ইয়েভগেনি প্রিমাকভ

ইয়েভগেনি মাকসিমোভিচ প্রিমাকভ (রুশ: Евге́ний Макси́мович Примако́в, tr. Yevgeniy Maksimovich Primakov; ২৯ অক্টোবর ১৯২৯ – ২৬ জুন ২০১৫) ছিলেন একজন রুশ রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক যিনি ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েতের স্পিকার এবং ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রিমাকভ একজন বুদ্ধিজীবী (আরববিশারদ) ছিলেন এবং রুশ বিজ্ঞান আকাদেমির প্রেসিডিয়াম সদস‍্য ছিলেন।

ইয়েভগেনি প্রিমাকভ
Евгений Примаков
৩১তম রুশ প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ – ১২ মে ১৯৯৯
রাষ্ট্রপতিবোরিস ইয়েলৎসিন
প্রথম ডেপুটি
  • ইউরি মাসলিউকভ
  • ভাদিম গুস্তভ
  • সের্গেই স্তেপাশিন
পূর্বসূরীভিক্তর চের্নোমির্দিন (ভারপ্রাপ্ত)
উত্তরসূরীসের্গেই স্তেপাশিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৯ জানুয়ারি ১৯৯৬ – ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮
প্রধানমন্ত্রী
  • ভিক্তর চের্নোমির্দিন
  • সের্গেই কিরিয়েঙ্কো
পূর্বসূরীআন্দ্রেই কোজিরেভ
উত্তরসূরীইগর আইভানভ
সোভিয়েত অফ দ‍্য ইউনিয়নের সভাপতি
কাজের মেয়াদ
৩ জুন ১৯৮৯ – ৩১ মার্চ ১৯৯০
পূর্বসূরীইউরি খ্রিস্তোরাদনভ
উত্তরসূরীইভান লাপতেভ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মইয়েভগেনি মাকসিমোভিচ প্রিমাকভ
(১৯২৯-১০-২৯)২৯ অক্টোবর ১৯২৯
কিয়েভ, সোভিয়েত ইউক্রেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন
মৃত্যু২৬ জুন ২০১৫(2015-06-26) (বয়স ৮৫)
মস্কো, রাশিয়া
জাতীয়তারুশ
রাজনৈতিক দলসোভিয়েত ইউনিয়নের সাম‍্যবাদী দল
(১৯৫০-এর দশক–১৯৯১)
স্বতন্ত্র
(১৯৯১–১৯৯৮, ২০০২–২০১৫)
পিতৃভূমি – নিখিল রাশিয়া
(১৯৯৮–২০০২)
সন্তানআলেকসান্দর
নানা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীমস্কো প্রাচ‍্য অধ‍্যয়ন ইনস্টিটিউট
লোমোনোসভ মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ‍্যালয়
পেশারাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, কূটনীতিক, গুপ্তচর
পুরস্কারOrder "For Merit to the Fatherland" 1st class Order "For Merit to the Fatherland" 2nd class Order "For Merit to the Fatherland" 3rd class

Order of Prince Yaroslav the Wise 4th class Order Dostik 1st class
কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের সদস‍্যপদ
  • ১৯৮৯–১৯৯০: প্রার্থী সদস‍্য, ২৭তম পলিটব‍্যুরো
  • ১৯৮৯–১৯৯০: পূর্ণ সদস‍্য, ২৭তম কেন্দ্রীয় কমিটি

অন‍্যান‍্য পদমর্যাদা
  • ১৯৯১–১৯৯৬: পরিচালক, ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস
  • ১৯৯১–১৯৯১: পরিচালক, সেন্টার ফর স্ট্র‍্যাটেজিক রিসার্চ
  • ১৯৯১–১৯৯১: পরিচালক, কেজিবি প্রথম চীফ ডিরেক্টরেট
  • ১৯৮৯–১৯৯০: সভাপতি, সোভিয়েত অফ দ‍্য ইউনিয়ন

