কুয়েত শহর

কুয়েতের রাজধানী

কুয়েত শহর (আরবি: مدينة الكويت) কুয়েতের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহরপারস্য উপসাগরের তীরে দেশের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, এখানে কুয়েতের জাতীয় পরিষদ (সংসদ), বেশিরভাগ সরকারী দফতর, কুয়েতি কর্পোরেশন এবং ব্যাংকগুলির সদর দফতর অবস্থিত, এটি আমিরাতের অবিসংবাদী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এটি বৈশ্বিক শহর হিসাবে বিবেচিত হয়।কুয়েত শহরের বাণিজ্য ও পরিবহন চাহিদা কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মিনা আল-শুওয়াইখ (শুওয়াইখ বন্দর) এবং মিনা আল আহমাদি (আহমাদি বন্দর) দ্বারা মিটানো হয়।

কুয়েত শহর
مدينة الكويت
মদিনাত আল-কুয়ায়েত
রাজধানী
কুয়েত শহর দিগন্ত রূপরেখা
আল হামরা টাওয়ার
সেইফ প্রাসাদ
সৌক শরক পোর্ট
উপরে থেকে নীচে, বাম থেকে ডানে: কুয়েত শহর দিগন্ত রূপরেখা, আল হামরা টাওয়ার, কুয়েত টাওয়ার, সেইফ প্রাসাদ, ২০১২ সালে সৌক শরক পোর্ট কুয়েত ডাউনটাউন
ডাকনাম: الديرة আদ-দিরাহ
কুয়েত শহর কুয়েত-এ অবস্থিত
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর পারস্য উপসাগর-এ অবস্থিত
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর মধ্যপ্রাচ্য-এ অবস্থিত
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর এশিয়া-এ অবস্থিত
কুয়েত শহর
কুয়েত শহর
কুয়েতে কুয়েত শহরের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৯°২২′১১″ উত্তর ৪৭°৫৮′৪২″ পূর্ব / ২৯.৩৬৯৭২° উত্তর ৪৭.৯৭৮৩৩° পূর্ব / 29.36972; 47.97833
দেশ কুয়েত
গভর্নরেটআল আসিমাহ
আয়তন
 • মহানগর২০০ বর্গকিমি (৮০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
 • পৌর এলাকা২৪ লক্ষ
সময় অঞ্চলআরবীয় মান সময় (ইউটিসি+৩)

ইতিহাস

প্রাথমিক ইতিহাস

১৬১৩ সালে কুয়েতের শহরটি আধুনিক কালের কুয়েত শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭১৬ সালে বনি উতুব্ কুয়েতে স্থায়ি বসতি স্থাপন করে। বনি উতুবদের আগমনের সময় কুয়েতে কিছুসংখ্যক জেলে বাস করত এবং প্রাথমিকভাবে জেলেদের গ্রাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।[১] অষ্টাদশ শতাব্দীতে কুয়েত সমৃদ্ধ হয়ে উঠে এবং দ্রুত ভারত, মাস্কাট, বাগদাদ এবং আরবের মধ্যে পণ্য পরিবহনের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠে।[২][৩] ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কুয়েত নিজেকে পারস্য উপসাগর থেকে আলেপ্পো পর্যন্ত প্রধান ব্যবসায়িক পথ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।[৪]

১৭৭৫-১৭৭৯ সালে পারস্য অবৈধ ভাবে বসরা অবরোধ করলে, ইরাকি বণিকরা কুয়েতে আশ্রয় নেয় এবং কুয়েতের নৌকা-নির্মাণ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে আংশিক ভূমিকা পালন করে।[৫] ফলস্বরূপ, কুয়েতের সামুদ্রিক বাণিজ্য ফুলেফেঁপে উঠে।[৫] ১৭৭৫ থেকে ১৭৭৯ সালের মধ্যে বাগদাদ, আলেপ্পো, স্মির্না এবং কনস্টান্টিনোপলের সাথে ভারতের বাণিজ্য পথগুলি কুয়েতমুখী হয়ে যায়।[৪][৬] ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯২ সালে কুয়েতে সরে যায়।[৭] ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কুয়েত, ভারত এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের মধ্যে সমুদ্র পথগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করত।[৭] ১৭৭৯ সালে পারস্য ম্যাগী বসরা থেকে সরে আসার পরেও, কুয়েতের বসরা থেকে বেশি বাণিজ্য আকর্ষণ করতে থাকে।[৮]

