সাংস্কৃতিক বিপ্লব
সাংস্কৃতিক বিপ্লব, আনুষ্ঠানিক নাম মহান প্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ১৯৬৬ সালে মাও সেতুং দ্বারা সূচিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (গণচীন) একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল যা ১৯৭৬ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।[১] এই বিপ্লবের উল্লিখিত লক্ষ্য ছিল চীনা সাম্যবাদকে রক্ষা করা এবং চীনা সমাজ থেকে পুঁজিবাদী ও প্রথাগত উপাদানের অবশিষ্টাংশ নির্মূল করা। বিপ্লবটি মাও-নেতৃত্বাধীন গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড বিপর্যয় এবং চীনের মহাদুর্ভিক্ষের (১৯৫৯-১৯৬১) পর আত্মসংযম এবং স্বল্প উগ্র নেতৃত্বে অর্পণের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে মাও-এর কার্যকর নেতৃত্বস্থানীয় প্রত্যাবর্তনকে নির্দেশ করে–যিনি তখনও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সভাপতি ছিলেন। যাইহোক, বিপ্লবটি তার মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়।
অবস্থান | গণপ্রজাতন্ত্রী চীন |
---|---|
উদ্দেশ্য | পুঁজিবাদী ও প্রথাগত উপাদানগুলোকে নির্মূল করে সাম্যবাদ সংরক্ষণ এবং মাওবাদী ও বাস্তববাদীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই। |
ফলাফল | অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের ধ্বংস। |
মৃত | দশ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ বেসামরিক নাগরিক, রেড গার্ড এবং সৈন্যের মৃত্যু (সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি) |
সংগঠক | মাও সেতুং (চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি) |
ক্ষয়ক্ষতি | কনফুসিয়াসের সমাধি, স্বর্গমন্দির, মিং সমাধিসমূহ |
গ্রেপ্তার | চিয়াং চিং, চাং ছুনছিয়াও, ইয়াও ওয়েনইউয়ান, এবং ওয়াং হংওয়েন |
সাংস্কৃতিক বিপ্লব | |||||||||||||||||||||||
চীনা | 文化大革命 | ||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আক্ষরিক অর্থ | "সাংস্কৃতিক বিপ্লব" | ||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||
Formal name | |||||||||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 無產階級文化大革命 | ||||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 无产阶级文化大革命 | ||||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | "মহান প্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব" | ||||||||||||||||||||||
|
১৯৬৬ সালের মে মাসে সাংস্কৃতিক বিপ্লব দলের সহায়তায় আন্দোলনটির সূচনা করে, মাও অভিযোগ তোলেন যে পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বুর্জোয়া উপাদানগুলো সরকার ও সমাজে অনুপ্রবেশ করছে। মাও যুবকদেরকে "সদরদপ্তরে বোমাবর্ষণ" করার আহ্বান জানান এবং ঘোষণা করেন যে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে "বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত"। যুবকরাও সারা দেশে বিভিন্ন রেড গার্ড গঠন করে সাড়া প্রদান করে। মাও-এর বাণীগুলোর একটি নির্বাচিন লিটল রেড বুক-এর মধ্যে সংকলিত হয়, যা মাও-এর ব্যক্তি পূজার জন্য একটি পবিত্র পাঠ্য হয়ে উঠে। রেড গার্ড নিয়মিত সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে "নিন্দা সমাবেশ" করে এবং স্থানীয় সরকার ও সিসিপি শাখা থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয়, অবশেষে ১৯৬৭ সালে বিপ্লবী কমিটিগুলো প্রতিষ্ঠা করে। কমিটিগুলো প্রায়শই প্রতিদ্বন্দ্বী দলে বিভক্ত হয়ে "হিংসাত্মক সংগ্রাম" নামে পরিচিত সশস্ত্র লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তো এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী পাঠাতে হতো। পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন কর্মকর্তা লিন পিয়াও সামরিক হস্তক্ষেপের পর সহ-সভাপতি এবং মাও-এর উত্তরসূরি হিসেবে পদোন্নতি পান, কিন্তু মাওয়ের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত। ১৯৭২ সালে, গ্যাং অফ ফোর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৬ সালে মাও-এর মৃত্যু ও গ্যাং অফ ফোর গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লব অব্যাহত ছিল।
সাংস্কৃতিক বিপ্লব কেবল সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দ্বারা বৈশিষ্ট্যযুক্ত। বিপ্লবে মৃতের সংখ্যার দাবি নিয়ে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে, যাঁরা প্রাণ হারান তাঁদের সংখ্যা দশ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে। বেইজিংয়ের রেড আগস্ট থেকে শুরু করে দেশব্যাপী গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে গুয়াংশি গণহত্যা, যেখানে ব্যাপক নরমাংস ভক্ষণের ঘটনাও ঘটেছিল; আন্তঃমঙ্গোলিয়ার ঘটনা; গুয়াংদং গণহত্যা; ইউনান গণহত্যা; এবং হুনান গণহত্যা। রেড গার্ডরা ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ ও শিল্পকর্ম ধ্বংস করে ফেলে, সেইসাথে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্থানগুলোতেও লুটপাট করে। ১৯৭৫ সালের বানছিয়াও বাঁধ ধ্বস বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে