কামিকাযি

জাপানের আত্মঘাতী সেনা

কামিকাযি বলতে যুদ্ধকালীন সময়ে জাপানীদের মানববর্ম বা ঢাল বোঝানো হয়, যারা আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে দেশের তরে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সাধারণভাবে অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় "স্বর্গীয় বাতাস"। জাপান সাম্রাজ্যের সামরিক বিমানবাহিনী কর্তৃক শত্রুর উপর আক্রমণের অংশ হিসেবে কামিকাযি যোদ্ধারা ব্যাপকভাবে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের শেষ দিকে তারা যতটুকু সম্ভব মিত্রপক্ষের অনেকগুলো যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছিল।

কিয়োশি ওগাওয়া, যিনি তাঁর বিমান নিয়ে ১৯৪৫ সালের মে ১১ তারিখে ইউএসএস বাংকার হিল নামের মার্কিন রণতরীর উপরে কামিকাযি হামলা চালান।

কামিকাযি বিমান চালকেরা শত্রু জাহাজে তাদের বিমান ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। বিমানগুলোর প্রায় সবগুলোই বিস্ফোরক, বোমা, টর্পেডো এবং পরিপূর্ণ জ্বালানি ট্যাংকে ভরপুর ছিল। এছাড়াও, বিমানগুলো তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড যেমন : টর্পেডো, বোমাবর্ষণ অথবা অন্য বিমানকে গুলি করার জন্য নিয়োজিত ছিল। বিমানগুলোকে কীভাবে সাধারণ বোমার তুলনায় মনুষ্য নিয়ন্ত্রিত মিসাইলে রূপান্তরিত করে নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে আঘাত হেনে ধ্বংস করে লাভবান হতে পারে সে চেষ্টা চালায়। এতে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে যত বেশি সম্ভব মিত্রশক্তির যুদ্ধজাহাজ বিশেষ করে বিমানবাহী জাহাজকে ধ্বংস করার মাধ্যমে পাইলটের আত্মহনন ও বিমানের ধ্বংসতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। অক্টোবর, ১৯৪৪ সালে শুরু হওয়া আক্রমণগুলোয় ঐ নীতি অনুসরণ করায় পরবর্তীতে জাপানি সামরিক বাহিনী পরাজিত হয়। এর ফলে তারা -

  • দীর্ঘকাল ধরে আকাশ পথের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হারায়।
  • পুরনো ও সেকেলে বিমানগুলো ধ্বংস হয়।
  • দক্ষ, অভিজ্ঞ বিমানচালক বা পাইলটদেরকে হারায়।
  • ব্যস্টিক অর্থনীতির মানদণ্ডে - জাপান যুদ্ধে ব্যয়ভার বহনে সক্ষমতা হারায়।
  • শিল্পায়ণে সক্ষমতার জন্য মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মুখাপেক্ষী না হওয়া ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টিতে অনীহা প্রকাশ করে।
  • জাপানি সরকার আত্মসমর্পণ করতে তার অনিচ্ছা প্রকাশ ব্যক্ত করে।

সম্মিলিতভাবে এই উপাদানগুলো কামাকাযি কৌশলের ব্যবহারকে অনুপ্রাণিত করে যা জাপান দ্বীপপুঞ্জে মিত্রশক্তির অগ্রসরতাকে বাঁধাগ্রস্ত করে।

কামাকাযি শব্দটি সচরাচর ঘূর্ণায়মান বায়ু অবরোধে ব্যবহৃত হলেও কখনো কখনো অন্যান্য অভিপ্রেত আত্মঘাতী হামলায় প্রয়োগ করা হয়। জাপানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক জাপানীদের বিশেষ আক্রমণ বিভাগে ব্যবহার অথবা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এতে অংশগ্রহণকারীদেরকে কাইরিয়ো সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ, কাইতেন বা হিউম্যান টর্পেডো, শিনিয়ো স্পিডবোট (আত্মঘাতী নৌকা) এবং ফুকুরিয়ো ডাইভারে জড়িত করা হয়।

সংজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি

জাপানি শব্দ কামিকাযিকে সাধারণভাবে অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় "স্বর্গীয় বাতাস"। কামি অর্থ - ঈশ্বর, আত্মা অথবা অমরত্ব এবং কাযি অর্থ - বাতাস। কামিকাযি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ১২৭৪ এবং ১২৮১ সালের সৃষ্ট প্রচণ্ড ঝড় কামিকাযি টাইফুন থেকে। এটি জাপান কর্তৃক মঙ্গোলিয়ায় আক্রমণের সময় সামুদ্রিক জাহাজ ধ্বংস করেছিল।

জাপানীরা কামিকাযি শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৪-৪৫ সালে তুকুবেতসু কোগেকি তাই নামে ব্যবহার করে, যা আক্ষরিক অর্থে "বিশেষ আক্রমণকারী দল" বোঝায়। সাধারণত এটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে তোক্কোতাই নামে আখ্যায়িত করা হয়। আরো সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য ইম্পেরিয়াল জাপানি নেভী দাপ্তরিকভাবে বিমান আত্মঘাতী আক্রমণকারী দলকে শিনপু তোকুবেতসু কোগেকি তাই নামে লিপিবদ্ধ করে। এর অর্থ দাঁড়ায় "স্বর্গীয় বাতাসে বিশেষ আক্রমণকারী দল"। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে কামিকাযি শব্দটির উচ্চারণ ও ব্যবহার শুধুমাত্র জাপানেই অনানুষ্ঠানিকভাবে আত্মঘাতী আক্রমণের সাথেই যুক্ত ছিল। কিন্তু, যুদ্ধ পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাপী কামিকাযি শব্দটিকে জাপান থেকে পুনরায় আমদানী করে ব্যাপকভাবে গ্রহণ ও ব্যবহার করা হয়। ফলশ্রুতিতে জাপানে বিশেষ আক্রমণকারী দলকে কখনো কখনো কামিকাযি তোকোবেতসু কোগেকি তাই নামে পরিচিতি হতে দেখা যায়।

যুদ্ধ শেষে কামিকাযি শব্দটি মাঝেমাঝে পার্স প্রো তোতো নামে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যা একজন আক্রমণকারী নিজের জীবন বিপন্ন করে এ ধরনের অন্যান্য আক্রমণ কার্য পরিচালনা করে থাকেন। এ ধরনের আত্মঘাতী আক্রমণ অন্যান্য ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেও ঘটেছে, যেমন - নাৎসী জার্মানি কর্তৃক ফাইসেলার ফাই ১০৩আর (রাইখেনবার্গ) বা সেল্বস্টপফার বিমানের মাধ্যমে। এছাড়াও, অন্যান্য আত্মঘাতী আক্রমণ কার্য বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ বা দলের মাধ্যমে ঘটেছে, যেমন - ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ সালে যুক্তরাস্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা ইত্যাদি। কিন্তু, কামিকাযি পাইলটদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শুধুমাত্র সামরিক লক্ষ্যস্থাপনাসমূহে। এর বিপরীতে জঙ্গী সন্ত্রাসী বাহিনীর আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে ও হচ্ছে সাধারণত বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে।

ইতিহাস

প্রেক্ষাপট

পূর্বেই গঠনকৃত কামিকাযি দলকে সংঘর্ষের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। যখন একজন বিমানচালক তার বিমানের ভূপাতিত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে ও দেখতে পান, তখন তিনি আটক হবার জন্য কোনরূপ ঝুঁকি নিতে চান না। অথবা, তিনি যে-কোনভাবে নিজ বিমানের ধ্বংস হবার পূর্বে শত্রুপক্ষের আরো বেশি ক্ষতি হোক তা চান। এ ধরনের বিষয়টি জাপান এবং মিত্রপক্ষীয় বিমানবাহিনীর পাইলট - উভয়ের মধ্যেই বিরাজমান ছিল। এক্সেল এবং ক্যাজের মতে, "এরূপ আত্মহননগুলো লোকের ব্যক্তিগত ও আকস্মিক সিদ্ধান্ত, যারা মানসিকভাবে মৃত্যুর জন্য পূর্বেই প্রস্তুত ছিল"।[১] অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামান্য প্রমাণ থাকে যে, এ ধরনের আঘাত ছিল দূর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ। এগুলো প্রায়শঃই নৌ-আকাশ যুদ্ধে ঘটেছিল। এর একটি উদাহরণ হলো - ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার আক্রমণ সময়কালীন। ফার্স্ট লেফট্যানেন্ট ফুসাতা লিডা'র যুদ্ধবিমানটি আঘাতগ্রস্ত হয় এবং জ্বালানী ভাণ্ডারে ছিদ্র দেখা দেয়। তখন এ দৃশ্য অবলোকন করে তিনি ক্যানিওহে ন্যাভাল এয়ার স্টেশনে আত্মঘাতী হামলা চালান। উড্ডয়নের পূর্বেই তিনি তার পরিচিতজনদেরকে বলেছিলেন যে, যদি তার বিমান খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তিনি শত্রুর বিশাল মজুদ এলাকায় আঘাত হেনে নিজের প্রাণসংহার করবেন।[২]

