কায়াহ রাজ্য

কায়াহ (বর্মী: ကယားပြည်နယ်; পূর্বে কারেনি রাজ্য নামে পরিচিত) মিয়ানমারের একটি রাজ্য। এটি পূর্ব মিয়ানমারে অবস্থিত। এর উত্তরে শান রাজ্য, পূর্বে থাইল্যান্ডের মায়ে হং সন প্রদেশ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে কায়িন রাজ্য অবস্থিত। এটি প্রায় ১৮°৩০′ এবং ১৯°৫৫′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৬°৫০ ′ এবং ৯৭°৫০′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর ক্ষেত্রফল ১১,৬৭০ বর্গ কিমি (৪,৫১০ বর্গ মাইল)। এর রাজধানী লোইকাও (লোই-কাও হিসেবেও লেখা হয়)। ইউনিসেফের মতে ১৯৯৮ সালে এখানে আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ২,০৭,৩৫৭ জন। এখানে মূলত কারেনি নৃগোষ্ঠী বসবাস করে। তারা রেড কারেন[৩] বা চীনা-তিব্বতি গোষ্ঠী কায়াহ নামেও পরিচিত।

কায়াহ রাজ্য
ကယားပြည်နယ်
রাজ্য
কায়াহ রাজ্যের পতাকা
পতাকা
মিয়ানমারের মধ্যে কায়াহ রাজ্যের অবস্থান
মিয়ানমারের মধ্যে কায়াহ রাজ্যের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ১৯°১৫′ উত্তর ৯৭°২০′ পূর্ব / ১৯.২৫০° উত্তর ৯৭.৩৩৩° পূর্ব / 19.250; 97.333
দেশ মিয়ানমার
অঞ্চলদক্ষিণপূর্ব
রাজধানীলোইকাও
সরকার
 • অস্থায়ী মুখ্য মন্ত্রীবস কো (গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় লীগ)
 • মন্ত্রিপরিষদকায়াহ রাজ্য সরকার
 • শাসন বিভাগকায়াহ রাজ্য হাই কোর্ট
আয়তন
 • মোট১১,৭৩১.৫ বর্গকিমি (৪,৫২৯.৬ বর্গমাইল)
এলাকার ক্রম১৩তম
জনসংখ্যা (২০১৪ মিয়ানমার আদমশুমারি)[১]
 • মোট২,৮৬,৬২৭
 • ক্রম১৫তম
 • জনঘনত্ব২৪/বর্গকিমি (৬৩/বর্গমাইল)
বিশেষণকায়াহান
নৃগোষ্ঠী ও ধর্ম
 • নৃগোষ্ঠীকায়াহ, কাড়েন, পাদাউং, বামার, শান, পা-ও
 • ধর্মবৌদ্ধধর্ম ৪৯.৯%
খ্রিস্টধর্ম ৪৫.৮%
সর্বপ্রাণবাদ ১.৯%
ইসলাম ১.১%
হিন্দুধর্ম ০.১%
অন্যান্য ধর্ম ১.২%
সময় অঞ্চলমায়ানমার মান সময় (ইউটিসি+০৬:৩০)
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৭)০.৫৮৫[২]
মাঝারি · তৃতীয়
ওয়েবসাইটwww.kayahstate.gov.mm

ভূগোল

কায়াহ রাজ্য মিয়ানমারের পূর্ব দিকে অবস্থিত। কায়াহ রাজ্যটি দাওনা পর্বতশ্রেণী ও কারেন পর্বত নিয়ে একটি পার্বত্য অঞ্চল। কারেন পর্বত ''কারেনি-কারেন'' পর্বত নামেও পরিচিত। সালুইন নদী কায়াহ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কারেন পর্বতশ্রেণীকে পৃথক করে।[৪] বালু চাউং নদী ইনলে হ্রদ থেকে প্রবাহিত হয়ে থান লুইন নদীতে প্রবাহিত হয়। এরপর এটি কায়ান রাজ্যের দক্ষিণে সালুইন নদীর সাথে মিলিত হয়।

১৯৫০ সালে জাপানের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হিসাবে নির্মিত লওপিতা বাঁধটি একটি প্রধান জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাঁধ যা মিয়ানমারে মোট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ উৎপাদন করে।[৫]