একটি, যা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ই ঘটেছিল। অপরদিকে, বিপ্লবে এক লক্ষাধিক মানুষ নির্যাতিত হয়: বিশেষ করে চীনা রাষ্ট্রপতি লিউ শাওছি, তেং শিয়াওফিং, ফেং তেহুয়াই এবং হে লং-এর মতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্মূল বা দেশছাড়া করা হয়; লক্ষাধিক মানুষকে পাঁচটি কালো শ্রেণীর সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, যাঁরা জনসাধারণের অবমাননা, কারাবাস, নির্যাতন, কঠোর শ্রম, সম্পত্তি দখল, এবং কখনো কখনো মৃত্যুদণ্ড বা হয়রানিতে আত্মহত্যার শিকার হয়; বুদ্ধিজীবীদের "নবম দুর্গন্ধযুক্ত বৃদ্ধ" হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতনের শিকার হত–লাও শে, ফু লেই, ইয়াও থোংপিন এবং চাও চিউহাং-এর মতো উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীরা নির্যাতনের ফলে নিহত হন বা আত্মহত্যা করেন। কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড আন্দোলনে ১ কোটিরও বেশি শহুরে বুদ্ধিজীবী যুবকদের গ্রামাঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে, হুয়া কুওফেং-এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে তেং শিয়াওফিং চীনের নতুন সর্বপ্রধান নেতা হন এবং "পোলুয়ান ফানচেং" কার্যক্রম চালু করেন যা ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত মাওবাদী নীতিগুলোকে চূর্ণ করে দেয় এবং দেশটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে।[২][৩] অতঃপর তেং তাঁর মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক সংস্কার ও উন্মুক্তিকরণ কার্যক্রম চালু করে চীনে একটি নতুন যুগের সূচনা করেন। ১৯৮১ সালে, সিসিপি ঘোষণা করে এবং স্বীকার করে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ভুল ছিল এবং এটি চীনে "গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণ, দেশ ও দলের জন্য সবচেয়ে গুরুতর আঘাত এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির জন্য দায়ী।"[৪][৫][৬] সমসাময়িক চীনে, সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত বিদ্যমান। কেউ কেউ একে "বিশৃঙ্খলার দশ বছর" (চীনা: শি নিয়ান তোংলুয়ান, 十年动乱; অথবা শি নিয়ান হাওচিয়ে, 十年浩劫) হিসেবে উল্লেখ করেন।[৭]
প্রেক্ষাপট
গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
১লা অক্টোবর ১৯৪৯-এ মাও সেতুং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ঘোষণা করেন, যার ফলে প্রতীকীভাবে কয়েক দশক যাবত চলয়া চীনের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। অবশিষ্ট প্রজাতন্ত্রী বাহিনী তাইওয়ানে পলায়ন করে এবং বিভিন্ন উপায়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে প্রতিহত করতে থাকে। চীনা প্রজাতন্ত্রীদের অনেক সৈন্যকে চীনের মূল ভূখণ্ডে রয়ে যায়, এবং এই অবশিষ্ট সৈন্যদের ও সেইসাথে চীনা সমাজের উপাদানগুলিকে মাও সেতুং-এর নতুন সরকারের জন্য সম্ভাব্য বিপদ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিবিপ্লবীদের দমন করার জন্য মাও অভিযান শুরু করেন। এটি ছিল সমগ্র চীন জুড়ে গণগ্রেফতার, আটক ও হত্যার প্রথমদেকে উদাহরণগুলোর একটি যা পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাঝে প্রতিফলিত হয়।
গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড
নবনির্মিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে একটি শিল্প পরাশক্তিতে পরিণত করার জন্য মাও সেতুং-এর প্রস্তাব অনুসারে সোভিয়েত ইউনিয়নের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অনুরূপ চীনে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড বা সম্মুখগামী মহালম্ফ গৃহীত হয়। ১৯৫৮ সালের শুরুতে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড অন্তত বাহ্যিকভাবে অবিশ্বাস্য শিল্পায়ন ঘটিয়েছিল, তবে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দুর্ভিক্ষের কারণও হয়েছিল, যদিও প্রত্যাশিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে ব্যর্থ হয়। শীঘ্রই অনেকেই গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডকে মাও-এর অন্যতম বড় ভুল হিসেবে দেখতে শুরু করে, অবশেষে তাঁকে কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁর কিছু প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার মূল্য দিতে হয়।
আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সংশোধনবাদ-বিরোধিতা
১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে গণচীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বের দুটি বৃহত্তম কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। যদিও প্রাথমিকভাবে তারা পরস্পর আন্তরিক ছিল, নিকিতা ক্রুশ্চেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৯৫৬ সালে ক্রুশ্চেভ তাঁর পূর্বসূরি জোসেফ স্তালিন ও তাঁর নীতিসমূহের নিন্দা করেন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করেন। মাও ও অন্যান্য অনেক সিসিপি সদস্য এই পরিবর্তনগুলোর বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে এসব কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।[১২]:৪–৭
