অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড শহরে অবস্থিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইংরেজি: University of Oxford) ইংরেজি ভাষাভাষী জগতের সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়[৮]। ধারণা করা হয় ১১শ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা ১২শ শতাব্দীর প্রথমে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম হিসেবে সর্বস্বীকৃত।
লাতিন: Universitas Oxoniensis উনিভের্সিতাস অক্সনিয়েন্সিস' | |
নীতিবাক্য | Dominus Illuminatio Mea (ল্যাটিন) |
---|---|
বাংলায় নীতিবাক্য | প্রতিপালকই আমার আলো |
স্থাপিত | ১১ শতাব্দী(সম্ভবত ১০৯৬)[১] |
বৃত্তিদান | £৫.৬ শতকোটি (কলেজগুলো সহ) (জুলাই ৩১,২০১৭ এর মতে)[২] |
বাজেট | £১.৪ শতকোটি (২০১৬-১৭) |
আচার্য | দ্য রাইট মাননীয় লর্ড প্যাটেন অফ বার্ন্স |
উপাচার্য | লুইস রিচার্ডসন[৩][৪] |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ১,৭৯১[৫] |
শিক্ষার্থী | ২৩,১৯৫ (২০১৬)[৬] |
স্নাতক | ১১,৭২৮ (২০১৬)[৬] |
স্নাতকোত্তর | ১০,৯৪১ (২০১৬)[৬] |
অন্যান্য শিক্ষার্থী | ৫০০[৭] |
অবস্থান | , |
শিক্ষাঙ্গন | কলেজ টাউন |
ক্রীড়াবিষয়ক | দ্য স্পোর্টিং ব্লু |
অধিভুক্তি | ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব রিসার্চ ইউনিভার্সিটিজ রাসেল গ্রুপ ইউরোপেউম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশন এলইআরইউ |
ওয়েবসাইট | ox |
ইতিহাস
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ জানা না গেলেও অনুমান করা হয় ১১ শতাব্দীর প্রথম থেকেই অক্সফোর্ডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১১৬৭ সালে রাজা ২য় হেনরি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ইংরেজ ছাত্রদের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব, আইন, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগ ছিল। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের কোন ভবন ছিলনা, ভাড়া করা হল অথবা চার্চে ক্লাস নেওয়া হত। ১৩৫৫ সালে রাজার এক আদেশবলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অক্সফোর্ড শহরে স্থান দেওয়া হয়। ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে কিন্তু পরবর্তীকালে রাজার ২য় পুত্রের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে যায়। ১৯শ শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলেবর বৃদ্ধি করা হয়। ১৮৮৭ সালে প্রথম মহিলা কলেজ লেডি মার্গারেট হল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০ শতকে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও সংষ্কার করা হয়। বিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয় ও নতুন বিভাগ খোলা হয়।
গঠনতন্ত্র
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ৩৯টি কলেজ এবং ৫ টি Permanent Private Halls (PPHs) এর সমন্বয়ে গঠিত। এদের প্রতিটি স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়। সকল ছাত্রকে এদের যেকোন একটির সাথে যুক্ত থাকতে হয়। আবাসিক সুবিধা ছাড়াও কলেজগুলোতে ছাত্রদের ক্লাস নেয়া হয়। তবে পরীক্ষা, গবেষণাগার এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। প্রতিটি কলেজে সাধারণত একটি ডাইনিং হল, প্রার্থনা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, তিনটি কমন রুম এবং ২০০-৪০০ ছাত্রের থাকার স্থান থাকে। কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া আলাদা হলেও একটি গ্রহণযোগ্য মান ধরে রাখা হয়। কলেজগুলো হলো:
- অল সোলস্ কলেজ (প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৪৩৮ইং)
- ব্যাল্লিওল কলেজ (১২৬৩)
- ব্র্যাসনোজ কলেজ (১৫০৯)
- ক্রাইস্ট চার্চ (১৫৪৬)
- কর্পাস ক্রিস্টি কলেজ (১৫১৭)
- এক্সটার কলেজ (১৩১৪)
- গ্রীণ টেম্পেলটন কলেজ (২০০৮)
- হ্যারিস ম্যানচেস্টার কলেজ (১৮৮৯)