ইতিহাস

১৯ শতাব্দী এবং ব্রিটিশ শাসন

পূর্বে একদল রাজ্যকে 'কারেনি স্টেটস' নাম দেওয়া হয়েছিল যার মধ্যে কান্তারাওয়াদি, কিয়েবোগইয়ি এবং বাওলাকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই রাজ্যগুলো ফেডারেটেড শান স্টেটসের দক্ষিণে এবং ব্রিটিশ বার্মার পূর্বে ছিল। ১৯৩০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, রাজ্যগুলোর মোট জনসংখ্যা ছিল ৫৮,৭৬১ জন। এর মধ্যে কান্তারাওয়াদিতে ছিল ৩০,৬৭৭ জন; কিয়েবোগইয়িতে ছিল ১৪,২৮২ জন; বাওলাকে ছিল ১৩,৮০২ জন। রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রফল ছিল:

  • কান্তারাওয়াদি- ৮,১৯০ বর্গ কিমি. (৩,১৬১ বর্গ মাইল)
  • কিয়েবোগইয়ি- ২,০০০ বর্গ কিমি. (৭৯০ বর্গ মাইল)
  • বাওলাকে- ১,৪৭০ বর্গ কিমি. (৫৬৮ বর্গ মাইল)

বর্মী রাজা মিনডন মিনের সাথে ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৫ সালের চুক্তিতে কারেনি রাজ্যের স্বাধীনতার স্বীকৃতি ও নিশ্চয়তা দিয়েছিল।[৩] এর মাধ্যমে উভয় পক্ষই এই অঞ্চলটিকে কোনবাউং বার্মা বা গ্রেট ব্রিটেনের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলস্বরূপ, কারেনি রাজ্যগুলো কখনই পুরোপুরি ব্রিটিশ বার্মায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৮৯২ সালে কেরেনি রাজ্যগুলি ব্রিটিশ বার্মার অংশ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল,[৩] যখন তাদের শাসকরা ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে উপবৃত্তি গ্রহণ করতে রাজি হন। ১৯৩০-এর দশকে, বাওলাকে মাওচি খনি ছিল বিশ্বের টাংস্টেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

১৯৮৮ সালে স্বাধীনতা

১৯৪৭ সালে বার্মা ইউনিয়নের সংবিধানে ঘোষণা করা হয়েছিল যে তিনটি কারেনি রাজ্যকে ইউনিয়নের একক রাজ্যে একীভূত করা হবে, যার নাম কারেনি রাজ্য। ১০ ​​বছর পরে ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়েছিলো।

১৯৪৮ সালের আগস্টে, বার্মার ইউনিয়নে কারেনি রাজ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সেনা কারেনি নেতা ইউ বি হচতু রেকে হত্যা করেছিল। সেই রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল যা আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে।

১৯৫২ সালে মং পাই রাজ্যকে (১৯০১ সালে জনসংখ্যা ১৯,৩৫১ জন) কারেনি রাজ্যে যুক্ত করা হয়েছিল এবং পুরো রাজ্যটিকে কায়াহ নামকরণ করা হয়েছিল। এটি সম্ভবত কারেনি (কায়াহ রাজ্যে) এবং কারেনদের মধ্যে (কায়িন রাজ্যে) বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। উভয় গোষ্ঠীই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল।

১৯৫৭ সালে, সক্রিয় স্বাধীনতাপন্থী দলগুলো কারেনি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টি (কেএনপিপি) গঠন করেছিল, যার কারেনি আর্মি (কেএ) নামক নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল। ১৯৯৫ সালে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি ছাড়া, কেএ তখন থেকেই লড়াই করে যাচ্ছে। কেএনপিপি-র প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে বামপন্থী কায়ান নিউ ল্যান্ড পার্টি (কেএনএলপি), এবং কারেনি ন্যাশনাল পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (কেএনপিএলএফ) রয়েছে। উভয়ই এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে জোটবদ্ধ।

১৯৮৮ সালের পর

১৯৯৬ সালে মিয়ানমারের রাজ্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার কাউন্সিল (এসএলওআরসি) জনসংখ্যা স্থানান্তর কর্মসূচির মাধ্যমে কারেনির স্বাধীনতা নষ্ট করার অভিযান ত্বরান্বিত করেছিল। স্বাধীনতাপন্থী বাহিনীকে দুর্বল করার জন্য তারা গ্রামবাসীকে জোরপূর্বক অন্য স্থানে স্থানান্তর করিয়েছে। মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