মাও বিশ্বাস করতেন যে ক্রুশ্চেভ একজন সংশোধনবাদী, যিনি মার্কসবাদী–লেনিনবাদী ধারণাগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলেছেন, যার ফলে মাও দাবি করেছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন পুঁজিবাদীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এর ফলে উভয় দেশের মাঝে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনের জাতিসংঘে যোগদানের বিষয়টিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করে এবং চীনকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করার অঙ্গীকার থেকে সরে আসে।[১২]:৪–৭
১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে মাও প্রকাশ্যে সংশোধনবাদের নিন্দা করেছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি ইঙ্গিত না করে মাও সোভিয়েতদের বলকান মিত্র যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট লিগের সমালোচনা করেছিলেন। পরিবর্তে, সোভিয়েত ইউনিয়নের চীনের বলকান মিত্র আলবেনিয়ার শ্রমিক দলের সমালোচনা করে।[১২]:৪–৭ ১৯৬৩ সালে সিসিপি নয়টি সমালোচনামূলক রচনাবলি প্রকাশ করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিন্দা করতে শুরু করে। তন্মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল ক্রুশ্চেভের জাল সাম্যবাদ এবং এ থেকে বিশ্বের ঐতিহাসিক শিক্ষার প্রতি, যেখানে মাও অভিযোগ করেছিলেন যে ক্রুশ্চেভ একজন সংশোধনবাদী এবং তাঁর কারণে পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধারের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।[১২]:৪–৭ ১৯৬৪ সালে একটি অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থানের ফলে ক্রুশ্চেভের পদচ্যুতিতে মাও ভীত হন, মূলত গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের পর তাঁর ক্ষয়প্রাপ্ত প্রতিপত্তির কারণে।[১২]:৪–৭
অন্যান্য সোভিয়েত পদক্ষেপ চীনে সম্ভাব্য পঞ্চম বাহিনীর উত্থান সম্পর্কে উদ্বেগ বৃদ্ধি করছিল।[১৩](p141) চীন–সোভিয়েত বিভক্তি পরবর্তী উত্তেজনার ফলে সোভিয়েত নেতারা চীনে রেডিও সম্প্রচারে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন "প্রকৃত কমিউনিস্টদের" সাহায্য করবে যাঁরা মাও ও তাঁর "ভুল পন্থা"কে উৎখাত করেছিল।[১৩](p141) উপরন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘর্ষ চীনা নেতৃত্বকে ভীত করে তোলে, তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন যে চীনের সমর্থন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভাব্য চীনা সম্পদ অনুসন্ধানের দিকে পরিচালিত করতে পারে।[১৩](p141)
পূর্বাভাস
গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড সম্পর্কীয় কার্যক্রম ব্যর্থ হওয়ায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা ঘটে। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ধনীক শ্রেণীর সদস্যদের বিতাড়নেও মাও চেষ্টা চালান। দল থেকে তাঁদেরকে বিতাড়িত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি সাম্যবাদী শিক্ষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এ আন্দোলনটি ১৯৬২ থেকে শুরু হয়ে ১৯৬৫ সালে শেষ হয়। একই সময়ে বিদ্যালয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হয় ও ছাত্রদের শিক্ষার পাশাপাশি কারখানা ও দলে কাজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ধীরে ধীরে ১৯৬৫ সালে লিন পিয়াও, চিয়াং চিং ও ছেন পোতার সমর্থন নিয়ে মাও ক্ষমতার দিকে যাত্রা করেন।[১]
ইতিহাস
মাওয়ের সমর্থক ও তেং শিয়াওফিংয়ের সমর্থকের কারণে কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে যায়। চীনের তরুণদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে লিটল রেড বুক নামে মাওয়ের বক্তব্যমালা প্রকাশ করেন।[১] তরুণদেরকে নিয়ে গঠিত রেড গার্ডও জনপ্রিয়তা পায়। তাঁরা মাওয়ের বক্তব্যগুলোকে সর্বত্র প্রচার করতে থাকেন। এছাড়াও তাঁরা মাওয়ের বিরুদ্ধবাদীদের মারধর করতে থাকে ও বাড়ি-ঘর, যাদুঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।[১৪] অনেক জায়গাতেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ও চীনে অরাজক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।[১] বিপ্লবকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি চীনে জোরপূর্বক অবস্থান করতে বাধ্য হন। তন্মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান লিও শাওছি, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব তেং শিয়াওফিং অন্যতম।[১৫]
উদ্দেশ্য
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী সংস্কৃতির জন্ম দেওয়া, প্রাচীন পুঁজিবাদী ও সামন্তীয় সংস্কৃতির বিলোপ সাধন করে সমগ্র সমাজে জ্ঞান ভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তির জাগরণ সৃষ্টি করা।[১৬] টেকসই সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণে সাংস্কৃতিক বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই তত্ত্বটি ভ্লাদিমির লেনিনের, এটিকে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে এক আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে সাংস্কৃতিক বিপ্লব তেমন অগ্রসর না হলেও পরবর্তীকালে চীনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।
