ক্লিওপেট্রা
সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর (ইংরেজি: Cleopatra VII Philopator, গ্রিক: Κλεοπάτρα Φιλοπάτωρ, ক্লেওপাৎরা ফিলোপাতোর্; ৬৯[১] – আগস্ট ১২, ৩০ খ্রিস্টপূর্ব[২])[দ্রষ্টব্য ১], ইতিহাসে শুধু ক্লিওপেট্রা নামে পরিচিত, ছিলেন টলেমীয় মিসরের সর্বশেষ সক্রিয় ফারাও।[দ্রষ্টব্য ২] তার সন্তান ক্যাসিওরণ মনোনিত ফারাও ছিলেন।[দ্রষ্টব্য ৩] তার রাজত্বের পর, মিশর তৎকালীন সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। তিনি তার সৌন্দর্য এবং রোমান সেনাপতি এবং একনায়ক জুলিয়াস সিজার এবং মার্ক অ্যান্টনির সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের জন্য ইতিহাসে বিশেষভাবে পরিচিত।
সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর | |||||
---|---|---|---|---|---|
মিশরের টলেমীর রানী | |||||
রাজত্ব | ৫১ – ১২ আগস্ট, ৩০ খ্রিস্টপূর্ব (২১ বছর) | ||||
পূর্বসূরি | দ্বাদশ টলেমি অলেটেস | ||||
সহ-শাসক | দ্বাদশ টলেমি অলেটেস ত্রয়োদশ টলেমি ফিলোপেটর চতুর্দশ টলেমি পঞ্চদশ টলেমি সিজারিয়ন | ||||
জন্ম | ৬৯ খ্রিস্টপূর্ব আলেকজান্দ্রিয়া, মিসর | ||||
মৃত্যু | ১২ আগস্ট, ৩০ খ্রিস্টপূর্ব (বয়স ৩৯) আলেকজান্দ্রিয়া, মিসর | ||||
সমাধি | অজানা (সম্ভবত মিশরে) | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | ত্রয়োদশ টলেমি ফিলোপেটর চতুর্দশ টলেমি মার্ক অ্যান্টনি | ||||
বংশধর | সিজারিয়ন, পঞ্চদশ টলেমি ফিলোপেটর ফিলোমেটর সিজার আলেকজান্দ্র হিলিয়স ক্লিওপেট্রা সেলিন, মৌরেতেনিয়ার রানী ষোড়শ টলেমি ফিলাডেলফেস | ||||
| |||||
প্রাসাদ | টলেমীয় রাজবংশ | ||||
পিতা | দ্বাদশ টলেমি অলেটেস | ||||
মাতা | মিশরের পঞ্চম ক্লিওপেট্রা (খুব সম্ভবত) |
হায়ারোগ্লিফাসে সপ্তম ক্লিওপেট্রা | |||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
Qlwpdrt | |||||||||||||||||||
Wr(.t)-nb(.t)-nfrw-3ḫ(t)-sḥ পরিপূর্ণতার মহান নারী, মনোহর পরামর্শক | |||||||||||||||||||
Wr.t-twt-n-jt=s মহান একজন, তার পিাতার পূত ভাবর্মর্তি | |||||||||||||||||||
Qlwpdrt nṯrt mr(t) jts দেবী ক্লিওপেট্রা যিনি তার পিতার অত্যন্ত প্রিয় |
ক্লিওপেট্রা ছিলেন প্রাচীন মিশরীয় টলেমীয় রাজবংশের সদস্য। মহামতি আলেকজান্ডারের একজন সেনাপতি আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর মিশরে কর্তৃত্ব দখল করেন ও টলেমীয় রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন। এই বংশের বেশিরভাগ সদস্য গ্রিক ভাষায় কথা বলতেন, এবং তাঁরা মিশরীয় ভাষা শিখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ফলে রোসেত্তা স্টোনের সরকারি নথিপত্রেও মিশরীয় ভাষার পাশাপাশি গ্রিক ভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।[৩] অপরদিকে ব্যতিক্রমী ক্লিওপেট্রা মিশরীয় ভাষা শিখেছিলেন এবং নিজেকে একজন মিশরীয় দেবীর পুনর্জন্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
বাবা চতুর্দশ টলেমি অলেটেসের সাথে ক্লিওপেট্রা দ্বৈতভাবে মিশর শাসন করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর ভাতৃদ্বয় ত্রয়োদশ টলেমি ও চতুর্দশ টলেমি সাথে রাজ্য শাসন করতেন। তৎকালীন মিশরীয় ঐতিহ্য অনুসারে তিনি তাঁদেরকে বিয়েও করেছিলেন।
রোমান গৃহযুদ্ধের সূত্র ধরে ক্লিওপেট্রা নিজের অবস্থান সুসংহত করেন।তার শত্রু পথিনাস রোমান গৃহযুদ্ধে পরাজিত পম্পেইকে হত্যা করে জয়ী একনায়ক জুলিয়াস সিজার এর আনূকুল্য লাভ করতে চেয়েছিল।
