পদার্থবিজ্ঞানী

পদার্থবিজ্ঞানী হলেন এমন একজন বিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ।[১][২] পদার্থবিজ্ঞানীরা সাধারণত ঘটনার মূল কারণের প্রতি আগ্রহী হন এবং সাধারণত গাণিতিকভাবে ঘটনাগুলোকে বোঝার চেষ্টা করেন। পদার্থবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা ক্ষেত্র জুড়ে কাজ করেন। তারা পরমাণুকণা পদার্থবিজ্ঞান থেকে শুরু করে ভৌত বিশ্বতত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্বকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেন। ক্ষেত্রটিতে সাধারণত দুই ধরনের পদার্থবিদ অন্তর্ভুক্ত থাকে। পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানী: তারা ভৌত ঘটনার পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞ। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী: তারা প্রাকৃতিক ঘটনাকে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা ও পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ভৌত ব্যবস্থার গাণিতিক মডেল তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ।[১] পদার্থবিজ্ঞানীরা তাদের জ্ঞান ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য বা নতুন প্রযুক্তি বিকাশে প্রয়োগ করতে পারেন (যা ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বা প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞান হিসাবেও পরিচিত)।[৩][৪][৫]

বিংশ শতাব্দীর যুগান্তকারী পদার্থবিজ্ঞানী, আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রবক্তা।

ইতিহাস

১৮ শতাব্দীর "প্রাকৃতিক দর্শন" গবেষণায় (পরবর্তীতে "পদার্থবিজ্ঞান" বলা হয়) ইংরেজ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস হকসবি একটি স্থির তড়িৎ জেনারেটরের সাহায্যে কাজ করছেন

পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যয়ন এবং অনুশীলনের ভিত্তি হলো প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমানের আবিষ্কারের ধারা। আজকের ব্যবহৃত বহু গাণিতিক এবং ভৌত ধারণা প্রাচীন সভ্যতায় খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যাবিলীয় জ্যোতির্বিদ, প্রাচীন মিশরীয় প্রকৌশলী ও ফিনিশিয়ান দার্শনিক থেলিস, মিশরীয় গণিতবিদ ইউক্লিড এবং গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসঅ্যারিস্টার্কাসের মাধ্যমেই বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। প্রাচীন এশিয়ায় পদার্থবিজ্ঞান গবেষণার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ভারত ও চীনে এবং বিশেষত, ইসলামি মধ্যযুগেও পদার্থবিজ্ঞানের উত্থান ঘটেছিল। একাদশ শতাব্দীতে হাসান ইবনে আল-হাইসামসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরীক্ষার উপর জোর দিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছিল। ১৬০০ এর দশকে গ্যালিলিও গ্যালিলেইইয়োহানেস কেপলারের মাধ্যমে ইউরোপে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সময় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা হয়। নিউটনের গতিসূত্র এবং নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ১৭শ শতাব্দীতে প্রণীত হয়েছিল। ফ্যারাডের পরীক্ষামূলক আবিষ্কার এবং ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ উনিশ শতকে বিকশিত হয়। ২০ শতকের পদার্থবিদগণ কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভৌত বিশ্বতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞানের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

১৯ শতকে যখন "বিজ্ঞান" এর ধারণা আধুনিক রূপ লাভ করলে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক দর্শনের অধ্যয়ন বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তখন "জীববিজ্ঞান" এবং "জীববিজ্ঞানী", "পদার্থবিজ্ঞান" এবং "পদার্থবিজ্ঞানী", "রসায়ন" এবং "রসায়নবিদ" এর মতো শব্দগুলো উদ্ভূত হয়েছিল।[৬] ১৮৪০ সালের দ্য ফিলোসফি অফ দ্য ইনডাকটিভ সায়েন্স বইয়ে উইলিয়াম ওয়েওয়েল physicist বা পদার্থবিজ্ঞানী শব্দটির প্রবর্তন করেন।[৭]

শিক্ষা

একটি আদর্শ স্নাতক পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে চিরায়ত বলবিদ্যা, তড়িচ্চুম্বকত্ব, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান, পরিসংখ্যানগত বলবিজ্ঞান, তাপগতিবিজ্ঞান এবং পরীক্ষাগারের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত থাকে।[৮][৯][১০] পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গণিত (ক্যালকুলাস, অন্তরক সমীকরণ, রৈখিক বীজগণিত ইত্যাদি) এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে দক্ষতা প্রয়োজন।