পরবর্তী ঘটনাবলী
উত্তরণ যুগ
১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর হুয়া কুওফেং চীনের নেতা হন। যদিও ১৯৭৬ সালে হুয়া প্রকাশ্যে গ্যাং অফ ফোরকে নিন্দা করেছিলেন, তবুও তিনি মাও-যুগের নীতিগুলোকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য মাও-এর নাম আহ্বান করতে থাকেন। হুয়ার নেতৃত্ব "দুইটি যা কিছু" নামে পরিচিতি লাভ করে,[১৭] যেগুলো হলো, "যা কিছু নীতি সভাপতি মাও থেকে উদ্ভুত, আমাদের অবশ্যই তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে", এবং "যা কিছু নির্দেশনা সভাপতি মাও আমাদের দিয়েছিলেন, আমাদের অবশ্যই তা অনুসরণ করতে হবে"। তেং শিয়াওফিং-এর মতোই হুয়াও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তেং চীনের জন্য নতুন অর্থনৈতিক মডেলের প্রস্তাব করতে চেয়েছিলেন, এর বিপরীতে হুয়া ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত-পদ্ধতির পরিকল্পনার দিকে চীনা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।[১৮][১৯]
হুয়ার কাছে এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তেং শিয়াওফিং ছাড়া রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। ১০ অক্টোবর, তেং শিয়াওফিং ব্যক্তিগতভাবে হুয়াকে একটি চিঠি লেখেন যাতে তিনি রাষ্ট্র ও দলীয় বিষয়ে তাঁকে পুনরায় ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন; দলের প্রবীণরাও তেং-কে ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন। চারদিক থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী হুয়া ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে তেং-কে উপপ্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত করেন এবং পরে তাঁকে অন্যান্য বিভিন্ন পদে উন্নীত করা হয়, যলে তেং কার্যকরভাবে চীনের দ্বিতীয়-সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সে বছর আগস্টে বেইজিংয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১১ তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে (পদমর্যাদা ক্রমে) হুয়া কুওফেং, ইয়ে চিয়ানিং, তেং শিয়াওফিং, লি শিয়াননিয়ান এবং ওয়াং তংশিং-কে পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য হিসাবে নামকরণ করা হয়।[২০]
তেং শিয়াওফিং কর্তৃক সাংস্কৃতিক বিপ্লব প্রত্যাখ্যান
১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে তেং শিয়াওফিং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য সর্বপ্রথম "পোলুয়ান ফানচেং" ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯৭৮ সালের মে মাসে তেং তাঁর অভিভাবক হু ইয়াওপাং-কে ক্ষমতায় উন্নীত করার সুযোগটি গ্রহণ করেন। হু দৈনিক কুয়াংমিং-এ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি তেং-এর ধারণাটির প্রশংসা করার জন্য মাও-এর উদ্ধৃতিগুলোকে চতুরভাবে ব্যবহার করেন। এই নিবন্ধটি অনুসরণ করে, হুয়া তেং-এর সমর্থনে তাঁর সুর বদলাতে শুরু করেন। এরপর থেকে নানাভাবে মাওয়ের আন্দোলনগুলোর ব্যর্থতা এবং পোলুয়ান ফানচেং-এর ধারণাটিকে ন্যায্যতা দেওয়ার প্রয়াস চালাতে থাকেন তেং। সে বছর ১লা জুলাইয়ে তেং গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতার বিষয়ে ১৯৬২ সালে মাওয়ের আত্ম-সমালোচনা বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে একটি বর্ধিত শক্তির সমর্থনে, তেং প্রকাশ্যে হুয়া কুওফেং-এর "দুইটি যা কিছু"র ধারণাটিকে আক্রমণ করতে শুরু করেন।[১৭]
১৯৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ১১ তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেটি ছিল চীনের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভায় তেং "চিন্তার স্বাধীনতা"কে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং দলকে "প্রকৃত ঘটনা থেকে সত্য খোঁজার" এবং মতাদর্শগত মতবাদ ত্যাগ করার আহ্বান জানান। অধিবেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক সংস্কার যুগের সূচনা করে এবং তেং চীনের সর্বোচ্চ নেতা হন। হুয়া কুওফেং আত্ম-সমালোচনায় জড়িত হন এবং তাঁর "দুইটি যা কিছু"কে একটি ভুল বলে অভিহিত করেন। মাওয়ের বিশ্বস্ত মিত্র ওয়াং তংশিং-এরও সমালোচনা করা হয়। অধিবেশনে কমিউনিস্ট পার্টি তিয়ানানমেনের ঘটনার উপর এর রায়কে পালটে ফেলে। এছাড়াও পার্টি বিপ্লবের সময় অপমানিত প্রাক্তন চীনা রাষ্ট্রপতি লিউ শাওছির একটি বিলম্বিত রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের অনুমতি প্রদান করে।[২১] চীনের দশজন মার্শালের একজন এবং প্রথম জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফেং তেহুয়াই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন; তাঁকেও ১৯৭৮ সালে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন দেওয়া হয়।
