কম্বোডিয়া–ভিয়েতনাম যুদ্ধ

কম্বোডিয়া–ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়ার মধ্যে সংঘটিত একটি যুদ্ধ। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালে ভিয়েতনাম ও কম্পুচিয়ার স্থল ও নৌ সীমান্ত বরাবর বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের (যেগুলোতে কখনো কখনো কয়েক ডিভিশন সৈন্য জড়িয়ে পড়ত) মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ আরম্ভ হয়। ১৯৭৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ভিয়েতনাম পুরোদমে কম্পুচিয়ায় আক্রমণ চালায় এবং খেমার রুজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে।

কম্বোডিয়া–ভিয়েতনাম যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: তৃতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ এবং স্নায়ুযুদ্ধ

১৯৮০ সালে ভিয়েতনাম-সমর্থিত পিআরকে কর্তৃক চালুকৃত তুওল স্লেং গণহত্যা জাদুঘর
তারিখ৩০ এপ্রিল ১৯৭৭ – ২৩ অক্টোবর ১৯৯১
অবস্থান
ফলাফল

ভিয়েতনামি সামরিক বিজয়[note ১]

  • খেমার রুজ সরকারের পতন
  • কম্বোডীয় গণহত্যার অবসান
  • গণপ্রজাতন্ত্রী কম্পুচিয়া গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়
  • ভিয়েতনামের কম্বোডিয়া দখল
  • বিভিন্ন কম্বোডীয় দলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ
  • চীন–ভিয়েতনাম যুদ্ধ
  • চীন–ভিয়েতনাম সীমান্ত সংঘর্ষ
  • থাইল্যান্ড–ভিয়েতনাম সীমান্ত সংঘর্ষ
  • ১৯৯১ প্যারিস শান্তিচুক্তি
বিবাদমান পক্ষ
ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম
এফইউএনএসকে
গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়া
আক্রমণের পর:
ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম
গণপ্রজাতন্ত্রী কম্পুচিয়া
সমর্থনকারী দেশ:
সোভিয়েত ইউনিয়ন সোভিয়েত ইউনিয়ন

আক্রমণের পর:
সিজিডিকে

থাইল্যান্ড থাইল্যান্ড
সমর্থনকারী দেশ:
চীন চীন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
লি ডাক আন
হেং সামরিন
হুন সেন
পল পট
খিউ সাম্ফান
সোন সান
দিয়েন দেল
নরোদম সিহানুক
প্রেম তিনসুলানন্দা
চাতিচাই চুনাভান
শক্তি
১,৫০,০০০–২,০০,০০০ সৈন্য [note ২]

১৯৭৯: ৭৩,০০০ সৈন্য[১]

১৯৮৯: ৩০,০০০ সৈন্য[note ৩]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
১৯৭৯–১৯৮৯:
১৫,০০০[২]–২৫,৩০০ সৈন্য নিহত[৩]
৩০,০০০ সৈন্য আহত[২]
১৯৭৯: ১৫,০০০ সৈন্য নিহত[৪]
মোট: ৫০,০০০+ নিহত[৩][৫]
১,০০,০০০+ বেসামরিক মানুষ নিহত (দুর্ভিক্ষে মৃতদের বাদ দিয়ে)[৬]

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ভিয়েতনামি ও খেমার রুজ কমিউনিস্টরা তাদের নিজ নিজ দেশে মার্কিন-সমর্থিত সরকারগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু বাইরে ভিয়েতনামিদের সঙ্গে সহযোগিতা করলেও খেমার রুজ নেতৃবৃন্দ মনে মনে এই ভেবে শঙ্কিত ছিল যে, ভিয়েতনামি কমিউনিস্টরা ওই অঞ্চলে ভিয়েতনামের অধীনে একটি ইন্দোচীন ফেডারেশন গঠনের পরিকল্পনা করছে। ভিয়েতনামিদের দ্বারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা আরম্ভ হওয়ার আগেই খেমার রুজ নেতৃবৃন্দ তাদের দলের ভিয়েতনাম-প্রশিক্ষিত সদস্যদের বহিষ্কার করতে আরম্ভ করে। ১৯৭৫ সালের মে মাসে নবপ্রতিষ্ঠিত ও খেমার রুজের কর্তৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়া ভিয়েতনামকে আক্রমণ করতে আরম্ভ করে। ভিয়েতনামের ফু কুয়োক দ্বীপে আক্রমণের মধ্য দিয়ে তাদের অভিযান শুরু হয়। তবে সংঘাত সত্ত্বেও ১৯৭৬ সালে সদ্য একত্রিত ভিয়েতনাম ও কম্পুচিয়ার নেতারা দুই দেশের মধ্যেকার কথিত 'মৈত্রী'র প্রমাণ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি আলোচিত কূটনৈতিক আদান-প্রদান করেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কম্পুচীয় নেতারা 'ভিয়েতনামি সম্প্রসারণবাদ' নিয়ে আতঙ্কিত থেকে যান। এ পরিস্থিতিতে ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল কম্পুচিয়া ভিয়েতনামের ওপর আরেকটি বড় ধরনের আক্রমণ চালায়। ভিয়েতনাম সরকার কম্পুচীয় আগ্রাসনে হতবাক হয়ে পড়ে এবং কম্পুচীয় সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করার জন্য ১৯৭৭ সালের শেষদিকে একটি পাল্টা আক্রমণ চালায়। ১৯৭৮ সালের জানুয়ারিতে ভিয়েতনামি সামরিক বাহিনী কম্পুচিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে, কারণ তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জিত হয় নি — খেমার রুজ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে অনিচ্ছুক রয়ে যায়।

