হাসানাল বলকিয়াহ
হাসানাল বলকিয়াহ[১] (জাউয়ি: حسن البلقية Hassanal Bolkiah; জন্ম: ১৫ জুলাই ১৯৪৬) হলেন ব্রুনাইয়ের ২৯তম এবং বর্তমান সুলতান ও ইয়াং দি পেতরুয়ান (সর্বোচ্চ নেতা)। তিনি ব্রুনাইয়ের প্রথম এবং দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রীও। তিনি স্যার মুদা তৃতীয় ওমর আলী সাইফুদ্দিন এবং রাজা ইস্তেরি পেনগিরান আনাক (রাণী) এর বড় ছেলে। তাঁর পিতা ৪ অক্টোবর, ১৯৬৭ সালে সিংহাসন ত্যাগের পর তিনি ব্রুনাইয়ের সুলতনের সিংহাসনে আরোহণ হন।
সুলতান বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত, ফোর্বস ২০০৮ সালে সুলতানের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০০০ কোটি মার্কিন ডলার বলে উল্লেখ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রারম্ভিক এবং শিক্ষা জীবন
বলকিয়াহ ১৯৪৬ সালের ১৫ জুলাই ব্রুনাই টাউনে (বর্তমান নাম বন্দর সেরি বেগাওয়ান) পেনগিরান মুদা (যুবরাজ) হাসানাল বলকিয়াহ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুয়ালালামপুরের ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট, যুক্তরাজ্য থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন।[২]
সিংহাসনে আরোহণ
তিনি তাঁর পিতা তৃতীয় ওমর আলী সাইফুদ্দিনের সিংহাসন ত্যাগের পর ৫ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে ব্রুনাই দারুস সালামের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৯৬৮ সালের ১ আগস্টে তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি ব্রুনাইয়ের ইয়াং দি পেরতুয়ান (সর্বোচ্চ নেতা) হন। পিতার মতো তিনিও যুক্তরাজ্যের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর নিকট থেকে নাইট উপধি পান। উল্লেখ্য, ব্রুনাই ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের উপনিবেশ ছিল।
রাজনৈতিক ভূমিকা
ব্রুনাইর ১৯৫৯ সালের সংবিধান অনুসারে সুলতান পূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতাসহ রাষ্ট্রের প্রধান, ১৯৬২ সাল থেকে সুলতান জরুরি অবস্থা ঘোষণা করারও অধিকারী। ২০০৬ সালের মার্চে সুলতান ব্রুনাইর আইনে নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে রেখে সংবিধান সংশোধন করেন।[৩] বলকিয়াহ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সরকারেরও প্রধান। এছাড়া তিনি ব্রুনাইর অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও মন্ত্রী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে তিনি ব্রুনাই রাজকীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ এবং ইন্দোনেশীয় সশস্ত্র বাহিনীর একজন অনারারি জেনারেল। তিনি নিজেকে ব্রুনাই রাজকীয় পুলিশ বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিযুক্ত করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৯১ সালে তিনি একটি রক্ষণশীল মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন, যা মেলায়ু ইসলাম বেজারা (মালয় ইসলামি রাজতন্ত্র, এমআইবি) নামে পরিচিত। এই মতবাদে রাজতন্ত্রকে ধর্মীয় বিশ্বাসের রক্ষাকর্তা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।[৪] তিনি ব্রুনাই সরকারকে গণতন্ত্রীকরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি আইনসভা পুনরায় চালু করেন, যেটি ১৯৬২ সাল থেকে অকার্যকর ছিল।[৪]