নৃগোষ্ঠী ও ধর্ম

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.±%
১৯৭৩১,২৬,৫৭৪—    
১৯৮৩১,৬৮,৪২৯+৩৩.১%
২০১৪২,৮৬,৬২৭+৭০.২%
উৎস: ২০১৪ মিয়ানমার আদমশুমারি[১]
কায়াহ গোষ্ঠীর ৯টি উপগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি।

নৃবিজ্ঞানীরা কায়াহ রাজ্যের স্থানীয় গোষ্ঠী হিসেবে সাত থেকে দশটি নৃগোষ্ঠীকে (উপ-গোষ্ঠীগুলো বাদে) শ্রেণিবদ্ধ করেন। এছাড়াও শান, ইন্তা এবং বামার গোষ্ঠী উত্তরে এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে পা-ও গোষ্ঠী বাস করে। প্রতিটি নৃগোষ্ঠী একাধিক নামে পরিচিত। কায়াহ রাজ্যে জাতিসত্তা একটি জটিল সমস্যা, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। জাতিসংঘ এবং বর্মী সরকার পরিচালিত ১৯৮৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে কায়াহ রাজ্যে কায়াহ গোষ্ঠী ৫৬.১২%, বামার (১৭.৫৮%), শান (১৬.৬৬%), কারেন (৬.৪৫%), মিশ্র জাতি (২.০৮%) এবং অন্যান্য নৃগোষ্ঠী সংখ্যালঘু। নৃ-ভাষাবিদগণ কায়াহ রাজ্যের মানুষকে নিম্নলিখিত ভাষাগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করে:

  1. কারেনি/কায়াহ
  2. পাদাউং (কায়াং)
  3. বুয়ে
  4. গেবা
  5. মানুমানাও
  6. ইয়ান্তালে
  7. যায়েইন (লাহতা)
  8. গেকো
  9. ইয়িনবাও
  10. পাকু (কারেন)

ধর্ম

কায়াহ রাজ্যের ধর্ম (২০১৫)[৬]

  বৌদ্ধধর্ম (৪৯.৯%)
  উপজাতি ধর্ম (১.৯%)
  অন্যান্য ধর্ম (১.২%)
  ইসলাম (১.১%)

কায়ানদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মকে কান খোয়ান বলা হয়। ব্রোঞ্জ যুগে মানুষ মঙ্গোলিয়া থেকে বসতি স্থাপনের সময় থেকে এই ধর্ম প্রচলিত ছিল।[৭] এই ধর্মে এই বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে একটি মহিলা ড্রাগন এবং একটি পুরুষ মানব/ফেরেশতা মধ্যে মিলনের ফলে কায়ানরা সৃষ্টি হয়েছে।[৮]

প্রধান ধর্মীয় উৎসবটি হলো তিন দিনের কা হেতেইন বো উৎসব। উৎসবটি এই বিশ্বাসকে স্মরণ করে যে স্রষ্টা পৃথিবীতে একটি ছোট্ট দণ্ড রোপণের মাধ্যমে বিশ্বকে রূপ দিয়েছেন। মার্চ মাসের শেষের দিকে বা এপ্রিলের শুরুতে এই উৎসব চলাকালীন, একটি কে হোতে বো নামক লম্বা দণ্ড তৈরি করা হয় এবং অংশগ্রহণকারীরা দণ্ডটির চারপাশে নাচে।[৭][৯] এই উৎসবটি অনন্ত ঈশ্বর এবং দেবদূতের উপাসনা করার জন্য, বছরের আশীর্বাদের জন্য ধন্যবাদ জানাতে, ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এবং বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন গ্রামের কায়ানদের সংহতি বজায় রাখতে একত্রিত হওয়ারও এটি একটি সুযোগ।

কায়ানের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি দৃড় বিশ্বাস আছে এবং খড়ের ঘাস ভেঙে ফেলা সহ সব কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়া করা হয় না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো মুরগির হাড়ের সাথে পরামর্শ করা।[১০]

বর্তমান সময়ে, বার্ষিক কা হোতেইন বো উৎসবে আগামী বছরের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য মুরগির হাড় দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। ভবিষ্যদ্বাণী করতে স্বপ্নও ব্যবহৃত হয়।

