ঝড়

ঝড় হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা এর পৃষ্ঠে ও আবহাওয়ায় কঠোর প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণ পরিবেশে ভয়াবহ বিঘ্ন সৃষ্টি করে যেমন বিদ্যুৎচমক, তুষারপাত, শক্তিধর বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি। ঝড় মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে পারে দাবানল, বিদ্যুৎচমক, শক্তিশালী বৃষ্টি বা তুষারপাত এর মাধ্যমে। যদিও শক্তিশালী বৃষ্টি যেসব স্থান দ্বারা চলে সেসব স্থান খরা হতে মুক্তি পায়। শক্তিশালী তুষারপাত অনেক আনন্দদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যেমন স্কী যা অন্য সময়ে সম্ভব নয়।

উৎপত্তি

ঝড় তৈরি হয় যখন এক প্রকার নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় ও একটি উচ্চচাপ তাকে ঘিরে রাখে। এই বিপরীতমুখী চাপ বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে যা ঝড়ের বাদলে পরিণত হয়। ছোট জনপদে নিম্নচাপ এর ফলে উষ্ণ মাটি হতে গরম বায়ুর ঊর্ধ্বগমন এর সৃষ্টি করে যার ফলস্বরূপ ছোট ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে।

ধরন

ঝড়ের অনেক প্রকার আছে

বরফঝড়

তুষারঝড় হলো শীতকালীন ঝড়ের ভয়ংকরতম রূপ। যখন পৃষ্ঠ তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কম হয় তবে উপরের শীতল বায়ুর একটি স্তর শূন্যে থাকে তখন বৃষ্টি সেই স্তরে পড়ে ও একটি বরফে পরিণত হয়। ঝরঝরে অবস্থায় ৮ মিলিমিটার পুঞ্জিভুত বরফ যথেষ্ট গাছের শাখা ও বিদ্যুৎ লাইন নামিয়ে আনার জন্য।[১]

প্রবল তুষারঝড়

সময় ও স্থানের উপর ভিত্তি করে এই ঝড় বিভিন্ন প্রকার। সাধারণত এর সাথে থাকে প্রবল বাতাস, অতিরিক্ত তুষার ও অত্যন্ত ঠান্ডা পরিস্থিতি যার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে কম।[২]

তুষারঝড়

একত্রে অনেক তুষারপাত হয় ঘণ্টায় ৫ সেমি এরও বেশির অনুপাতে ও অনেক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।এই ঝড় বিশেষ করে যেগুলো বেশি তরল সমতুল্য হ, গাছের অঙ্গ উপড়ে ফেলা, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা ও বিস্তর এলাকা জুড়ে যাতায়াত বন্ধ করতে সক্ষম।

সামুদ্রিক ঝড়

সমুদ্রের ৫৫ মাইল বা ৯০ কিলোমিটার গতির বাতাস যার গতি বজায় থাকে তা হলো সামুদ্রিক ঝড়।[৩] সাধারণত ঝড় বলে পরিচিত এই বায়ুপ্রবাহ যেকোনো আকারের ও প্রকারের জাহাজ ডুবিয়ে ফেলতে পারে।

অগ্নিঝড়

অগ্নিঝড় হলো সেই অগ্নিকাণ্ড যা এত প্রবল যে তারা নিজের বায়ু প্রবাহ তৈরি করে ও তা বজায় রাখে। এটা সাধারণত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা সৃষ্টি হয় দাবানল, বন আগুন বা ঝোপে লাগা আগুন থেকে। অগ্নিঝড় হতে পারে ইচ্ছাকৃত বিস্ফারণ এর ফলে।

বায়ু ঝড়

এক প্রকার ঝড় যেটি প্রবল বায়ু প্রবাহ সম্পন্ন হয় তবে বৃষ্টিপাত কম হয় বা হয় না। [৪] এই ঝড় প্রায়শই ঘরের দরজা ও জানালা খুলে ফেলে ও স্থাপনার আরো ক্ষতি করে।[৫] এই ঝড় হলো শুস্ক পরিস্থিতিতে বালুঝড়ের কারণ।

বাত্যা

এক গ্রীষ্মপ্রধান ঝড় যা ৩৯-৫৫ মাইল বা ৬৩-৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি সম্পন্ন হয়।

