গীতি কাব্য

গীতি কাব্য একজন কবির একান্ত ব্যক্তি-অনুভূতির সহজ, সাবলীল গতি ও ভঙ্গীমায় সঙ্গীত-মুখর জীবনের আত্ম-প্রতিফলন। এটি গীতি কবিতা নামেই সাহিত্যামোদী ব্যক্তিবর্গের কাছে সমধিক পরিচিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন,

বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটন মাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।

ভিত্তি মূল

গীতি কাব্য অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ বলে সাধারণতঃ দীর্ঘকায় হয় না। কারণ কোন অনুভূতিই দীর্ঘকাল স্থায়ী নয়। কিন্তু কোন কবি যদি গীতি কবিতায় তার ব্যক্তি-অনুভূতিকে একান্ত আন্তরিকতার সাথে অনায়াসে দীর্ঘকারে বর্ণনা করতে পারেন, তবে তার মূল রস ক্ষুণ্ন হয় না। কবির আন্তরিকতাই শ্রেষ্ঠ গীতি কবিতা বা গীতি কাব্যের একমাত্র কষ্টি-পাথর।

ইংরেজি সাহিত্যে গীতি কাব্য লিরিক নামে অভিহিত হয়ে থাকে। বীণাযন্ত্র সহযোগে এই শ্রেণীর সঙ্গীত-কবিতা গীত হতো বলে এটি লিরিক বা গীতকবিতা নামে চিহ্নিত।

গান

শব্দ চয়নের ব্যাপারে গান রচয়িতার স্বাধীনতা নাই। কারণ, সুরাত্মক ও সহজে উচ্চারণ করা যায় এমন শব্দই তার পক্ষে উপযোগী। গানে ছন্দেবৈচিত্র্য সম্ভব নয়, কারণ কোন বিশিষ্ট ছন্দের পুণরাবৃত্তির সাহায্যে গান রচয়িতা গানের মূল ভাবটিকে গভীরতর করে তোলেন। এগুলো ছাড়াও গানে সুরের প্রাধান্য থাকে; গীতিকবিতায় কথা ও সুরের সমন্বয় থাকে। গানে একাধিক ভাব-কল্পনা সম্ভব নয; গীতি কাব্যে ভাব-কল্পনার বিচিত্রতা ও সুর-সঙ্গতি শুধু সম্ভবপর নয়, সুসাধ্যও বটে।

যে-কবিতায় কবির আত্মনুভূতি বা একান্ত ব্যক্তিগত বাসনা-কামনা ও আনন্দ-বেদনা তার প্রাণের অন্তঃস্থল থেকে আবেগ-কম্পিত সুরে অখণ্ড ভাবমূর্ত্তিতে আত্মপ্রকাশ করে, তাকেই গীতি-কাব্য বা গীতিকবিতা বলে। এতে পরিপূর্ণ মানবজীবনের ইঙ্গিত নাই; এটি একক পুরুষের একান্ত ব্যক্তিগত আনন্দ-বেদনায় পরিপূর্ণ। কবি এখানে আত্ম-বিমুগ্ধ, তাই সমস্তটি কবিতাব্যাপী তার প্রাণ-স্পন্দন অনুভব করা যায়। কবি তার ব্যক্তি-অনুভূতি অথবা বিশিষ্ট মানসিকতা একে স্নিগ্ধ কান্তি দান করে। তার চরিত্রের কমনীয়তা, নমনীয়তা বা দৃঢ়তা এতে প্রতিফলিত হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, গীত কবিতা কবির আত্ম-মুকুর বিশেষরবীন্দ্রনাথ বলেন,

'যাহাকে আমরা গীতিকাব্য বলিয়া থাকি অর্থাৎ যাহা একটুখানির মধ্যে একটিমাত্র ভাবের বিকাশ ঐ যেমন বিদ্যাপতি'র -

ভরা বাদর মাহ ভাদর

শূন্য মন্দির মোর, -

সে-ও আমাদের মনের বহুদিনের, অব্যক্ত ভাবের একটি কোনো সুযোগ আশ্রয় করিয়া ফুটিয়া ওঠা'।

গীতিকবিতার মধ্যে আমরা আন্তরিকতাপূর্ণ অনুভূতি, অবয়বের স্বল্পতা, সঙ্গীত-মাধুর্য্য ও গতিস্বাচ্ছন্দ্য - এই কয়েকটি জিনিস প্রত্যাশা করি। বলাবাহুল্য যে, গীতিকবিতা গান না হলেও আজ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে যে গীতি-কবিতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সুরের প্রাধান্য অব্যাহত রয়েছে।

মহাকবি

একজন গীতিকবি যেমন আত্মসচেতন, মহাকবিও তেমনই আত্মসচেতন। তাদের মধ্যেকার পার্থক্য শ্রেণীগত নয, ভাবগত কারণে। গীতি কবি আপনাকে কেন্দ্র করে নিজের উপলদ্ধ জগৎ সৃষ্টি করেন। মহাকবির ব্যক্তি-পরায়ণতা আরও বিস্তৃত। গীতিকবি অন্ধ, মহাকবি সহস্র-চক্ষু, গীতিকবি আত্মরতিসম্পন্ন, মহাকবি স্বকীয় কল্পনার আলোকে নির্বাচিত বিষয়বস্তু অবলম্বনে সর্বজনীন মানবতাকে নিরীক্ষণ করেন। মিল্টন আর্থারের কাহিনী পরিত্যাগ করে বাইবেল-বর্ণিত আদিম মানবের পতন কাহিনীকেই মহাকাব্যের সামগ্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন। কারণ এটি তার বিপুল ব্যক্তিত্বের রসে রসায়িত হয়ে এমন কাব্য রচনার সাহায্য করবে, যাতে তিনি ঐশ্বরিক বিধানকে মানবভাগ্যের সাথে সংযুক্ত করে দেখাতে পারবেন। মধুসূদনও রামায়ণের যে-কাহিনী গ্রহণ করেছেন, তার ব্যঞ্জনা ব্যক্তি-নির্বিশেষ হলেও তা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবি-মানসের ও জীবনদর্শনের সহায়ক।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