সূত্র (ধর্ম)

সূত্র হল দক্ষিণ এশিয়ার ধর্ম বিশেষ করে হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং জৈনধর্মের এক ধরনের নীতিবচন বা শিক্ষা।[১][২][৩] সূত্র শব্দটি কখনো নীতিবচন বুঝাতে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো উপাসনা গ্রন্থে লিখিতরুপে একাধিক নীতিবচনের সমষ্টি বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। সূত্র হল প্রাচীনমধ্যযুগীয় ভারতীয় গ্রন্থের একটি ধারা।[৪]

ব্রাহ্মী লিপির দক্ষিণ তুর্কিস্তান থেকে লোটাস সূত্র (বৌদ্ধ ধর্ম) -এর একটি সংস্কৃত পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা
সুত্র বাক্স, মিয়াজিমা, জাপান
কাল্পা সূত্র (জৈন) থেকে একটি পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা

হিন্দুধর্মে সূত্র হল নীতিবচন সংকলন, যা এক ধরনের সাহিত্য ধারা।[৫][৬] প্রত্যেকটি সূত্র হল কিছু শব্দের মধ্যে সমাপতিত সংক্ষিপ্ত নিয়ম যা শাস্ত্রীয় শিক্ষা, দর্শন ব্যাকরণ বা অন্য কোন জ্ঞান ধারণ করে।[৭][৮] বেদ এর ব্রাহ্মণআরণ্যক অধ্যায়ে হিন্দুধর্মের পুরাতন সূত্রগুলো পাওয়া যায়। ১০৮টি উপনিষদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গোপাল-তপানীয় উপনিষদ[৯][১০] হিন্দু দর্শন এর প্রতিটি দর্শন, আচার-অনুষ্ঠানের জন্য বেদীয় নির্দেশিকা, কলার বিভিন্ন ক্ষেত্র, আইন এবং সামাজিক নৈতিকতা বিভিন্ন সূত্র গড়ে তুলেছে যা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে শিক্ষা ও ধ্যানধারণা পৌছে দিতে সাহায্য করে।[১১][১২][১৩]

সুত্র বৌদ্ধধর্মে গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন মৌখিক শিক্ষাকে লিখিত রূপে ধরে রাখে এবং অনেকসময় সুত্ত নামেও পরিচিত। সুত্ত শব্দটির পালি রূপ যা আদি পালিশাস্ত্রের বিভিন্ন অনুশাসন বুঝায়।

জৈনধর্মের সূত্রগুলি সুয়্য নামেও পরিচিত, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে জৈন অগামাসে মহাবীরের যাজকীয় উপদেশগুলি এবং পরবর্তীতে (পোস্ট ক্যানোনিকাল) আদর্শ গ্রন্থে।

ব্যুৎপত্তি

সপ্তদশ শতাব্দীর ভূর্জবৃক্ষের বাকলের উপর লেখা পাণিনি সূত্রের একটি পাণ্ডুলিপি যা মূলত একটি ব্যাকরণ শাস্ত্র এবং এটি কাশ্মীরে পাওয়া গেছে।[১৪]

সূত্র (সংস্কৃত: सूत्र, পালি: সুত্ত, অর্ধমাগধি: সুয়) অর্থ হল সূতা।[১৫][১৬] এ শব্দের অর্থ হল যা কোন কিছুকে সেলাই করে ধরে রাখে।[১৬][১৭] এটা সূচ (সংস্কৃতঃ सूचि) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত যা কোন কিছুকে সেলাই করে [১৮] এবং সুন ( সংস্কৃতঃ सूना) যার অর্থ বোনা[১৯]

সাহিত্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে সূত্র হল "নীতিবচন, নিয়ম, দিকনির্দেশনা সংবলিত লিখিত কিছু শব্দসমষ্টি যেগুলো রীতিনীতি শিক্ষা, দর্শন, ব্যাকরণ বা অন্য কোন জ্ঞানকে একসুত্রে গেঁথে রেখেছে। [২০][২১]

ভারতীয় সাহিত্যিক মরিজ উইন্টারনিজ বলেন, সূত্র হল কোন সংক্ষিপ্ত নিয়ম।[২২] অন্যভাবে বললে, এগুলো হল " স্বল্প কথায় ঘনীভূত একটি তত্ত্ব"। অনেকগুলো সূত্রের সমন্বয়ে যে বই তৈরি হয় তাকেও সূত্র বলে (পশ্চিমা সাহিত্যে বড় হাতের দেখানো হয়)। [২৩][২৪]

