আদম
আদম বা অ্যাডাম (হিব্রু: אָדָם, আধুনিক: ʼAdam, টিবেরীয়: ʾĀḏām; আরামাইক: ܐܕܡ; আরবি: آدَم, প্রতিবর্ণীকৃত: ʾĀdam; গ্রিক: Ἀδάμ; লাতিন: Adam) আব্রাহামীয় ধর্ম এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখিত একজন ব্যক্তি। ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্ম অনুসারে তিনি ছিলেন প্রথম মানব। আব্রাহামীয় ধর্মসমূহের বর্ণনা মতে তিনি আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট প্রথম মানুষ ও নবি। মুসলমানরা তাকে হযরত আদম (আ:) হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। তার স্ত্রী ছিলেন প্রথম সৃষ্ট মানবী হাওয়া (হবা)।
আদম | |
---|---|
জন্ম | ৬ম দিনে তৈরি |
মৃত্যু | আনু. ৯৩০ সৃষ্টাব্দ |
দাম্পত্য সঙ্গী | বাইবেলীয়: হবা অবাইবেলীয়: লিলথ (হবার পূর্ববর্তী) |
সন্তান | বাইবেলীয়: কয়িন, হেবল ও শেথ (তিন পুত্র) অবাইবেলীয়: অবন, অসুরা ও অকলিমা (তিন কন্যা) |
আদম, অ্যাডাম | |
---|---|
পেশা | নবি |
সন্তান | ১৪০ জোড়া সন্তান ছিল |
পিতা-মাতা | বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী প্রথম মানুষ; সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি |
সৃজন ও পৃথিবীতে আগমন
আব্রাহামীয় ধর্মসমূহের বর্ণনা মতে আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তার বাম পাজরের হাড় থেকে প্রথম মানবী হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির পর তাকে বিভিন্ন জিনিসের নাম শেখানো হয়। আল্লাহ’র আদেশ অবমাননার শাস্তি হিসাবে তাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। পৃথিবীতে আদমই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি জানতেন তিনি কত বছর বাঁচবেন। সৃষ্টিকর্তা (ইসলামে আল্লাহ) তাকে বলেছিলেন, "তুমি সহস্র বছর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে।" জেনেসিসে ৯৩০ বছর বেঁচে থাকার কথা বর্ণিত। আদম ও হাওয়ার গর্ভে জাত দুই সন্তানের নাম হাবিল এবং কাবিল। মৃত্যুর পর তাকে মাটিতে দাফন করা হয়েছিল। তাদের কবর হেবরনে বা কুবাইস পাহাড়ে না অন্যত্র সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
বাইবেলে আদম
আদিপুস্তক ১:-
মানবজাতিকে নিয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টির সর্বশেষ হিসাবে মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বলে: "নর-স্ত্রী তিনি(ঈশ্বর) তাদের সৃষ্টি করেছেন, এবং তাদের আশীর্বাদ করেছেন এবং তাদের নাম আদম বলেছেন।" (আদিপুস্তক ৫: ২ সি)
ঈশ্বর মানবজাতিকে আশীর্বাদ করেন এবং আদেশ দেন "ফলশালী ও বহুগুণে বেড়ে ওঠো" এবং তাদের দান করে বলেন "সমুদ্রের মাছ, বাতাসের পাখি, গবাদি পশু এবং সমস্ত পৃথিবীর উপরে এবং সমস্ত লতানো জিনিসের উপরে তোমাদের কর্তৃত্ব দান করলাম যা পৃথিবীতে লম্বা হয়। "(আদিপুস্তক ১.২৬-২৭)।
আদিপুস্তক ২-
"ঈশ্বর 'আদম'(যার অর্থ একক পুরুষ মানুষ) গঠন করলেন মাটির ধুলাবালি থেকে এবং তাঁর নাকের মধ্যে জীবনের নিঃশ্বাস ফেললেন "(আদিপুস্তক ২) ঈশ্বর তখন এই প্রথম মানুষকে রাখলেন ইদনের উদ্যানে এবং তাকে বললেন যে, "বাগানের প্রতিটি গাছের ফল তুমি নির্দ্বিধায় খেতে পারো: তবে এই জ্ঞানের গাছের ফলটি অবশ্যই খাবে না: যেদিন তুমি তার ফল খাবে সেদিন তুমি অবশ্যই মারা যাবে! "(আদিপুস্তক ২:১৬)
