টেথিস সাগর

অগভীর প্রাচীন মহাসাগর

টেথিস সাগর (প্রাচীন গ্রিক - Τηθύς) হল একটি অধুনালুপ্ত প্রাচীন মহাসাগর। মেসোজোয়িক মহাযুগের (মোটামুটি ২৫.২২ কোটি - ৭.২১ কোটি বছর আগে) প্রায় বেশিরভাগ সময় জুড়েই দুই প্রাচীন অতিমহাদেশ লরেশিয়াগন্ডোয়ানার মধ্যবর্তী অংশে এই মহাসাগরটি অবস্থান করত। ক্রিটেশিয়াস যুগ (মোটামুটি ১৪.৫ কোটি - ৭.২১ কোটি বছর আগে) ও তৎপরবর্তী সময়ে ঐ দুই অতিমহাদেশ পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়ে এসে অংশত জুড়ে গেলে এই মহাসাগরের অবলুপ্তি ঘটে ও পরিবর্তে অতলান্তিকভারত মহাসাগরের সৃষ্টি হয়। বর্তমান ভূমধ্যসাগরের পূর্ব অংশ, কৃষ্ণসাগর, ক্যাস্পিয়ান সাগর, আরল সাগর প্রভৃতি এই প্রাচীন মহাসাগরের পশ্চিম অংশের অবশেষ মাত্র।[১]

একক মহাদেশ প্যানজিয়া ভেঙে দুই অতিমহাদেশ লরেশিয়াগন্ডোয়ানা এবং তাদের মধ্যবর্তী অংশে টেথিস সাগরের অবস্থান।

আজ থেকে প্রায় ২৮.৬ কোটি বছর আগে পার্মিয়ান যুগে (সময়সীমা ২৯.৮৯ কোটি - ২৫.৪২ কোটি বছর আগে) সুপ্রাচীন একক মহাদেশ প্যানজিয়ার ভাঙন শুরু হয় ও পরবর্তী ট্রায়াসিক যুগের (সময়সীমা ২৫.২২ - ২০.৮৫ কোটি বছর আগে) শেষের দিকে, অর্থাৎ প্রায় ২০.৮ কোটি বছর আগে তা সম্পন্ন হয়। এর ফলে দ্বিখণ্ডিত দুই নতুন অতিমহাদেশ উত্তরে লরেশিয়া ও দক্ষিণে গন্ডোয়ানার মধ্যবর্তী অংশে টেথিস সাগরের উদ্ভব ঘটে। পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রথমাবস্থায় কিছুটা ত্রিভূজাকারে বিস্তৃত এই মহাসাগর আজ থেকে প্রায় ১৫ কোটি বছর পূর্বে তার বিস্তৃতির চরমতম মুহূর্তে পূর্ব থেকে পশ্চিমে দুই অতিমহাদেশের মধ্য দিয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত ছিল ও সেসময়ে উত্তরদক্ষিণে তার বিস্তৃতি ছিল নিরক্ষরেখা থেকে প্রায় ৩০° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। এই সময় অপেক্ষাকৃত চওড়া পূর্ব দিকে এর বিস্তৃতি ছিল প্রায় ২০০০ - ৩০০০ কিলোমিটার।[২] প্রায় সাড়ে সাত কোটি বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগেও এই মহাসাগর ১০° উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৫° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আজকের ইউরোপের দক্ষিণাংশ, পূর্ব ভূমধ্যসাগর, উত্তর আফ্রিকা, ইরান ও সমগ্র হিমালয় অঞ্চল এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্বে এই মহাসাগর সম্ভবত মায়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল।[১][৩][৪] অন্যদিকে পশ্চিমে আজকের ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা ও উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১]

নামকরণ ও আবিষ্কারের ইতিহাস

প্রাচীন গ্রিক পুরাণের সমুদ্রের দেবী টেথিসের নামে এই প্রাচীন মহাসাগরের নাম দেওয়া হয় টেথিসঅস্ট্রীয় ভূতত্ত্ববিদ এডুয়ার্ড সুয়েস ১৮৯৩ সালে এই নামকরণ করেন।[৫][৬]

