সম্মুখগামী মহালম্ফ
সম্মুখগামী মহালম্ফ (চীনা: 大跃进; ফিনিন: Dà yuè jìn তা ইউয়ে চিন) বা গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড (ইংরেজি: Great Leap Forward) ছিল ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সভাপতি মাও সে তুং-এর নেতৃত্বে পরিচালিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরপ্রত্যাশী অভিযান। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল চীনকে দ্রুত একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা। এই রূপান্তরের মাধ্যম ছিল দ্রুত শিল্পায়ন এবং সমবায়ীকরণ। তবে অনেকে মনে করেন যে এই অভিযানের কারণেই চীনের মহাদুর্ভিক্ষ ঘটেছিল।
সম্মুখগামী মহালম্ফ | |||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 大跃进 | ||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 大躍進 | ||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | "Great Leap Forward" | ||||||||||||||||||||
|
এই যুগে চীনের গ্রামীণ জীবনের প্রধান যে পরিবর্তনগুলো ঘটে, তাঁর মধ্যে একটি ছিল ক্রমাগতভাবে বাধ্যতামূলক কৃষি সমবায়ীকরণের অবতারণা। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খামার করা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। যাঁরা ব্যক্তিগত খামার করত তাঁদেরকে নিপীড়ন করা হয়ে এবং "প্রতিবিপ্লবী" আখ্যা দেওয়া হয়। গ্রামীণ জনগণের উপর সামাজিক চাপ, জোড়পূর্বক শ্রম, কিংবা জনসম্মক্ষে প্রহসনমূলক বিচার ও সম্মানহানির মাধ্যমে নিয়মের কড়াকড়ি প্রয়োগ করা হয়।[১] গ্রামীণ শিল্পায়ন, যা ছিল অভিযানের মূল লক্ষ্যগুলোর একটি, "সম্মুখগামী মহালম্ফের ত্রুটিগুলির জন্য...ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়"[২] সম্মুখগামী মহালম্ফের বছরগুলোতে চীনে অর্থনৈতিক সংকোচন ঘটে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কেবল এই পর্বেই চীনের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল।[৩] রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ডোয়াইট পার্কিন্স যুক্তি দেন যে "বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগের পরে উৎপাদনে অত্যন্ত অল্প কিংবা শূন্য বৃদ্ধি ঘটেছিল...সংক্ষেপে বলতে গেলে, সম্মুখগামী মহালম্ফ ছিল খুবই খরুচে একটি বিপর্যয়।"[৪]
অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে সম্মুখগামী মহালম্ফের ফলে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।[৫] নিম্নপক্ষে ১ কোটি ৮০ লক্ষের মৃত্যু হয়, তবে ইউ শিকুয়াং-এর বিস্তৃত গবেষণা অনুযায়ী এই কর্মসূচির ফলে চীনে ৫ কোটি ৫০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়।[৬] ইতিহাসবিদ ফ্রাঙ্ক ডিকোটারের মতে "দমনপীড়ন, সন্ত্রাস ও সঙ্ঘবদ্ধ জুলুম ছিল সম্মুখগামী মহালম্ফের ভিত্তি" এবং এর কারণে "মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী গণহত্যা" সংঘটিত হয়েছিল।[৭]
১৯৬০ সালের মে ও ১৯৬২ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনগুলোতে সম্মুখগামী মহালম্ফের ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়াগুলো অধ্যয়ন করা হয় এবং মাও সে তুং-এর সমালোচনা করা হয়। লিউ শাওছি ও তেং শিয়াওফিং-এর মতো পার্টির মধ্যপন্থী সদস্যরা ক্ষমতায় আরোহণ করেন এবং সভাপতি মাও-কে দলের ভেতর থেকেই ক্ষমতার প্রান্তে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় মাও ১৯৬৬ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। মাও-এর প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা চীনের মহাদুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেন এবং এটা যে সম্মুখগামী মহালম্ফের কারণে ঘটেছিল তাও অস্বীকার করেন।[৮] তাদের মতে দ্রুত সরকারি শিল্পায়নের যে লক্ষ্য ছিল, এই অভিযানটি সেই লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়।