কুইবেক

কানাডার প্রদেশ

কেবেক (ফরাসি: Québec কেব্যাক্) বা কুইবেক হলো কানাডার পূর্বভাগে অবস্থিত দেশটির বৃহত্তম প্রদেশ। এটি কানাডার মোট আয়তনের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশের উপর অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে ৮০ লাখেরও বেশি অধিবাসী বিশিষ্ট কেবেক প্রদেশটি অন্টারিওর পর কানাডার ২য় সর্বোচ্চ জনবহুল প্রদেশ। এর উত্তর সীমানায় হাডসন প্রণালী ও উনগাভা উপসাগর, পূর্ব সীমানায় কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর প্রদেশ, দক্ষিণ-পূর্বে সেন্ট লরেন্স উপসাগর, কানাডার নিউ ব্রান্সউইক প্রদেশ ও মার্কিন অঙ্গরাজ্য মেইন, দক্ষিণ সীমানায় নিউ ইয়র্ক, ভার্মন্টনিউ হ্যাম্পশায়ার মার্কিন অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং পশ্চিম সীমানায় কানাডার অন্টারিও প্রদেশ, জেমস উপসাগর এবং হাডসন উপসাগর অবস্থিত। এছাড়া এর সমুদ্রসীমা রয়েছে নুনাভুট, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপনোভা স্কোশিয়া প্রদেশের সঙ্গে। ভূদৃশ্যাবলি, স্থাপত্যেশৈলী ও জাঁকজমকের জন্য কেবেককে “লা বেল প্রভাঁস” (La belle province, “সুন্দর প্রদেশ”) ডাকনাম দেওয়া হয়েছে।

কুইবেক
কেবেক (ফরাসি)
কুইবেকের পতাকা
পতাকা
কুইবেকের প্রতীক
প্রতীক
নীতিবাক্য: Je me souviens (ফরাসি)
(“আমি স্মরণ করি”)
কনফেডারেশন১ জুলাই, ১৮৬৭ (১ম
অন্টারিও, নোভা স্কোটিয়া ও নিউ ব্রান্সউইকের পাশাপাশি)
রাজধানীকেবেক সিটি
বৃহত্তর শহরমন্ট্রিয়ল
বৃহত্তর মেট্রোবৃহত্তর মন্ট্রিয়ল
সরকার
 • লেফটেন্যান্ট গভর্নরজে. মিশেল দোয়াইয়োঁ
 • প্রধানমন্ত্রীফ্রঁসোয়া ল্যগো (CAQ)
আইনসভাকেবেক জাতীয় সংসদ
ফেডারেল প্রতিনিধিত্ব(কানাডীয় সংসদে)
সভায় আসন৩৩৮টির মধ্যে ৭৮টি (23.1%)
সিনেটে আসন১০৫টির মধ্যে ২৪টি (22.9%)
আয়তন
 • মোট১৫,৪২,০৫৬ বর্গকিমি (৫,৯৫,৩৯১ বর্গমাইল)
 • স্থলভাগ১৩,৬৫,১২৮ বর্গকিমি (৫,২৭,০৭৯ বর্গমাইল)
 • জলভাগ১,৭৬,৯২৮ বর্গকিমি (৬৮,৩১২ বর্গমাইল)  ১১.৫%
এলাকার ক্রমক্রম ২য়
 কানাডার 15.4%
জনসংখ্যা (২০১৬)
 • মোট৮১,৬৪,৩৬১ [১]
 • আনুমানিক (২০১৭ Q1)৮৩,৫৬,৮৫১ [২]
 • ক্রমক্রম ২য়
 • জনঘনত্ব৫.৯৮/বর্গকিমি (১৫.৫/বর্গমাইল)
বিশেষণকেবেকোয়া (পুং)[৩] কেবেকোয়াজ (স্ত্রী)[৩]
প্রাতিষ্ঠানিক ভাষাফরাসি[৪]
জিডিপি
 • ক্রম২য়
 • মোট (২০১৫)C$৩৮০.৯৭২ বিলিয়ন[৫]
 • মাথা পিছুC$৪৬,১২৬ (১০ম)
সময় অঞ্চলসসস−৫, −৪
ডাককোড সংক্ষেপণQC[৬]
ডাক কোডের উপসর্গG, H, J
আইএসও ৩১৬৬ কোডCA-QC
ফুলনীল পতাকা কনীনিকা[৭]
গাছহলুদ ভূর্জ[৭]
পাখিতুষার পেঁচা[৭]
ওয়েবসাইটwww.gouv.qc.ca
ক্রমায়নে সব প্রদেশ ও অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে

উত্তর আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপ থেকে আগত ফরাসি অভিযাত্রী ও ঔপনিবেশিকেরা প্রথম কেবেক অঞ্চলেই স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। কেবেক কানাডার প্রদেশগুলির মধ্যে অনন্য কেননা এই প্রদেশের বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ফরাসি বংশোদ্ভূত এবং এরা মাতৃভাষা হিসেবে ফরাসিতে কথা বলে। ফরাসি কানাডীয়দের কাছে কেবেক কেবলই কানাডার একটি প্রদেশ নয়, এটি তাদের কাছে সাংস্কৃতিক মাতৃভূমি।

কেবেক কানাডার প্রাচীনতম প্রদেশ। ফরাসিরা ১৭শ শতকে এখানে বসতি স্থাপন করে। ১৮৬৭ সালে যে চারটি আদি প্রদেশ একত্রিত হয়ে কানাডা অধিরাজ্য গঠন করেছিল, তার মধ্যে একটি হল কেবেক। কেবেক প্রদেশের রাজধানী শহরের নাম কেবেক শহর। ১৬০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেবেক শহরটি কানাডার প্রাচীনতম শহর। কেবেকের বৃহত্তম শহর মঁরেয়াল বা মন্ট্রিয়ল একটি মহানগরী এবং দেশটির ২য় বৃহত্তম শহর (অন্টারিও প্রদেশের টরন্টো মহানগরীর পরে)।

কেবেক প্রদেশটির আয়তন বিশাল এবং এর ভূপ্রকৃতি বিচিত্র বলে এখানকার জলবায়ু ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অঞ্চলভাদে ভিন্ন এবং জনসংখ্যার বিস্তারও ব্যাপক। কেবেকের ভূপ্রকৃতিকে তিনটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায়: কানাডীয় ঢাল, সেন্ট লরেন্স নিম্নভূমিসমূহ এবং অ্যাপালেশীয় অঞ্চল। কানাডীয় ঢাল অঞ্চলটি প্রদেশটির উত্তর অংশে অবস্থিত। এই অঞ্চলটিতে জনবসতি বিরল এবং ভূমি স্থায়ীভাবে বরফে জমে গেছে বলে এখানে কৃষিকাজ সম্ভব নয়। তবে কানাডীয় ঢাল ও দক্ষিণ-পূর্ব অ্যাপালেশীয় অঞ্চলগুলি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। ফলে এসব অঞ্চলে খননশিল্প, বনপালনবিদ্যা এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সেন্ট লরেন্স নিম্নভূমিগুলি অন্য দুইটি অঞ্চলের মাঝখানে অবস্থিত এবং এখানেই কেবেক প্রদেশের কৃষি, শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রটি গঠিত হয়েছে। প্রদেশের বেশির ভাগ জনগণ এই অঞ্চলেই বাস করেন এবং এখানেই কেবেকের বৃহত্তম শহরগুলি অবস্থিত।

কেবেক প্রদেশের বেশিরভাগ মানুষ শহরে বাস করে। কেবেকের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অন্যান্য জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক উপাদান যেমন বায়বান্তরীক্ষ শিল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি এবং ঔষধশিল্প। এ সব শিল্প কেবেকের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে যার ফলে কেবেক কানাডার অর্থনৈতিকভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনশালী প্রদেশ পরিণত হয়েছে।

কেবেকের ফরাসিভাষী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ ও কখনও কখনও উত্তাল ইতিহাস কেবেকের চরিত্র বুঝতে সহায়ক। ১৭৬৩ সালে যুক্তরাজ্য উত্তর আমেরিকা মহাদেশে ফরাসি উপনিবেশ বা নুভেল ফ্রঁস (নতুন ফ্রান্স) অঞ্চলটি অধিকার করে। তখন থেকেই আমেরিকার একেবারে প্রথমদিকের ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে কেবেকের ফরাসিভাষী কেবেকোয়া জনগোষ্ঠী আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম শুরু করে, কেননা কানাডীয় রাষ্ট্রজোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ইংরেজিভাষী। ১৯৬০-এর দশকে কেবেক প্রদেশে একটি নীরব বিপ্লব সংঘটিত হয়, যখন কেবেকোয়া জনগোষ্ঠী তাদের নিজ প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের মর্যাদা উপলব্ধি করে। এসময় কেবেকের নেতারা তাদের মাতৃভূমিকে একটি আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রদেশটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জনসাংখ্যিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করেন। ফলে শুধু কেবেক প্রদেশের অভ্যন্তরেই নয়, গোটা কানাডাতেই ফরাসিভাষী ও ইংরেজিভাষীদের সম্পর্কের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

তথ্যসূত্র

বহিসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