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে পাওয়া শ্লোক, অনুব্যাখ্যাব্যাখ্যা থেকে সূত্র আলাদা।[২৫] সূত্রের মধ্যে কোন ঘনীভূত উপদেশ থাকবে।[২৬] অন্যদিকে শ্লোক হল পঙ্কোক্তি যেটা তালে তালে পুরো বানীই পরিবেশন করে।[২৭][২৮] অনুব্যাখ্যা হল পর্যালোচনা এবং ব্যাখ্যা হল পর্যালোচকের মন্তব্য।[২৯][৩০]

ইতিহাস

বেদ এর ব্রাহ্মণআরণ্যক স্তরে প্রথম সূত্রগুলো পাওয়া যায়।[১০] সেগুলো বেদাঙ্গে বেড়ে যায়, যেমন- শ্রুতসূত্র ও কল্পসূত্র।[৭] এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সহজেই এগুলো শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীকে জানাতে পারে, প্রাপক দ্বারা আলোচনার জন্য বা আত্ম-অধ্যয়ন বা রেফারেন্স হিসাবে স্মরণ করে।[৪]

সূত্রগুলো এতই সংক্ষিপ্ত যে সংশ্লিষ্ট পন্ডিতের ভাষ্য ব্যতীত এই শব্দভাণ্ডারগুলি ব্যাখ্যা করা বা বোঝা কঠিন হয়।[৩১][৩২]

দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব মধ্য ১ম সহস্রাব্দের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেদের অংশ হিসেবে অনেকগুলো সূত্র প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এসেছে।[৩৩] উদাহরণস্বরূপ উইনটারিজ এর মতে আত্যর্য আরণ্যক, প্রাথমিকভাবে সূত্রগুলির একটি সংগ্রহ।[১০] প্রাচীন অ-বৈদিক হিন্দু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা যেমন-গাঁথা, নরসিং, ইতিহাস, এবং অক্ষয়ণ (গান, মহাকাব্য এবং গল্প) তে তাদের ব্যবহার এবং উৎপত্তি উল্লেখ করা হয়েছে।[৩৪]

ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে, ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত (বেশিরভাগ বুদ্ধ ও মহাবীরের পরে) জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিতে সূত্রের বৃহত্তর সমন্বয় ঘটে এবং এটি "সূত্রকাল" নামে পরিচিত।[৩৫][৩৬] এই পর্যায়টি আরও পুরোনো চন্দ্র যুগ, মন্ত্র কাল এবং ব্রহ্মকালের অনুসরণ করেছিল।[৩৭]

বৈদিক যুগের সূত্র[৩৮]
বেদসূত্র
ঋগ্বেদআশ্বলায়ন সূত্র (§), সংখায়ন সূত্র (§), শৌনক সূত্র (¶)
সামবেদলাত্যায়ণ সূত্র (§), দুর্য্যায়ন সূত্র (§), গোভিল সূত্র (§), পুস্পা সূত্র (§), খাদিল সূত্র (§)[৩৯]
যজুর্বেদমানব সূত্র (§),ভারদ্বাজ সূত্র (¶), আপস্তম্ব সূত্র (¶), বৈখ্যনাসা সূত্র (¶), লক্ষ্মী সূত্র (¶), মৈত্র সূত্র (¶), কঠ সূত্র (¶), বরাহ সূত্র (¶)
অথর্ববেদকৌশিক সূত্র(§)
¶: শুধুমাত্র উক্তিগুলো আছে §: পাঠ্যটিও আছে

হিন্দুধর্ম

হিন্দুধর্মের সূত্রগুলির প্রাচীনতম নমুনাগুলির কয়েকটি অনুপদের সূত্র এবং নিদিনা সূত্রগুলিতে পাওয়া যায়।[৪০] শ্রুতি বা স্মৃতি বা কোনও জ্ঞানের আরো নির্ভরযোগ্য উৎস হিসাবে বিবেচিত হতে পারে কিনা প্রথমটি এ বিতর্কের সৃষ্টি করে[৪১] এবং পরেরটি সামবেদের গান এবং গানগুলির জন্য সঙ্গীত শ্রাব্যতার নিয়মগুলি ছড়িয়ে দেয়। [৪২]