১৯৭৮ সাল জুড়ে দেশ দুইটির মধ্যে ছোটখাট সংঘর্ষ চলতে থাকে, এবং চীন উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু কোনো পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে নি। ১৯৭৮ সালের শেষদিকে ভিয়েতনামি নেতারা গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়ার খেমার রুজের কর্তৃত্বাধীন সরকারকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ এটিকে তারা খুব বেশি চীনপন্থী এবং ভিয়েতনামবিরোধী বলে বিবেচনা করছিলেন। ১৯৭৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ১,৫০,০০০ ভিয়েতনামি সৈন্য গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়া আক্রমণ করে, এবং মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে কম্পুচীয় বিপ্লবী সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে। ১৯৭৯ সালের ৮ জানুয়ারি নম পেনে ভিয়েতনামপন্থী গণপ্রজাতন্ত্রী কম্পুচিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং দশ বছরব্যাপী ভিয়েতনামি দখলদারিত্বের সূচনা হয়। এই সময়ে জাতিসংঘে খেমার রুজের গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়া কম্পুচিয়ার বৈধ সরকার হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে, এবং ভিয়েতনামি দখলদারিত্ব প্রতিরোধ করার জন্য বেশ কয়েকটি সশস্ত্র প্রতিরোধ দল সংগঠিত হয়। পর্দার অন্তরালে গণপ্রজাতন্ত্রী কম্পুচিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সিজিডিকের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় লিপ্ত হন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে ভিয়েতনাম সরকার বেশকিছু অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতিসংক্রান্ত সংস্কার সাধন করে, এবং ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে কম্বোডিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।

১৯৯০ সালে তৃতীয় জাকার্তা অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অস্ট্রেলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট কম্বোডীয় শান্তি পরিকল্পনায় সিজিডিকে এবং পিআরকের প্রতিনিধিরা ক্ষমতা ভাগাভাগি করার মাধ্যমে সুপ্রিম ন্যাশনাল কাউন্সিল (এসএনসি) নামক একটি ঐক্যমত্যের সরকার গঠন করতে রাজি হন। এসএনসির কাজ ছিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্ব করা। অন্যদিকে, একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণ কর্তৃক একটি নতুন কম্বোডীয় সরকার নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আনটাককে দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। কম্বোডিয়ায় শান্তি স্থাপন কঠিন কাজ হিসেবে প্রমাণিত হয়, কারণ খেমার রুজ নেতারা সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর আক্রমণ ও ভিয়েতনামি অভিবাসীদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টা চালান। ১৯৯৩ সালের মে মাসে সিহানুকের এফইউএনসিআইএনপিইসি কম্বোডিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টিকে (সিপিপি) পরাজিত করে। কিন্তু সিপিপির নেতৃবৃন্দ পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ঘোষণা করেন যে, কম্বোডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো (যেখান থেকে সিপিপির অধিকাংশ ভোট এসেছিল) কম্বোডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। এরকম পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এফইউএনসিআইএনপিইসি-র নেতা নরোদম রানারিধ সিপিপির সঙ্গে একটি জোট সরকার গঠন করতে রাজি হন। এর কিছুদিন পরেই কম্বোডিয়ায় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র পুন:প্রবর্তন করা হয় এবং নবগঠিত কম্বোডীয় সরকার খেমার রুজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

তথ্যসূত্র


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "note" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="note"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