যে কোনও পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত পেশায় পদার্থবিজ্ঞান বা ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন। এমএসসি, এমফিল, এমফিস বা এমএসসিআই এর মতো স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মাধ্যমে ক্যারিয়ার প্রসারিত হয়।[১১]

গবেষণা-ভিত্তিক কর্মজীবনের জন্য, শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষায়িত ডক্টরেট অর্জনের জন্য কাজ করে। বিশেষীকরণের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষামূলক এবং তাত্ত্বিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, জৈবিক পদার্থবিজ্ঞান, রাসায়নিক পদার্থবিজ্ঞান, ঘনপদার্থবিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব, ভূপ্রকৃতিবিদ্যা, মহাকর্ষীয় পদার্থবিজ্ঞান, বস্তু বিজ্ঞান, চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান, অণু-ইলেকট্রন বিজ্ঞান, আণবিক পদার্থবিজ্ঞান, নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান, বেতার পদার্থবিজ্ঞান, তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র, অণুতরঙ্গ পদার্থবিজ্ঞান, কণা পদার্থবিজ্ঞান এবং প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান

সম্মাননা ও পুরস্কার

পদার্থবিজ্ঞানীদের দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা হলো পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার যেটি রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস ১৯০১ সাল থেকে দিয়ে আসছে।[১২] তাছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় পদার্থবিজ্ঞান সমিতি পদার্থবিজ্ঞানীদের স্বীকৃতির জন্য অনেক পুরস্কার দিয়ে থাকে। আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির ক্ষেত্রে, পদার্থবিজ্ঞানে অবদানকারীদের ক্ষেত্রে ৩৩টি পৃথক পুরস্কার এবং ৩৮টি পৃথক পদক রয়েছে।

পেশাজীবন

ফিনল্যান্ডের ইয়িভাসকিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরে পরীক্ষাগারে কাজ করছে।

পদার্থবিজ্ঞানীদের তিনটি বড় নিয়োগকর্তা হলো একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, পরীক্ষাগার এবং বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় নিয়োগকর্তা হলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি পরীক্ষাগারে পদার্থবিজ্ঞানীদের সহকারী, অধ্যাপক, সিনিয়র/জুনিয়র বিজ্ঞানীর মতো উপাধি রয়েছে। আমেরিকান ফিজিক্স ইনস্টিটিউট অনুসারে, প্রায় ২০% নতুন পিএইচডিপ্রাপ্ত পদার্থবিজ্ঞানীরা ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়ন প্রোগ্রামে চাকরি করে। ১৪% কম্পিউটার সফটওয়্যার বিকাশ এবং প্রায় ১১% ব্যবসায়/শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করে।[১৩] নিয়োগপ্রাপ্ত বেশিরভাগ পদার্থবিদ তাদের দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ অন্যান্য খাতে প্রয়োগ করে (যেমন: অর্থসংস্থান[১৪])।[১৫] স্নাতক পদার্থবিজ্ঞানীদের অর্জিত বিভিন্ন পদের মধ্যে রয়েছে কৃষি বিজ্ঞানী, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার, বায়োফিজিসিস্ট, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী, পরিবেশ বিশ্লেষক, ভূপদার্থবিদ, মেডিকেল পদার্থবিদ, আবহাওয়াবিজ্ঞানী, সমুদ্রবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক/ অধ্যাপক/গবেষক, গবেষণা বিজ্ঞানী, পারমাণবিক চুল্লি পদার্থবিদ, প্রকৌশল পদার্থবিদ, উপগ্রহ মিশন বিশ্লেষক, বিজ্ঞান লেখক, সফটওয়্যার প্রকৌশলী, সিস্টেম প্রকৌশলী, অণু ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলী, প্রযুক্তি পরামর্শক ইত্যাদি।[১৬][১৭][১৮][১৯]

বেশিরভাগ স্নাতক ডিগ্রিধারীরা পদার্থবিজ্ঞানী বেসরকারি খাতে নিযুক্ত আছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো হলো শিক্ষা, সরকারি এবং সামরিক পরিষেবা, অলাভজনক সংগঠন, পরীক্ষাগার এবং অধ্যাপনা।[২০]

মাস্টার্স এবং ডক্টরাল ডিগ্রিধারী পদার্থবিজ্ঞানীদের সাধারণ দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ, উপাত্ত প্রস্তুতি, শিল্প বা চিকিৎসা সরঞ্জামের নকশা এবং বিকাশ, কম্পিউটিং, সফটওয়্যার বিকাশ ইত্যাদি।[২১]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