ঈশ্বর বোধ করেলেন যে "লোকটির একা থাকা ভাল নয়" (আদিপুস্তক ২:১৮) এবং তাই কিছু প্রাণী আদমের কাছে নিয়ে আসে। সে তাদের নাম দেয়, কিন্তু সমস্ত প্রাণীর মধ্যে তাঁর কোনও সহকর্মী খুঁজে পাওয়া যায় নি! (আদিপুস্তক)
আদম যখন গভীর নিদ্রামগ্ন থাকে ঈশ্বর তার থেকে একটি মহিলা(হবাকে) গঠন করেন (আদিপুস্তক ২: ২১-২২), এবং আদম জেগে উঠে তাকে তাঁর সঙ্গিনী হিসাবে অভিবাদন জানায়।
আদিপুস্তক ৩ (পতনের গল্প):
একটি সর্প সেই মহিলাকে(আদমের সঙ্গিনী হবা) ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করতে এবং জ্ঞানের গাছের ফল খেতে প্ররোচিত করে, যা জ্ঞান দেয়। মহিলা আদমকে অনুরূপভাবে কাজটি করার জন্য রাজি করে, যার পরে তারা জ্ঞানবৃক্ষের ফলটি খায়। অতঃপর তার তাদের নগ্নতার বিষয়ে সচেতন হয় এবং গাছের পাতা দ্বারা নিজেদের আচ্ছাদন করে এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আড়াল করে। ঈশ্বর আদমকে প্রশ্ন করলে তিনি হবাকে দোষ দেয়। প্রথমে সর্পের উপরে ঈশ্বর রায় পাঠান। ফলটি হবার পেটে যাবার জন্য নিন্দা করেন। তারপরে তার সাজা হিসেবে তাকে সন্তান প্রসবের দায়িত্ব দেন এবং পরাধীনতার ব্যথার নিন্দা করে। অবশেষে আদমকে বলেন তুমি তোমার খাদ্যের জন্য পৃথিবীতে কাজ করবে এবং শ্রমের জন্য নিন্দিত হবে এবং ফিরে আসেন তার সাজা স্বর্গমৃত্যুর উপর। অতঃপর ঈশ্বর পুরুষ ও স্ত্রীকে ইদনের উদ্যান থেকে বের করে দেন,যাতে তারা জীবন বৃক্ষকে না খায় এবং না অমর হয়ে যায়।
ইসলামে আদম
আদম চূড়া
আদম পাহাড় বা আদম চূড়া শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে শ্রীপাড়া প্রদেশে অবস্থিত একটি পবিত্র চূড়া। এই চূড়ায় একটি পায়ের ছাপ আছে যার দৈর্ঘ্য ৫' ৭ এবং প্রস্থ ২' ৬। মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস পৃথিবীর আদিমানব জাতির আদিপিতা হজরত আদম (আঃ) নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের কারণে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক স্বর্গ/জান্নাত থেকে বিতাড়িত হন এবং এখানে প্রথম পৃথিবীতে নামেন। মুসলমানদের মতে, আদম ৩০' লম্বা ছিলেন। আদম পৃথিবীতে এসে চরম অনুতপ্ত হন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ এক পায়ে এক হাজার বছর দাড়িয়ে থাকেন এবং কান্নাকাটি করতে থাকেন। তার ফলস্বরূপ এখানে পবিত্র পায়ের পদচিহ্নের দাগ পড়ে যায়।
বংশতালিকা
আদম | হাওয়া | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
কাবিল | হাবিল | শীষ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইনোক | ইনোশ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঈরদ | কৈনন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মহূয়ায়েল | মহললেল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মথূশায়েল | যেরদ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আদ | লেমক | সিল্লা | ইনোক | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যাবল | যূবল | তূবল-কায়িন | নয়মা | মথূশেলহ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
লেমক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
নূহ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সাম | হামম্ | ইয়াফেস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||