চীনাভীতি
চীনাভীতি, চীনভীতি, চীনাবিদ্বেষ, চীনবিদ্বেষ বা চীনবিরোধী মনোভাব বলতে চীন, চীনা জাতির লোক, চীনা বংশোদ্ভূত প্রবাসী বা চীনা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক মনোভাবকে বোঝায়। ইংরেজিতে একে "সাইনোফোবিয়া" (Sinophobia) বলা হয়।[১] প্রায়শই চীনের বাইরে অবস্থিত প্রবাসী সংখ্যালঘু চীনা সম্প্রদায়ের লোকেরা এই মনোভাবের শিকার হন। অভিবাসন, চীনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় পরিচয় নির্মাণ, সম্পদের বৈষম্য, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু সম্পর্ক, সাম্রাজ্যবাদের রেশ ও বর্ণবাদ, ইত্যাদি কারণে চীনাভীতি হতে পারে।[২][৩][৪] চীনাভীতির বিপরীত ধারণা হল চীনাপ্রীতি।
পরিসংখ্যান
দেশ | ইতিবাচক | নেতিবাচক | ইতি-নেতিবাচক |
---|---|---|---|
জাপান | {{Percentage bar|5|c=#80FF80|width=50}} ||{{Percentage bar|61|c=#FF8080|width=50}} ||-56 | ||
স্পেন | ১৫% | ৬৮% | -53 |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ২২% | ৭০% | -48 |
ভারত | ১৯% | ৬০% | -41 |
তুরস্ক | ২৯% | ৫৪% | -25 |
ফ্রান্স | ৩৫% | ৬০% | -25 |
ইন্দোনেশিয়া | ২৮% | ৫০% | -22 |
যুক্তরাজ্য | ৩৭% | ৫৮% | -21 |
জার্মানি | ২০% | ৩৫% | -15 |
কানাডা | ৩৭% | ৫১% | -14 |
অস্ট্রেলিয়া | ৪৬% | ৪৭% | -1 |
World (excl. China) | ৪১% | ৪২% | -1 |
ব্রাজিল | ৪৫% | ৩৮% | 7 |
গ্রিস | ৩৭% | ২৫% | 12 |
পেরু | ৪৯% | ৩৪% | 15 |
রাশিয়া | ৪৪% | ২৩% | 21 |
মেক্সিকো | ৫৫% | ২৬% | 29 |
কেনিয়া | ৬৩% | ২৭% | 36 |
পাকিস্তান | ৬৩% | ১২% | 51 |
নাইজেরিয়া | ৮৩% | ৯% | 74 |
চীন | ৮৮% | ১০% | 78 |
দেশ | ইতিবাচক | নেতিবাচক | ইতি-নেতিবাচক |
---|---|---|---|
চেক প্রজাতন্ত্র | ২৫% | ৬৯% | -44 |
ফ্রান্স | ২১% | ৬৩% | -42 |
লুক্সেমবুর্গ | ২৪% | ৬১% | -37 |
জার্মানি | ২৬% | ৬১% | -35 |
সুইডেন | ৩১% | ৬৪% | -33 |
ইতালি | ২৯% | ৬০% | -31 |
স্পেন | ২৯% | ৫৯% | -30 |
নেদারল্যান্ডস | ৩২% | ৬০% | -28 |
ডেনমার্ক | ৩২% | ৫৯% | -27 |
বেলজিয়াম | ৩৪% | ৬১% | 27 |
অস্ট্রিয়া | ৩৪% | ৫৭% | -23 |
ফিনল্যান্ড | ৩৬% | ৫৫% | 19 |
মাল্টা | ৩০% | ৪৭% | -17 |
স্লোভেনিয়া | ৪১% | ৫৩% | 12 |
পোল্যান্ড | ৩৭% | ৪৮% | 11 |
হাঙ্গেরি | ৪০% | ৫০% | 10 |
পর্তুগাল | ৩৬% | ৪৫% | 9 |
স্লোভাকিয়া | ৩৬% | ৪৪% | 8 |
আয়ারল্যান্ড | ৩৯% | ৪৭% | 8 |
গ্রিস | ৪৫% | ৪৯% | 4 |
যুক্তরাজ্য | ৩৯% | ৪১% | 2 |
এস্তোনিয়া | ৪৩% | ৩৫% | 8 |
লিথুয়ানিয়া | ৪৯% | ৩৬% | 13 |
ক্রোয়েশিয়া | ৫৪% | ৩৯% | 15 |
বুলগেরিয়া | ৪৭% | ৩১% | 16 |
রোমানিয়া | ৫৬% | ৩৪% | 22 |
লাতভিয়া | ৫১% | ২৯% | 22 |
সাইপ্রাস | ৫৮% | ২৭% | 31 |
২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টার (পিউ গবেষণা কেন্দ্র) চীনাভীতি বিষয়ের উপরে একটি বিশ্ব পর্যায়ের জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে জরিপভুক্ত ৩৮টি দেশের মধ্যে অর্ধেকসংখ্যক দেশের জনগণ (জরিপে অংশগ্রহণকারী) চীনের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব রাখে। চীনের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে এশিয়ার মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান, আফ্রিকার কেনিয়া (৭৮%), সেনেগাল (৭৭%), নাইজেরিয়া (৭৬%), এবং দক্ষিণ আমেরিকার চীনা বাণিজ্যের উপরে নির্ভরশীল ভেনেজুয়েলা (৭১%), ব্রাজিল (৬৫%) ও চিলি (৬২%)। [৭] এর বিপরীতে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে এবং এশিয়ার অন্যান্য অনেকগুলি দেশে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চীনা-বিরোধী মনোভাব এখনও চাঙা। যেমন মাত্র ২৮% জার্মান ও ইতালীয়, ৩৭% মার্কিনী চীনকে ভালো চোখে দেখে। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে জাপানে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ৫% চীনের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব রাখে।
অপরপক্ষে ৩৮টি দেশের মধ্যে মাত্র ১১টি দেশের ক্ষেত্রে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি চীনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। এদের মধ্যে আছে জাপান (৯৩%), জার্মানি (৬৪%), ইতালি (৬২%) এবং ইসরায়েল (৬০%)। বিশেষ করে ২০১০-এর দশকে এসে জার্মানিতে চীনাভীতি ও চীনাবিদ্বেষ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে (২০০৬ সালে ৩৩% থেকে ২০১৩ সালে ৬৪%)।[৭]
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের অর্ধেকের বেশীর মতে চীন আন্তর্জাতিক ঘটনাবলিতে একপেশে আচরণ করে থাকে; চীন ও প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি এর কারণ। চীনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিবেশীরা যেমন কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এ ব্যাপারে বেশ নেতিবাচক। এছাড়া ইউরোপের স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল, জর্দান ও তুরস্কে এই জরিপে অংশগ্রহণকারীরাও চীনের বৈদেশিক নীতির সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে।[৭]
সাম্প্রতিক উদাহরণ
চীনের উহান নগরীতে ২০১৯-২০২০ সালে উহান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ভাইরাসটির বিশ্বব্যাপী বিস্তারের সাথে সাথে সারা বিশ্বে চীনাভীতি বা চীনাবিদ্বেষী মনোভাব বৃদ্ধি পায়, বিশেষ যেসব চীনা প্রবাসে বাস করে, তারা অনেক দেশে তুলনামূলকভাবে বেশি করে চীনাবিদ্বেষী পূর্ব-কুসংস্কার ও বর্ণবাদী বিদেশীভীতির শিকার হয়।[৮][৯][১০][১১]