প্রাথমিক জীবন

প্রিমাকভ ১৯২৯ সালের ২৯ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রের কিয়েভ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সোভিয়েত জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসি শহরে তার শৈশব অতিবাহিত হয়। অধিকাংশ নথিপত্র অনুযায়ী, প্রিমাকভের পিতা ছিলেন একজন ইউক্রেনীয়। তার নামের পদবী ছিল নেমচেঙ্কো। তাকে গুলাগে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল এবং তিনি সেখানেই মৃত‍্যুবরণ করেন[১][২]। প্রিমাকভের মাতার নাম অ‍্যানা ইয়াকোভলেভনা প্রিমাকোভা, এবং তিনি পেশায় একজন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ছিলেন[৩][৪][৫][৬]। তিনি ইহুদি ছিলেন[৭]। বিখ‍্যাত মনোবিজ্ঞানী ইয়াকোভ কিরশেনব্লাত ছিলেন তার চাচাত ভাই।

প্রিমাকভ মস্কো ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত বেতারের সাংবাদিক এবং প্রাভদা পত্রিকার মধ‍্যপ্রাচ‍্য সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। এসময় তাকে প্রায়ই 'মাকসিম' সাংকেতিক নাম দিয়ে সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ কেজিবি মধ‍্যপ্রাচ‍্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোপন অভিযানে প্রেরণ করত[৮][৯]

প্রাথমিক রাজনৈতিক জীবন

সোভিয়েত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ইয়েভগেনি প্রিমাকভ

প্রিমাকভ ১৯৬২ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের জ‍্যেষ্ঠ গবেষক হিসেবে বৈজ্ঞানিক জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৭০ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত সোভিয়েত বিজ্ঞান আকাদেমির বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত বিজ্ঞান আকাদেমির প্রাচ‍্য অধ‍্যয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলেন। এসময় তিনি সোভিয়েত শান্তি কমিটির প্রথম উপ-সভাপতিও ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটে ফিরে আসেন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন[১০]

১৯৮৯ সালে প্রিমাকভ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং সোভিয়েত আইনসভার দুই কক্ষের একটি সোভিয়েত অফ দ‍্য ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের রাষ্ট্রপতি পরিষদের সদস‍্য ছিলেন[১০]‌। উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ইরাকে গর্বাচেভের বিশেষ দূত নিযুক্ত হন এবং ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেন[১১][১২]

বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থার প্রধান

১৯৯১ সালের ব‍্যর্থ অভ‍্যুত্থানের পর প্রিমাকভ কেজিবির প্রথম উপ-সভাপতি এবং কেজিবির প্রথম চীফ ডিরেক্টরেটের পরিচালক নিযুক্ত হন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রিমাকভ কেজিবির প্রথম চীফ ডিরেক্টরেটকে রুশ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসেন এবং সংস্থাটির নতুন নামকরণ করা হয় 'ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস'। প্রিমাকভ নতুন নামের অধীনে কেজিবির পুরাতন সংগঠনটি অপরিবর্তিত রাখেন এবং সংস্থাটিতে কোনো শুদ্ধি অভিযান বা গাঠনিক সংস্কার পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন[১৩]। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি সংস্থাটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন[১০]

পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রিমাকভ ১৯৯৬ সালের ৯ জানুয়ারি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উক্ত দায়িত্ব পালন করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি দেশে-বিদেশে রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থের কঠোর কিন্তু বাস্তববাদী সমর্থক[১৪] এবং পূর্ব ইউরোপে ন‍্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধী হিসেবে সম্মান অর্জন করেন। অবশ‍্য ন‍্যাটোর মহাসচিব জেভিয়ার সোলানার সঙ্গে তার পাঁচ মাসব‍্যাপী আলোচনার পর ১৯৯৭ সালের ২৭ মে রাশিয়া ফাউন্ডেশন অ‍্যাক্ট-এ স্বাক্ষর করে[১৫], যার মধ‍্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের শত্রুতার অবসান ঘটে বলে মনে করা হয়। যুগোস্লাভ যুদ্ধসমূহের সময় প্রিমাকভ যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি স্লোবোদান মিলোসেভিচকে সমর্থন করেন[১৬]