১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রীয় পুরাজীববিদ্‌ মেলখিওর নয়মাইর (Melchior Neumayr) মেসোজোয়িক যুগের সামুদ্রিক পলিস্তর ও তাদের বিন্যাস পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রথম ৎসেন্ট্রালেস মিটলমেয়ার (Zentrales Mittelmeer) বা কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরের ধারণার পত্তন করেন ও বলেন এই সাগর যদিও খুব চওড়া ছিল না, কিন্তু জুরাসিক যুগে সম্ভবত তা পূর্বপশ্চিমে আজকের হিমালয় পর্বতমালা থেকে সুদূর পশ্চিম গোলার্ধের ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৭] তাকে অনুসরণ করেই ১৮৯৩ সালে এডুয়ার্ড সুয়েস তার চার খণ্ডে প্রকাশিত Das Antlitz der Erde (পৃথিবীর মুখ) গ্রন্থে দেখান যে লরেশিয়া ও দক্ষিণদিকে আজকের একাধিক মহাদেশ একত্রিত হয়ে যে গন্ডোয়ানা অতিমহাদেশ গঠন করেছিল - তাদের মধ্যে একটি স্থলবেষ্টিত সাগরের অস্তিত্ব ছিল। এর একদা অস্তিত্বের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি এই গ্রন্থে আফ্রিকা ও আল্পস পর্বতে প্রাপ্ত বিভিন্ন জীবাশ্মের তালিকা পেশ করেন।[৫][৮]

বিংশ শতাব্দীর প্রথম কয়েক দশকে উলিখ (১৯১১), ডিনার (১৯২৫), দাক (১৯২৬), প্রমুখ ভূতত্ত্ববিদরা মতপ্রকাশ করেন যে, টেথিস সাগর বাস্তবে ছিল দুই অতিকায় মহাদেশের মধ্যে আবদ্ধ এক অগভীর জলাভূমিসদৃশ সমুদ্র মাত্র। প্যালিওজোয়িক মহাযুগের শেষের দিকে এর অস্তিত্ব বজায় ছিল, কিন্তু এরপর দক্ষিণে গন্ডোয়ানা থেকে ভেঙে বেরনো মহাদেশীয় পাতগুলির উত্তরমুখী চলনের ফলে এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। যাইহোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভূতত্ত্ববিদরা টেথিসকে একটি ত্রিভূজাকৃতি মহাসাগর বলে বর্ণনা করতে শুরু করেন, যার খোলা ও চওড়া মুখটি পুবদিকে অবস্থিত।

১৯৬০'এর দশকে ভূত্বকীয় পাত বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব বিজ্ঞানীমহলে প্রতিষ্ঠিত হলে বোঝা যায়, এডুয়ার্ড সুয়েস যাকে স্থলবেষ্টিত সাগর বলে বর্ণনা করেছেন, সেই টেথিস আসলে ছিল একটি মহাসাগর। কেন ও কীভাবে এই মহাসাগর পরবর্তীকালে বিলুপ্ত হল তারও এর ফলে একটি ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়। স্মিথ (১৯৭১), ডিউই, পিটম্যান, বোন্যাঁ (১৯৭৩), লাউবশার ও বেরনুলি (১৯৭৩), বেজু-দুভাল, দেকুর, পিঞ্চন (১৯৭৭), প্রমুখ ভূ-বিজ্ঞানীরা আজ মনে করেন, টেথিস ছিল একটি সামুদ্রিক পাত যা ভূত্বকীয় পাতের চলনের দরুন মহাদেশীয় পাতের তলায় প্রবেশ (subduct) করেছে।