১৯৪২ সালের নৌ-যুদ্ধ বিশেষ করে মিডওয়ের যুদ্ধে জাপানী নৌবাহিনীর ব্যাপক ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এর ফলে তারা বৃহৎ সংখ্যায় বিমানবাহী রণপোত ও যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত নাবিককে একত্রিত করতে পারেনি।[৩] জাপানি যুদ্ধবিশারদগণ দ্রুত দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেন এবং জাহাজ, পাইলট, নাবিককে হারিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় শূন্যস্থান ঢাকার চেষ্টা চালান। মিডওয়ের যুদ্ধে জাপানীরা খুব বেশিসংখ্যক বিমানসেনাকে একদিনের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে যা এক বছরের মধ্যে তাদের যুদ্ধ-পূর্ব প্রস্তুতি কার্যক্রমকে স্থবির করে দেয়।[৪] ১৯৪৩-৪৪ সালের মধ্যে মার্কিন বাহিনী অটলভাবে জাপানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জাপানের জঙ্গী বিমানগুলো ছিল অগণিত। মার্কিনীদের তৈরী ও নতুন বানানো বিমান বিশেষতঃ এফ৬এফ হেলক্যাট এবং এফ৪ইউ করসেয়ারের তুলনায় তাদের বিমানগুলো অপ্রচলিত ও অনেক পুরনো ধাঁচের ছিল। অত্যন্ত গরমে রোগের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি খুচরা যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা এবং জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলো জাপানী বাহিনীকে আক্রমণ পরিচালনা করতে অনেক অনেক বেশি কঠিন করে তোলে। জাপানিরা চারশো'র বেশি যুদ্ধবিমান ও পাইলট হারায়, বিমানের কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে যা মিত্রবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপই এ জন্যে বহুলাংশে দায়ী।

১৯ জুন, ১৯৪৪ সালে জাপানী বিমানবাহী জাহাজ চিয়োদা থেকে আমেরিকান টাস্ক গ্রুপের দিকে বিমান আক্রমণের জন্য উড্ডয়ন করে। কিছু হিসাব মতে, দুটি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। তন্মধ্যে একটি ইউএসএস ইন্ডিয়ানা (বিবি-৫৮) যুদ্ধজাহাজে আঘাত করে।[৫]

জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে সাইপেন মিত্রবাহিনী ১৫ জুলাই, ১৯৪৪ সালে দখল করে নেয়। এরফলে যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহিনী বি-২৯ বিমানের সাহায্যে জাপানের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ দ্বীপগুলো পর্যবেক্ষণ ও অবরোধ করার যোগ্যতা অর্জন করে। সাইপেন পতনের পর জাপানের উচ্চ পর্যায় থেকে ধারণা করা হয় যে মিত্রশক্তি ফিলিপাইন অধিগ্রহণের দিকে অগ্রসর হতে পারে। কৌশলগতভাবে ফিলিপাইনের অবস্থান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও জাপানের মধ্যবর্তী এলাকা হিসেবে সেখানে অনেকগুলো তৈলক্ষেত্র রয়েছে।

আগস্ট, ১৯৪৪ সালে জাপানের সরকারি বার্তা সংস্থাডোমেই সুশিন জানায় যে তাকিও তাগাতা নামীয় একজন ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর শত্রুপক্ষের উপর আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য বিমানচালকদেরকে তাইওয়ানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।[৬]

অন্য আরেকটি উৎস দাবী করে যে প্রথম কামিকাযি আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪ সালে। নেগ্রোস আইল্যান্ডে অবস্থিত ৩১তম ফাইটার স্কোয়াড্রনের একদল পাইলট ঐদিন ভোরে আত্মঘাতী হামলা পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়।[৭] এতে ফার্স্ট লেফট্যানেন্ট তাকেশি কোসাই এবং একজন সার্জেণ্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। উভয় যোদ্ধাই দুটি ১০০ কেজি (২২০ পাউণ্ড) বোমা সঙ্গে রাখেন এবং পরিকল্পনামাফিক বিমানবাহী জাহাজের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রত্যুষের পূর্বেই রওয়ানা দেন। এরপর তারা আর ঘাঁটিতে ফিরে আসেননি এবং এ বিষয়ে ঐ দিনে তারা শত্রুপক্ষ হিসেবে মিত্রশক্তির জাহাজের উপর হামলা চালিয়েছিলেন কি-না তারও কোন প্রামাণ্য দলিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কয়েকটি সূত্র জানায়, ১৪ অক্টোবর, ১৯৪৪ সালে ইউএসএস রেনো (সিএল-৯৬) ইচ্ছাকৃতভাবে জাপানী যুদ্ধবিমান কর্তৃক মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু, এ বিষয়ে আক্রমণকারীর সংঘর্ষের পরিকল্পনা সম্পর্কে কোন প্রামাণ্য দলিলপত্রাদি খুঁজে পাওয়া যায়নি।[৮]

এবং মাসাফুমি এরিমা

২৬তম এয়ার ফ্লোটিলা'র (১১'শ বিমানবহরের অংশবিশেষ) কমাণ্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসাফুমি এরিমা কখনো কখনো কামিকাযি কৌশলের উদ্ভাবক হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে থাকেন। এরিমা ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ১০০টি ইউকোসুকা ডি৪ওয়াই সুইসেই (জুডি) ডাইভ বোমারু বিমানের নেতৃত্ব দেন। ১৫ অক্টোবর, ১৯৪৪ সালে তিনি লেতি উপসাগরের কাছে খুবই বড় আকৃতির এসেক্স-ক্লাস বিমানবাহী ইউএসএস ফ্রাংকলিন (সিভি-১৩) জাহাজের উপর আক্রমণ চালান। আক্রমণ চলাকালে এরিমা নিহত হন এবং বিমানের একটি অংশ ইউএসএস ফ্রাংকলিনে আঘাত হানে। জাপানের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং প্রচারকগণ এরিমা'র নিহত হবার বিষয়টিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। বলা হয় যে, তিনি এডমিরাল হিসেবে অমর হয়ে রইলেন এবং সরকারীভাবে প্রথম কামিকাযি আক্রমণকারী হিসেবে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। যাইহোক, এটা স্পষ্ট নয় যে এটি পরিকল্পনামাফিক আত্মঘাতী আক্রমণ ছিল কি-না। এছাড়াও, সরকারীভাবে জাপানীদের কাছে এরিমা'র আক্রমণের প্রকৃত ঘটনায় সামান্য প্রশ্নের জন্ম দেয়।[৯]

১৭ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে সুলুয়ান দ্বীপ আক্রমণ করে মিত্রবাহিনী। ফলে শুরু হয়ে যায় লেতি উপসাগরীয় যুদ্ধ