কিন্তু ক্লিওপেট্রার ও এক বিশেষ ক্ষমতা ছিল পুরুষদের আকৃষ্ট করার। ক্লিওপেট্রার শুধু প্রয়োজন ছিল সৈন্যদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া আর সিজারের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো। তাহলে তিনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, তাকে করায়ত্ত্ব করা যাবে কি না। কাজেই সিরিয়া থেকে তিনি নৌযাত্রা করে আলেক্সান্দ্রিয়ার উপকূলে গিয়ে অবতরণ করলেন এবং সেখানে গিয়ে সিজারকে একটি বিশাল কার্পেট উপহার দিলেন (প্রচলিত কাহিনী অনুসারে)। পথিনাসের এবং সৈন্যবাহিনীরা এই উপহার প্রদানে আপত্তিকর কিছু দেখলো না, কারণ তারা জানতই না এই কার্পেটের মধ্যে জড়িয়ে রয়েছেন খোদ ক্লিওপেট্রা।
ক্লিওপেট্রার কৌশল পুরোপুরি কাজে লাগে। কার্পেট খোলা হলে সিজার মুগ্ধ বিস্ময়ে সেই সুন্দরী যুবতীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন। ক্লিওপেট্রা তার আগমনের কারণ বোঝাতে সক্ষম হলেন। তাই তিনি আগের ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করতে আদেশ দিলেন। অর্থাৎ ক্লিওপেট্রা এবং তার বালক ভ্রাতা একত্রে শাসক হবেন। পথিনাস এ সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে সিজার ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পরবর্তীতে সিজার পথিনাসকে হত্যা করেন।
সিজার স্বল্পকালীন সময় মিশরে অবস্থান করেন এবং ৪৭ খ্রিস্টপূর্বে রোমে ফিরে আসেন।সিজারের প্রত্যাবর্তনের অল্প দিনের মধ্যেই ক্লিওপেট্রার এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় সিজারিয়ন।
৪৪ খ্রিস্টপূর্বে সিজার নিহত হলে তিনি নিজের ভাইকে হত্যা করান এবং নিজের পুত্র সিজারিয়নের সাথে যৌথ ভাবে শাসনকার্য শুরু করেন।
সিজারের মৃত্যুর পর মার্ক এন্টনি(সিজারের বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা) ও অক্টাভিয়ান সিজার (সিজারের নাতি,পরবর্তীতে সম্রাট অগাস্টাস) রোম শাসন করছিলেন।সিজারকে হত্যা করেছিল যে গোষ্ঠী, ৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেসিডনের যুদ্ধে তারা এন্টনির কাছে পরাজিত হয়। মার্ক এন্টনির শাসনকাজের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাতেন ক্লিওপেট্রা।
তাই তিনি রাজকীয় ভঙ্গিতে মাঝে মাঝে ক্লিওপেট্রাকে তাসার্সে (এন্টনির অধিকৃত নগরী) আসার আমন্ত্রণ জানাতেন।মার্ক এন্টনিও সিজারের মতো ক্লিওপেট্রার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।যার ফল,৪১-৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্লিওপেট্রা তার ঔরসে যমজ সন্তানের জন্ম দেন,যাদের নাম রাখা হয় আলেক্সান্ডার হেলিওস এবং ক্লিওপেট্রা সেলিনি।
ক্লিওপেট্রা চেয়েছিলেন তার পূর্বপুরুষের বিস্তৃত সাম্রাজ্য ধরে রাখতে। এন্টনি তাকে সাইরেনি ও সাইপ্রাস ফিরিয়ে দিয়েছিলেন (যেটা করার তার কোনো অধিকার ছিল না)।এশিয়া মাইনরের উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা যা, এক সময় তৃতীয় টলেমীর অধিকারে ছিল সেটাও ক্লিওপেট্রাকে উপহার দেন। এটাও প্রবাদ আছে, তিনি ক্লিওপেট্রাকে “পার্গে” নামের লাইব্রেরি (পশ্চিম এশিয়া মাইনরের একটি শহর যেখানকার গ্রন্থ-সংগ্রহ আলেক্সান্দ্রিয়ার কাছাকাছি ছিল) দান করেছিলেন।