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বব‍্যাপী একক মার্কিন আধিপত‍্যের বিকল্প হিসেবে প্রিমাকভ বহুকেন্দ্রিকতা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে খ‍্যাতি লাভ করেন। প্রিমাকভ কম ব‍্যয়বহুল মধ‍্যস্থতা এবং মধ‍্যপ্রাচ‍্য ও প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোতে প্রভাব বিস্তারের ভিত্তিতে রুশ পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের আহ্বান জানান[১৭][১৮]। ১৯৯৯ সালের প্রথমদিকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত‍্য রোধের উদ্দেশ‍্যে রাশিয়া, চীনভারতের সমন্বয়ে একটি 'কৌশলগত ত্রিভুজ' গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন। তার এই প্রস্তাবনাকে কিছুসংখ‍্যক পর্যবেক্ষক মধ‍্য এশিয়ায় 'রঙিন বিপ্লব' সংঘটনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করার চুক্তি হিসেবে ব‍্যাখ‍্যা দেন[১৯][২০]

প্রধানমন্ত্রী

১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইয়েলৎসিন ভিক্তর চের্নোমির্দিনকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করার চেষ্টা করেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় দুমা তার প্রচেষ্টা ব‍্যর্থ করে দেয়। তখন ইয়েলৎসিন সমঝোতাস্বরূপ প্রিমাকভকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ তিনি সঠিকভাবে আন্দাজ করেছিলেন যে সংসদের অধিকাংশ সদস‍্য প্রিমাকভকে গ্রহণ করতে রাজি হবেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রিমাকভ রাশিয়ায় কিছু কঠিন অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তন করেন; এসবের অধিকাংশই (যেমন: কর সংস্কার) বড় ধরনের সাফল‍্য অর্জন করে[২১]। ১৯৯৮ সালে রাশিয়ায় কৃষিপণ‍্যের ফলন বিগত ৪৫ বছরের মধ‍্যে সবচেয়ে খারাপ হয় এবং রুবলের মান অতিদ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। এজন‍্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রিমাকভের প্রথম কাজগুলোর একটি ছিল ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকানাডার নিকট খাদ‍্য সাহায‍্যের জন‍্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিকট অর্থনেতিক সহায়তার জন‍্য আবেদন জানানো[২২]

প্রিমাকভ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন একাধিপত‍্যের বিরোধী ছিলেন এবং তার এই দৃষ্টিভঙ্গি রুশ জনগণের মধ‍্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কিন্তু এজন‍্য ১৯৯৯ সালে যুগোস্লাভিয়ায় ন‍্যাটোর বোমাবর্ষণের সময় পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘর্ষ বাঁধে এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায় সংঘটিত পরবর্তী ঘটনাবলিতে রাশিয়া একাকী ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে[২৩]

১৯৯৯ সালের ২৪ মার্চে প্রিমাকভ সরকারি সফরে ওয়াশিংটন ডি.সি.তে যাচ্ছিলেন। বিমানে করে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করার সময় তিনি জানতে পারেন যে ন‍্যাটো যুগোস্লাভিয়ার ওপরে বোমাবর্ষণ আরম্ভ করেছে। প্রিমাকভ সফরটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিমানটিকে উল্টোদিকে ঘোরানোর নির্দেশ দেন এবং মস্কোয় ফিরে যান[২৪]। এই সঙ্কট চলাকালে তিনি একটি রুশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে বেলগ্রেড সফরে যান এবং যুগোস্লাভ রাষ্ট্রপতি স্লোবোদান মিলোসেভিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন[২৫]