১ম কামাকাযি দল

কমান্ডার আসাইকি তামাই ২৩জন প্রতিভাবান শিক্ষার্থী বিমানচালককে প্রশিক্ষণ দেন। তিনি তাদেরকে বিশেষ আক্রমণকারী সৈনিকদলে স্বেচ্ছাসেবী হবেন কি-না জিজ্ঞাসা করেন। সকল শিক্ষানবীশ পাইলটই একযোগে তাদের হাত উত্থাপিত করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ঐ পরিকল্পনায় যোগ দিতে সম্মতি জানায়। পরবর্তীকালে তামাই বিশেষ আক্রমণকারী সৈনিকদলের নেতৃত্বের বিষয়ে লেফট্যানেন্ট ইউকিও সেকিকে জিজ্ঞাসা করেন। সেকি তার চোখ বন্ধ করলেন ও মাথা নিচু করা অবস্থায় ১০ সেকেণ্ড চিন্তা-ভাবনা করলেন। এরপর তিনি বললেন, "দয়া করে আমাকে ঐ পদে নিযুক্ত করুন"। পরে ২৪তম কামিকাযি পাইলট হিসেবে ইউকিও সেকিকে মনোনীত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেকি বলেছিলেন যে: "জাপানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ছিল। যদি আক্রমণের উদ্দেশ্যে না যাওয়া হতো তাহলে তারা বলপূর্বকভাবে তাদের সেরা বিমানচালকদের একজনকে হত্যা করতো"। এবং "আমি সম্রাট কিংবা জাপান সাম্রাজ্যের জন্য এই যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক ছিলাম না। ......... আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি কারণ আমি আদিষ্ট হয়েছিলাম যুদ্ধে যেতে"।[১০]

কামিকাযি বিশেষ আক্রমণ সৈনিকদলে চারটি উপ-দল ছিল। সেগুলো হলোঃ- ইউনিট শিকিশিমা, ইউনিট ইয়ামাতো, ইউনিট এসাহি এবং ইউনিট ইয়ামাজাকুরা[১১] উপ-দলের নামগুলো জাপানী শাস্ত্রীয় বৃত্তিধারী ব্যক্তিত্ব মোতুরি নোরিনাগা'র দেশাত্মবোধক কবিতা (ওয়াকা বা টাংকা) - শিকিশিমা নো ইয়ামাতো-গোকোরো ও হিতো তাওয়াবা, এসাহি নি নিওয়ো ইয়ামাজাকুরা বানা থেকে নেয়া হয়েছে। কবিতায় উল্লেখ আছেঃ-

যদি কেউ শিকিশিমার (জাপানের কাব্যিক নাম) ইয়ামাতো আত্মা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে - এটি হচ্ছে ইয়ামাজাকুরার ফুল যা আসাহি'র সুগন্ধ।

সংক্ষেপিত সাহিত্যিক অনুবাদ হলো[১২]:

জাপানের আত্মা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে,
আমি বলবো
এটা হচ্ছে
বুনো চেরি'র পুষ্পমুকুল
সকালের সূর্য্যের মধ্যে উদীয়মান।

ওনিশি উপ-দলের নামকরণ বিষয়ে বলেছিলেন যে, মাতৃভূমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাকরণ এমনকি পরাজয়বরণ করলেও তাদের আত্মার শ্রেষ্ঠত্ব বা মহত্ত্বকে রক্ষা করা হবে।[১৩]

লেতে উপসাগরীয় যুদ্ধে আক্রমণ

২৫ অক্টোবর, ১৯৪৪ সালে লেতে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় কামিকাযি বিশেষ আক্রমণকারী দল তাদের প্রথম যাত্রা শুরু করে। সেকি'র নেতৃত্বে পাঁচটি জিরোস জাপানীদের প্রধান জাহাজ হিরোয়োশি নিশিজাওয়া থেকে সহচর জাহাজগুলো ধ্বংস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এগুলোতে কয়েকদফা আক্রমণ চালানো হয়। একটি জিরো ইউএসএস কিটকুন বে (সিভিই-৭১)'র ক্যাপ্টেনের ডেকে আঘাতের চেষ্টা করে কিন্তু এটি বিষ্ফোরিত হয়ে সাগরে পড়ে যায়। দুটি জিরো ইউএসএস ফ্যানশ বে (সিভিই-৭০) আক্রমণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেও বিমান-বিধ্বংসী গুলিবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যায়। অন্য দুইটি জিরো ইউএসএস হুয়াইট প্লেইনস্‌ (সিভিই-৬৬) এর দিকে ধেয়ে আসে। একটিতে প্রচণ্ড আগুনে ধোয়া বের হয়ে এবং হুয়াইট প্লেইনসে নামার চেষ্টায় বিফল হয়ে ইউএসএস সেন্ট লো'র ফ্লাইট ডেকে পড়ে যায়। এর বোমা থেকে আগুন ধরে গেলে জাহাজটি ডুবে যায়।[১৪] ২৬ অক্টোবর শেষে কামিকাযিদের বিশেষ আক্রমণকারী বাহিনী থেকে ৫৫টি আক্রমণ করা হয়। এ পর্যায়ের আক্রমণে বৃহৎ বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস সাঙ্গামন (সিভিই-২৬) এবং ইউএসএস সুয়ানী (সিভিই-২৭) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৫ অক্টোবর সকাল ৮টা ৪মিনিটে সহচর জাহাজ বহনকারী ইউএসএস স্যানটী (সিভিই-২৯), ইউএসএস হুয়াইট প্ল্যাইনস্‌, কালিনান বে এবং কিটকুন বে কামিকাযিদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। সর্বমোট সাতটি বিমানবাহী জাহাজ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও, ৪০টি অন্যান্য জাহাজেরও বিপুল ক্ষতি হয়। তন্মধ্যে - ৫টি জাহাজ ডুবে যায়, ২৩টি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১২টি জাহাজ সহনীয় মাত্রায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

লেতে আক্রমণে জাপানী বিমানচালকদের বহু আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে, যা বিশেষ আক্রমণকারী দল থেকে ভিন্ন ছিল, তা প্রথম কামিকাযি আক্রমণ নামে বর্ণনা করা হয়েছে। ২১ অক্টোবরের শুরুতে একটি জাপানি বিমান সম্ভবত একটি আইচি ডি৩এ ডাইভ-বোমারু বিমান বা ইম্পেরিয়াল জাপানি আর্মি এয়ার ফোর্সের একটি মিতসুবিশি কি-৫১ বিমান ইচ্ছাকৃতভাবে এইচএমএএস অস্ট্রেলিয়ার মাস্তুলের অগ্রবর্তীস্থানে পড়ে যায়।[১৫][১৬] আক্রমণে ক্রুইজারটির ক্যাপ্টেন এমিলে ডিচেইনেক্স-সহ ৩০ জন নৌ কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার সামরিক কমাণ্ডার কমোডোর জন কলিন্স-সহ ৬৪জন আহত হন।[১৫]

ইউএসএস সোনোমা ২৪ অক্টোবর মহাসাগরে ডুবে যায় যা কিছু সূত্রে কামিকাযি আক্রমণে প্রথম জাহাজ ডুবে যাবার ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু আক্রমণটি সংঘটিত হয় ২৫ অক্টোবরের পূর্বে। এতে মিতসুবিশি জি৪এম বিমান ব্যবহার করা হয় যা মূল চারটি বিশেষ আক্রমণের স্কোয়াড্রনের তালিকায় ছিল না।

আক্রমণের প্রধান ধারা

প্রথম দিককার সাফল্য বিশেষ করে সেন্ট লো ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনায় কামিকাযি আক্রমণের পরিল্পনাটি খুব দ্রুততার সাথে সম্প্রসারণ করা হয়। কয়েক মাসের মধ্যে দু'হাজারেরও বেশি বিমান এ ধরনের আক্রমণের জন্য তৈরী করা হয়।

যখন জাপান কৌশলগতভাবে বি-২৯ বিমানের আগ্রাসন দেখতে পায়, তখন জাপানের সামরিক বাহিনী এই হুমকির বিরুদ্ধে জবাব দিতে আত্মঘাতী হামলার বিষয়টি ব্যবহার করার প্রচেষ্টা চালায়। টোকিও মেট্রোপলিটন এলাকা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে উত্তরের নারিমাসু এয়ারফিল্ড, নেরিমা, টোকিওতে ১৯৪৪-৪৫ সালে ৪৭তম এয়ার রেজিম্যান্ট গঠন করা হয়। এই রেজিম্যান্ট শিনতেন স্পেশাল ইউনিট বা শিনতেন সেইকো তা নামেও পরিচিত ছিল। রেজিম্যান্টটি নাকাজিমা কি-৪৪ শকি (তোজো) যুদ্ধবিমান দিয়ে সজ্জ্বিত ছিল। যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহিনীর বি-২৯ বিমানের আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্য এ বিমানগুলোকে ব্যবহার করা হয়। বিমানগুলোর সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম ছিল কিন্তু ব্যবহারিকভাবে অনেক দ্রুতগামী এবং রণতরীর তুলনায় ছোট লক্ষ্যস্থলে আক্রমণ হানতে সক্ষম ছিল। বি-২৯ বিমানের আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রশস্ত্রসমূহ ছিল তাই জাপানীদের আত্মঘাতী হামলার সফলতা বিমানচালকের দক্ষতার উপরও নির্ভরশীল ছিল। কার্যক্রমটি বিমানচালকের উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারণ ও সাহসী পদক্ষেপের উপর নির্ভরশীল ছিল। কারণ পুরো ব্যাপারটির সাথে জড়িত ব্যক্তিটি যদি সময়োচিত পদক্ষেপ না নেয় তাহলে ফলাফল হিসেবে মৃত্যুমুখে পতিত হতে হবে।