কুয়েত পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নৌকা তৈরির কেন্দ্র ছিল।[৯][১০] আঠারো ও উনিশ শতকের শেষের দিকে কুয়েতে তৈরি জাহাজগুলি ভারত, পূর্ব আফ্রিকা এবং লোহিত সাগরের বন্দরগুলির মধ্যে প্রচুর বাণিজ্য পরিবহন করে।[১১][১২][১৩] কুয়েতী জাহাজগুলো সমগ্র ভারত মহাসাগর এলাকা জুড়ে বিখ্যাত ছিল।[১৪] আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কুয়েতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছে।[১৫] আঠারো শতকের শেষের দিকে বসরার অস্থিতিশীলতার কারণে কুয়েত সমৃদ্ধ হয়েছে।[১৬] অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, অটোমান সরকারের অত্যাচার থেকে পালিয়ে আসা বসরার বণিকদের আংশিক আশ্রয়স্থল হিসাবে কুয়েত ব্যবহৃত হয়।[১৭] পালগ্রাভের মতে, কুয়েতিরা পারস্য উপসাগরে সেরা নাবিক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল।[১৪][১৮][১৯]

মোবারক আল-সাবাহের রাজত্বকালে কুয়েতকে "উপসাগরের মার্সেই" নামে অভিহিত করা হতো কারণ এর অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি বহু লোককে আকৃষ্ট করেছিল।[২০] বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে, কুয়েতে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অভিজাত শ্রেণী ছিল: ধনী ব্যবসায়ী পরিবারগুলো বৈবাহিক সম্পর্ক দ্বারা যুক্ত ছিল এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ ভাগ করেছিল।[২১] অভিজাতরা দীর্ঘদিন যাবৎ স্থায়ী, শহুরে, সুন্নি এবং শিয়া পরিবারের ছিল। যার বেশিরভাগই আদি ৩০ বনি উতবি পরিবার থেকে বংশদ্ভুত বলে দাবি করে।[২১] ধনী ব্যবসায়ী পরিবারগুলি তাদের সম্পদ দীর্ঘ-দূরত্বের বাণিজ্য, জাহাজ নির্মাণ ও মুক্তো থেকে অর্জন করেছিল।[২১] তারা বিশ্বজনীন অভিজাতসম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, তারা ব্যাপকভাবে ভারত, আফ্রিকা এবং ইউরোপ ভ্রমণ করতো।[২১] তারা তাদের ছেলেদের বিদেশে অন্যান্য উপসাগরীয় অভিজাতদের চেয়ে বেশি শিক্ষা দান করতো।[২১] পশ্চিমা দর্শনার্থীরা লক্ষ করেন যে, কুয়েতি অভিজাতরা ইউরোপীয় দাফতরিক পদ্ধতি, টাইপরাইটার ব্যবহার করে এবং কৌতূহলের সহিত ইউরোপীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে।[২১] ধনী পরিবারগুলি সাধারণ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল।[২১] ১৯৪০-এর দশকের আগে আল-ঘানিম এবং আল-হামাদের বণিক পরিবারগুলির সম্পদের পরিমান ছিল মিলিয়ন মিলিয়ন।[২১]

১৯৩৭ সালে ফ্রেয়া স্টার্ক কুয়েতে তখনকার সময়ে দারিদ্র্যসীমা সম্পর্কে লিখেছিলেন:

পাঁচ বছর আগে আমার সর্বশেষ সফরের পর থেকে দারিদ্র্য কুয়েতে আরও বেশি স্থিতি লাভ করেছে, সমুদ্রপথে, যেখানে মুক্তোর বাণিজ্যে অব্যাহত পতন এবং সৌদি আরব দ্বারা আরোপিত অবরোধ উভয়ই দ্বারা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কিছু বিশিষ্ট বণিক পরিবার ১৯৩০ এর দশকের গোড়ার দিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট প্রাদুর্ভাবের কারণে কুয়েত ত্যাগ করেন। ১৯৩৭ সালে তেল আবিষ্কারের সময় কুয়েতের বেশিরভাগ অধিবাসী দরিদ্র ছিল।

স্বর্ণ যুগ (১৯৪৬-১৯৮২)