অবস্থান

টেথিস সাগর ছিল তার পূর্বসুরী পুরাতন টেথিস বা প্যালিওটেথিস-এর মতোই সুপ্রাচীন একক মহাদেশ প্যানজিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত একটি তুলনামূলক অগভীর ত্রিভূজাকৃতি উপসাগরীয় সমুদ্র। তবে আকারে ছিল তা মহাসাগরের মতোই বিশাল। এর উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে অবস্থান করত এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, প্রভৃতি আজকের পৃথিবীর মহাদেশীয় ভূভাগগুলি। তবে দক্ষিণ ভারতীয় উপমহাদেশ তখন এশীয় ভূভাগের অংশ হিসেবে এই মহাসাগরের উত্তর তীরে নয়, বরং তার দক্ষিণ তীর সংলগ্ন অংশেই অবস্থান করত। মহাদেশগুলির তীরভূমি সংলগ্ন অংশে এই মহাসাগরের তলদেশও ছিল অগভীর ও প্রায় সমতল। বিশেষত আজকের ইউরোপ মহাদেশের যে অংশগুলি সে' সময় এর তীরবর্তী ছিল, সে' সমস্ত অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।[৯].

উদ্ভব ও ক্রমপরিবর্তন

পার্মিয়ান-ট্রায়াসিক যুগের সন্ধিক্ষণে, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর ভূত্বকীয় পাত (টেকটনিক প্লেট) চিত্র। দক্ষিণ-পূর্ব প্যানজিয়া থেকে কিমেরীয় ভূভাগের ভাঙনের ফলে এখানে টেথিস সাগরের উদ্ভবের সময়কার ভূ-মানচিত্র পরিলক্ষণীয়।

আজ থেকে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে পুরাতন টেথিস মহাসাগরের দক্ষিণ উপকূলে একটি নূতন মহাসাগর তৈরি হতে শুরু করে। সে'সময়ের একক মহাদেশ প্যানজিয়ার দক্ষিণপূর্ব অংশের (গন্ডোয়ানা) উত্তর উপকূলের একটি ফালির মতো অংশ (কিমেরীয় ভূভাগ) মূল মহাদেশ থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে উত্তরে সরে আসতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয় পূর্ববর্তী পার্মিয়ান যুগেই। এর ফলে এই কিমেরিয়া অংশের দক্ষিণে যে নূতন সাগরের উদ্ভব ঘটে তাই হল টেথিস সাগর।[২] পুরাতন টেথিসের বিপরীতে একে অনেক সময় নব্য টেথিস সাগর নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। পরবর্তী ৬ কোটি বছর ধরে কিমেরীয় ভূভাগ যত উত্তরের দিকে সরে আসতে থাকে ততই পুরাতন টেথিস প্যানজিয়ার উত্তর অংশ (অর্থাৎ লরেশিয়া) ও কিমেরিয়ার মধ্যে সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে ও কিমেরিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে নব্য টেথিস সাগর প্রসারিত হয়ে উঠতে থাকে। ট্রায়াসিক যুগের শেষ ও জুরাসিক যুগের শুরুর দিকে, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে শেষপর্যন্ত কিমেরীয় ভূভাগ এসে উত্তর প্যানজিয়ার সাথে মিলে যায়। ফলে পুরাতন টেথিসের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটে ও নব্য টেথিসের গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নূতন এই টেথিস মহাসাগর পুরাতন মহাসাগরটির প্রায় সমগ্র অংশটিই অধিকার করে বিরাজ করতে শুরু করে।[১][১০]

ভূতাত্ত্বিক পাত (টেকটনিক প্লেট) চলাচলের কারণ কিমেরিয়া ক্রমশ উত্তরে সরে এসে লরেশিয়ার সাথে মিশে গেলে তার আরও উত্তরমুখী চলন বন্ধ হয়; কিন্তু এর ফলে কিমেরীয় পাতটি ক্রমশ লরেশীয় পাতের তলায় ভিতর দিকে ঢুকে যেতে শুরু করে। ফলে টেথীয় খাত গড়ে ওঠে। এই টেথীয় খাতের অবশেষ এখনও দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দক্ষিণপশ্চিম অংশে খুঁজে পাওয়া যায়।