১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম অধিবেশনে, ফেং চেন, হে লং এবং অন্যান্য নেতাদের যাঁদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নির্মূল করা হয়েছিল তাঁদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। হু ইয়াওফাং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সম্পাদকীয় পরিষদের প্রধান হন। সে বছর সেপ্টেম্বরে, হুয়া কুওফেং পদত্যাগ করেন এবং দেংয়ের আরেক সহযোগী চাও সি ইয়াংকে চীনের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়। তেং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা বাস্তববাদী সংস্কারকদের নতুন প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছিল, যাঁরা পোলুয়ান ফানচেং-এর সময়কালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নীতিগুলিকে অনেকাংশে পালটে দিয়েছিলেন। ১৯৭৮ থেকে কয়েক বছরের মধ্যে, তেং শিয়াওফিং ও হু ইয়াওপাং সাংস্কৃতিক বিপ্লবে ৩০ লাখের বেশি "অন্যায়, মিথ্যা, ভ্রান্ত" মামলায় অভিযুক্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা করেছিলেন।[২২] বিশেষ করে ১৯৮০ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বেইজিংয়ে গ্যাং অফ ফোর-এর বিচার হয়েছিল এবং আদালত জানায় যে ৭,২৯,৫১১ জন লোক গ্যাং দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিল, যাঁদের মধ্যে ৩৪,৮০০ জন মারা গেছে বলে জানা গেছে।[২৩]
১৯৮১ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি একটি প্রস্তাব পাস করে এবং ঘোষণা করে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব "গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণ, দেশ ও দলের জন্য সবচেয়ে গুরুতর আঘাত এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির জন্য দায়ী।"[৪][৫][৬]
প্রভাব
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে চীনে অনেক ধরনের সমস্যার তৈরি হয়। কলকারখানায় নিযুক্ত কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় উৎপাদন বেশ কমতে থাকে। এছাড়াও কর্মরত ব্যক্তিরা জানতো না যে কী কারণে তাঁরা বিপ্লবে সামিল হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থায়ও এর প্রভাব পড়ে। অনেক রেলগাড়ি দেশের সর্বত্র রেড গার্ডদের জন্য ব্যবহার করা হয়। বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলীদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় কিংবা খামারের কাজে নিযুক্ত করা হয়। এর ফলে তাঁদের জ্ঞান বিফলে যায়। এ ধরনের পরিবর্তনের কারণে চীনের শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন ১৪ শতাংশে নেমে যায়।[২৪]
শিক্ষা
অনেক চীনাদের শিক্ষাজীবন দ্রুততম সময়ে শেষ হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানের তুলনায় শহরগুলোতেই শিক্ষা পদ্ধতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও, 'তরুণদেরকে প্রেরণ করো' শিরোনামে পরিকল্পনা গ্রহণ করায় শিক্ষাজীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়। ঐ পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীদেরকে শহর থেকে দেশের সর্বত্র প্রেরণ করা হয়েছিল।[২৭]
কুটনৈতিক সম্পর্ক
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পাশাপাশি কমিউনিস্ট মতাদর্শ রপ্তানি করে, পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাম্যবাদী দলগুলোকে সমর্থন দেয়–ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, মিয়ানমার এবং বিশেষ করে কম্বোডিয়ার খেমার রুজ, যা কম্বোডিয়ার গণহত্যার জন্য দায়ী।[২৮] এটি মনে করা হয় যে খেমার রুজের প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের অন্তত ৯০% চীন থেকে এসেছিল এবং কেবল ১৯৭৫ সালেই ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সুদ-মুক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য ও ২ কোটি মার্কিন ডলার চীন থেকে উপহার হিসেবে দিতে দেখা যায়।[২৯] সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে যে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় তা ১৯৭০-এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামকে সহায়তা করার জন্য চীনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে এক সময়ের মিত্র দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়ে যায়।[৩০]
সেসময় চীনের সাথে কূটনৈতিক বা অর্ধ-কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী ৪০ টিরও বেশি দেশের মধ্যে প্রায় ৩০ টি দেশ চীনের সাথে কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়ে–এমনকি মধ্য আফ্রিকা, ঘানা ও ইন্দোনেশিয়াসহ কিছু দেশ চীনের সাথে তাঁদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।[৩১]
- রেড গার্ডরা বেইজিংয়ে ব্রিটিশ লিগেশনে প্রবেশ করে এবং তিনজন কূটনীতিক ও একজন সচিবকে মারধর করে, পরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পিআরসি কর্তৃপক্ষ এই কর্মের নিন্দা জানাতে রাজি হয় নি। সাংহাইয়ে একটি পৃথক ঘটনায় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল, কারণ পিআরসি কর্তৃপক্ষ সেখানে অফিসটি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।[৩২]