অক্টেভিয়ানের জন্য এ সবকিছুই অপপ্রচারের কাজে লেগেছিল। তিনি জনগণকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে এন্টনিও তার প্রেমিকার জন্য সব কিছুই বিলিয়ে দিতে পারেন।এন্টনি অক্টাভিয়ানের বোনের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক ছেদ করে ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করায় অক্টাভিয়ান আরো ক্ষেপে যান। এমনও গুজব আছে যে সমগ্র প্রাচ্য অঞ্চল এন্টনি ক্লিওপেট্রাকে এবং তার উত্তরাধিকারী হিসেবে তার ছেলেমেয়েদের নামে উইল করে যান। এতে রোমানরা ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠে যে একজন মেসিডোনীয় রানি সবকিছু গ্রাস করছে শুধু তার সৌন্দর্যের আকর্ষণে। রোমান জনগণের ঘৃণা ও ক্রোধকে পুঁজি করে অক্টেভিয়ান সমর্থ হয়েছিলেন মিশরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় সিনেটের সমর্থন আদায় করতে। যে যুদ্ধটি ছিল মার্ক এন্টনির বিপক্ষে।
যুদ্ধে এন্টনি নিজের নির্বুদ্ধিতায় পরাজিত হন এবং অক্টাভিয়ান আলেক্সান্দ্রিয়ায় প্রবেশ করলে তিনি আত্মহত্যা করেন। ক্লিওপেট্রা এবার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে অক্টাভিয়ানকে আকৃষ্ট করতে চাইলেন কিন্তু ব্যর্থ হলেন। অবমাননার হাত থেকে বাঁচতে ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেন। (প্রচলিত আছে -এস্প নামক এক ক্ষুদ্র বিষধর সাপের দংশনে তিনি নিজের মৃত্যু ঘটান।)
অক্টাভিয়ান ক্লিওপেট্রার দুই পুত্রকে হত্যা করেন এবং তার দশ বছর বয়সী কন্যাকে বিয়ে দিয়ে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেন।
পূর্বপুরুষগণ
ক্লিওপেট্রার পরিবার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
দ্রষ্টব্য
তথ্যসূত্র
উৎস
অনলাইন
ছাপানো
আরও পড়ুন
- Bradford, Ernle Dusgate Selby (২০০০), Cleopatra, Penguin Group, আইএসবিএন 9780141390147
- Burstein, Stanley M., The Reign of Cleopatra, University of Oklahoma Press
- Flamarion, Edith; Bonfante-Warren, Alexandra (১৯৯৭), Cleopatra: The Life and Death of a Pharoah, Harry Abrams, আইএসবিএন 9780810928053
- Foss, Michael (১৯৯৯), The Search for Cleopatra, Arcade Publishing, আইএসবিএন 9781559705035
- Nardo, Don (১৯৯৪), Cleopatra, Lucent Books, আইএসবিএন 9781560060239
- Southern, Pat (২০০০), Cleopatra, Tempus, আইএসবিএন 9780752414942
- Schuller, Wolfgang. Cleopatra আইএসবিএন ৩-৪৯৮-০৬৩৬৪-২. scholarly biography
- Roller, Duane W. Cleopatra: A Biography (Oxford University Press; 2010; 252 pages; $24.95). scholarly biography
বহিঃসংযোগ
- বিবিসির ইন আওয়ার টাইম-এ Cleopatra
- Cleopatra, a Victorian children's book by Jacob Abbott, 1852, Project Gutenberg edition
- "Mysterious Death of Cleopatra" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ আগস্ট ২০০৬ তারিখে at the Discovery Channel ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে
- Cleopatra VII at BBC History
চিত্রকর্ম
- Sir Thomas Browne: Of the Picture describing the death of Cleopatra (1672)
- John Sartain: On the Antique Portrait of Cleopatra (1818)
ক্লিওপেট্রা টলেমীয় রাজবংশ জন্ম: ৬৯ খ্রিস্টপূর্ব মৃত্যু: ৩০ খ্রিস্টপূর্ব | ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী ত্রোয়োদশ টলেমি | মিশরের রানী ৫১–৩০ খ্রিস্টপূর্ব সহশাসন: দ্বাদশ টলেমি, ত্রোয়োদশ টলেমি, চতুর্দশ টলেমি এবং পঞ্চদশ টলেমি সিজারিয়ন | কার্যালয় বিলুপ্ত রোমান প্রজাতন্ত্র কর্তৃক মিশর সংযুক্ত |