অ্যান্টেনা

অ্যান্টেনা (ইংরেজি: antenna) বা এরিয়াল (ইংরেজি: aerial) বা আকাশ-তার বেতার, টেলিভিশন এবং রাডার ব্যবস্থাতে ব্যবহৃত একটি যন্ত্রাংশ যা অন্তর্মুখী বা বহির্মুখী তড়িচ্চুম্বকীয় বেতার তরঙ্গগুলিকে নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত করে। অ্যান্টেনা মূলত ধাতুর তৈরি হয় এবং এগুলি বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টেনাগুলি মাস্তুলের মত দেখতে হয়। অন্যদিকে মহাকাশে বহুদূরে অবস্থিত মহাজাগতিক বস্তুগুলি থেকে বিকিরিত বেতার তরঙ্গগুলি গ্রহণ করার জন্য বিশাল আকারের পরাবৃত্তিক প্রতিফলক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়।

একটি টেলিভিশন অ্যান্টেনা
একটি অর্ধতরঙ্গ ডাইপোল অ্যান্টেনার বিকিরণকারী রেডিও তরঙ্গের অ্যানিমেশন, যা তড়িতক্ষেত্রের রেখাগুলি দেখায়।

জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হাইনরিখ হের্‌ৎস প্রথম অ্যান্টেনাটি তৈরি করেন। ব্রিটিশ গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যা অনুসারে দৃশ্যমান আলো এক শ্রেণীর তড়িচ্চৌম্বকীয় তরঙ্গ যা বায়ু বা শূন্যমাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৮৮০-র দশকের শেষভাগে হের্‌ৎস এই তত্ত্বটি যাচাই করার লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক পরীক্ষা সম্পাদন করেন। হের্‌ৎস ঐ জাতীয় তরঙ্গের জন্য একটি সম্প্রচারক বা ট্রান্সমিটার যন্ত্র নির্মাণ করেন। যন্ত্রটিতে দুইটি সমতল, বর্গাকৃতি ধাতব পাত ছিল, যেগুলি প্রতিটি একটি দন্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল। দন্ডগুলি আবার অল্প দূরত্বে অবস্থিত কিছু ধাতব গোলকের সাথে সংযুক্ত। গোলকগুলির সাথে সংযুক্ত একটি আবেশন কুণ্ডলীর কারণে একটি বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ দুই গোলকের মধ্যে অবস্থিত শূন্যস্থানটি অতিক্রম করতে পারত এবং দন্ডগুলিতে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎপ্রবাহের সৃষ্টি করত। একটি তারের কুণ্ডলীর শূন্যস্থানের ভেতর দিয়ে স্ফুলিঙ্গ অতিক্রম করলে বোঝা যেত যে দূরবর্তী কোন বিন্দুতে কোনও তরঙ্গের আগমন ঘটেছে।ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী গুইলিয়েলমো মার্কোনি বেতার টেলিগ্রাফের মূল উদ্ভাবক ছিলেন। তিনি টেলিগ্রাফ বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনা নির্মাণ করেন। তিনি নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ সম্প্রচারের জন্য সুউচ্চ অ্যান্টেনার গুরুত্ব আবিষ্কার করেন। মার্কোনি ও অন্যান্যরা যে অ্যান্টেনাগুলি প্রথম দিকে নির্মাণ করেছিলেন, সেগুলির কার্যকর কম্পাঙ্ক অ্যান্টেনার আকার ও আকৃতির উপর নির্ভর করত। পরবর্তীতে একটি অসিলেটরের মাধ্যমে অ্যান্টেনার কম্পাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা যেত। অসিলেটরটি বেতার সংকেতটি উৎপাদন করত।

অ্যান্টেনার ইলেকট্রনিক প্রতীক

১৯২০-এর দশকে অনেকগুলি উপাদানকে একটি নিয়মতান্ত্রিক সারিতে (Array) সমন্বিত করে আরও শক্তিশালী অ্যান্টেনা নির্মাণ করা হয়। এর পরের দশকে তরঙ্গনির্দেশকের উন্নয়ন শুরু হলে ধাতব শিঙার অ্যান্টেনা তৈরি করা হয়; এগুলি খুবই উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার সংকেতের সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।

এর পরের বছরগুলিতে আরও বিভিন্ন ধরনের কাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টেনা উদ্ভাবন করা হয়। অ্যান্টেনাকে কেবলমাত্র তরঙ্গ সম্প্রচার কিংবা গ্রহণের জন্য বানানো হতে পারে। সম্প্রচারক অ্যান্টেনাকে সাধারণত গ্রাহক অ্যান্টেনার তুলনায় অনেক বেশি বৈদ্যুতিক শক্তি ধারণ করতে হয়। একটি সম্প্রচারক অ্যান্টেনাকে কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের তরঙ্গের জন্য নকশা করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ এম (অ্যামপ্লিচিউড মডুলেশন) বেতার সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ৫৩৫ থেকে ১৬০৫ কিলোহাটর্জ পর্যন্ত কম্পাঙ্কগুলি ব্যবহার করা হয়। এই কম্পাঙ্কগুলিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কয়েকশত মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে, ফলে অ্যান্টেনার আকার তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যদিকে এফ এম (ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন) সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ৮৮ থেকে ১০৮ মেগাহার্টজ পর্যন্ত কম্পাঙ্কগুলি ব্যবহার করা হয়, যেখানে তরঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিটার। এক্ষেত্রে অ্যান্টেনাকে সম্প্রচার ও গ্রহণ কাজের জন্য অনেক সঠিকভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয়।

অ্যান্টেনাগুলি একটি মাত্র তার বা দণ্ড দিয়ে তৈরি হতে পারে, যেগুলি বিভিন্ন আকৃতিতে বিন্যস্ত থাকতে পারে (দ্বিমেরুবিশিষ্ট, ফাঁস আকৃতির, কম্বুরেখা বা সর্পিলাকৃতির)। আবার অনেকগুলি উপাদানকে সারিবদ্ধভাবে (একটি রেখায় বা একটি সমতলে অবস্থিত বা ইলেকট্রনিকভাবে ঘূর্ণনক্ষম) বিন্যস্ত করে অ্যান্টেনা বানানো হতে পারে। আবার প্রতিফলক এবং প্রতিসরক (লেন্স) অ্যান্টেনাতে পরাবৃত্তাকার থালা ব্যবহার করে বেতার তরঙ্গের শক্তি সংগ্রহ ও কেন্দ্রীভূত করা হয় (প্রতিফলক দূরবীনে একই ভাবে পরাবৃত্তাকার দর্পণ বা আয়না ব্যবহার করে আলোকরশ্মি সংগ্রহ করা হয়)। দিকনির্দেশী অ্যান্টেনাগুলিকে এমনভাবে নকশা করা হয় যাতে তারা সংকেতের উৎসের দিকে সরাসরি তাক করা যায় এবং এগুলির মাধ্যমে দিক খুঁজে বের করা যায়।

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