- রেড গার্ডরা সোভিয়েত, ফরাসি ও ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস অবরোধ করে এবং মঙ্গোলীয় রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।[৩৩]
- বিদেশে চীনা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর সাহায্যে সিসিপি মাও-এর জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা শুরু করে, যেমন স্থানীয় নাগরিকদের কাছে লিটল রেড বুক ও সভাপতি মাও ব্যাজ পাঠানো হয়।[৩১]
- চীনের অনেক রাষ্ট্রদূত ও কনসালকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবে জড়িত থাকার জন্য চীনে ফেরত ডাকা হয়েছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ২য় পররাষ্ট্রমন্ত্রী চেন ইয়ের মতো সিনিয়র কর্মকর্তারা বিপ্লবের সময় নির্যাতিত হয়েছিলেন।[৩৪][৩৫]
- অনেক বিদেশী অতিথিকে অন্যান্য চীনা নাগরিকদের মতোই মাও সেতুং-এর ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে, লিটল রেড বুক ধরে রেখে এবং মাওকে "সম্মান" করতে "বাধ্য" করা হয়েছিল।[৩৬]
মূল্যায়ন
মে, ১৯৬৬ সালে ধীরে ধীরে শুরু হওয়া এ বিপ্লবটি ১৯৬৯ সালে শেষ হয়। নবম জাতীয় পার্টি কংগ্রেসের এক সভায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তা স্বত্ত্বেও ১৯৭১ সালে সামরিক কর্মকর্তা লিন পিয়াওয়ের দেহাবসান পর্যন্ত এর প্রভাব সক্রিয় ছিল। মাওয়ের দেহাবসানের পর গ্যাং অফ ফোরকে ১৯৭৬ সালে গ্রেফতার করা হয়। ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে সংস্কারপন্থী তেং শিয়াওফিং চীনের নেতৃত্বে আসার পর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত মাওয়ের নীতিগুলো অপসারণ কার্যের সূচনা ঘটে, যা পোলুয়ান ফানচেং নামে পরিচিত। ১৯৮১ সালে পার্টি ঘোষণা করে যে, সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীন গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দল, দেশ ও ব্যক্তিকে অনেক পিছিয়ে নিয়েছে ও গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।[৩৭]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
- "Li Peng, the 'Butcher of Tiananmen,' was 'Ready to Die' to Stop the Student Turmoil". AsiaNews.it. 2003. Retrieved August 21, 2011.
- ALLÈS, ÉLISABETH; CHÉRIF-CHEBBI, LEÏLA; HALFON, CONSTANCE-HÉLÈNE (২০০৩)। Translated from the French by Anne Evans। "Chinese Islam: Unity and Fragmentation" (পিডিএফ)। Archives de Sciences Sociales des Religions। Keston Institute। 31 (1): 7–35। আইএসএসএন 0963-7494। ডিওআই:10.1080/0963749032000045837। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৪।
- Barnouin, Barbara and Yu Changgen. Zhou Enlai: A Political Life. Hong Kong: Chinese University of Hong Kong, 2006. আইএসবিএন ৯৬২-৯৯৬-২৮০-২. Retrieved on March 12, 2011.
- Chan, A; Children of Mao: Personality Development and Political Activism in the Red Guard Generation; University of Washington Press (1985)
- Chen, Jack (১৯৭৫)। Inside the Cultural Revolution। Scribner। আইএসবিএন 0-02-524630-5।
- Clark, Paul (২০০৮)। The Chinese Cultural Revolution: A History। Cambridge and New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-87515-8।
- Ewing, Kent. (2011, June 4). "Mao's Army on the Attack". Asia Times Online. Asia Times Online (Holdings). Retrieved at <http://www.atimes.com/atimes/China/MF04Ad01.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে> on June 16, 2011.
- Fong Tak-ho. (2006, May 19). "Cultural Revolution? What Revolution?" Asia Times Online. Asia Times Online (Holdings). Retrieved at <http://www.atimes.com/atimes/China/HE19Ad01.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জুন ২০১১ তারিখে> on June 15, 2011.
- Gao, Mobo (২০০৮)। The Battle for China's Past: Mao and the Cultural Revolution। London: Pluto Press। আইএসবিএন 978-0-7453-2780-8। Retrieved at <https://web.archive.org/web/20121103094507/http://www.strongwindpress.com/pdfs/EBook/The_Battle_for_Chinas_Past.pdf> on September 2, 2012
- Lee, Hong Yong (১৯৭৮)। The Politics of the Chinese Cultural Revolution। Berkeley: University of California Press। আইএসবিএন 0-520-03297-7।
- Richard King, সম্পাদক (২০১০)। Art in Turmoil: The Chinese Cultural Revolution, 1966-76। University of British Columbia Press। আইএসবিএন 978-0774815437।
- MacFarquhar, Roderick and Schoenhals, Michael (২০০৬)। Mao's Last Revolution। Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-02332-1।
- Solomon, Richard H. (১৯৭১)। Mao's Revolution and the Chinese Political Culture। Berkeley and Los Angeles: University of California Press।
- Spence, Jonathan D. (1999). The Search for Modern China, New York: W.W. Norton and Company. আইএসবিএন ০-৩৯৩-৯৭৩৫১-৪.