বেদের ছয়টি অঙ্গ সরূপ বেদান্তের মধ্যে হিন্দুধর্মের প্রাচীন সূত্র একটি বড় সংকলন পাওয়া যায়।[৪৩] বেদকে নিখুঁতভাবে আয়ত্তের জন্য এই ছয়টি বেদান্তের বিষয় প্রয়োজনীয় হয়। এই ছয়টি বিষয় ছিল জ্যোতিষ, শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, নিরুক্ত এবং কল্পসূত্র[৪৪] ম্যাক্স মুলার বলেন, প্রথম দুটি বৈদিক যুগে বেদ পড়ার জন্য এবং শেষ দুটি অগ্নি পূজারীদের বৈদিক জ্ঞান লাভের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হতো।[৪৫] এইগুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত সূত্রগুলি বেদের ব্রাহ্মণ এবং আরণ্যক অধ্যায়গুলির মধ্যে অবস্থিত। তৈত্তিরীয় আরণ্যকে ৭ নং বইয়ের কিছু সূত্র কিছু শব্দেরমালার সঠিক উচ্চারণ দেয় যেমন- "চিঠিপত্র", "আকৃতি", "পরিমাণ", "পৌঁছান" এবং "ইউফোনিক নিয়ম"।[৪৬]

তৈত্তিরীয় উপনিষদের মতই বেদের দার্শনিক ও দৃষ্টিনন্দন উপনিষদগুলিতেও অনেক ধরনের সূত্র পাওয়া যায়।[৪৭]

প্রাচীন বৈদিক সূত্র সাহিত্যের যে সংমিশ্রণ টিকে আছে সেগুলো অনেকভাগে বিভক্ত যেমন- কল্পসূত্র, শ্রাত্য সূত্র, শ্রুত সূত্র, ধর্মসূত্র, গৃহ্যসূত্র এবং শুল্ব সূত্র।[৪৮] সূত্রের অন্যান্য ভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যুৎপত্তি, ধ্বনিতত্ত্ব এবং ব্যকরণ।


বেদ-পরবর্তী সূত্র

হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখার কিছু সূত্র গ্রন্থের উদাহরণ নিম্নরূপঃ

  • ব্রহ্মসূত্র (বা বেদান্ত সূত্র) - ২০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে বৌধায়ন দ্বারা গঠিত একটি সংস্কৃত গ্রন্থ।[৪৯] উপনিষদ্‌ গুলোতে চারটি অধ্যায়ে ৫৫৫ টি সূত্র আছে যা দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক ধারণাগুলোর সারাংশ প্রকাশ করে।[৫০] হিন্দু দর্শনশাস্ত্র বেদান্ত এর মূল একটি মূল গ্রন্থ।[৫১]
  • যোগসূত্র - আটটি অঙ্গ ও ধ্যান সহ যোগ ব্যায়ামের তে ১৯৬ টি সূত্র রয়েছে। ঐতিহ্যগত যোগ থেকে উপাদান নিয়ে ৪০০ অব্দের দিকে পতঞ্জলি যোগসূত্র গুলি একত্র করেন।[৫২] এই পাঠ্যটি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের উপর অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং এটি মধ্যযুগে প্রাচীন ভারতীয় পাঠ্যাংশের মধ্যে সবচেয়ে অনুবাদিত গ্রন্থ, যা প্রায় 40 টি ভারতীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে।[৫৩]
  • সাংখ্য সূত্র - হিন্দু দর্শনশাস্ত্রের সমখ্য শাখায় সংস্কৃত গ্রন্থের একটি সংগ্রহ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কপিলের দ্বৈতধর্মের সূত্র। [38] এর ছয়টি বই এ ৫২৬ টি সূত্র রয়েছে।

বেদান্ত সূত্র এ কিছু সূত্র

अथातो ब्रह्मजिज्ञासा ॥१.१.१॥
जन्माद्यस्य यतः ॥ १.१.२॥
शास्त्रयोनित्वात् ॥ १.१.३॥
तत्तुसमन्वयात् ॥ १.१.४॥
ईक्षतेर्नाशब्दम् ॥ १.१.५॥

— ব্রহ্মসূত্র 1.1.1–1.1.5[৫৪][৫৫]

ব্যাখ্যা ছাড়া:
আত্মা, কারণ এর কোন প্রমাণ নেই যে এটি না। (সূত্র ১, বই ৬) শরীর থেকে এটি ভিন্ন, কারণ অতিপ্রাকৃত। (সূত্র ২, বই ৬) এছাড়াও এটি ষড়রিপুর মাধ্যমে প্রকাশ করে। (সূত্র ৩, বই ৬)

