পিৎজা
পিৎজা বা পিজ্জা (ইতালীয়: Pizza পিৎ'ৎজ়া; বাংলা উচ্চারণ: [পিৎজা] (ⓘ)) হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাবার। এই খাবারটির উদ্ভাবন হয়েছে মূলত ইতালির নাপলি শহরে। কালক্রমে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং সব বড় শহরেই এটি যথেষ্ট পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটি তৈরি হয় এক প্রস্থ মোটা, সাধারণত গোলাকৃতি রুটির ওপর চিজের প্রলেপ দিয়ে। সাথে অবশ্যই টমেটো এবং কখনো কখনো টমেটোর সস থাকে। এছাড়া স্থান, সংস্কৃতি এবং রুচি ভেদে আরো অনেক কিছুই যোগ করা হয়, যেমন মাংস বা পেঁয়াজ কুচি।
পিৎজার মূলত নেপোলিটান রন্ধনপ্রণালীর একটি অংশ হওয়া সত্ত্বেও সারা বিশ্বেই এটি তুমুল জনপ্রিয়। যে ধরনের দোকানগুলোতে পিৎজা বিক্রি হয়, তা মূলত পিৎজেইরা বা পিজারিয়া নামে পরিচিত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের দোকান পিৎজ়া পার্লার, পিৎজ়া প্লেস, এবং পিৎজ়া শপ নামে পরিচিত। য়ুরোপে এটি দুপুর বা রাতের মূল খাদ্য হলেও বাংলাদেশ ও ভারত সহ পৃথিবীর বহু দেশে এটি একটি ঝটপট জাতীয় খাবার হিসাবে গণ্য।
ইতিহাস
পিৎজার আসল উৎপত্তি এখনও অজানা হওয়া সত্বেও মনে করা হয় যে, খুব সম্ভবত, এই ধরনের খাবারের উৎপত্তি রোমানীয় চ্যাপ্টা রুটি ফোকাসিয়া থেকে। আনুমানিক আঠারো বা উনিশ শতকে ইতালির নেপলসে আধুনিক পিৎজার আবির্ভাব হয়, সেইজন্য এর তখনকার দিনে তার নাম ছিল নেপোলিটান পাই। তবে প্রাচীন গ্রিক, মিশরীয়, আর্মেনীয় ইত্যাদি খাবারেও এর কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিকরা (একে প্লাকুওস বলত) তাদের রুটি ওপরাংশে তেল, লতাগুল্ম এবং পনীর দিয়ে উনুনে সেঁকে খেত। এছাড়া প্রাচীন রোমানরা এটিকে একটু উন্নত করে পাতলা রুটির ওপর পনির, মধু, ও তেজপাতা লাগিয়ে খেত। তবে ১৫২২ সাল নাগাদ যখন টোম্যাটো এবং সেই জাতীয় সবজি পেরু থেকে ইউরোপে বানিজ্যের কারণে আসে, তখন বিষাক্ত ফল মনে করে সেগুলো খাওয়া হত না এবং তা অভাবি মানুষদের কাছে সহজলভ্য ছিল। তারা তখন ঈষ্ট এর সাথে ময়দা মিশিয়ে তাতে টোম্যাটো ও অন্যান্য মশলা দিয়ে খেতে শুরু করে, ও পরবর্তীতে তা বিশেষ জনপ্রিয়ও হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে পারস্য সৈনিকদের পাতলা রুটির উপর চীজ ও খেজুর দিয়ে খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, পিৎজার উৎপত্তি পিজ্জারেল থেকে, যা আসলে রোমান জিউসদের খাবার ছিল।মনে করা হয় যে, রাফায়েল এসপোসিটো নামক এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম আধুনিক পিৎজার আবিষ্কার করেন। তিনি এই পিৎজা ১৮০০ শতকে রাজা উম্বেরত ও রানী মারগারিটার জন্য চীজ, বেসিল, টোম্যাটো সহযোগে বানান, যা তাঁদের খুবই পছন্দ হয় এবং তখন থেকে এর নাম 'পিৎজা মারগারিটা' রাখা হয়। পিৎজার দোকান খোলা হয় নেপলসের পোর্ট অ্যালবাতে, যা আজও উপস্থিত। পিৎজ়ার সমগোত্রীয় খাবারের প্রচলন প্রায় গোটা বিশ্বেই দেখা যায়। চিনে একে যেমন বিঙ বলা হয় তেমনই ভারত-বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে এটি পরোটা, রুটি, নান ইত্যাদি নামে পরিচিত। [১]
নামকরণ
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় পিৎজা নামকরণ করা হয়েছে লাতিন শব্দ 'পিনজা' থেকে যা আবার এসেছে লাতিন শব্দ 'পিন্সের' থেকে, যার অর্থ পাউন্ড করা অথবা স্ট্যাম্প করা।
রন্ধন প্রণালী
পিৎজা টাটকা বা প্যাকেজ করা, দুই হিসাবেই গোটা আর টুকরো আকারে দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকেজ করা পিৎজাতে সমস্ত মশলা শুকনো অবস্থায় থাকে যা দোকান থেকে কিনে বাড়িতে বানানো যায়। আর এক ধরনের পিৎজা হয়, যা দোকান থেকে কাঁচা সামগ্রী দিয়ে বানানো হয় ও বাড়িতে এনে সেটাকে রান্না করলেই তৈরী হয়ে যায়। যে ধরনের ওভেনে আমাদের দেশে পাউরটি তৈরি করা হয় সে রকম রেস্তোরায় ওভেনেই পিৎজা তৈরি করা হয়। পিৎজার বেস (রুটি জাতীয় জিনিস, যার উপর পিৎজার অন্যান্য উপকরণ গুলি সাজানো হয়), যাকে ক্রাস্ট বলে, তৈরী করা হয় ময়দার সাথে ঈস্ট, লবণ, চিনী, গরম পানী, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা ইত্যাদি মিশিয়ে। তারপর সেটা কিছুক্ষণের জন্য রেখে দেওয়া হয়। তারপর নান নানরুটি বা পরোটার কায়দায় তা বেলা হয়। এই রুটি খুব মোটা অথবা খুব পাতলা হয় না। সাধারণত, রুটির মাঝের অংশ পাতলা ও ধারের দিক গুলো মোটা হয়। তারপর এর ওপর চীজ, সস্, টমেটো, পেঁয়াজ কুচি, লবণ , গোল মরিচ, সামান্য জলপাই তেল, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি দেয়া হয়। পিৎজ়ার ক্ষেত্রে সাধারণত মোজারেলা চীজই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া চিংড়ি মাছ, মুরগীর মাংসের কুচি, মাশ্রুম ইত্যাদি ও দেওয়া হয়। তারপর লম্বা হাতা জাতীয় প্যানের ওপর এটি রেখে ওভেনের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়। রুটি সেদ্ধ হয়ে গেলে তা ওই হাতার সাহায্যে বের করে এনে গরম গরম পরিবেশন করা হয়।
ধরণ
ইতালি
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ লোক প্রতিদিন পিজ্জা খায়। পিৎজ়া হাট, ডোমিনোজ পিৎজ়া, হান্ট ব্রাদার্স পিজ্জা এবং পাপা জন্স এর মত পিৎজ়া শৃঙ্খলাগুলি, পিচজারিয়াস গ্রহণ এবং বেক করা থেকে পিজ্জা এবং সুপারমার্কেটের ঠাণ্ডা বা হিমায়িত পিজ্জা দেশজুড়ে পিৎজ়া সহজেই উপলভ্য করে।