- Thurston, Anne F. (১৯৮৮)। Enemies of the People: The Ordeal of Intellectuals in China's Great Cultural Revolution। Cambridge: Harvard University Press।
- Teiwes, Frederick C. & Sun, Warren. (2004). "The First Tiananmen Incident Revisited: Elite Politics and Crisis Management at the End of the Maoist Era". Pacific Affairs. Vol. 77, No. 2, Summer. 211–235. Retrieved from <http://www.jstor.org/stable/40022499> on March 11, 2011.
- Zhao Ziyang. Prisoner of the State: The Secret Journal of Premier Zhao Ziyang. Trans & Ed. Bao Pu, Renee Chiang, and Adi Ignatius. New York: Simon and Schuster. 2009. আইএসবিএন ১-৪৩৯১-৪৯৩৮-০
আরও পড়ুন
সাধারণ
- Michael Schoenhals, ed., China's Cultural Revolution, 1966–1969: Not a Dinner Party (Armonk, N.Y.: M.E. Sharpe, 1996. An East Gate Reader). xix, 400p. আইএসবিএন ১-৫৬৩২৪-৭৩৬-৪.
- Richard Curt Kraus. The Cultural Revolution: A Very Short Introduction. New York: Oxford University Press, Very Short Introductions Series, 2012. xiv, 138p. আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৯৭৪০৫৫০.
- MacFarquhar, Roderick and Schoenhals, Michael. Mao's Last Revolution. Harvard University Press, 2006. আইএসবিএন ০-৬৭৪-০২৩৩২-৩
- Jiaqi Yan, Gao Gao (১৯৯৬)। Turbulent Decade: A History of the Cultural Revolution (1st সংস্করণ)। University of Hawai'i Press। আইএসবিএন 978-0824816957।
- Morning Sun, "Bibliography," Morningsun.org Books and articles of General Readings and Selected Personal Narratives on the Cultural Revolution.
নির্দিষ্ট
- Richard King, সম্পাদক (২০১০)। Art in Turmoil: The Chinese Cultural Revolution, 1966-76। University of British Columbia Press। আইএসবিএন 978-0774815437।
- Andreas, Joel (2009). Rise of the Red Engineers: The Cultural Revolution and the Origins of China's New Class. Stanford: Stanford University Press.
- Chan, Anita. 1985. Children of Mao: Personality Development and Political Activism in the Red Guard Generation. Seattle: University of Washington Press.
- Leese, Daniel (2011). Mao Cult: Rhetoric and Ritual in the Cultural Revolution. Cambridge: Cambridge University Press.
- Zheng Yi. Scarlet Memorial: Tales Of Cannibalism In Modern China. Westview Press, 1998. আইএসবিএন ০-৮১৩৩-২৬১৬-৮
- Yang, Guobin. 2000. China's Red Guard Generation: The Ritual Process of Identity Transformation, 1966–1999. PhD diss., New York University.
- Fox Butterfield, China: Alive in the Bitter Sea, (1982, revised 2000), আইএসবিএন ০-৫৫৩-৩৪২১৯-৩, an oral history of some Chinese people's experience during the Cultural Revolution.
- Chang, Jung and Halliday, Jon. Mao: The Unknown Story. Jonathan Cape, London, 2005. আইএসবিএন ০-২২৪-০৭১২৬-২
- Xing Lu (২০০৪)। Rhetoric of the Chinese Cultural Revolution: The Impact on Chinese Thought, Culture, and Communication। University of South Carolina Press। আইএসবিএন 978-1570035432।
- Ross Terrill,The White-Boned Demon: A Biography of Madame Mao Zedong Stanford University Press, 1984 আইএসবিএন ০-৮০৪৭-২৯২২-০; rpr. New York: Simon & Schuster, 1992 আইএসবিএন ০-৬৭১-৭৪৪৮৪-৪.
- Wu, Yiching (2014). The Cultural Revolution at the Margins: Chinese Socialism in Crisis. Cambridge, MA: Harvard University Press.
অন্যান্য
- Simon Leys (penname of Pierre Ryckmans) Broken Images: Essays on Chinese Culture and Politics (1979). আইএসবিএন ০-৮০৫২-৮০৬৯-৩
- Simon Leys. Chinese Shadows (1978). আইএসবিএন ০-৬৭০-২১৯১৮-৫; আইএসবিএন ০-১৪-০০৪৭৮৭-৫.