১৯৪৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কুয়েত তেল এবং উদার পরিবেশের কারণে সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত হয়।[২২][২৩][২৪] ১৯৪৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সময়কে "স্বর্ণযুগ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[২২][২৩][২৪][২৫] কুয়েতীদের একটি আধুনিক জীবনমান উপভোগ করার সক্ষমতা অর্জনের জন্য ১৯৫০ সালে একটি বড় ধরনের সরকারী-কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। ১৯৫২ সালের মধ্যে দেশটি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়। এই বিশাল প্রবৃদ্ধি বহু বিদেশী কর্মী বিশেষ করে ফিলিস্তিন, মিশর এবং ভারতের শ্রমিকদের আকৃষ্ট করে। ১৯৬১ সালের জুনে কুয়েত ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং শেখ আবদুল্লাহ আল-সালিম আল সাবাহ আমির হন। নতুন খসড়া সংবিধান অনুসারে কুয়েতে ১৯৬৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কুয়েতই প্রথম  সংবিধান এবং সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে কুয়েত এই অঞ্চলের সর্বাধিক উন্নত দেশ ছিল।[২৬][২৭][২৮] কুয়েত তেল রফতানি থেকে আয়ের পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়ের জন্য মধ্য প্রাচ্যের পথিকৃৎ।[২৯] কুয়েত বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ হ'ল বিশ্বের প্রথম সার্বভৌম অর্থ তহবিল। ১৯৭০ এর দশক থেকে কুয়েত মানব উন্নয়ন সূচকে সমস্ত আরব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল।[২৮] কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[২৮] কুয়েতের নাট্য শিল্প আরব বিশ্ব জুড়ে সুপরিচিত।[২২][২৮]

১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে, কুয়েতের সংবাদমাধ্যম বিশ্বের অন্যতম মুক্ত সংবাদ মাধ্যম হিসাবে বলা হতো।[৩০] কুয়েত আরব অঞ্চলে সাহিত্যিক নবজাগরণের পথিকৃৎ ছিল।[৩১] ১৯৫৮ সালে আল আরাবি সাময়িক পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়, এটি আরব বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় সাময়িক পত্রিকায় পরিণত হয়।[৩১] আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে কুয়েতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বেশি ছিল বলে অনেক আরব লেখকই কুয়েতে চলে আসেন। মধ্য প্রাচ্যের সমস্ত অঞ্চল থেকে লেখক এবং সাংবাদিকদের জন্য কুয়েত একটি স্বর্গ ছিল।[৩২][৩৩] ইরাকি কবি আহমেদ মাতার কুয়েতের অধিক উদার পরিবেশে আশ্রয় নিতে ১৯৭০ এর দশকে ইরাক ত্যাগ করেন।[৩৪]

কুয়েতী সমাজ ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে উদার এবং পশ্চিমা মনোভাব গ্রহণ করে।[৩৫] ১৯৬০এবং ১৯৭০ এর দশকে বেশিরভাগ কুয়েতি মহিলা হিজাব পরিধান করতো না।[৩৬][৩৭] কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাবের চেয়ে মিনি-স্কার্ট দেখা যেত।[৩৮]

১৯৮০ দশক এবং তারপর

১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে, সৌক আল-মানাখ স্টক মার্কেট ভেঙ্গে পড়লে এবং তেলের দাম কমে যাওয়ায় কুয়েত একটি বড়ধরনের অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে।[৩৯]