বজ্রঝড়

বজ্রঝড় এক প্রকার ঝড় যা বিদ্যুৎ ও সহকারী বজ্রধ্বনি উৎপন্ন করে। এর সাথে সাধারণত অত্যধিক বৃষ্টিপাত হয়। এ ঝড় সমগ্র বিশ্বে হয় বিশেষ করে গ্রীষ্মপ্রধান উচ্চবর্ষন জঙ্গলে যেখানের প্রাকৃতিক অবস্থা হয় উচ্চ আর্দ্রতা ও তাপমাত্রাপূর্ণ এবং থাকে বায়ুমণ্ডলীয় অস্থায়িত্ব। এই ঝড় হয় যখন ঘনীভবনের উচ্চমাত্রা পরিণত হয় অস্থিতিশীল বায়ুর খণ্ডে যা বায়ুমণ্ডলে উৎপন্ন করে গভীর, দ্রুত ও ঊর্ধ্বমুখী গতি। তাপশক্তি অত্যন্ত শক্তিধর ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ তৈরি করে যা ঘুর্ণনের মাধ্যমে ট্রপোমণ্ডলে উঠে। ঠাণ্ডা নিম্নমুখী বায়ুপ্রবাহ ঝড়ের নিচে নিম্নটান সৃষ্টি করে। ঝড়ের শক্তি শেষ হলে, ঊর্ধমুখী প্রবাহ চলে যায় ও নিম্নটান মেঘের অবসান ঘটায়। স্বতন্ত্র ঝড় মেঘ ২-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

গ্রীষ্মপ্রধান ঘূর্ণিঝড়

গ্রিষ্মপ্রধান ঘূর্ণিঝড় হলো সেই ঝড় যা নিম্নচাপের মধ্যস্থানের কাছে ঘুরতে থাকে ও একে শক্তি প্রদান করে সেই তাপ যা নির্গত হয় যখন আর্দ্র বাতাস উপরে উঠে ও ঘন হয়। এই ঝড় তৈরি হয় মহাসাগরে যদি পরিবেশ অনুকূল হয় এবং এ ঝড়কে তাদের শক্তি, স্থানের উপর ভিত্তি করে বহু নামে ডাকা হয়।[৬]

শিলাবৃষ্টি

এটি এক প্রকার ঝড় যা গোল বরফের টুকরো থিতায়। এ ঝড় সাধারণত হয় নিয়মিত বজ্রঝড়ের সময়। বেশিরভাগ শিলাবৃষ্টি মেঘ হতে থিতিয়ে তৈরি হয় যা ছোট ও ক্ষতি করে না। কিছু অনিয়মিত শিলাবৃষ্টি হয় যা ২ ইঞ্চির বড় হয় ও ক্ষতি করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়

এই ঝড় এক প্রকার প্রবল ধ্বংসাত্মক বায়ুঝড় যা স্থলে হয়। এর আবির্ভাব হয় কালো, ফানেল আকৃতির মেঘ হতে। এটি প্রায়শই বজ্রঝড় ও মেঘের দেওয়াল তৈরির পর শুরু হয়। এটি সর্বাপেক্ষা ধ্বংসাত্মক ঝড় বলে পরিচিত যা সারা বিশ্বে হয় যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যভাগে এ ঝড় সবচেয়ে প্রবণ।

প্রকার

ঝড়ের এক কঠোর সংজ্ঞা অনুযায়ী ঝড় হলো বিয়ুফোর্ট স্কেলে ১০ বা ততোধিক মাপের বায়ুপ্রবাহ। এর গতি ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা ৫৫ মাইল। যদিও বিপুলভাবে এটি এত নিয়ন্ত্রক নয়। ঝড় যেকোনো স্থানে ১২ হতে ২০০ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে, মৌসুম ও স্থানের উপর ভিত্তি করে। উত্তর আমেরিকার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের ঝড় সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে পুনরাবৃত্তি ও স্থায়ী হয় বিশেষ করে ঠাণ্ডা মৌসুমে। প্রবল স্থলজ ঝড় মহাসাগরীয় পরিবেশে প্রভাব ফেলে যার ফলে প্রভাবিত হয় ফসল প্রাচুর্য, প্রবল ঢেউ, প্রবল জোয়ার, লবণাক্ততা, সমুদ্রের তাপমাত্রা, সমুদ্র উচ্চতা।

অন্য স্থলজ ঝড়

ঝড় শুধু পৃথিবীতে হয় না; অন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ থাকা গ্রহতেও ঝড় হয়। বৃহস্পতি গ্রহের বড় লাল দাগ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এর গতি হারিকেন হতে বেশি ও পৃথিবী হতে বড় যা স্থায়ী হয়েছে ৩৪০ বছর যা সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই

১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ২ ব্যবহার করে শনি গ্রহে উষ্ণ বায়ুর উর্ধ্বচাপের ফলে তৈরি ঝড়ের ছবি তোলে হাবল টেলেস্কোপ। ঝড়টির পূর্ব-পশ্চিম বর্ধনের ফলে এটি পৃথিবীর ব্যসের সমান হয়। ঝড়টি এর আগেও পরিলক্ষিত হয় ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে।

মঙ্গল গ্রহের ধুলাঝড় আকারে ভিন্ন হয়, তবে প্রায়ই সমগ্র গ্রহ ঢেকে ফেলতে পারে। যখন গ্রহটি সূর্যের নিকটতম আসে তখন ঝড়গুলো হয় যার ফলে বার্ষিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।[৭]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