১৯৯৯ সালের ১২ মে ইয়েলৎসিন 'রুশ অর্থনীতির মন্থরগতি'র কারণে প্রিমাকভকে বরখাস্ত করেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, প্রিমাকভকে বরখাস্ত করার আসল কারণ ছিল প্রিমাকভের নিকট ইয়েলৎসিনের ক্ষমতা হারানোর ভয়, কারণ প্রিমাকভ ইয়েলৎসিনের চেয়ে বেশি সফল ও জনপ্রিয় ছিলেন[২৬][২৭]। তবে ইয়েলৎসিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো সেসময় জানিয়েছিল যে প্রিমাকভকে বরখাস্ত করার মূল কারণ ছিল রুশ ফেডারেশনের সাম‍্যবাদী দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা[২৮]। প্রিমাকভের নিজেথ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার বেশ ভালো সম্ভাবনা ছিল। যখন সাম‍্যবাদী দল ইয়েলৎসিনকে অভিশংসন করার ব‍্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তখন মন্ত্রিসভা থেকে সাম‍্যবাদী মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে প্রিমাকভ অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন[২৯]। শেষ পর্যন্ত ইয়েলৎসিন বছরের শেষে পদত‍্যাগ করেন এবং তার শেষ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন তার স্থলাভিষিক্ত হন[৩০]। প্রিমাকভের পদচ‍্যুতি রুশ জনগণের নিকট অত‍্যন্ত অজনপ্রিয় ছিল। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৮১% জনগণ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল, এবং এমনকি পশ্চিমাপন্থী উদারবাদী দল ইয়াব্লোকোর সমর্থকদের মধ‍্যেও ৮৪% এই পদচ‍্যুতির পক্ষে ছিল না[৩১]

দুমার সদস‍্য এবং বিশেষ প্রতিনিধি

ইয়েলৎসিনের পদত‍্যাগের পূর্বে প্রিমাকভ পিতৃভূমি – নিখিল রাশিয়া নির্বাচনী দলের সমর্থক ছিলেন। দলটি সেসময় পুতিনপন্থী ঐক‍্য দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। প্রিমাকভ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন[৩২]। প্রাথমিকভাবে আসন্ন নির্বাচনে তিনিই জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দুমা নির্বাচনে পুতিনের অনুগত দলগুলো জয়লাভ করে[৩৩]। ২০০০ সালের ২৬ মার্চে অনুষ্ঠিতব‍্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাত্র ২ মাস আগে ৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রিমাকভ একটি টিভি বক্তব‍্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী দৌড় থেকে নিজেকে প্রত‍্যাহার করে নেন[৩৪]। শীঘ্রই তিনি পুতিনের একজন উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক মিত্রে পরিণত হন[৩৫]। ২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে প্রিমাকভ রুশ বাণিজ‍্য ও শিল্প চেম্বারের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল থাকেন[৩৬]

পিতৃভূমি – নিখিল রাশিয়া দলের নেতা প্রিমাকভের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পুতিনের সাক্ষাৎ, ২০০০

২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রিমাকভ পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ইরাক সফর করেন এবং ইরাকি রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি পুতিনের পক্ষ থেকে সাদ্দামকে স্বেচ্ছায় পদত‍্যাগ করতে আহ্বান জানান[৩৭]। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালান এবং তার এই প্রচেষ্টা এই যুদ্ধের বিরোধী বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের সমর্থন লাভ করে। প্রিমাকভ সাদ্দামকে ইরাকের সমস্ত গণবিধ্বংসী অস্ত্র জাতিসংঘের নিকট হস্তান্তর করার পরামর্ধ দেন। কিন্তু সাদ্দাম প্রিমাকভকে জানান যে, তিনি এ ব‍্যাপারে নিশ্চিত যে ব‍্যক্তিগতভাবে তার কোনো ক্ষতি হবে না[৩৮], যদিও তার এই বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়। প্রিমাকভ পরবর্তীতে দাবি করেন যে, ২০০৬ সালে দ্রুতগতিতে সাদ্দামের মৃত‍্যুদণ্ড কার্যকর করার কারণ ছিল ইরাক–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ে মার্কিনদের জন‍্য লজ্জাজনক তথ‍্য ফাঁস করা থেকে তাকে বিরত রাখা[৩৯]

২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রিমাকভ আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যুগোস্লাভিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি স্লোবোদান মিলোসেভিচের পক্ষে সাক্ষ‍্য প্রদান করেন[৪০]

২০১১ সালের ৪ মার্চে প্রিমাকভ রুশ বাণিজ‍্য ও শিল্প চেম্বারের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত‍্যাগ করেন[৪১]

বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম

১৯৮৮ সাল থেকে প্রিমাকভ বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আকাদেমিসিয়ান সচিব, বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং সোভিয়েত বিজ্ঞান আকাদেমির প্রেসিডিয়াম সদস‍্য ছিলেন। ২০০৮ সালের ২৬ মে প্রিমাকভ রুশ বিজ্ঞান আকাদেমির প্রেসিডিয়াম সদস‍্য নির্বাচিত হন[৪২]। ২০০৯ সালে সার্বিয়ার নিস বিশ্ববিদ‍্যালয় প্রিমাকভকে একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে[৪৩]