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় কুয়েত ইরাককে সমর্থন করে। ১৯৮০ এর দশক জুড়ে কুয়েতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা হয়, এর মধ্যে ১৯৮৩ সালের কুয়েত বোমা হামলা, কুয়েত এয়ারওয়েজের বেশ কয়েকটি বিমান অপহরণ এবং ১৯৮৫ সালে আমির জাবেরকে হত্যার চেষ্টা করা উল্লেখযোগ্য।[৪০] কুয়েত ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশক এবং ১৯৮০ দশকের শুরুতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি শীর্ষস্থানীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র ছিল, সন্ত্রাসী হামলার কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্ষেত্রটি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কুয়েত সরকার ১৯৮০ এর দশক জুড়ে ইসলাম ধর্মকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।[৪১] এ সময় আল সাবাহ’র ক্ষমতার ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর হুমকিটি আসে দেশী ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রীদের কাছ থেকে।[৪১] বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ কুয়েতিরা ১৯৭৬ সালের সংসদ স্থগিতের প্রতিবাদ করে। আল সাবাহ কুয়েত রাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত করতে ইসলামপন্থীদের প্রতি আকৃষ্ট হন।[৪১] ১৯৮১ সালে কুয়েত সরকার নির্বাচনী জেলাগুলিকে ইসলামপন্থীদের পক্ষে নেওয়ার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেয়। ইসলামপন্থীরা সরকারের প্রধান মিত্র ছিল, তাই ইসলামপন্থীরা সরকারী মন্ত্রনালয়গুলোর মতো রাষ্ট্রীয় সংস্থা গুলোতে আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়।[৪১] ১৯৮৩ সাল, সংসদে মদ খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কুয়েতকে স্বৈরতান্ত্রিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।[৪১] ১৯৮৬ সালে আমির জাবের সংসদ স্থগিত করেন।

১৯৯০ সালে কুয়েতের তেলক্ষেত্রে আগুন। ইরাকি বাহিনী পশ্চাদপসরণ করার সময় তেলের কূপগুলিতে আগুন লাগিয়ে পোড়া নীতি গ্রহণ করে।

ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে কুয়েত তার ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ক্ষমা করার জন্য ইরাকি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।[৪২] কুয়েতের তেল উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পর উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।[৪৩] ১৯৯০ সালের জুলাইয়ে ইরাক ওপেকের কাছে অভিযোগ করে যে, কুয়েত সীমান্তের নিকটবর্তী রুমাইলা তেলক্ষেত্রের ঢালে ড্রিল করে তেল চুরি করছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।[৪৩]

১৯৯০ এর আগস্টে ইরাকি বাহিনী কুয়েত আক্রমণ করে এবং কুয়েতকে ইরাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। একাধিক কূটনৈতিক আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর, কুয়েত থেকে ইরাকি সেনাদের অপসারণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি জোট হামলায় অংশ নেয়, যা উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এই জোট ইরাকি বাহিনীকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। ইরাকি বাহিনী পশ্চাদপসরণ করার সময় তেলের কূপগুলিতে আগুন লাগিয়ে পোড়া নীতি গ্রহণ করে।[৪৪] ইরাকি দখলের সময় এক হাজারেরও বেশি কুয়েতি বেসামরিক মানুষ মারা যায়।[৪৫] এছাড়াও, ৬০০ জনেরও বেশি কুয়েতি নিখোঁজ হয়,[৪৬] ইরাকে গণকবরে প্রায় ৩৭৫টি দেহাবশেষ পাওয়া যায়।

২০০৩ সালের মার্চ মাসে কুয়েত থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক আক্রমণকারী বাহিণী প্রত্যাহার করা হয়। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে আমির জাবেরের মৃত্যুর পরে সাদ আল-সাবাহ তার স্থলাভিষিক্ত হন তবে ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে নয় দিন পরে কুয়েতি সংসদ তাকে অপসারণ করে। সাবাহ আল-সাবাহ আমির হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০১১-২০১২ সালে আরব বসন্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সংসদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। বিক্ষোভ ও দুর্নীতির অভিযোগের পর প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

ভূগোল

কুয়েতের উপগ্রহ চিত্র

কুয়েত শহর কুয়েত উপসাগরের তীরে অবস্থিত, এটি একটি প্রাকৃতিক গভীর সমুদ্র-বন্দর। কুয়েতের ৯০% জনগোষ্ঠী কুয়েত উপসাগরের উপকূল এলাকায় বাস করে। দেশটি সাধারণত নিচুতে অবস্থিত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেশটির সর্বোচ্চ বিন্দুটি ৩০৬ মিটার (১০০৪ ফুট) উচু।[৪৭] দেশটির নয়টি দ্বীপ রয়েছে, ফৈলাকা দ্বীপ ব্যতীত সবগুলিই দ্বীপই জনশূন্য।[৪৮] ৮৬০ বর্গ কিলোমিটার (৩৩০ বর্গ মাইল) আয়তনের বুবিয়ান কুয়েতের বৃহত্তম দ্বীপ এবং এটি ২,৩৮০ মিটার দীর্ঘ (৭,৮০৮ ফুট) সেতুর দ্বারা মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত।[৪৯] ভূমি আবাদযোগ্য[৪৭] বলে মনে করা হয় এবং এর ৪৯৯ কিলোমিটার দীর্ঘ (৩১০ মাইল) উপকূলরেখা বরাবর অল্প পরিমানে গাছপালা পাওয়া যায়।[৪৭]