এরপরে জুরাসিক যুগে (২০.১৩ কোটি - ১৫.২১ কোটি বছর আগে) মূলত দু'টি ঘটনা ঘটে। একদিকে সমুদ্রের জলস্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে টেথিস সাগরের পশ্চিম অংশে একটি বড় অগভীর সমুদ্রের সৃষ্টি হয়। আজকের ইউরোপের এক উল্লেখযোগ্য অংশ এই অগভীর সমুদ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে আজ থেকে প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে এককমহাদেশ প্যানজিয়ার ভাঙন শুরু হয় ও লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানা পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে। এরফলে টেথিস সাগরের পশ্চিম অংশ ক্রমাগত প্রসারিত হতে শুরু করে। আজকের ভূমধ্যসাগর থেকে পশ্চিমে ক্যারিবীয় সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আটলান্টিক মহাসাগরের অংশটি সেই টেথিস সাগরেরই পশ্চিম অংশের অবশেষ। তবে যেহেতু উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা তখনও লরেশিয়া বা গন্ডোয়ানা থেকে পৃথক হয়নি, তাই তখনও পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরের বাকি অংশের সৃষ্টি হয়নি। টেথিস সাগরের এই সর্বাধিক বিস্তৃতির কালে এই মহাসাগর পূর্ব থেকে পশ্চিমে এক অবিচ্ছিন্ন মহাসাগর হিসেবে প্রায় গোটা পৃথিবীকে ঘিরেই অবস্থান করত। উত্তরদক্ষিণে সে'সময় তার বিস্তৃতি ছিল মোটামুটি নিরক্ষরেখা থেকে ৩০° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত।[১]

ক্রিটেশিয়াস যুগে (১৪.৫ কোটি - ৭.২১ কোটি বছর আগে) আজ থেকে প্রায় ১০ কোটি বছর আগে দক্ষিণের অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানার ভাঙন শুরু হয় এবং তার থেকে ভেঙে বেরিয়ে আফ্রিকা ও দক্ষিণ ভারতীয় উপমহাদেশ ক্রমশ উত্তরে সরে আসতে থাকে। ফলে টেথিস সাগরের সংকোচন শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে আজ থেকে ১.৫ কোটি বছর আগে মায়োসিন উপযুগের (২.৩ কোটি - ৭২ লক্ষ বছর আগে) মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। আফ্রিকা ও দক্ষিণ ভারতের এই ক্রমাগত উত্তরমুখী চলনের ফলে সংকুচিত হতে থাকা টেথিস সাগরের তলদেশের পলিস্তর থেকে এই সময় আল্পস পর্বতমালা, কার্পেথীয় পর্বতমালা, তোরোস পর্বতমালা, হিমালয় পর্বতমালা প্রভৃতি একের পর এক সুউচ্চ নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সমগ্র প্যালিওজিন যুগ (৬.৬ কোটি - ২.৩ কোটি বছর আগে) জুড়ে সমুদ্রের জলস্তর ক্রমাগত নামতে থাকে। এর ফলে টেথিস সাগরের পশ্চিম অংশ পূর্ব অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও দুই'এর মাঝে আজকের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অলিগোসিন উপযুগেও (৩.৩৯ কোটি - ২.৩ কোটি বছর আগে) মধ্য ও দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের এক বড় অংশ জুড়ে টেথিস সাগরের একটি অংশ অবস্থান করত; একে সাধারণত প্যারাটেথিস নামে অভিহিত করা হয়। তবে জেগে ওঠা আল্পস, কার্পেথীয়, এলবুর্জ, প্রভৃতি নতুন নতুন পর্বতমালা ও জেগে ওঠা মধ্যপ্রাচ্যের দরুণ এই প্যারাটেথিস মূল টেথিস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পরবর্তী মায়োসিন উপযুগে এই প্যারাটেথিস ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হয় ও আজকের ভূমধ্যসাগর এবং কৃষ্ণ সাগর, কাস্পিয়ান সাগর, আরল সাগর, প্রভৃতি মূলত স্থলবেষ্টিত কিছু জলভাগে পরিণত হয়।[১]

