেশিরভাগ শুক্রাণু কোষের গ্রীবা বা সংযোগকারী অংশে সেন্ট্রিওল থাকে।[৩৩] অনেক প্রাণীর শুক্রাণুতে ২টি সাধারণ সেন্ট্রিওল থাকে যা প্রক্সিমাল সেন্ট্রিওল এবং ডিস্টাল সেন্ট্রিওল নামে পরিচিত। মানুষ এবং গোমহিষাদির মতো কিছু প্রাণীর একটি একক সাধারণ সেন্ট্রিওল থাকে, যা প্রক্সিমাল সেন্ট্রিওল নামে পরিচিত এবং একটি ব্যতিক্রমী গঠনের দ্বিতীয় সেন্ট্রিওল।[১০] ইঁদুর এবং নেংটি ইঁদুরের কোন স্বীকৃত শুক্রাণু সেন্ট্রিওল নেই। ফলের মাছি ড্রোসোফিলা মেলানোগ্যাস্টারের একটি একক সেন্ট্রিওল এবং প্রক্সিমাল সেন্ট্রিওল-লাইক (পিসিএল) নামে একটি ব্যতিক্রমী সেন্ট্রিওল রয়েছে।[৩৪]

শুক্রাণুর লেজের গঠন

শুক্রাণুর লেজ একটি বিশেষ ধরনের সিলিয়াম (ওরফে ফ্ল্যাজেলা)। অনেক প্রাণীর মধ্যে শুক্রাণুর লেজ একটি অনন্য উপায়ে গঠিত হয়, যার নাম সাইটোসলিক সিলিওজেনেসিস, যেহেতু শুক্রাণুর লেজের সমস্ত বা আংশিক অ্যাক্সোনিম সাইটোপ্লাজমে গঠিত হয় বা সাইটোপ্লাজমের সংস্পর্শে আসে।[৩৫]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