কামিকাযি আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় জাপানী ঘাঁটিতে। ৮ জানুয়ারি ফরমোজায় দাপ্তরিকভাবে ২য় নৌ কামিকাযি দল গঠন করা হয়েছিল। নিতাকা নামের দলটি জিরো এবং জুডি ব্যবহার করেছি এবং এর ঘাঁটি ছিল তাকাও এয়ারফিল্ডে। জাপানী সেনাবাহিনীর শিচিসি মিতাতি বিশেষ দল পালেমবাং, সুমাত্রা থেকে ২৯ জানুয়ারী, ১৯৪৫ সালে সাতটি কাওয়াসাকি কি-৪৮ লিলি নিয়ে ব্রিটিশ প্যাসিফিক নৌবহরে হামলা চালায়। ৬০১তম বিমান দলের ভাইস অ্যাডমিরাল কিমপেই তেরাওকা এবং ক্যাপ্টেন রিশি সুগিয়ামা আরেকটি ২য় বিশেষ দল মিতাতে পরিচালনা করেন এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি আইও জিমায় মার্কিন বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ১১ মার্চ ইউএসএস র‌্যাণ্ডলফ্‌ (সিভি-১৫) আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্যারোলিন দ্বীপের ওলিথি এটল এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কামিকাযি আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছিল জাপান থেকে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার (২,৫০০ মাইল) দূরে। আক্রমণটি অপারেশন তান নং ২ নামে পরিচিত ছিল। ২০ মার্চ ডুবোজাহাজ ইউএসএস ডেভিলফিশ অল্পের জন্য একটি বিমানের আঘাত থেকে বেঁচে যায়।

যুদ্ধ বিমানগুলোকে কামিকাযিদের উপযোগী বিমানে রূপান্তর করা হচ্ছিল এবং ডাইভ বোমারু বিমানগুলোকেও এ উপযোগী করার উদ্দেশ্যে অবকাঠামো পরিবর্তন করা হচ্ছিল। এনসাইন মিতসু ওহতা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে মূল বিমান থেকে লক্ষ্যস্থলে এসে গ্লাইড বোমা বহন করে আক্রমণ করার জন্য, যা প্রক্রিয়াধীন ছিল। ইউকোসুকায় অবস্থিত ফার্স্ট ন্যাভাল এয়ার টেকনিক্যাল ব্যুরো (কুগিশো) ওহতা'র ধারণাকে ঘষে মেজে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। মার্চ ১৯৪৫ সালে কামিকাযি আক্রমণে প্রথম বারের মতো ইউকোসুকা এমএক্সওয়াই৭ ওহকা রকেট প্লেন যুক্ত হয়। মার্কিন সামরিক বিশ্লেষকেরা এর ডাক নাম হিসেবে বাকা বোমা নামে অভিহিত করেন। জাপানী 'বাকা' শব্দের অর্থ ইডিয়ট বা স্টুপিড। বিশেষভাবে নকশাকৃত প্রোপেলার প্লেন হিসেবে নাকাজিমা কি-১১৫ সুরুগি দেখতে ছিল সাধারণ মানের। সহজেই নির্মাণযোগ্য, মজুদকৃত ও ব্যবহৃত ইঞ্জিনকে কাঠের বাক্সবন্দি হিসাবে এ বিমানে রূপান্তর করা হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে জাপানের সামরিক বাহিনী শতশত সুরুগি, অন্যান্য প্রোপেলার বিমান, ওহকা এবং আত্মঘাতী নৌকা মোতায়েন করতে শুরু করে। মিত্রবাহিনী কর্তৃক জাপান আক্রমণের প্রেক্ষাপটেই এ মোতায়েন কার্য্য সম্পন্ন করা হয়। তন্মধ্যে অল্প কিছুসংখ্যক যুদ্ধযানই শুধুমাত্র অব্যবহৃত ছিল।[১৭]

মিত্রবাহিনীর আত্মরক্ষামূলক কৌশল

১৯৪৫ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাস্ট্রের নৌবাহিনীর বৈমানিক জন থাচ কার্যকরী এরিয়্যাল কৌশল প্রয়োগ করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তিনি থাচ উইয়েভের উন্নতি ঘটান যা ছিল কামিকাযিদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক পদ্ধতি। তার এ পদ্ধতিটি বিগ ব্লু ব্লাংকেট নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এর ফলে ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকার ডেস্ট্রয়ার এবং ডেস্ট্রয়ার এসকর্টগুলোর রাডারে বিমানের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভবপর ছিল। চূড়ান্ত পর্যায়ে যুদ্ধবিমানগুলো জাপানীদের বিমানঘাঁটির উপর ঝটিকা হামলা চালায় এবং রানওয়ের উপর বোমা বর্ষণ করে মেরামত কাজকে আরও কঠিন করে তোলে।[১৮]

১৯৪৪ সালের শেষ দিকে ব্রিটিশ প্যাসিফিক ফ্লিট বা বিপিএস উচ্চতা কর্মক্ষমতাসম্পন্ন সুপারমেরিন সিফায়ার নৌ টহলে ব্যবহার করে। সিফায়ারগুলো আইও জিমা'র যুদ্ধে দারুণভাবে কামিকাযিদের আক্রমণ প্রতিহত ও পাল্টা আক্রমণ করার কাজে জড়িত ছিল। সিফায়ারগুলোর শ্রেষ্ঠ দিন ছিল ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে। ঐ দিন তারা আক্রমণ পরিচালনায় নিযুক্ত প্রতিপক্ষের আটটি বিমান ভূপাতিত করে; এর বিপরীতে তাদের কোন ক্ষতিই হয়নি।

দূর্বলমানের প্রশিক্ষণ গ্রহণের কারণে কামিকাযি পাইলটেরা মিত্রবাহিনীর অভিজ্ঞ পাইলটদের কাছে সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। মিত্রবাহিনীর অভিজ্ঞ পাইলটেরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন খুবই বৃহদাকার বিমানবহর থেকে। একমাত্র মার্কিন ফাস্ট ক্যারিয়ার টাস্ক ফোর্স থেকেই এক হাজারেরও বেশি জঙ্গীবিমান আনা হয়েছে এ ধরনের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার জন্য। অবরোধকৃত জাহাজে আক্রমণের পূর্বেই মিত্রবাহিনীর পাইলটেরা শত্রু বিমান ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠে ও পারদর্শিতা দেখায়।

মিত্রবাহিনীর গোলন্দাজেরা কামিকাযিদের আক্রমণ অকার্যকর করার জন্য কৌশলগতভাবে অস্ত্রের কার্যকারিত ও বিকাশ ঘটাতে শুরু করে। হাল্কা ও দ্রুত শত্রুবিমান আক্রমণ প্রতিরোধী বোফোর্স ৪০ মিলিমিটার এবং অরলিকন ২০ মিলিমিটারের কামানগুলো তখনো পর্যন্ত আক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছিল।[১৯] কিন্তু, অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েও ৫"/৩৮ ক্যালিবার বন্দুকগুলোর (১২৭ মিলিমিটার) দূরত্ব আকাশসীমায় কামিকাযিদের বিমানের দূরত্বে পৌঁছতে পারেনি। যদিও কামিকাযিদের কার্যসমাপ্ত হবার পূর্বেই অনেক ক্ষেত্রে বিমানগুলোকে ধ্বংস করতে পেরেছিল এ ক্যালিবারগুলো।[২০] ১৯৪৫ সালের মধ্যে শব্দ তরঙ্গ নির্ভর প্রক্সিমিটি ফিউজে গড়া বৃহৎসংখ্যক শত্রুবিমান আক্রমণ প্রতিরোধী শেল বা গোলা পায়। এ গোলাগুলো ছিল আগের শেলের চেয়ে সাতগুণ বেশি কার্যকর। এর ফলে যুক্তরাস্ট্রের নৌবাহিনী এগুলো দিয়ে কামিকাযি আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সুপারিশ করে।