বিজ্ঞানভিক্ষুর ব্যাখ্যার সাথে:
আত্মা, কারণ কোন প্রমাণ নেই যে এটা নাই, "আমি মনে করি", কারণ আমরা সচেতন যে একে পরাজিত করার কোন প্রমাণ নেই। অতএব যে সমস্ত কাজ করা হয় তা সাধারণভাবে এগুলি থেকে বৈষম্য করা হয়। (সূত্র ১, বুক ৬) এই আত্মা শরীরের থেকে ভিন্ন কারণ দুটি মধ্যের সম্পূর্ণ পার্থক্য আছে। (সূত্র ২, বুক ৬) এছাড়াও, কারণ, আত্মা, ষড়রিপুর মাধ্যম দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যেমন- এই 'আমার দেহ', 'এই আমার বোঝা' দ্বারা প্রকাশ করা; কারণ শরীরের বা আত্মার, উভয়ের মধ্যে স্বতন্ত্র পার্থক্য, এবং এমন আত্মা যা একাই দখল করে থাকে। (সূত্র ৩, বুক ৬)

সমখ্য সুত্রে কপিল, জেমস রবার্ট বালান্টিন দ্বারা অনুবাদ করা[৫৬][৫৭]

  • বৈশেষিক সূত্র - হিন্দুধর্মের বৈশেষিক শাখার মূল ভিত্তি, যা খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দি থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দির মধ্যে কানাদা দ্বারা লেখা।[৫৮] ৩৭০ টি সূত্র দিয়ে, এটি আত্মতৃপ্তিমূলকভাবে অ-আধ্যাত্মিক প্রকৃতিবাদ, প্রবন্ধমালা, এবং তার অধিবিদ্যা শেখায়। পাঠ্যের প্রথম দুটি সূত্র শেখায় "এখন ধর্ম এর ব্যাখ্যা; সমৃদ্ধি ও পরিত্রাণের উপায় ধর্ম।"[৫৯][৬০]
  • ন্যায়সূত্র - অক্ষপাদ গৌতম দ্বারা রচিত এ গ্রন্থ হিন্দু দর্শনশাস্ত্রের ন্যায়-নীতি শাখার একটি প্রাচীণ গ্রন্থ যা খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টাব্দ দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে রচিত।[৬১][৬২] এ গ্রন্থে জ্ঞান ও যুক্তির উপর জোর দেয়া হয়েছে এবং এতে কোন বৈদিক রীতির উল্লেখ নেই।[৬১] পাঠ্যাংশের মধ্যে ৫২৮ টি অনুশাসিত সূত্র রয়েছে যেগুলো কারণ যুক্তি, যুক্তিবিজ্ঞান, অধ্যায়শাস্ত্র এবং অধিবিদ্যা সম্পর্কিত।[৬৩][৬৪] এই সূত্রগুলি পাঁচটি বইয়ে বিভক্ত, প্রতিটি বইয়ের দুটি অধ্যায় রয়েছে।[৬১] দ্বিতীয় বইটি প্রমাণ(এপিস্টেমোলজি), তৃতীয় বইটি প্রমেয়া বা বস্তুগত জ্ঞান সম্পর্কিত এবং অবশিষ্টাংশে জ্ঞানের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।[৬১]

বাস্তবতা সত্য (প্রমা, সঠিক জ্ঞান ভিত্তি), এবং সত্য সত্যই, আমরা তা সম্পর্কে জানি বা না জানি তার উপর নির্ভর করে না।

ন্যায়সূত্রে অক্ষপাদ গৌতম, জেনেনি ডি ফাউলার দ্বারা অনূদিত[৬৫]

  • মীমাংসা সূত্র - এটি হল জৈমিনি রচিত হিন্দুধর্মের মীমাংসা অংশের ভিত্তি গ্রন্থ এবং এতে বেদের প্রাথমিক অংশে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে ধার্মিকতা এবং ধর্মীয় কাজকে পরিত্রাণের উপায় বলা হয়েছে।[৬৬] এই শাখায় সূক্ষ্মভাবে শব্দচয়ন,বাক্যের গঠন, ভাষা বা যেকোন বইয়ের হের্মেনেত্য এর নিয়ম সংকলিত হয়েছে এবং ন্যায় শাখার কিছু বিশুদ্ধ যুক্তি ও এপিস্টেমোলজির অনেক নিয়ম গঠন করা হয়েছে।[৬৬] একটি নিরীশ্বরবাদী শাখার মীমাংসা সুত্রে বারো অধ্যায়ে প্রায় ২৭০০ সূত্র রয়েছে এবং এটি নিরীশ্বরবাদ সমর্থন করে।[৬৬]
  • ধর্মসূত্র - অপস্তাম্ব, গৌতম, বৌধায়ন ও বাসিস্থ
  • অর্থসূত্র - চাণক্য ও সমাদেবের নীতিসুত্রগুলি শাসন, আইন, অর্থনীতি এবং রাজনীতি এর উপর রচিত গ্রন্থ। শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে চাণক্যের নীতিসূত্রের সংস্করণ পাওয়া গেছে।[৬৭] চাণক্যের আরো বিস্তৃত কাজ, অর্থশাস্ত্র যা নিজেই অনেকগুলো অংশে বিভক্ত এবং সূত্রের মত করে লিখিত। এটিতে প্রাচীন অর্থজ্ঞানের উপর আগের পণ্ডিতদের সূত্রগুলোও পাওয়া যায়।[৬৮]
  • কামসূত্র
  • মখ্যসূত্র
  • শিবসুত্র
  • নারদ ভক্তি সূত্র

