ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (সংক্ষিপ্তরূপ দি ওয়েব) হল ইন্টারনেট দিয়ে দর্শনযোগ্য আন্তঃসংযোগকৃত তথ্যাদির একটি ভাণ্ডার। একটি ওয়েব ব্রাউজারের সহায়তা নিয়ে একজন দর্শক ওয়েবপাতা বা ওয়েবপৃষ্ঠা দেখতে পারে এবং সংযোগ বা হাইপারলিঙ্ক ব্যবহার করে নির্দেশনা গ্রহণ ও প্রদান করতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব | |
---|---|
উদ্ভাবকারী | স্যার টিম বার্নার্স-লি[১] |
বাজারে ছাড়ার বছর | ১৯৯০ |
কোম্পানি | সার্ন |
উপলব্ধতা | ওয়ার্ল্ডওয়াইড |
ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হাইপার টেক্সট ডকুমেন্টগুলো নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে পরিচিত। হাইপার লিংকের সাহায্যে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে,[২] ওয়েব পৃষ্ঠা দেখা যায়, যা টেক্সট, চিত্র, ভিডিও ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ হতে পারে। ১৯৮৯ সালের মার্চে ইংরেজ পদার্থবিদ টিম বার্নাস লি, বর্তমানে যিনি ওয়ার্ণ্ড ওয়েব কনসোর্টিয়ামের ডাইরেক্টর, পূর্ববর্তী হাইপারটেক্সট সিস্টেম হতে ধারণা নিয়ে, যে প্রস্তাবনা লেখেন তা হতেই উপত্তি ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের।[১] পরবর্তীতে এ কাজে লি'র সাথে যোগ দেন বেলজিয়ান বিজ্ঞানী রবার্ট কাইলিয়াউ। এসময় তারা উভয়েই সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সের্নে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯০ এর ডিসেম্বরে তাদের প্রকাশিত এক প্রস্তাবনায় তারা উল্লেখ করেন,“ হাইপারটেক্সট্-কে লিংক ও ওয়েব হতে নানবিধ তথ্যের সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে একজন ব্যাবহারকারি তার মর্জিমাফিক ওয়েব পরিভ্রমণ করতে পারবে।”
বর্তমান ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে, অন্যান্য ওয়েব সাইট তৈরি হয়েছিল, সারা বিশ্বব্যাপী, ডোমেইন এর নাম ও এইচটিএমল এর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান স্থাপিত হয়েছিল। তখন থেকেই বার্নাস লি ওয়েব স্টান্ডার্ড এর ব্যাপারে তার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন(যেমন, ওয়েব পেই্জ তৈরীতে কোন মার্কআপ ভাষা ব্যবহার করা হবে)। সাম্প্রতিক কালে তিনি আওয়াজ তুলেছেন Semantic ওয়েব এর ব্যাপারে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সহজে ব্যবহার যোগ্য ও সাবলীল পক্রিয়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সমূহের প্রসার বা বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। আর এভাবেই তারা ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করতে গুরুত্ববহ ভূমিকা রেখেছেন। অনেক সময় সাধারণত এদের অর্থকে গুলিয়ে ফেলা হয় যদিও ইন্টারনেট কখনই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রতিশব্দ নয়। ওয়েব হল মূলত ইন্টারনেটের উপর ভিত্তিকরে গড়ে ওঠা একটা এপ্লিকেশন মাত্র
ওয়েব যেভাবে কাজ করে
ওয়েব পৃষ্ঠা দেখার প্রক্রিয়া সাধারণত কোন ব্রাউজারে ইউআরএল টাইপ করা বা কোন পাতা হতে হাইপারলিঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে শুরু হয়ে থাকে। এরপর ওয়েব ব্রাউজার যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কিছু বার্তা প্রদান শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতে পরিশেষে পাতাটি দর্শনযোগ্য হয়ে ওঠে।
প্রথমেই ইউআরএল এর সার্ভার নামের অংশটি আইপি এ্যাড্রেস ধারণ করে। এজন্য এটি একটি বিশ্বজনীন ইণ্টারনেট ডাটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে যা ডোমেইন নেম সিস্টেম নামে পরিচিত। এই আইপি ঠিকানাটি ওয়েব সার্ভারে ডাটা প্যাকেট প্রেরণের জন্য জরুরী।
এরপর ব্রাউজার নির্দিষ্ট ঠিকানাটিকে একটি এইচটিটিপির আবেদন জানায় ওয়েব সার্ভারের কাছে। সাধারণ কোন ওয়েব পৃষ্ঠার বেলায়, পাতাটির এইচটিএমএল লেখার জন্য শুরুতে আবেদন জানানো হয়। এরপর ওয়েব ব্রাউজারটি ছবিসহ অন্যন্য প্রয়োজনীয় ফাইলের জন্য আবেদন পৌছে দেয়।
ওয়েব সার্ভার থেকে আবেদনকৃত ফাইলসমূহ পাবার পর ওয়েব ব্রাউজারটি এইচটিএমএল, সিএসএস ও অন্যান্য ওয়েব ল্যাঙ্গুয়েজ অনুযায়ী পাতাটিকে স্ক্রিনে সাজিয়ে ফেলে।অধিকাংশ ওয়েব পাতাগুলোতে নিজস্ব হাইপারলিঙ্ক থাকে যাতে সংশ্লিষ্ট অন্যন্য পাতা এবং ডাউনলোডসহ অন্যন্য প্রয়োজনীয় লক্ষ্য উল্লেখিত থাকে। এই প্রয়োজনীয় ও পরস্পর সংযুক্ত হাইপারলিঙ্কগুলোর সমুষ্টিই ওয়েব নামে পরিচিত। টিম বার্নার্স-লি সর্বপ্রথম একে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে নামাঙ্কিত করেন।