চূড়ান্ত পর্যায়

এপ্রিল-জুন, ১৯৪৫ সালে ওকিনাওয়া যুদ্ধে কামিকাযি আক্রমণের সূত্রপাত ঘটে। ৬ এপ্রিল, ১৯৪৫ সালে অপারেশন কিকুসুইয়ে (ভাসমান চন্দ্রমল্লিকা) যুদ্ধবিমানের সারিগুলো থেকে শতাধিক আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল।[২১] ওকিনাওয়ায় কামিকাযি আক্রমণ প্রথম চোখে পড়ে মিত্রশক্তির ডেস্ট্রয়ারের প্রহরীদের চোখে। তারপর যুদ্ধবহরের মধ্যস্থলে অবস্থানরত বিমানবাহী জাহাজগুলোতে। ওকিনাওয়ায় বিমান অথবা নৌকা দ্বারা পরিচালিত আত্মঘাতী আক্রমণগুলোয় কমপক্ষে ৩০টি আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ এবং অন্ততঃ তিনটি মার্কিনী বাণিজ্যিক জাহাজসহ মিত্রপক্ষের অন্যান্য জাহাজ ডুবে যায় কিংবা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।[২২][২৩] আক্রমণে ১,৪৬৫টি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস হয়। সকল শ্রেণীর অনেক যুদ্ধজাহাজই কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ওকিনাওয়ায় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ বা ক্রুইজারের কোনটিই কামিকাযি আক্রমণে ডুবে যায়নি।[২২] যুদ্ধজাহাজগুলোর অধিকাংশই ডেস্ট্রয়ার বা ছোট ছোট জাহাজ, বিশেষ করে যেগুলো টহল দিচ্ছিল। ইউএসএস ল্যাফে ডেস্ট্রয়ারটি "এমন জাহাজ, যা কখনো ডুববে না" নামে পরিচিতি ঘটেছিল। এটি যুদ্ধকালীন সময়ে ষোলবার কামিকাযিদের আক্রমণের শিকার হয়েছিল যার মধ্যে পাঁচবার আঘাতপ্রাপ্ত হয় ও অবশেষে ডুবে যায়।[২৪]

ব্রিটিশ প্যাসিফিক নৌবহরের স্টীলের খোলা পাটাতনের তুলনায় যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের কাঠের খোলা পাটাতন কামিকাযিদের আঘাতে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজগুলো কামিকাযিদের কর্মকাণ্ডে তুলনামূলকভাবে বেশি সমস্যায় পড়ে। শুধুমাত্র এক আঘাতেই ইউএসএস বাঙ্কার হিলের ৩৮৯ ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ সংখ্যাটি সম্মিলিতভাবে সমগ্র যুদ্ধের ছয়টি আরএন অস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজে সকল ধরনের আক্রমণের চেয়ে বেশি ছিল। পাঁচটি আরএন অস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজে কামিকাযিদের আটটি আক্রমণে মাত্র বিশটি গুরুতর ক্ষতিসাধন করে। যুদ্ধ শুরুর দিককার আক্রমণে ১৫টি বোমাবর্ষণের ঘটনা ঘটে যেগুলোর অধিকাংশই পাঁচশ কিলোগ্রাম বা ততোধিক ওজনের ছিল ও চারটি বিমানবহরে একটি টর্পেডো নিক্ষিপ্ত হয় যাতে ১৯৩টি গুরুতরভাবে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[২৫][২৬] আক্রমণ প্রতিরোধে পাটাতনের নিম্নস্তরের গুণগত মানই অস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজের এরূপ ক্ষতি বয়ে আনে। উত্তমভাবে সজ্জ্বিত সাঁজোয়াযুক্ত জাহাজকে ৪ মে ভাসানো হলেও ১১:৩০ ঘটিকায় আত্মঘাতী আক্রমণের শিকার হয়। একটি জাপানী বিমান এইএমএস ফরমিডেবল (৬৭) বিমানবাহী জাহাজের উপর অনেক উঁচু থেকে আছড়ে পড়ে এবং ঐ জাহাজটি এন্টি এয়ারক্রাফট গানে সংযুক্ত ছিল।[২৭] এটি গুলিতে আঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে কামিকাযির বিমানটি জাহাজের পাটাতনে পড়ে এবং ৩ মিটার লম্বা, ০.৬ মিটার প্রস্থ এবং ০.৬ মিটারের গভীর গর্তসহ বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। আটজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং আরো ৪৭জন গুরুতর আহত হন। একটি করসেয়ার এবং ১০টি টিবিএফ এভেনগার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তবে, ধীরে ধীরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং ডেকের গর্ত কংক্রিট ও স্টিলের প্লেট দিয়ে মেরামত করা হয়। ১৭:০০ ঘটিকার সময় করসেয়ারকে ভূমিতে উঠাতে সক্ষম হয়। ৯ মে এইএমএস ফরমিডেবল পুনরায় কামিকাযি আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেখানে বিমানবাহী এইচএমএস ভিক্টোরিয়াস (আর৩৮) এবং যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস হাওয়ে (৩২) ছিল। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সদস্যরা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাটাতন পরিষ্কার করে বিমান চালনা উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আমেরিকান বন্ধুদের ঐ একই কাজ সমাপণ করতে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক মাস ব্যয় করতে হতো। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এইচএমএস ইনডিফেটিগেবলে (আর১০) কর্মরত যুক্তরাস্ট্রের নৌবাহিনীর সাথে সংযোগকারী কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন: "যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহী জাহাজে যখন একটি কামাকাযি আক্রমণ হয়, তার মানে এটি মেরামত করতে পার্ল হারবারে ৬ মাসের জন্য রেখে দেয়া হবে"।

কখনো কখনো দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিমানগুলোকেও কামিকাযি আক্রমণের সাথে যুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। যেমন: ফরমোজায় অবস্থিত মধ্যম স্তরের মিতসুবিশি কি-৬৭ হিরাইও (পেগি) বোমারু বিমানগুলোর সাহায্যে ওকিনাওয়ায় অবস্থিত মিত্রপক্ষের ঘাঁটির উপর হামলা চালানো হয়েছিল।

রিয়ার অ্যাডমিরাল মাতোমি উগাকি সম্মিলিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের ২য় কমাণ্ড হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বশেষ কামিকাযি আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। তিনি ৭০১তম বিমান গ্রুপের জুডিসদেরকে ১৫ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তির নৌবহরে হামলা করার জন্য প্রেরণ করেন।

প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল

যুদ্ধ শেষে দেখা যায় যে, কামিকাযি আক্রমণের তীব্রতা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য ও আনুপাতিক হারে মিত্রশক্তির তেমন বেশি গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। ১৯৪৫ সালে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজগুলো খুবই গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। জাপানী নৌবাহিনীর ২,৫২৫জন কামিকাযি পাইলট এবং জাপানী বিমানবাহিনীর ১,৩৮৭জন সদস্য আত্মাহুতি দেন। ১৯৪২ সালের যুদ্ধের তুলনায় তারা অনেক অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যেখানে তারা তিনটি বিমানবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল। ১৯৪২ সালে মার্কিন নৌ জাহাজের দুষ্প্রাপ্যতা ছিল। মূল যুদ্ধ জাহাজের সাময়িক অনুপস্থিতি যুদ্ধাঞ্চলে সক্রিয় হবার উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৪৫ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর বিরাট ক্ষতি হয় ও মেরামতের জন্য জাহাজগুলোকে ফেরত পাঠানো হয়। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে দৃশ্যতঃ তেমন কোন ক্ষতির রেখাপাতঃ সৃষ্টি করতে পারেনি জাপান।[২৮]