বৌদ্ধধর্ম

কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে সূত্র এর বৌদ্ধধর্মে ব্যবহার, পাকৃত বা পালি শব্দ সুত্ত এর ত্রুটিযুক্ত রূপ; এবং পরেরটি সংস্কৃত রূপ সুক্তকে উপস্থাপন করে।[৬৯] আদি বৌদ্ধ সূত্রগুলি প্রবচনাত্মক নয়,বরং সেগুলো হিন্দু সূত্রের মত রহস্যপূর্ণ যদিও এগুলোকে মনে রাখার মত করে লেখা হয়েছিল। অন্যদিকে এগুলো অনেকসময় লম্বা এবং পুনরাবৃত্তিপূর্ণ যা শ্রোতাদের মনে রাখার উদ্দেশ্য পূরণ করে। তারা জৈন সূত্রের সাথে "সুসংবাদ" এর উপাধিগুলি ভাগ করে নিয়েছে, যার মূল নাম অর্ধ মগধির "সুয়্য" এবং সংস্কৃত "সূক্ত" থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু 'সুত্র' থেকে হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বৌদ্ধধর্ম মধ্যে, সূত্র বা সুত্ত বলতে বেশিরভাগ সময় ক্যানোনিকাল ধর্মগ্রন্থ ই বোঝায়। [[চীনা ভাষা] চীনা]], এইগুলি 經 (পিনয়িন: জিন নামে পরিচিত। ই শিক্ষাগুলি ত্রিপাঠ এর অংশে সংকলিত হয়, যা 'সুচিতা পিত্তক' নামে পরিচিত। অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাবশালী মহায়ানা গ্রন্থ, যেমন প্ল্যাটফর্ম সূত্র এবং লোটাস সূত্র , যা অনেক পরের লেখক দ্বারা লিখিত হওয়া সত্ত্বেও সূত্র বলা হয়।

জৈনধর্ম

জৈন ঐতিহ্যের মধ্যে, সূত্রগুলি "স্থায়ী পাঠ্য" হিসেবে স্মরণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।[৭০]

উদাহরণস্বরূপ, কালপা সূত্র,জৈন তীর্থঙ্করদের জীবনীর পাশাপাশি মঠের নিয়মগুলির শাস্ত্রের সাথে এক ধরনের জৈন পাঠ,[৭১][৭২] অনেক সূত্রই তপস্বীদের ও জৈন ধর্মানুসারীদের জীবনপ্রণালী নিয়ে আলোচনা করে। এম হুইটনি কেল্টিং এর মতানুসারে ১ম সহস্রাব্দ এর অনেক প্রাচীন সূত্র ভক্তিবাদকে একটি জৈন অনুশীলনের একটি কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৭৩]

জৈন ঐতিহ্যের টিকে থাকা ধর্মগ্রন্থ, অকারঙ্গা সূত্র, সূত্র আকারে লিখিত।[৭৪] এছাড়া তত্তভার্থ সূত্র রয়েছে যা মূলত একটি সংস্কৃত পাঠ এবং জৈনধর্মের চারটি সম্প্রদায়ের সবগুলো দ্বারা গৃহীত এবং যা সর্বাধিক প্রামাণিক দার্শনিক পাঠ যা জৈনবাদের ভিত্তিকে সম্পূর্ণরূপে সমার্থক করে তোলে। [৭৫][৭৬]

আরও দেখুন

  • আনন্দ সুত্রম
  • শাস্ত্র
  • সূত্র অনুলিপি
  • সুত্রম
  • চৈনিক বৌদ্ধ কানুন
  • তিব্বত বৌদ্ধ কানুন
  • ধম্মক্ক্পপুত্থান সুত্ত
  • মাজঝিমা নিকা সুত্ততালিকা

টিকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