কুয়েত শহরের আকাশরেখা

কুয়েতের বুর্গান তেলক্ষেত্রে প্রমাণিত তেল মজুতের পরিমান প্রায় ৭০ বিলিয়ন ব্যারেল (১.১×১০১০ ঘন মিটার)। ১৯৯১ সালের কুয়েতি তেল ক্ষেত্রে আগুন লাগানোর সময়, প্রায় ৩৫.৭ বর্গ কিমি (১৩.৮ বর্গ মাইল) অঞ্চল জুড়ে ৫০০ টিরও বেশি তেল পূর্ণ হ্রদ সৃষ্টি হয়।[৫০] তেল ও কালি জমার ফলে মাটির দূষণের কারণে কুয়েতের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশকে জনবসতিহীন করে তোলে। বালু এবং তেলের অবশিষ্টাংশ কুয়েতী মরুভূমির বৃহৎ অংশকে আধা-আলকাতরার ভূমিতে পরিণত করে।[৫১] উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে কুয়েতের সামুদ্রিক সম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৫২]

জলবায়ু

কুয়েত শহরের আন্তরীক্ষ দৃশ্য

কুয়েত শহরের আবহাওয়া উষ্ণ মরুময় আবহাওয়া (কোপেন: বিডাব্লুএইচ) এবং গ্রীষ্মকালে পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণতম শহর এটি।[৫৩] গ্রীষ্মের তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১১৩ ° ফাঃ) ছাড়িয়ে যায় এবং তাপ-প্রবাহ প্রবাহিত হয়; রাতের বেলা নিম্নতাপমাত্রাও প্রায়শই ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের (৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উপরে থাকে। শীতকালে, রাতের বেলা তাপমাত্রা প্রায়শই ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৪৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর নিচে নেমে যায়। আফ্রিকা ও সৌদি আরবের উত্তপ্ত মরুভূমির আবহাওয়ার তুলনায় উপকূলীয় অবস্থান এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনামূলক দূরত্ব বিবেচনা করলে, শহরের উত্তাপ বরং চরম - উত্তপ্ত মরুভূমি প্রায় প্রতিটি দিকে ঘিরে রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম পারস্য উপসাগর থেকে প্রবাহিত গরম এবং উত্তপ্ত বাতাস (সামাল) থেকে গ্রীষ্মকালে বালু ঝড়ের উৎপত্তি হয়। বালি ঝড় বছরের যে কোনও সময় ঘটতে পারে তবে বেশিরভাগ গ্রীষ্মে ঘটে এবং শরত্কালে মাঝেমধ্যে ঘটে।