বর্তমান গুরুত্ব

পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উত্তর ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যে ১৫ কোটি বছরেরও বেশি সময় জুড়ে টেথিস মহাসাগর অবস্থান করত। বর্তমানে এই ভূভাগে অবস্থান করছে ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের দেশসমূহ (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, প্রভৃতি)। অন্যদিকে সে' সময়ের কিমেরিয়ার অংশ আজকের তুরস্ক, ইরাক, ইরানের উত্তর অংশ ও তিব্বত। আবার আজকের ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ সাগর, কাস্পিয়ান সাগর, প্রভৃতিকে বলা চলে সরাসরি পূর্বতন টেথিসেরই উত্তরসুরি। তবে সে' সময়ের টেথিস সাগরের তলদেশের বেশির ভাগই এখন আর অবিকৃত অবস্থায় অবশিষ্ট নেই। হয় তা উত্তর মুখে আগুয়ান পূর্বতন গন্ডোয়ানার ভগ্নাংশ মহাদেশীয় পাতগুলির তলায় চাপা পড়ে গেছে, নতুবা লরেশীয় পাতের তলায় প্রবেশের ফলে সম্পূর্ণ ওলোটপালোট হয়ে গেছে।

কিন্তু ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর সীমা জুড়ে হিমালয়, আল্পস, কার্পেথীয়, তোরোস, প্রভৃতি যে একের পর এক নবীন ভঙ্গিল পর্বত বর্তমানে অবস্থান করছে, এদের একটা বড় অংশে টেথিস সাগরের তলদেশের পাললিক শিলাস্তর চোখে পড়ে। বস্তুত এইসব শিলাস্তর পরীক্ষা করেই ভূতত্ত্ববিদ্‌ , জীবাশ্মবিদ্‌ বা পুরাজীববিদ্‌রা সেই সময়ের বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদান আবিষ্কার করেছেন, যার উপর ভিত্তি করেই আজ সেই যুগের উপর আমাদের যাবতীয় জ্ঞানভাণ্ডারের এক বড় অংশ গড়ে উঠেছে।

এডুয়ার্ড সুয়েস হিমালয় অঞ্চলে আবিষ্কৃত বিভিন্ন জীবাশ্মের উদাহরণ দিয়ে দেখান যে, এই সব শিলাস্তর একসময় সমুদ্রের তলায় অবস্থান করত। আল্পস পর্বতমালাতেও এইধরনের অনেক জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। বস্তুত আফ্রিকা মহাদেশীয় পাতের উত্তরে ইউরেশিয়ামুখী চলনের ফলেই আল্পস গ্রিস ও ভূমধ্যসাগরের পূর্বউপকূলের উত্থান ঘটে। এই অঞ্চলে চূনাপাথর ও অন্যান্য পাললিক শিলার বহু স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে, একসময় যা টেথিস সাগরের তলদেশে আবস্থান করত।

বিশেষত পুরাজীববিদ্যার ক্ষেত্রে টেথিস সাগরের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এই অধুনালুপ্ত প্রাচীন মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক পাললিক শিলাস্তর পরীক্ষা করেই এখনও পর্যন্ত এক দীর্ঘ সময়ের সামুদ্রিক, অগভীর জলাশয় ও নদীমোহনা অঞ্চলের বৈচিত্রপূর্ণ প্রাণী ও উদ্ভিদজীবনের হদিশ পাওয়া সম্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আজকের কাশ্মীর ও উত্তরপশ্চিম হিমালয় অঞ্চল থেকে কিমেরীয় ভূভাগের দক্ষিণে টেথিস মহাসাগরের গন্ডোয়ানা সংলগ্ন দক্ষিণ উপকূলের বহু পাললিক শিলাস্তর আবিষ্কৃত হয়েছে; অন্যদিকে জার্মানির বায়ার্ন অঞ্চলের জোলনহোফেন চূণাপাথরের স্তর পরীক্ষা করে আবিস্কৃত হয়েছে প্রাচীনতম পাখি বিখ্যাত আর্কিওপ্টেরিক্স বা উরফোগেল-এর জীবাশ্ম;[১১][১২][১৩][১৪] এই অঞ্চল ছিল বাস্তবে টেথিস সাগর সংলগ্ন একটি অগভীর লেগুন, যার তলদেশের কাদাই বর্তমানে ঐ চূণাপাথরের স্তরে পরিণত হয়েছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • উইকিমিডিয়া কমন্সে টেথিস সাগর সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