প্রতিযোগিতা

প্রতিযোগিতা একটি ঘটনা বিশেষ যেখানে ব্যক্তিগণ কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেরা নির্ধারণকল্পে একে-অপরের সাথে মোকাবিলা করে থাকে। এটি জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান বিষয়। উদ্ভিদ, প্রাণী, ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। সাম্রাজ্য দখল, উপযুক্ত স্থান, সম্পদের অবস্থান, মালামাল, ভাবমূর্তি রক্ষা, সম্মাননা, পুরস্কার, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, নেতৃত্ব গ্রহণ ইত্যাদি এর প্রধান কারণ। প্রতিযোগিতা সহযোগিতার বৈপরীত্য অর্থ বহন করে।[১][২]

প্রতিযোগিতামূলক খেলা

কেউ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ বা অনুপ্রবেশ করলে তিনি প্রতিযোগী বা খেলোয়াড় নামে পরিচিত হন। প্রতিযোগীগণ একে-অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হন। যিনি বা দলগত পর্যায়ে যারা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বা চ্যাম্পিয়ন হন, সাধারণতঃ দল বা তিনি পুরস্কার পেয়ে থাকেন। সচরাচরভাবে প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ পুরস্কাররূপে ট্রফি, পদক, অর্থ কিংবা সনদ অথবা উভয়ই পূর্ব নির্ধারিত শর্তমাফিক প্রদান করে থাকেন।

উৎপত্তি রহস্য

দু'টি দলের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণে যদি একমত না হয় কিংবা ব্যক্তিগতভাবে ঐকমত্য্য পোষণ ও সহযোগিতা প্রদর্শন করে না তখনই প্রতিযোগিতার উদ্ভব হয়। প্রকৃতিগতভাবে জীবিত প্রাণীর মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায় যারা একই ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করে।[৩] উদাহরণস্বরূপ প্রাণীজগতের বাসিন্দারা পানি সরবরাহ, খাদ্য, সঙ্গী নির্বাচনসহ অন্যান্য জৈবিক সম্পদ সংগ্রহে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।সাধারণতঃ রাজনীতি, অর্থনীতিব্যবসা, জমি দখল, চাকরি, শিক্ষা, সাহিত্য, জীববিজ্ঞান, পরিবেশের ভারসাম্য, ক্রীড়া, রচনা বা প্রবন্ধ, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, বিজ্ঞান, দাবা, মুরগীর লড়াই ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের তুলনায় শক্তিমত্তা প্রদর্শন কিংবা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত বা দলীয় যে-কোন পর্যায়ের প্রতিযোগিতাতেই কমপক্ষে দু'জন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী বা প্রাণীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য ও প্রধান নিয়ামক।

মানবজাতি মূলতঃ খাদ্য এবং সঙ্গী নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিযোগীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এ চাহিদাগুলো পূরণের পর সম্পদ, সম্মান এবং খ্যাতির ন্যায় বিষয়গুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ে।

অর্থনীতিতে প্রভাব

মরিয়ম-ওয়েবস্টার অভিধানে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা বলতে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যেকার অন্য কোন তৃতীয়পক্ষের অংশগ্রহণে অধিকতর ভালো পণ্য বা সেবার আশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হওয়াকে বুঝায়।[৪] এ বিষয়ে ১৭৭৬ সালে দি ওয়েলথ অব নেশন্স গ্রন্থে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ উল্লেখ করেছেন।[৫]বাজার অর্থনীতিতেও প্রতিযোগিতা বৃহৎ ভূমিকা পালন করে এবং একই স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদেরকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। অনেক সময় অর্থনীতিতে তা অসুস্থ প্রতিযোগিতা নামে আখ্যায়িত হয়। উন্নয়নশীল দেশে প্রায়শঃই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার কাছে দেশী ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে না। সভা-সমাবেশ, উন্নততর পণ্য, সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সচেষ্ট হয়।

শিক্ষা পদ্ধতি

শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক কিংবা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান অন্যতম মানদণ্ডস্বরূপ। ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের ন্যায় উন্নত দেশগুলোয় বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ ছাত্রদেরকে নির্বাচিত করে শিক্ষা ব্যয় থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। শিক্ষাক্রমিক ফলাফলে ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে সেরা ছাত্রকে গ্রেডের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।

অনেকক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক দেশে অতি উচ্চমাত্রায় চাপ প্রয়োগের ফলে ছাত্রদের মাঝে বুদ্ধি-বৃত্তি চর্চায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকসময় পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার দরুন তা আত্মহত্যার পর্যায়ে এসে পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে জাপানের শিক্ষাপদ্ধতি প্রধান উদাহরণ হিসেবে বিবেচ্য। আলফি কন শিক্ষা ব্যবস্থায় এজাতীয় প্রতিযোগিতার সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ‘ছাত্রদের যোগ্যতা নির্ধারণে প্রতিযোগিতা প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এটি আমাদের সবাইকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রিচার্ড লেয়ার্ডও প্রতিযোগিতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতার ফলে ছাত্ররা এক ধরনের চাপ উপলদ্ধি করে। তারা মনে করে যে তাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায় সেরা হওয়া। তরুণেরা তাদের প্রাত্যহিক বিদ্যালয় জীবনে কি শিখছে তাই মুখ্য বিষয়। এবং এ ধরনের প্রতিযোগিতা সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না।[৬]

ক্রীড়া

ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় কমপক্ষে দু'জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন। দলগত পর্যায়ের খেলা হিসেবে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, ওয়াটার পোলো ইত্যাদি খেলায় খেলোয়াড়গণ নির্ধারিত নিয়ম-কানুন প্রতিপালন করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিপক্ষীয় দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দলীয় অধিনায়কের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৌশল প্রয়োগ ও পরামর্শক্রমে জয়ের লক্ষ্যে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। জয়-পরাজয় নির্ধারণ ও সুষ্ঠুভাবে খেলা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একজন রেফারী কিংবা আম্পায়ারের প্রয়োজন পড়ে।

তবে, খেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী যথাযথভাবে একজন খেলোয়াড়কে অনুসরণ করতে হয়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ডেভিস কাপ টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য একজন টেনিস খেলোয়াড়কে কমপক্ষে ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী হতে হয়।[৭]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