কুয়েত শহর-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাসজানুফেব্রুমার্চএপ্রিলমেজুনজুলাইআগস্টসেপ্টেঅক্টোনভেডিসেবছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা)২৯.৮
(৮৫.৬)
৩৫.৮
(৯৬.৪)
৪১.২
(১০৬.২)
৪৪.২
(১১১.৬)
৪৯.০
(১২০.২)
৪৯.৮
(১২১.৬)
৫২.১
(১২৫.৮)
৫০.৭
(১২৩.৩)
৪৭.৭
(১১৭.৯)
৪৩.৭
(১১০.৭)
৩৭.৯
(১০০.২)
৩০.৫
(৮৬.৯)
৫২.১
(১২৫.৮)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা)১৯.৫
(৬৭.১)
২১.৮
(৭১.২)
২৬.৯
(৮০.৪)
৩৩.৯
(৯৩.০)
৪০.৯
(১০৫.৬)
৪৫.৫
(১১৩.৯)
৪৬.৭
(১১৬.১)
৪৬.৯
(১১৬.৪)
৪৩.৭
(১১০.৭)
৩৬.৬
(৯৭.৯)
২৭.৮
(৮২.০)
২১.৯
(৭১.৪)
৩৪.৩
(৯৩.৭)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)৮.৫
(৪৭.৩)
১০.০
(৫০.০)
১৪.০
(৫৭.২)
১৯.৫
(৬৭.১)
২৫.৪
(৭৭.৭)
২৮.৯
(৮৪.০)
৩০.৭
(৮৭.৩)
২৯.৫
(৮৫.১)
২৬.২
(৭৯.২)
২১.৫
(৭০.৭)
১৪.৫
(৫৮.১)
৯.৯
(৪৯.৮)
১৯.৯
(৬৭.৮)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা)−৪.০
(২৪.৮)
−১.৬
(২৯.১)
−০.১
(৩১.৮)
৬.৯
(৪৪.৪)
১৪.৭
(৫৮.৫)
২০.৪
(৬৮.৭)
২২.৪
(৭২.৩)
২১.৭
(৭১.১)
১৬.০
(৬০.৮)
৯.৪
(৪৮.৯)
২.০
(৩৫.৬)
−১.৫
(২৯.৩)
−৪.০
(২৪.৮)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি)৩০.২
(১.১৯)
১০.৫
(০.৪১)
১৮.২
(০.৭২)
১১.৫
(০.৪৫)
০.৪
(০.০২)
০.০
(০.০)
০.০
(০.০)
০.০
(০.০)
০.০
(০.০)
১.৪
(০.০৬)
১৮.৫
(০.৭৩)
২৫.৫
(১.০০)
১১৬.২
(৪.৫৭)
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় (≥ ০.১ মিমি)১৯
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড়১৯৮.১২২২.৫২১৭.৬২২৯.৩২৭২.৫৩০৪.৫৩০৭.১৩০১.৬২৮৫.১২৫২.২২১৬.৫১৯৩.৫৩,০০০.৫
দৈনিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড়৭.১৭.৭৭.৫৭.৯৯.৪১০.৫১০.৬১০.৮১০.২৯.০৭.৭৬.৯৮.৮
রোদের সম্ভাব্য শতাংশ৬৮৬৯৬৩৬২৬৯৭৭৭৬৭৮৭৭৭৯৭২৬৭৭২
উৎস ১: World Meteorological Organization (temperature and rainfall 1994–2008)[৫৪]
উৎস ২: NOAA (sunshine and records, 1961–1990)[৫৫]

source 3 = Wundergound (2012 records)[৫৬]

অর্থনীতি

কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কুয়েত পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক অর্থনীতির দেশ, পেট্রোলিয়াম এবং সার প্রধান রফতানি পণ্য। কুয়েতি দিনার হলো বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান একক মুদ্রা।[৫৭] পেট্রোলিয়াম জিডিপির প্রায় অর্ধেক এবং রফতানি আয় ও সরকারের আয়ের ৯০% সরবরাহ করে।[৫৮] কুয়েত স্টক এক্সচেঞ্জ আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ।

সংস্কৃতি

নাট্যশালা

স্বদেশীয় ঐতিহ্যবাহী নাট্যশালার জন্য কুয়েত পরিচিত।[৫৯] পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নাট্যশালার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র আরব দেশ কুয়েত।[৬০] কুয়েতে আরবি নাট্য আন্দোলনটি দেশের আরবি সাংস্কৃতিক জীবনের একটি বড় অংশ গঠন করে।[৬১] কুয়েতে নাট্য কার্যক্রম ১৯২০ সালে শুরু হয় যখন প্রথম কথ্য নাটকটি মুক্তি পায়।[৬২] নাট্যকর্ম কুয়েতে আজও জনপ্রিয়।[৬১]

নাটক

কুয়েতী নাটক (المسلسلات الكويتية) আরব বিশ্বে সর্বাধিক দেখা নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম।[৬৩] বেশিরভাগ উপসাগরীয় নাটকগুলো কুয়েতে নির্মিত। যদিও সাধারণত কুয়েতের স্থানীয় ভাষায় তৈরি হয়, তবে কুয়েতের কিছু নাটক তিউনিসিয়ার মতো অনেক দূরের দেশেও সাফল্যের সাথে দেখানো হয়।[৬৪]

ক্রীড়া

শহরটির স্বাগতিক ক্লাব আল কুয়েত এসসি, যারা ঐতিহ্যগতভাবে কুয়েতের জাতীয় বাস্কেটবল দলকে মূল খেলোয়াড় সরবরাহ করে থাকে।[৬৫]

গ্যাল্যারি

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