অনিদ্রা

অনিদ্রা হলো একটি ঘুমের ব্যাধি যাতে মানুষের ঘুমে সমস্যা হয়। [১] অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়তে বা ইচ্ছামত ঘুমাতে অসুবিধা হয়। [৬][৭] এক্ষেত্রে সাধারণত দিনের বেলায় ঘুম, কম শক্তি, খিটখিটে, এবং বিষণ্ণ মেজাজ পরিলক্ষিত হয়। [১] এর ফলে সড়ক গাড়ি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সেইসাথে কোনো কাজে ফোকাস করতে এবং শেখতে সমস্যা হতে পারে। [১] অনিদ্রা স্বল্পমেয়াদী হতে পারে। কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে বা দীর্ঘ মেয়াদী যেমন এক মাসের বেশিও স্থায়ী হতে পারে। [১]

অনিদ্রা
প্রতিশব্দনিদ্রাহীনতা, ঘুমে ব্যাঘাত
১৪ শতাব্দীতে অঙ্কিত একজন অনিদ্রার রোগী
উচ্চারণ
বিশেষত্বমনোরোগবিদ্যা, ঘুমের ওষুধ
লক্ষণঘুমাতে সমস্যা, দিবালোকে ঘুম, শক্তিহীনতা, খিটখিটে স্বভাব, অবসাদগ্রস্ত[১]
জটিলতাসড়ক গাড়ি দুর্ঘটনা [১]
কারণঅজানা, মানসিক চাপ, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, হাইপারথাইরয়েডিজম, হৃদ শূল , বিষাদগ্রস্থতা এবং অন্যান্য[২]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিলক্ষণের উপর নির্ভর করে, ঘুম বিশ্লেষণ[৩]
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়ঘুমাতে দেরি হওয়া,ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, মনোরোগ[৪]
চিকিৎসাআচরণমূলক থেরাপি,ঘুমের ওষুধ
সংঘটনের হার~২০%[৫][৬]

অনিদ্রা এককভাবে বা অন্য সমস্যার পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘটতে পারে। [২] অনিদ্রা হতে পারে এমন অবস্থার মধ্যে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক চাপ, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, হাইপারথাইরয়েডিজম, বুকজ্বালা, মেনোপজ, কিছু ডাক্তারি ঔষধ, ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল । [৫][২] অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে রাতে কাজ করা এবং নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত[৬] ঘুমের অভ্যাস এবং অন্তর্নিহিত কারণগুলি সন্ধান করার জন্য একটি পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করা হয়। [৩] কারো ঘুমের বিশ্লেষণ করে অন্তর্নিহিত ঘুমের ব্যাধির সন্ধান করা যেতে পারে। [৩] দুটি প্রশ্ন দিয়ে স্ক্রীনিং করা যেতে পারে: "আপনি কি ঘুমাতে অসুবিধা অনুভব করেন?" এবং "আপনার কি ঘুমিয়ে পড়তে বা ঘুমাতে অসুবিধা হয়?" [৬]

লক্ষণ ও উপসর্গ

অনিদ্রার সম্ভাব্য জটিলতা। [৮]

অনিদ্রার লক্ষণঃ [৯]

  • আরামদায়ক ঘুমের অবস্থান খুঁজে পেতে অসুবিধা এবং ঘুমাতে অসুবিধা
  • রাতে জেগে থাকা, ঘুমাতে না পারা এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা
  • দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, মনে রাখতে অসুবিধা
  • দিনের বেলা ঘুম, বিরক্তি, বিষণ্নতা বা উদ্বেগ
  • দিনের বেলায় ক্লান্ত বোধ করা বা শক্তি কম থাকা [১০]
  • কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা
  • খিটখিটে হওয়া, আক্রমণাত্মক বা আবেগপ্রবণ আচরণ করা[১১]

পূর্বাভাস

২০০৪ সালের একটি পরিসংখ্যান। এতে প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে অনিদ্রার হার দেখানো হয়েছে।

কারন

অনিদ্রার লক্ষণ :

  • ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঊর্ধ্ব শ্বসনতন্ত্রে বাতাসের চলাচলে সমস্যা[১২]
  • নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, গুল্ম, ক্যাফিন, নিকোটিন, কোকেইন, অ্যাম্ফিটামাইন, মিথাইলফেনিডেট, অ্যারিপিপ্রাজোল, এমডিএমএ, মোডাফিনিল, বা অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণ। এছাড়াও সাইকোঅ্যাক্টিভ ড্রাগের ব্যবহার[১৩]
  • অ্যালকোহল এবং অন্যান্য সেডেটিভের ব্যবহার বা প্রত্যাহার, যেমন বিষন্নতা-বিরোধী ওষুধ এবং বেনজোডিয়াজেপাইনসের মতো ঘুমের ওষুধ[১৩]
  • ব্যথা-উপশমকারী ওপিওয়েডের ব্যবহার বা প্রত্যাহার[১৩]
  • হৃদরোগ[১৪]
  • রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম, যা অনিদ্রা সৃষ্টি করতে পারে[১৫]
  • পর্যায়ক্রমিক অঙ্গ আন্দোলন ব্যাধি (পিএলএমডি), যা ঘুমের সময় ঘটে এবং উত্তেজনার কারণে হতে পারে।
  • ব্যথা, শরীরের কোনো অংশে আঘাতের ফলে একজন ব্যক্তি ঘুমানোর সময় একটি আরামদায়ক অবস্থান খুঁজে পেতে সমস্যা হতে পারে।
  • হরমোন শিফট যেমন ঋতুস্রাবের আগে এবং রজোনিবৃত্তির সময়
  • দৈনন্দিন ঘটনা যেমন ভয়, চাপ, উদ্বেগ, মানসিক উত্তেজনা, কাজের সমস্যা, আর্থিক চাপ ইত্যাদি
  • অন্ত্রের সমস্যা যেমন অম্বল বা কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রক্রিয়া

অনিদ্রা ব্যখ্যা করার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক এবং শারীরবৃত্তীয় দুটি প্রধান মডেল বিদ্যমান। জ্ঞানভিত্তিক মডেলের মতে, কোনও ব্যক্তিকে ঘুমিয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে অনুধ্যান এবং হাইপারঅ্যারোসাল অবদান রাখে। যা ব্যক্তিকে ইনসমনিয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

শারীরবৃত্তীয় মডেলটি অনিদ্রাগ্রস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাপ্ত তিনটি প্রধান ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। প্রথমত, মূত্রে কর্টিসল এবং ক্যাটেকোলামাইনের পরিমাণ বৃদ্ধি ও HPA অক্ষ এবং উত্তেজনার বর্ধিত ক্রিয়াকলাপ; দ্বিতীয়ত, জাগরণের সময় সর্বোপরি সেরিব্রাল গ্লুকোজের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে NREM ঘুমের সময় বৃদ্ধি; এবং পরিশেষে, অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পূর্ণ শরীরের বিপাক এবং হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি। একসাথে নেওয়া এই সমস্ত ফলাফলগুলো উত্তেজনা সিস্টেম, জ্ঞানভিত্তিক সিস্টেম এবং HPA অক্ষের একটি ডিজিগুলেশনের পরামর্শ দেয়। যা সমন্বিতভাবে ইনসমনিয়ায় অবদান রাখতে পারে।[১৬]যাইহোক, হাইপারঅ্যারোসাল অনিদ্রার ফলাফল, বা কারণ কিনা তা এখনো অজানা। ইনসমনিয়া নিয়ে গবেষণায়, নিবারক নিউরোট্রান্সমিটার GABA এর পরিবর্তিত মাত্রা পাওয়া গেছে। অনিদ্রা, ঘুমের উপর সার্কেডিয়ান নিয়ন্ত্রণ বা জাগ্রত নির্ভরশীল প্রক্রিয়া দ্বারা চালিত হয় কিনা তা নিয়ে গবেষণায় অসঙ্গতিপূর্ণ ফলাফল পাওয়া গেছে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যে যৌন হরমোনের পরিবর্তন বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ঘুমের ব্যাধির জন্য আংশিকভাবে দায়ী হতে পারে।[১৭]

রোগ নির্ণয়

এথেন্স অনিদ্রা স্কেল ব্যবহার করে অনিদ্রা পরিমাপ করা হয়। ঘুমের সাথে সম্পর্কিত আটটি পরামিতি ব্যবহার করে এই স্কেলে অনিদ্রা পরিমাপ করা হয়। অবশেষে একটি সামগ্রিক স্কেল হিসাবে উপস্থাপন করা হয় যা একজন ব্যক্তির ঘুমের প্যাটার্নকে মূল্যায়ন করে।[১৮]

প্রতিরোধ

অনিদ্রা প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য জ্ঞানভিত্তিক আচরণগত থেরাপি, ওষুধ, এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।[১৯][২০] পাশাপাশি কিছু কার্যকরী উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:

  • ন্যাপ এড়িয়ে চলা বা ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা
  • শয়নকালে ব্যথার চিকিৎসা
  • শোবার আগে বড় খাবার, পানীয়, অ্যালকোহল এবং নিকোটিন এড়িয়ে চলা
  • শয়নকক্ষটি অন্ধকার, শীতল রাখা। পাশাপাশি বিভিন্ন ডিভাইস যেমন ঘড়ি, সেল ফোন বা টেলিভিশন শোবার স্থান থেকে দূরে রাখা
  • নিয়মিত অনুশীলন বজায় রাখুন
  • ঘুমানোর আগে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ শিথিল করা

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