তার বড় ছেলে যুবরাজ আল-মুহতাদি বিল্লাহকে তার উত্তরাধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সুলতানের সরকারি বাসভবন হলো ইস্তানা নুরুল ইমান, যেটিতে ১,৭৮৮ টি কক্ষ, ২৫৭ টি গোসলখানা আছে। ইস্তানা বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসাবেও ব্যবহৃত হয়, তন্মধ্যে সুলতান এবং ইয়াং দি পেরতুয়ানের দপ্তর, প্রধান প্রাসাদ কর্মকর্তার দপ্তর, প্রধানমন্ত্রীর অধীন অন্যান্য দপ্তর আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু অংশের দপ্তরও প্রাসাদের অভ্যন্তরে। যুবরাজ, যিনি সিনিয়র মন্ত্রীও, ইস্তানার বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
হাসানাল বলকিয়ার শাসনামলে ব্রুনাই
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন
ব্রুনাই দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুলতান শরিফ আলী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেক প্রযুক্তি ও কারিগরী প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন: ব্রুনাই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুলতান সাইফুল রিজাল টেকনিক্যাল কলেজ, এবং বিভিন্ন কারিগরি বিদ্যালয়সমূহ।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাহফিজ আল কুরআন সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে বিদেশে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
ধর্মীয় বিষয়
হাসানাল বলকিয়াহ রাষ্ট্রের ধর্মীয় প্রধান এবং ইসলাম দেশটির রাষ্ট্রধর্ম। সুলতান ফরমান জারি করেছেন যে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন ঈদে মিলাদুন্নবী, লাইলাতুল মেরাজ, নুযুল আল কুরআন প্রভৃতি আড়ম্ভরের সাথে পালন করা হবে। তিনি প্রায়ই দেশের বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন।
২০১৪ সালে হাসানাল বলকিয়াহ দেশে ইসলামি দণ্ডবিধি কার্যকর করেছেন।
বিয়ে এবং পরিবার
সুলতান তাঁর জ্ঞাতি বোন পেনগিরান আনাক সালেহাকে বিয়ে করেন, যিনি তাঁর প্রথম স্ত্রী এবং পরবর্তীতে রাজা ইস্তেরি বা রাণী হন। তাঁর সাবেক দ্বিতীয় স্ত্রী (সাবকে পেনগিরান ইস্তেরি) আইশা মারিয়াম ছিলেন রয়েল ব্রুনাই এয়ারলাইন্স এর সাবেক ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট। ২০০৩ সালে তিনি তাকে তালাক দেন এবং সব রাজকীয় খেতাব করেন। ২০০৫ সালের আগস্টে তাঁর স্থান দখল করেন মালয় টিভি উপস্থাপিকা আজরিনাজ মাজহার হাকিম। ২০১০ সালে তাঁরা পৃথক হন এবং আইশা মারিয়ামের মতো তারও সকল রাজকীয় উপাধি, সম্মাননা এবং মাসিক ভাতা সুলতান বাতিল করেন। তালাকের বিষয়টি প্রধান প্রাসাদ কর্মকর্তা রেডিও টেলিভিশন ব্রুনাইয়ে ঘোষণা করেন।[৫]
সুলতান এবং রাজা ইস্তেরি পেনগিরান আনাক সালেহার বড় ছেলে হিসাবে যুবরাজ আল-মুহতাদি বিল্লাহ বর্তমান পেনগিরান মুদা মাহকতা (যুবরাজ)। ২০১২ সালের হিসাবে, হাসানাল বলকিয়াহের তিন স্ত্রীর পাঁচ ছেলে এবং সাত মেয়ে আছেন।
উপাধি এবং সম্মাননা
মালয় ভাষায় সুলতানের পূর্ণ উপাধি হলো: কেবাওয়াহ দুলি ইয়াং মাহা মুলিয়া পাদুকা সেরি বাগিনদা সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুয়িযুদ্দিন ওয়াদ দওলাহ ইবনি আল-মারহুম সুলতান হাজি ওমর আলী সাইফুদ্দিন সা’দুল খাইরি ওয়াদ্দীন, সুলতান দান ইয়াং দি পেরতুয়ান নেগারা ব্রুনাই দারুস সালাম।[৬]
একাডেমিক সম্মাননা
সুলতান ২০০৫ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন।[৪] তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য থেকে জক্টর অব লজ ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননাসূচক একাডেমিক ডিগ্রি লাভ করেছেন। [৪][৪][৭] তাছাড়াও তিনি নাইট উপাধি লাভ করেছেন।