- হার্টফোর্ড কলেজ (১২৮২)
- জিসাস কলেজ (১৫৭১)
- কেবেল কলেজ (১৮৭০)
- কেলগ কলেজ (১৯৯০)
- লেডি মার্গারেট হল (১৮৭৮)
- লিনাক্রে কলেজ (১৯৬২)
- লিঙ্কন কলেজ (১৪২৭)
- ম্যাগদালেন কলেজ (১৪৫৮)
- ম্যান্সফিল্ড কলেজ (১৮৮৬)
- মার্টন কলেজ (১২৬৪)
- নিউ কলেজ (১৩৭৯)
- নাফিল্ড কলেজ (১৯৫৮)
- অরিয়েল কলেজ (১৩২৬)
- পেমব্রোক কলেজ (১৬২৪)
- দ্য ক্যুইনস্ কলেজ (১৩৪১)
- সেন্ট অ্যানস্ কলেজ (১৮৭৮)
- সেন্ট এন্টনিজ কলেজ (১৯৫৩)
- সেন্ট ক্যাথরিনস্ কলেজ (১৯৬৩)
- সেন্ট ক্রস কলেজ (১৯৬৫)
- সেন্ট এডমান্ড হল (১৯৫৭)
- সেন্ট হিল্ডাস কলেজ (১৮৯৩)
- সেন্ট হিউজেস কলেজ (১৮৮৬)
- সেন্ট জনস্ কলেজ (১৫৫৫)
- সেন্ট পিটার্স কলেজ (১৯২৯)
- সমারভিল কলেজ (১৮৭৯)
- ট্রিনিটি কলেজ (১৫৫৪)
- ইউনিভার্সিটি কলেজ (১২৪৯)
- ওয়াডহ্যাম কলেজ (১৬১০)
- ওল্ফসন কলেজ (১৯৬৬)
- ওরচেষ্টার কলেজ (১৭১৪)
১৪৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস লিঃ বা ইউপিএল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি অংশ। এটি পৃথিবীর অন্যতম নামকরা প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে বিবেচিত।
বিখ্যাত শিক্ষার্থী
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের অক্সনিয়ান বলা হয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব শিক্ষা লাভ করেছেন। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ জন ইংরেজ রাজা, ৮ জন বিদেশী রাজা, ৪৭ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ২৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ২৮ জন বিদেশী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, ৭ জন সেইন্ট বা সাধু, ১৮ জন কার্ডিনাল ও এক জন পোপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন - জন ওয়েজলি, অস্কার ওয়াইল্ড, সেসিল রোডস, এডমান্ড হ্যালি, স্টিফেন হকিং, টিম বার্নার্স-লি, হিউ গ্রান্ট, রুপার্ট মার্ডক, মার্গারেট থ্যাচার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে অক্সফোর্ড
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য কল্পকাহিনীর পটভূমিতে বিদ্যমান। ১৪০০ সালের দিকে জেফ্রি চসারের দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস-এ অক্সফোর্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। এতে একজন ব্যক্তির উল্লেখ করা হয় যিনি "অক্সেনফোর্ডের কেরানি [শিক্ষার্থী]"।
১৯৮৯ সালে ৫৩৩টি উপন্যাস পাওয়া যায়, যা অক্সফোর্ডের পটভূমিতে রচিত এবং ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৯] বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের মধ্যে ইভলিন ওয়াহের ব্রাইডশেড রিভিজিটেড ১৯৮১ সালে একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে উপযোগ করা হয় এবং ফিলিপ পুলম্যানের ত্রয়ী উপন্যাস হিজ ডার্ক ম্যাটেরিয়ালস ২০০৭ সালে একটি চলচ্চিত্রে এবং ২০১৯ সালে বিবিসি টেলিভিশনের ধারাবাহিকের উপযোগ করা হয়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে:
- ম্যাক্স বিরবম রচিত জুলেকা ডবসন (১৯১১), স্নাতক জীবন নিয়ে রচিত ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস।
- কম্পটন ম্যাকেঞ্জি রচিত সিনিস্টার স্ট্রিট (১৯১৩-১৪)
- ডরথি এল. সয়ার্স রচিত গোডি নাইট (১৯৩৫)
- কলিন ডেক্সটার রচিত দি ইনস্পেক্টর মোর্স গোয়েন্দা উপন্যাস (১৯৭৫-১৯৯৯)
- ট্রু ব্লু (১৯৯৬), ১৯৮৭ সালের অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার সময়ে সংঘর্ষ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র।
- অ্যালান বেনেট রচিত দ্য হিস্ট্রি বয়েজ (২০০৪)
- লরা ওয়েড রচিত পশ (২০১০)
- টেস্টামেন্ট অব ইয়ুথ (২০১৪), সমারভিলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভেরা ব্রিটেন রচিত স্মৃতিকথা অবলম্বনে নির্মিত নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র।
উল্লেখযোগ্য অকোপলকল্পিত সৃষ্টিকর্ম হল জ্যান মরিস রচিত অক্সফোর্ড।[১০]