দাক্ষিণাত্য মালভূমি
দাক্ষিণাত্য মালভূমি (অন্যান্য নাম ডেকান ও দক্ষিণাপথ) হলো ভারতে অবস্থিত পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত এক বিশালাকার মালভূমি। ভারতের দক্ষিণভাগের অধিকাংশ অঞ্চল এই মালভূমির অন্তর্গত। দাক্ষিণাত্য মালভূমির গড় উচ্চতা উত্তরে ১০০ মিটার থেকে দক্ষিণে ১০০০ মিটার। তিনটি পর্বতশ্রেণির মধ্যভাগে স্থিত এই মালভূমি ভারতের আটটি রাজ্যের মধ্যে প্রসারিত। ত্রিভূজাকার এই মালভূমিটির শীর্ষবিন্দুটি দক্ষিণমুখী এবং এটি ভারতের উপকূলরেখার সঙ্গে সমান্তরালে স্থিত।[২] মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী এই অঞ্চলে দৃষ্ট হয়।[৩] মালভূমির উত্তরসীমায় রয়েছে সাতপুরা ও বিন্ধ্য। এই দুই পর্বতশ্রেণি উত্তর ভারতের নদী সমভূমি অঞ্চল থেকে দাক্ষিণাত্য মালভূমিকে পৃথক করেছে। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল এবং অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের কিয়দংশ নিয়ে এই মালভূমি গঠিত। দাক্ষিণাত্য মালভূমি ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দৃঢ় ভূমিভাগগুলির অন্যতম[৩] এই মালভূমিতে অনেকগুলি প্রধান নদী অববাহিকা অবস্থিত।[২]
দাক্ষিণাত্য মালভূমি | |
---|---|
ডেকান, দক্ষিণাপথ | |
সর্বোচ্চ বিন্দু | |
শিখর | আনামুডি, এরাভিকুলম জাতীয় উদ্যান |
উচ্চতা | ২,৬৯৫ মিটার (৮,৮৪২ ফুট) [১] |
স্থানাঙ্ক | ১০°১০′ উত্তর ৭৭°০৪′ পূর্ব / ১০.১৬৭° উত্তর ৭৭.০৬৭° পূর্ব |
নামকরণ | |
ব্যুৎপত্তি | সংস্কৃত दक्षिण |
ভূগোল | |
দাক্ষিণাত্য শব্দের উৎপত্তি
"দাক্ষিণাত্য" শব্দটি "দক্ষিণা" শব্দের সঙ্গে তত্র জাত অর্থে "ত্য" প্রত্যয় যোগ করে উৎপন্ন হয়েছে। এছাড়া মালভূমি অর্থে দক্ষিণাপথও ব্যবহৃত হয়েছে।[৪] "দক্ষিণা" শব্দটি আবার সংস্কৃত দক্ষিণ (दक्षिण) থেকে এসেছে। ইংরেজি "ডেকান" (Deccan) নামটি কন্নড় শব্দ দাক্খাণা থেকে এসেছে, যা দাক্ষিণাত্যে প্রচলিত তেলুগু, মারাঠি ও উর্দু ভাষাতে ব্যবহৃত হয়েছে।[৫] দাক্খাণা শব্দটিও আবার সংস্কৃত দক্ষিণ (दक्षिण) থেকে এসেছে।[৬][৭]
বিস্তৃতি
ভৌগোলিকগণ বৃষ্টিপাত, উদ্ভিদ প্রজাতি, মৃত্তিকা কিংবা অবয়বের দ্বারা দাক্ষিণাত্যকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।[৮] এক ভৌগোলিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণের উপদ্বীপীয় মালভূমি। এর বহিঃসীমানা ৩০০ মিটার (৯৮০ ফুট) সমোন্নতি রেখা দ্বারা চিহ্নিত, যার উত্তরদিকে বিন্ধ্য–কৈমুর জলবিভাজিকা অবস্থিত। অঞ্চলটিকে দুটি প্রধান ভূবৈজ্ঞানিক অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়: উর্বর কৃষ্ণমৃত্তিকা ও আগ্নেয় শিলার মালভূমি এবং অনুর্বর লাল মাটি ও নাইস শিলার পেনিপ্লেন, যা একাধিক পাহাড় দ্বারা বিচ্ছিন্ন।[৯]
ঐতিহাসিকগণও দাক্ষিণাত্যকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এগুলি আর. জি. ভাণ্ডারকরের (১৯২০) ন্যূনতম সংজ্ঞা থেকে কে. এম. পানিক্করের (১৯৬৯) সর্বোচ্চ সংজ্ঞার মধ্যে বিন্যস্ত। আর. জি. ভাণ্ডারকরের সংজ্ঞায় গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর মধ্যেকার মারাঠিভাষী অঞ্চলকে দাক্ষিণাত্য বলে। কে. এম. পানিক্করের সংজ্ঞায় বিন্ধ্য পর্বতমালার দক্ষিণে সমগ্র ভারতীয় উপদ্বীপকে দাক্ষিণাত্য বলে।[১০] ফিরিশতার (ষোড়শ শতাব্দী) সংজ্ঞায় কন্নড়, মারাঠি ও তেলুগুভাষী অঞ্চলকে দাক্ষিণাত্য বলে। রিচার্ড এম. ইটন (২০০৫) অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ইতিহাসের আলোচনার জন্য ভাষাবৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা ব্যবহার করেছেন।[৮]
স্টুয়ার্ট এন. গর্ডন (১৯৯৮) পর্যবেক্ষণ করলেন যে ঐতিহাসিকভাবে উত্তর ভারতের সাম্রাজ্যের দক্ষিণসীমার ভিত্তিতে "দাক্ষিণাত্য" শব্দ ও দাক্ষিণাত্যের উত্তরসীমা তাপ্তি নদী থেকে গোদাবরী নদীর মধ্যে হয়। সুতরাং, মারাঠার ইতিহাস আলোচনার সময় গর্ডন "দাক্ষিণাত্য" শব্দকে আপেক্ষিকভাবে ব্যবহৃত করেছেন এবং তাঁর সংজ্ঞানুযায়ী দাক্ষিণাত্য উত্তর ভারতের সাম্রাজ্যের দক্ষিণসীমার দক্ষিণের অঞ্চল।[১১]
ইতিহাস
দাক্ষিণাত্য ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশের জন্ম দিয়েছে, যেমন: বিজয়নগর সাম্রাজ্য, রাষ্ট্রকূট রাজবংশ, চোল রাজবংশ, পল্লব সাম্রাজ্য, সাতবাহন সাম্রাজ্য, চালুক্য সাম্রাজ্য, পাণ্ড্য রাজবংশ ও মারাঠা সাম্রাজ্য।
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
- এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- Richard M. Eaton (২০০৫)। A Social History of the Deccan, 1300–1761। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521254847।
- Shah Manzoor Alam (২০১১)। "The Historic Deccan - A Geographical Appraisal"। Kalpana Markandey; Geeta Reddy Anant। Urban Growth Theories and Settlement Systems of India। Concept। আইএসবিএন 978-81-8069-739-5।
বহিঃসংযোগ
- উইকিমিডিয়া কমন্সে দাক্ষিণাত্য মালভূমি সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।