কামিকাযিদের আক্রমণে যুদ্ধজাহাজ মেরামতে ব্রিটিশ নৌবাহিনী যুক্তরাস্ট্রের তুলনায় দ্রুত মেরামত ও পুণরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিল। তবে, যুদ্ধ পরবর্তীকালে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে কিছু ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ যেমন: এইচএমএস ফরমিডেবলের বাহ্যিক অবকাঠামো নষ্ট হলেও এ বিষয়ে কোন লেখা হয়নি। এর বিপরীতে সবচেয়ে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস বাঙ্কার হিলকে সাফল্যের সাথে মেরামত করা হলেও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটির আর মেরামতের প্রয়োজন পড়েনি।

ডুবন্ত জাহাজের সংখ্যা নির্ণয় করা সময়সাপেক্ষ ও বিতর্কের ব্যাপার। যুদ্ধকালীন জাপানি প্রচারক দল ঘোষণা করে যে, কামিকাযিদের আক্রমণে শত্রুপক্ষ হিসেবে মিত্রবাহিনীর ৮১টি জাহাজ ডুবে গেছে এবং ১৯৫টি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাপানীদের টালি মোতাবেক, কামিকাযি হামলায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে আমেরিকানদের ৮০% ভাগেরও বেশি লোকসান হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু বইয়ে ঐতিহাসিক উইলমট, ক্রস এবং ম্যাসেঞ্জার বিবৃত করেছেন যে, কামিকাযিদের দ্বারা ৭০টিরও অধিক মার্কিন জাহাজ "ডুবে গেছে অথবা মেরামতের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত" হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বিমান বাহিনীর ওয়েব পৃষ্ঠা অনুযায়ীঃ-

প্রায় ২৮০০ কামিকাযি আক্রমণকারী ৩৪টি নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত করে ৩৬৮টি জাহাজ। ৪,৯০০ নাবিক নিহত ও ৪,৮০০ এরও বেশি আহত হন। রাডারে বিমান সনাক্তকরণ, সঙ্কেত, বায়ুবাহিত বাঁধা এবং বিমান প্রতিরোধী ভারী প্রতিবন্ধক থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধজাহাজে কামিকাযিদের আত্মঘাতী হামলার পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ। এছাড়াও, কামিকাযিদের প্রায় ৮.৫ শতাংশ আক্রমণে সকল ধরনের জাহাজ আঘাতগ্রস্ত হয়ে ডুবে যায়।[২৯]

অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ডেনিস এবং পেগি ওয়ার্নার জাপানি জাহাজ বিষয়ক ঐতিহাসিক সেনো সাদাওকে সাথে নিয়ে ১৯৮২ সালে দ্য সেক্রেড ওয়ারিয়র্স: জাপান'স সুইসাইড লিজিওনস নামে একটি বই লিখেন। এতে কামিকাযিদের আক্রমণে বিপক্ষের সর্বমোট ৫৭টি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসের কথা উল্লেখ করা হয়। তবে, আমেরিকান ও জাপান বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষ করে কামিকাযিদের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিল গর্ডন ২০০৭ সালে একটি নিবন্ধ লিখেন। এতে তিনি কামিকাযিদের আক্রমণে ৪৭টি জাহাজ জলে নিমগ্ন হবার কথা তুলে ধরেন।.[৩০] গর্ডন বলেন যে, "ওয়ার্নার এবং সেনো অতিরিক্ত দশটি জাহাজের কথা লিখেছেন যা আদৌ ডুবে যায়নি"। তিনি এ বিষয়ে নিম্নরূপ তালিকা উপস্থাপন করেনঃ-

  • তিনটি সহচর জাহাজ: ইউএসএস সেন্ট লো (সিভিই-৬৩), ইউএসএস ওম্যানে বে (সিভিই-৭৯) এবং ইউএসএস বিসমার্ক সী (সিভিই-৯৫)
  • ২৯ জুলাই, ১৯৪৫ সালে ওকিনাওয়ায় ডুবে যাওয়া শেষ জাহাজ ইউএসএস কালাঘান (ডিডি-৭৯২)সহ ১৪টি ডেস্ট্রয়ার।
  • তিনটি উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন জাহাজ।
  • পাঁচটি ল্যান্ডিং শিপ, ট্যাঙ্ক।
  • চারটি মধ্যমস্তরের ল্যান্ডিং শিপ।
  • তিনটি মধ্যমস্তরের ল্যান্ডিং শিপ (রকেট)।
  • একটি সহায়ক পেট্রোলিয়াম ট্যাঙ্কার।
  • তিনটি কানাডিয়ান ভিক্টরী শিপ।
  • তিনটি লিবার্টি শিপ।
  • দুইটি উচ্চ গতিসম্পন্ন মাইন পরিষ্কারক।
  • একটি অক ক্লাস মাইন পরিষ্কারক।
  • একটি সাবমেরিন ধাওয়াকারী।
  • দুইটি পিটি বোট।
  • দুইটি মাইন পরিষ্কারক ও বিমান অবতরণকারী।

তিনশতেরও অধিক মিত্রবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ কামিকাযিদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নিয়োগের প্রেক্ষাপট

জাপানি সামরিক বাহিনী দাবী করেছিল যে, ঐ সময় অনেক স্বেচ্ছাসেবক আত্মঘাতী বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। ক্যাপ্টেন মোতোহারু ওকামুরা বিবৃতি দেন যে ঐ সময়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবী আত্মঘাতী আক্রমণের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং তিনি তাদেরকে এক ঝাঁক মৌমাছির সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন যে, কাউকে দংশন করে মৌমাছি মরে যায়।[৩১] প্রথম কামিকাযি আক্রমণের ধারণা উত্থাপনের জন্য ক্যাপ্টেন মোতোহারু ওকামুরাকে সম্মানিত করা হয়। তিনি আত্মঘাতী আক্রমণে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্যে তার ইচ্ছা ও মতামত ব্যক্ত করেন। আক্রমণের চার মাস পূর্বেই তিনি ফিলিপাইনে নিযুক্ত জাপানের নৌ-বিমানবাহিনীর কমাণ্ডার অ্যাডমিরাল তাকিজিরো ওনিশি'র কাছে তার কর্মীদের ঘিরে এ ধারণা উপস্থাপন করেন। এছাড়াও, ২য় বিমানবাহী নৌবহরের কমাণ্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল শিগেরু ফুকুদোমি ৩৪‌১তম বিমান দলের ক্যাপ্টেন ওকামুরা'র সুযোগটি লুফে নেন এবং তার সংঘর্ষ-ঝাঁপ কৌশলের ধারণা সম্পর্কে নিজ মতামত ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনঃ

"বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে আমাদের বিমানগুলোকে নিয়ে সংঘর্ষ-ঝাঁপ পদ্ধতি অনুসৃত করে আক্রমণ করতেই হবে। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য এ সূবর্ণ সুযোগটি গ্রহণ করতেই হবে এবং এর জন্যে পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীতো রয়েছেই। আমি এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি। আমাকে ৩০০ বিমান বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করা হউক। কথা দিচ্ছি আমি যুদ্ধের গতিধারা পরিবর্তন করে দেব।"[৩২]

যখন স্বেচ্ছাসেবকগণ সৈন্যদলে যোগ দিতে আসলেন, দেখা গেল যে বিমান সংখ্যার দ্বিগুণ সংখ্যক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হয়েছেন। অনেক কামিকাযি পাইলটদের বিশ্বাস ছিল যে, যদি এ ধরনের মৃত্যু হয় তাহলে দেশের প্রতি তাদের ঋণ শোধ হবে এবং পরিবার, বন্ধু এবং সম্রাটের জন্য তাদের ভালবাসারও বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

সময় পরিক্রমায় আধুনিক সমালোচকেরা কামিকাযি পাইলটদের জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় মহৎ সৈনিক হবার লক্ষ্যে কামিকাযি পাইলটদের জীবন বিসর্জনের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০০৬ সালে ইয়োমিউরি শিমবুনের প্রধান সম্পাদক সুনিও ওয়াতানাবি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কামিকাযি আক্রমণের সমালোচনা করেন।[৩৩][৩৪] তিনি বলেন:

প্রশিক্ষণ

"যখন আপনি জীবন এবং মৃত্যু সম্পর্কে সকল প্রকার চিন্তা-ভাবনা দূরে রাখবেন, তখন আপনি পার্থিব জীবনের সকল কিছুকে অবজ্ঞা করে অগ্রসর হবেন। এটি আপনাকে শত্রু বিমান ধ্বংস করার জন্যে গভীর মনোযোগ ও স্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাবে। এছাড়াও, এতে আপনার বিমান চালনায় দক্ষতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।" - কামিকাযি পাইলটদের পুস্তিকা থেকে উদ্ধৃতাংশ।

কাসুগা তাকিও তোক্কোতাই পাইলট প্রশিক্ষণের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে[৩৫] -

"সাধারণত প্রচণ্ডভাবে শ্রমসাধ্য প্রশিক্ষণ, নিষ্ঠুরতা এবং নির্যাতনকে প্রতিদিনের তালিকায় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সুচিওরা নৌ বিমান ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণরত আইরোকাওয়া দাইকিচিকে তোক্কোতাই পাইলট প্রশিক্ষণে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি মুখে এমন শক্ত আঘাত পান যে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত তাকে চেনাই যায়নি।" তিনি আরো লিখেছিলেন: "আমি এমন শক্ত আঘাত পাই যে বেশ কিছুক্ষণ কোনকিছু দেখতে পাইনি এবং মেঝেতে পড়ে যাই। যে মুহুর্তে আমি দাঁড়াই, তৎক্ষণাৎ পুনরায় আঘাত পাই। ফলে, আমি বাধ্য হয়েছিলাম কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে। এই নির্দয় প্রশিক্ষণের ফলে চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তিত হয়ে সৈনিকদের মধ্যে যুদ্ধের স্পৃহাবোধ জন্মাবে। কিন্তু, প্রাত্যহিক নির্যাতন এবং সৈনিকদের শাস্তির বিষয়টি অনেক পাইলটের মধ্যেই স্বদেশপ্রেমের ভাবনা দূরীভূত হয়।"[৩৬]

পাইলটদেরকে একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকায় তাদের চিন্তা-ভাবনা, প্রস্তুতি পর্ব এবং আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে করণীয় সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে লেখা ছিল। ঐ সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা পড়ে পাইলটদেরকে "উঁচুমাত্রার আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ" এবং খুবই ভালভাবে তাদের শরীরকে সুস্থভাবে রাখার জন্য বলা হতো। ঐ বিষয়গুলোর মাধ্যমে তাদেরকে মানসিকভাবে মৃত্যুর জন্য মনস্থির রাখার কথাই মূলতঃ বোঝানো হয়েছিল।

তোক্কোতাই বিমানচালকদের সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে আরও ব্যাখ্যা করা ছিল - একজন পাইলট যদি খালি হাতে ফিরে আসে অর্থাৎ যদি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে না পারে এবং একজন পাইলট তার জীবনকে মূল্যবান মনে করে তার ফলাফল কি হতে পারে! যাইহোক, একজন পাইলট যদি একাধিক্রমে ঘাটিতে ফিরে আসে তাহলে নবমবারের প্রত্যাবর্তনে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হতো।[৩৬]

সংক্ষিপ্ত পুস্তিকায় পাইলটকে কীভাবে আক্রমণ করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা ছিল। একজন পাইলটকে তার লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পড়তে হবে এবং জাহাজের ব্রীজ টাওয়ার ও ধুম্রকণ্ডলীর মধ্যেই দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে। ধূম্রকুণ্ডলীতে প্রবেশ করেই "কার্যকরী" বলতে হবে। পাইলটদেরকে বলা হয়েছিল যে তারা যেন জাহাজের ক্যাপ্টেনের কক্ষে বা বন্দুকের চূড়াকে উপলক্ষ করে অগ্রসর না হয়ে পাটাতনের উপরে লক্ষ্যস্থল নির্ধারণ করে। আনুভূমিক হামলার ক্ষেত্রে পাইলটকে জাহাজের মধ্যস্থলে জলরেখার চেয়ে সামান্য উঁচু জায়গা অথবা বিমান রাখিবার স্থানে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।

ঐ সংক্ষিপ্ত বইয়ে উল্লেখ রয়েছে যে, পাইলটেরা তাদের চোখ কখনো বন্ধ করে না। এর সম্ভাব্য কারণ হলো - যদি পাইলট তার চোখ বন্ধ করেন তাহলে তিনি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সম্ভাবনাকে ক্ষীণতর করে তোলেন। সংঘর্ষে লিপ্ত হবার চূড়ান্ত মুহুর্তে পাইলট তার ফুসুফুসের উপরে ধরে জোরে হিস্সাতসু বলে চিৎকার করে উঠেন। এর অর্থ হচ্ছে অকৃতকার্য না হয়ে ডুবিয়ে দাও।[৩৭][৩৮]

সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে

১৯৪৪-৪৫ সালে জাপানিরা প্রচন্ডভাবে শিন্তো বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। অন্যান্য বিষয়ের মতো সম্রাটের উপাসনা করাও শিন্তো বিশ্বাসের পর মিইজি শাসনামল থেকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় শিন্তো ধর্ম জাতীয়তাবাদী আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ১৮৯০ সালে শিক্ষায় সাম্রাজ্যের অনুশাসন অনুমোদিত হয়। এর অধীনে ছাত্রদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করতে হয় যে, "রাষ্ট্রীয় বীর হতে নিজেকে অনুপ্রাণিত করবো; বিশেষতঃ সম্রাটের পরিবারকে রক্ষা করবো। বিকল্প প্রস্তাবনা ছিল নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়া। মাতৃভূমি জাপান কিংবা সম্রাটের জন্য মৃত্যুবরণ করা ছিল অত্যন্ত সম্মানের। এক্সেল এবং ক্যাজ খুঁজে বের করেছেন যে, "প্রকৃতপক্ষে অগণিতসংখ্যক সৈনিক, নাবিক এবং পাইলটেরা মৃত্যুর জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুত ছিলেন যা দেশের অভিভাবকত্বের জন্য উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করেছিল। অনেক জাপানিই অনুভব করেছিল যে ইয়াসুকুনি'র প্রতীকি বা প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিশেষ সম্মান পাওয়া যাবে। এরফলে সম্রাট বছরে দুইবার মঠে নিজে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে তাদের ঋণ পরিশোধ করেন। ইয়াসুকুনি হচ্ছে একমাত্র প্রতীক যার মাধ্যমে সম্রাট তার ঋণ পরিশোধের জন্য মঠ পরিদর্শনে আসেন। জাপানের তরুণ প্রজন্ম খুব অল্প বয়স থেকেই এই আদর্শ ও মতবাদকে গ্রহণ করেছিল।[৩১]

কামিকাযি যুদ্ধকৌশল ধারণা উদ্ভাবনের পর আত্মঘাতী বোমারুদের ঘিরে সংবাদপত্র এবং বইয়ে বিজ্ঞাপন, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যা সদস্য নিয়োগ ও সমর্থনে সাহায্য করেছিল। অক্টোবর ১৯৪৪ সালে নিপ্পন টাইমসে লেফট্যানেন্ট সিকিও নিশিনা'র বিবৃতি প্রকাশিত হয়। এতে তিনি বলেন, "বিশেষ আক্রমণকারী দলের সদস্যরা হচ্ছেন এমন এক ধরনের পূণ্যাত্মা যা প্রতিটি জাপানীর শিরা-উপশিরায় বয়ে চলছে। সংঘর্ষ পরিচালনার মাধ্যমে একযোগে শত্রু বধ করা হবে এবং একজন সদস্যও অকৃতকার্য হবেন না, তাকেই বিশেষ আক্রমণ বলে। প্রতিটি জাপানীকেই বিশেষ আক্রমণকারী দলের সদস্য হবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।"[৩৯] এছাড়াও প্রকাশকেরা কামিকাযি ধারণাকে ইয়াসুকুনি'র প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরেন এবং কামিকাযিদের সাহসিকতা সম্বন্ধে অতিরঞ্জিত গল্প প্রকাশ করতে থাকেন। এ ধরনের গল্পগুলো ছিল শিশুতোষ কল্পকাহিনীকেও হার মানার মতো যা কামিকাযি হতে উদ্দীপনা যোগাতো। বিদেশে কর্মরত একজন কর্মকর্তা তোশিকাজো কাসে বলেন: "এটি ছিল টোকিওর সদর দফতর থেকে বিজয়ের ঘটনা তুলে ধরার গতানুগতিক মিথ্যা ঘোষণা যা জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য করা হতো"।[৪০]