- Simon Leys. The Burning Forest: Essays on Chinese Culture and Politics (1986). আইএসবিএন ০-০৩-০০৫০৬৩-৪; আইএসবিএন ০-৫৮৬-০৮৬৩০-৭; আইএসবিএন ০-৮০৫০-০৩৫০-৯; আইএসবিএন ০-৮০৫০-০২৪২-১.
- Simon Leys. The Chairman's New Clothes: Mao and the Cultural Revolution (1977; revised 1981). আইএসবিএন ০-৮৫০৩১-২০৮-৬; আইএসবিএন ০-৮০৫২-৮০৮০-৪; আইএসবিএন ০-৩১২-১২৭৯১-X; আইএসবিএন ০-৮৫০৩১-২০৯-৪; আইএসবিএন ০-৮৫০৩১-৪৩৫-৬ (revised ed.).
- Liu, Guokai. 1987. A Brief Analysis of the Cultural Revolution. edited by Anita Chan. Armonk, N.Y.: M. E. Sharpe.
- Sijie Dai, translated by Ina Rilke, Balzac and the Little Chinese Seamstress (New York: Knopf: Distributed by Random House, 2001). 197p. আইএসবিএন ০-৩৭৫-৪১৩০৯-X
- Xingjian Gao, translated by Mabel Lee, One Man's Bible: A Novel (New York: HarperCollins, 2002). 450p.
- Hua Gu, A Small Town Called Hibiscus (Beijing, China: Chinese Literature: distributed by China Publications Centre, 1st, 1983. Panda Books). Translated by Gladys Yang. 260p. Reprinted: San Francisco: China Books.
- Hua Yu, To Live: A Novel (New York: Anchor Books, 2003). Translated by Michael Berry. 250p.
- Ying Chang Compestine, Revolution Is Not a Dinner Party : A Novel. (New York: Holt, 2007). আইএসবিএন ০৮০৫০৮২০৭৭. Young adult novel.
- Liu Ping, My Chinese Dream - From Red Guard to CEO (San Francisco, June 2012). 556 pages আইএসবিএন ৯৭৮০৮৩৫১০০৪০৩
- Nien Cheng, Life and Death in Shanghai (Grove, May 1987). 547 pages আইএসবিএন ০-৩৯৪-৫৫৫৪৮-১
- Jung Chang, Wild Swans: Three Daughters of China (New York: Simon & Schuster, 1991). 524 p. এলসিসিএন ৯১-২০৬৯৬
- Heng Liang Judith Shapiro, Son of the Revolution (New York: Knopf : Distributed by Random House, 1983).
- Yuan Gao, with Judith Polumbaum, Born Red: A Chronicle of the Cultural Revolution (Stanford, CA: Stanford University Press, 1987).
- Jiang Yang Chu translated and annotated by Djang Chu, Six Chapters of Life in a Cadre School: Memoirs from China's Cultural Revolution [Translation of Ganxiao Liu Ji] (Boulder: Westview Press, 1986).
- Bo Ma, Blood Red Sunset: A Memoir of the Chinese Cultural Revolution (New York: Viking, 1995). Translated by Howard Goldblatt.
- Guanlong Cao, The Attic: Memoir of a Chinese Landlord's Son (Berkeley: University of California Press, 1996).
- Ji-li Jiang, Red Scarf Girl: A Memoir of the Cultural Revolution (New York: HarperCollins, 1997).
- Anchee Min, Red Azalea (New York: Pantheon Books, 1994). আইএসবিএন ১-৪০০০-৯৬৯৮-৭.
- Rae Yang, Spider Eaters : A Memoir (Berkeley: University of California Press, 1997).
- Weili Ye, Xiaodong Ma, Growing up in the People's Republic: Conversations between Two Daughters of China's Revolution (New York: Palgrave Macmillan, 2005).
- Lijia Zhang, "Socialism Is Great": A Worker's Memoir of the New China (New York: Atlas & Co, Distributed by Norton, 2007).
- Emily Wu, Feather in the Storm (Pantheon, 2006). আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৭৫-৪২৪২৮-১.
- Xinran Xue, The Good Women of China: Hidden Voices (Chatto & Windus, 2002). Translated by Esther Tyldesley. আইএসবিএন ০-৭০১১-৭৩৪৫-৯
- Ting-Xing Ye, Leaf In A Bitter Wind (England, Bantam Books, 2000)
- Zhang Xianliang, Grass Soup, আইএসবিএন ০-৭৪৯৩-৯৭৭৪-৮
বহিঃসংযোগ
- Encyclopædia Britannica. The Cultural Revolution
- History of The Cultural Revolution ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে
- Chinese propaganda posters gallery (Cultural Revolution, Mao, and others)
- Hua Guofeng's speech to the 11th Party Congress, 1977
- Morning Sun – A Film and Website about Cultural Revolution and the photographs of the subject available from the film's site.
- Memorial for Victims of the Chinese Cultural Revolution
- "William Hinton on the Cultural Revolution" by Dave Pugh
- "Student Attacks Against Teachers: The Revolution of 1966" by Youqin Wang
- A Tale of Red Guards and Cannibals by Nicholas D. Kristof. The New York Times, January 6, 1993.