২০১৫ সাল থেকে বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউট প্রতি বছর মস্কোয় প্রিমাকভের সম্মানে প্রিমাকভ পঠন নামক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এর উদ্দেশ‍্য বিশ্ব অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্বব‍্যাপী উচ্চপদস্থ বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মধ‍্যে সংলাপ সৃষ্টি করা[৪৪]

মৃত‍্যু

২০১৫ সালের ২৯ জুনে ইয়েভগেনি প্রিমাকভের শেষকৃত‍্যানুষ্ঠান

দীর্ঘদিন যকৃৎ ক‍্যান্সারে ভোগার পর প্রিমাকভ ২০১৫ সালের ২৬ জুন ৮৫ বছর বয়সে মস্কোয় মৃত‍্যুবরণ করেন[৪৫]। তাকে সামরিক মর্যাদার সঙ্গে নোভোদেভিচি সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়[৪৬]

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • "ভেটেরান অফ লেবার" পদক (১৯৭৪)
  • নাসের পুরস্কার[৪৭] (মিশর, ১৯৭৪)
  • অর্ডার অফ দ‍্য রেড ব‍্যানার অফ লেবার (১৯৭৫)
  • অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ অফ পিপলস (১৯৭৯)
  • সোভিয়েত রাষ্ট্রীয় পুরস্কার (১৯৮০)
  • ইবনে সিনা পুরস্কার (ইউনেস্কো, ১৯৮৩)
  • অর্ডার অফ দ‍্য ব‍্যাজ অফ অনার (১৯৮৫)
  • অর্ডার অফ লেনিন (১৯৮৬)
  • জর্জ এফ. কেন্নান পুরস্কার (১৯৯০)
  • অর্ডার অফ মেরিট ফর দ‍্য ফাদারল‍্যান্ড, ৩য় শ্রেণি (১৯৯৫)
  • "মস্কোর ৮৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে" মেডাল (১৯৯৭)
  • অর্ডার অফ মেরিট ফর দ‍্য ফাদারল‍্যান্ড, ২য় শ্রেণি (১৯৯৮)
  • অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ (তাজিকিস্তান, (১৯৯৯)
  • হুগো গ্রোটিয়াস পুরস্কার আন্তর্জাতিক আইনের উন্নয়নে বিপুল অবদান এবং বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব ধারণার সৃষ্টির জন‍্য (২০০০)
  • অর্ডার অফ অনার[৪৮] (২০০৪)
  • অর্ডার অফ জারোস্লাভ ফার্স্ট দ‍্য ওয়াইজ[৪৯], ৫ম শ্রেণি (ইউক্রেন, ২০০৪)
  • অর্ডার অফ দানাকের[৫০] (কিরগিজস্তান, ২০০৫)
  • অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ অফ পিপলস[৫১] (বেলারুশ, ২০০৫)
  • অর্ডার অফ দোস্তিক, ১ম শ্রেণি (কাজাখস্তান, ২০০৭)
  • অর্ডার অফ মেরিট ফর দ‍্য ফাদারল‍্যান্ড, ১ম শ্রেণি (২০০৯)
  • অর্ডার অফ দ‍্য রিপাবলিক, ১ম শ্রেণি (ট্রান্সনিস্ত্রিয়া, ২০০৯)
  • দেমিদভ পুরস্কার[৫২] (২০১২)
  • স্বাধীনতা পদক (কাজাখস্তান, ২০১২)
  • অর্ডার অফ জেরুজালেম, ১ম শ্রেণি (ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ, ২০১৪)

লেখনী

  • বিপন্ন বিশ্ব: একবিংশ শতাব্দীতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (২০০৩)
  • রুশ মোড়: নতুন সহস্রাব্দের দিকে (২০০৪)
  • রাশিয়া ও আরবগণ: স্নায়ুযুদ্ধ থেকে বর্তমান পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে (২০০৯)

তথ‍্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