ইতিহাস
১৯৮৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সার্ন এ কর্মরত অবস্থায় স্যার টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরি করেন। সেটা থেকে শুরু করে ওয়েবের উন্নতিসাধনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ তৈরিতে ভূমিকা রাখেন যার মাধ্যমে ওয়েবপৃষ্ঠা অলঙ্করণ বা কম্পোজ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সেমান্টিক ওয়েব তৈরিতেও উত্সাহ প্রদান করেছেন।
আজকের ওয়েব পদ্ধতি থেকে এটি অনেকটা আলাদা হলেও এদের ভিতরে যথেষ্ট মিল আছে। ১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি এনকোয়ার সহ আরো বিশদ একটি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রস্তাবনা করেন। রবার্ট কাইলিয়াউ এর সহায়তায় ১৯৯০ সালের ১২ নভেম্বর তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের আরো আনুষ্ঠানিক একটি প্রস্তাবনা প্রদান করেন।
নিরাপত্তা
অপরাধীদের জন্য ওয়েব ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়ার এবং সাইবার অপরাধের একটি পরিসরে জড়িত হওয়ার একটি স্থান হয়ে উঠেছে, যার মধ্যে (তবে সীমাবদ্ধ নয়) পরিচয় চুরি, জালিয়াতি, গুপ্তচরবৃত্তি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ।[৩] ওয়েব-ভিত্তিক দুর্বলতা এখন প্রথাগত কম্পিউটার নিরাপত্তা উদ্বেগের চেয়ে বেশি,[৪][৫] এবং গুগল দ্বারা পরিমাপ করা হয়েছে, প্রায় দশটি ওয়েব পৃষ্ঠার মধ্যে একটিতে ক্ষতিকারক কোড থাকতে পারে।[৬] বেশিরভাগ ওয়েব-ভিত্তিক আক্রমণ বৈধ ওয়েবসাইটগুলিতে সংঘটিত হয় এবং বেশিরভাগ, সোফোস দ্বারা পরিমাপ করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ায় হোস্ট করা হয়।[৭] সমস্ত ম্যালওয়্যার হুমকির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল ওয়েবসাইটগুলির বিরুদ্ধে এসকিউএল ইনজেকশন আক্রমণ৷[৮] এইচটিএমএল এবং ইউআরআই-এর মাধ্যমে, ওয়েব ক্রস-সাইট স্ক্রিপ্টিং (এক্সএসএস) এর মতো আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যা জাভাস্ক্রিপ্টের প্রবর্তনের সাথে এসেছিল[৯] এবং ওয়েব ২.০ এবং Ajax ওয়েব ডিজাইনের দ্বারা কিছু মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল যা স্ক্রিপ্টগুলির ব্যবহারকে সমর্থন করে।[১০] আজ একটি অনুমান অনুসারে, সমস্ত ওয়েবসাইটগুলির ৭০% তাদের ব্যবহারকারীদের উপর XSS আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত।[১১] ফিশিং হল ওয়েবের জন্য আরেকটি সাধারণ হুমকি। ফেব্রুয়ারী ২০১৩-এ, RSA (EMC-এর নিরাপত্তা বিভাগ) ফিশিং থেকে বিশ্বব্যাপী ক্ষতি $১.৫ অনুমান করেছে ২০১২ সালে বিলিয়ন।[১২] দুটি সুপরিচিত ফিশিং পদ্ধতি হল কভার্ট রিডাইরেক্ট এবং ওপেন রিডাইরেক্ট।
প্রস্তাবিত সমাধান পরিবর্তিত হয়. McAfee- এর মতো বড় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই 9/11-পরবর্তী প্রবিধানগুলি পূরণ করার জন্য গভর্নেন্স এবং কমপ্লায়েন্স স্যুটগুলি ডিজাইন করেছে,[১৩] এবং ফিনজানের মতো কেউ কেউ তার উত্স নির্বিশেষে প্রোগ্রামিং কোড এবং সমস্ত সামগ্রীর সক্রিয় রিয়েল-টাইম পরিদর্শনের সুপারিশ করেছে৷[৩] কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন যে ব্যবসায়িক সুযোগ হিসেবে ওয়েব সিকিউরিটি দেখার জন্য এন্টারপ্রাইজগুলিকে খরচ কেন্দ্রের পরিবর্তে,[১৪] অন্যরা "সর্বব্যাপী, সর্বদা-অন-অন- ডিজিটাল রাইট ম্যানেজমেন্ট " এর জন্য আহবান করেছেন যে শত শত কোম্পানিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য অবকাঠামোতে প্রয়োগ করা হয়েছে যা ডেটা সুরক্ষিত করে। এবং নেটওয়ার্ক।[১৫] জনাথন জিট্রেন বলেছেন যে ব্যবহারকারীরা কম্পিউটিং সুরক্ষার দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া ইন্টারনেট লক ডাউন করার চেয়ে অনেক বেশি পছন্দনীয়।[১৬]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- Early archive of the first Web site
- Internet Statistics: Growth and Usage of the Web and the Internet
- Living Internet ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে A comprehensive history of the Internet, including the World Wide Web.
- কার্লিতে Web Design and Development (ইংরেজি)
- World Wide Web Consortium
- World Wide Web Size Daily estimated size of the World Wide Web.
- Internet Usage statistics and analysis for English websites