রাজনীতি

মিয়ানমারে অন্যান্য সংখ্যালঘু জনসংখ্যার রাজ্যের মতো, কায়াহ রাজ্যেও বর্মী সামরিক জান্তা এবং বর্মী সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আছে।

অভিযোগ করা হয়েছে যে গ্রামবাসীরা ধর্ষণ, মারধর, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা ফাঁসি, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাস হিসাবে নথিভুক্তকরণ এবং বিনা ক্ষতিপূরণে তাদের খাবার ও সম্পত্তি গ্রহণের ক্রমাগত হুমকির মধ্যে বাস করে।

"এসপিডিসি নির্বিচারে কারেনি রাজ্যে বেসামরিক যাতায়াতের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং গ্রামবাসীদের চলাচলকে আরও সীমাবদ্ধ করে দেয়। গ্রামবাসীদের চলাচল নিষিদ্ধ করার জন্য প্রায়শই রাস্তা বরাবর ল্যান্ডমাইন লাগানো হয়।এমনকি বৈধ ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও গ্রামবাসীরা অপব্যবহার এবং শোষণের শিকার হন। সেখানে ভ্রমণের অনুমতি প্রাপ্ত গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ধর্ষণ করার খবর পাওয়া গেছে। গ্রামবাসীরা যখন তাদের সম্প্রদায়ের বাইরে ছিল তখন তাদের গুলিও করা হয়েছে।''[১১]:[২৭]

এটিও অভিযোগ করা হয়েছে যে স্থানান্তর কেন্দ্রগুলোতে পানি, খাদ্য, চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষামূলক সুযোগের অভাব রয়েছে। আনুমানিক ৫০,০০০ কারেনি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে উচ্ছেদকৃত জনগোষ্ঠী এবং আরও হাজার হাজার মানুষ থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন।

"বর্তমানে কারেনি রাজ্যে আটটি বাধ্যতামূলক স্থানান্তর কেন্দ্রে ৪,৮০০ জন অভ্যন্তরীণভাবে উচ্ছেদকৃত জনগোষ্ঠী রয়েছে। এই স্থানান্তর কেন্দ্রগুলো ১৯৯৬ সালে কারনি রাজ্যে বর্মী সামরিক শাসনামলের গণ স্থানান্তর কর্মসূচির ফলাফল। এসএলআরসি এবং কেএনপিপির মধ্যে যুদ্ধবিরতি পতনের পরে, কয়েক হাজার মানুষ এই কর্মসূচির সময় ঘরবাড়ি ছারতে বাধ্য হয়েছিল।

বেশিরভাগ স্থানান্তর কেন্দ্র সামরিক শিবির, সেনা ঘাঁটি এবং প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত। এটি শোষণ ও অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ায়। অভ্যন্তরীণ উচ্ছেদকৃত জনগোষ্ঠীকে সৈন্যদের শ্রমের দাবি পূরণ বাধ্য করা। তাদের কাছে নির্বিচারে অতিরিক্ত কর আদায় (প্রকৃতপক্ষে চুরি) করা হয়। তারা সৈন্যদের দ্বারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাদের চলাচল প্রচুর পরিমাণে সীমাবদ্ধ।

স্বাস্থ্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই জীবিকা নির্বাহের জন্য স্থানান্তর কেন্দ্র অপর্যাপ্ত। স্থানান্তর কেন্দ্রের বেশিরভাগ জায়গাতেই স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ বা নিরাপদ পানির সুবিধা নেই। জায়গাগুলোর আশেপাশের জমি বেশিরভাগই অনুর্বর এবং জনবহুল। যেহেতু আদি বাসিন্দারা বা সৈন্যরা বেশিরভাগ জমি দখল করে রেখেছে তাই কৃষিকাজের সুযোগ সীমাবদ্ধ। জোরপূর্বক স্থানান্তর কেন্দ্রগুলোতে খুব কম কর্মসংস্থান রয়েছে।''[১২]

প্রশাসন

রাজ্যটির রাজধানী হলো লোইকাও। রাজ্যটি ২টি জেলায় বিভক্ত (বাওলাকে ও লোইকাও)। জেলাগুলো ১০৬টি ওয়ার্ড ও গ্রাম ৭টি শহরাঞ্চলে বিভক্ত।

