দুঃস্বপ্নলোক
দুঃস্বপ্নলোক বলতে অদূর ভবিষ্যতে উদ্ভূত হতে পারে, এমন এক অবিচার ও দুঃখযন্ত্রণায় পরিপূর্ণ বিভীষিকাময় কাল্পনিক অপবিশ্ব বা অপসমাজকে বোঝায় যার সবকিছুই ত্রুটিপূর্ণ।[১][২] সাধারণত দুই ধরনের দুঃস্বপ্নলোক কল্পনা করা হয়: মহাপ্রলয়োত্তর দুঃস্বপ্নলোক ও রাষ্ট্রীয় দুঃস্বপ্নলোক।[৩] এর সমার্থক আরেকটি পরিভাষা হল কল্পনরক।[৪]
মহাপ্রলয়োত্তর দুঃস্বপ্নলোকে (Post-apocalyptic dystopia) সাধারণত কোনও মানবসৃষ্ট মহাযুদ্ধ (পারমাণবিক ধ্বংংসলীলা) বা প্রাকৃতিক মহাবিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত নিয়মকানুনহীন নৈরাজ্যমূলক মানবসমাজের সৃষ্টি হয়। এর অধিবাসীরা সাধারণত জনাকীর্ণ, ঘিঞ্জি পরিবেশে সর্বব্যাপী অপরাধ ও সহিংসতার মাঝে চরম দুর্দশাগ্রস্ত, হতদরিদ্র, লাঞ্ছিত, ভীতসন্ত্রস্ত, নিপীড়িত জীবনযাপন করে। এছাড়া মানবসৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয়, পৃথিবীপৃষ্ঠে গ্রহাণুর অভিঘাত, বহির্জাগতিক জীবদের আক্রমণ, জীবাণুঘটিত বৈশ্বিক মহামারী, মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান যান্ত্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব, জীবাশ্ম জ্বালানির সমাপ্তি, ইত্যাদিও এ ধরনের দুঃস্বপ্নলোকের জন্ম দেবে বলে কল্পনা করা হয়।
রাষ্ট্রীয় দুঃস্বপ্নলোকে (Statist dystopia) সাধারণত প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে চরম ক্ষমতাধর স্বৈরতন্ত্র দ্বারা শাসিত দমনমূলক এক চরম বৈষম্যমূলক সমাজ কল্পনা করা হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে সুশাসিত মনে হলেও বাস্তবপক্ষে শেষ হিসাবে যা ব্যক্তিস্বাধীনতাহীন, মতামতহীন, মনুষ্যত্বহীন, যন্ত্রবৎ নাগরিকে পূর্ণ। যেমন ইংরেজি সাহিত্যে অ্যালডাস হাক্সলি রচিত ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড, জর্জ অরওয়েল রচিত নাইন্টিন এইটি-ফোর ও রে ব্র্যাডবেরি রচিত ফ্যারেনহাইট ৪৫১ গ্রন্থে এরকম দুঃস্বপ্নলোক চিত্রায়িত করা হয়েছে।
দুঃস্বপ্নলোকের বিপরীত ধারণাটি হল স্বপ্নলোক বা স্বপ্নপুরী। ১৯শ শতকের ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল গ্রিক উপসর্গ "ডিস" এবং স্বপ্নলোকের ইংরেজি অনুবাদ "ইউটোপিয়া" এই দুইটি অংশ জোড়া লাগিয়ে "ডিসটোপিয়া" তথা দুঃস্বপ্নলোক শব্দটি উদ্ভাবন করেন।[২]