কামিকাযিদের ঘিরে অনেক গল্পই মিথ্যায় ভরপুর থাকলেও কিছু কিছু গল্পের সত্যতা ছিল। যেমনঃ কিয়ো ইশিকাওয়া একটি আমেরিকান সাবমেরিন থেকে নিক্ষিপ্ত টর্পেডোতে তার বিমান ধ্বংস করেন। এতে করে জাপানীদের একটি জাহাজ নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। সার্জেণ্ট মেজর এ ঘটনার বিষয়ে সেকেণ্ড লেফটেন্যান্টের মাধ্যমে সম্রাটের কাছে জানান এবং তা ইয়াসুকুনি'র প্রতিচ্ছবি হিসেবে মর্যাদা পায়।[৪১] এ ধরনের গল্পগুলোয় প্রশংসা এবং সম্মানজনক মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। এর ফলে তরুণ জাপানীরা বিশেষ আক্রমণকারী দলের সৈনিক হতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং যৌবনে অবস্থান করেই কামিকাযি হতে উৎসাহিত হয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছিল। এ সকল গল্পের ন্যায় প্রার্থনা এবং সম্মানজনক মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে তরুণ জাপানীরা বিশেষ আক্রমণকারী দলের স্বেচ্ছাসেবী হতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। তারা বিমান উড্ডয়নের পূর্বে নাম্বু পিস্তল অথবা কাতানা সাথে নিতো এবং সাকি পানীয় গ্রহণ করতো। ক্রমবর্ধমান সূর্য প্রতীকের হাচিমাকি নামক একটি মাথায় বাঁধার ফিতা পরিধান করতো তারা। এছাড়াও, একটি সেনিনবারি নামে এক ধরনের বেল্টও পরিধান করতো যা ছিল এক হাজার মহিলা কর্তৃক এক ফোঁড়ের সাহায্যে তৈরী করা।[৪২] তারা মৃত্যুর কবিতা রচনা করাসহ পাঠ করতো যা ছিল ঐতিহ্যবাহী সামুরাইদের প্রথাগত বৈশিষ্ট্য। বিমান চালকেরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিতেন এবং সামরিক কুচকাওয়াজ গ্রহণ করতেন।

১,০৩৬ জাপানী সামরিক বাহিনীর কামিকাযি পাইলট চিরান এবং অন্যান্য জাপানী বিমান ঘাঁটি থেকে ওকিনাওয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মারা যান। তন্মধ্যে ১১জন ছিলেন কোরিয়া'র অধিবাসী।[৪৩][৪৪]

কিংবদন্তি অনুসারে, নবীন বিমানচালকগণ কামিকাযি মিশনে যাবার সময় প্রায়ই জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পর্বত মাউন্ট কাইমনের (উচ্চতাঃ ৯২২ মিটার বা ৩,০২৫ ফুট) উপর দিয়ে যেতো। এই পর্বতটিকে সাতসুমা ফুজি নামেও ডাকা হয়। এর অর্থ দাঁড়ায় এমন এক পর্বতমালা যা মাউন্ট ফুজি'র অনুরূপ কিন্তু তা সাতসুমা অঞ্চলে অবস্থিত। আত্মঘাতী দলের পাইলটেরা তাদের কাঁধ পর্বতটিকে দেখাতেন। জাপানীদের প্রধানভূমির কাছেই দক্ষিণের পর্বতমালাগুলো অবস্থিত। তারা আকাশে ভাসমান অবস্থায় তাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদায়সহ পর্বতটিকে সম্মান জানাতেন।

আমামি ওশিমা'র পূর্বে অবস্থিত কিকাইশিমা দ্বীপের অধিবাসীরা বলেন যে, আত্মঘাতী হামলায় জড়িত বিমানচালকেরা আকাশ থেকে ফুল হয়ে মাটিতে পড়ছেন যেন তারা তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যে পুনরায় যেতে পারেন। কিংবদন্তি অনুসারে কিকাইশিমা বিমানবন্দরের পাশের পাহাড়ে ভুট্টা শষ্যের খামার আছে যা মে মাসের শুরুতে পুষ্পে ভরে যায়।[৪৫]

ঐ সময়ের সাথে জড়িত কিছু বিশিষ্ট জাপানি সামরিক ব্যক্তিত্ব যুদ্ধ পরবর্তীকালে কামিকাযিদের আত্মাহুতি নীতির ব্যাপক সমালোচনা করেন। আইজেএনের অন্যতম প্রভাবশালী হিসেবে সাবুরো সাকাই বলেছিলেনঃ

উদ্ধৃতি

আমি আকাশ যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করতে পারি না। বিশেষ আক্রমণ পরিচালনা যদি শুরু করা হয় সাধারণ পদ্ধতির মাধ্যমে তাহলে কিন্তু আপনি ভুল করবেন। আক্রমণের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে শত্রুর উপর দক্ষ ও নিখুঁতভাবে আক্রমণ করা এবং ভাল ফলাফল নিয়ে ঘাঁটিতে পুনরায় ফিরে আসা। একটি যুদ্ধ বিমানকে বারবার ব্যবহার করা হতে পারে। তাহলেই এটি হবে যুদ্ধে লড়াই করার সঠিক পদ্ধতি। বর্তমান চিন্তা-ভাবনা সেখানে অকার্যকর। অন্যথায়, আপনি আকাশ যুদ্ধে প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা সম্পর্কে ভাল কিছু আশা করতে পারেন না। সেখানে কোনও উন্নতি নেই যেখানে বিমানচালকেরা প্রতিনিয়তই মারা যান। - লেঃ কমাণ্ডার আইওয়াতানি, তাইও (ওশেন) ম্যাগাজিন, মার্চ ১৯৪৫।[৪১]

প্রাচীন দার্শনিকেরা আলোচনার সহজপন্থা হিসেবে মৃত্যুর বিমূর্ত রূপ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। কিন্তু এটি যদি প্রকৃত মৃত্যু হয়, আমি ভয় পাই এবং আমি জানি না এ ভয়কে অতিক্রম করতে পারব কি-না। এমনকি এ সংক্ষিপ্ত জীবনেও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যার একটি সুন্দর জীবন আছে, তার জন্যে এটিকে এর অংশ হিসেবে বেছে নেয়া খুব কঠিন। কিন্তু আমি এমন একটি কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পৌঁছেছি যে সেখান থেকে ফেরার কোন রাস্তা নেই। আমাকে অবশ্যই শত্রু পক্ষের যে-কোন একটি রণতরী ডোবাতে হবে। মন থেকে বলছি, আমি সম্রাটের সত্যান্বেষী স্বপ্নের ইচ্ছাকে বাস্তবে পরিণত করতে মরার জন্য বলিনি। আমার মন থেকে যা এসেছে তাই বলেছি। যাইহোক, আমাকে সম্রাটের জন্য মরতে হবে এ সিদ্ধান্তই এসেছিল। - হেয়াশি ইচিজো[৪৬]

চলচ্চিত্রায়ণ

  • সাইগো নো তুক্কোতাই আকা দ্য লাস্ট কামিকাযি (১৯৭০): পরিচালনায় ইয়াহাগি তোশিহিকো। অভিনয় করেছেন - কোজি সুরুতা, কেন তাকাকোরা এবং শিনিচি চিবা।
  • মাসামি তাকাহাশি, লাস্ট কামিকাযি টেস্টিমোনিয়ালস্‌ ফ্রম সুইসাইড পাইলটস্‌ (ওয়াটারটাউন, এমএ: ডকুমেন্টারী এডুকেশনাল রিসোর্সেস, ২০০৮)।
  • রিজা মোরিমোতো, উইংস্‌ অব ডিফিট (হ্যারীম্যান, নিউইয়র্ক: নিউ ডে ফিল্মস্‌, ২০০৭)।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