সরকার

শাসন বিভাগ

আইন বিভাগ

বিচার বিভাগ

পরিবহন

কায়াহ রাজ্যে পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হলো লোইকাও বিমানবন্দর এবং লোইকাও রেলস্টেশন।

অর্থনীতি

কায়াহ রাজ্যের অর্থনীতি প্রধানত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। প্রধান শস্যটি হলো চাল যা বেশিরভাগই সেচ দিয়ে উৎপন্ন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসলের সাথে বাজরা, ভুট্টা, তিল, চিনাবাদাম, রসুন এবং শাকসবজি রয়েছে। খনিজ পণ্যগুলোর মধ্যে আলাবাস্টার, টিন এবং টাংস্টেন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানে একসময় সেগুন এবং পাইনের মতো মূল্যবান কাঠ উৎপাদিত হতো, তবে তাতমাডো (মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী) কর্তৃক অনুমোদিত অবৈধ কাঠের চালানের ফলে অরণ্যগুলো বেশিরভাগ খালি হয়ে গিয়েছে। লোইকাওর বাইরে লৌপিতা জলপ্রপাতের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি মিয়ানমারের মোট বৈদ্যুতিক শক্তির ২০% এরও বেশি সরবরাহ করে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাধান হলে কায়াহ রাজ্যের পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই রাজ্যে পাহাড়, নদীর স্রোত, হ্রদ এবং জলপ্রপাত রয়েছে। তবে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ কঠিন। বর্তমানে কায়াহ রাজ্য কেবল অনুমতি দিয়ে বহিরাগতদের জন্য উন্মুক্ত। অনুমতি পাওয়া কতটা কঠিন তা বর্তমান সামরিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। এমনকি অনুমতি দিয়েও, সাধারণত লোইকাওয়ের প্রায় ২৫ কিমি (১৬ মাইল) ব্যাসার্ধের মধ্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকরভাবে শুধুমাত্র লোইকাও এবং রাজ্যের পশ্চিম অংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে।

২০১৮ সাল অনুযায়ী, রাজ্যটির ৮৭% অংশে বিদ্যুতের সংযোগ আছে যা মিয়ানমারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।[১৩]

শিক্ষা

  • কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয়, লোইকাও
  • লোইকাও বিশ্ববিদ্যালয়
  • প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, লোইকাও

ইয়াঙ্গুনমান্দালয় শহরের বাইরে মিয়ানমারে শিক্ষার সুযোগ খুব সীমিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমারের মধ্যে কায়াহ রাজ্যে সরকারি স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে কম।[১৪] এই রাজ্যের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় হলো লোইকাও বিশ্ববিদ্যালয়।

২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষপ্রাথমিকমাধ্যমিকউচ্চবিদ্যালয়
বিদ্যালয়৩৩৮৩৩১২
শিক্ষক১৫৬৫৩৫২১৬০
শিক্ষার্থী২৯,২০০১৩,২০০৪৯০০

স্বাস্থ্যসেবা

বর্মী সামরিক জান্তা কর্তৃক অভিযুক্ত অব্যবস্থাপনা এবং মার্কিন সরকারের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের বেশিরভাগ অংশ, কায়াহ রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা খুব নিম্নমানের। যদিও স্বাস্থ্যসেবা নামমাত্র বিনামূল্য, বাস্তবে রোগীদের চিকিৎসা এবং চিকিৎসার জন্য এমনকি সরকারি ক্লিনিক এবং হাসপাতালেও অর্থ দিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে অনেকগুলো প্রাথমিক সুবিধা এবং সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। যেহেতু কায়াহ রাজ্য সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র, তাই স্বাস্থ্যেব্যবস্থার সমস্যা মোকাবেলায় প্রচুর অসুবিধা রয়েছে। ২০১৬ সালে, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এর ১.৯৪৫ বিলিয়ন ইয়েন অর্থায়নে লোইকাও সাধারণ হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছিল।[১৫] নিচে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হলো।[১৬]

২০০২-২০০৩হাসপাতালশয্যা
বিশেষায়িত হাসপাতাল
বিশেষায়িত সেবাযুক্ত সাধারণ হাসপাতাল২০০
সাধারণ হাসপাতাল১৪১
স্বাস্থ্য ক্লিনিক১৪৪
মোট১৬৪৮৫

গ্যালারি

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

কায়াহ রাজ্যের ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