উন্নত দেশ

উন্নত দেশ বলতে ঐ সকল সার্বভৌম দেশকে বুঝায় যারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উচ্চতর প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর বা নির্দিষ্ট সীমারেখায় অবস্থানসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহ থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছে। উন্নত দেশকে অনেকে অধিক উন্নত দেশ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। অনেক উপায়ে উন্নত দেশের সংজ্ঞা নিরূপিত করা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হিসেবে জনগণের মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদন, শিল্পায়নের স্তর, বিস্তৃত অবকাঠামোর বিন্যাস এবং সাধারণ জীবনযাত্রার মান এর প্রধান মাপকাঠি।[১] এছাড়াও, মানব উন্নয়ন সূচকের মাধ্যমে উন্নত দেশকে নির্ধারিত করা হয়। তবে, কোন দেশটি কি মানদণ্ডে, কোন শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে উন্নত দেশের মর্যাদা পাবে এটি প্রকৃতই বিতর্কিত বিষয়। সাধারণতঃ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের উৎপাদন ও এর মাথাপিছু ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক হাসপাতাল, সুন্দর ব্যবস্থাসম্পন্ন চমৎকার গণশৌচাগার উন্নত দেশসমূহে বিদ্যমান থাকে।

উন্নত দেশসমূহের শিল্পাঞ্চল-পরবর্তী সমাজ ব্যবস্থায় মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি বিরাজমান। অর্থাৎ, শিল্পাঞ্চল খাতের তুলনায় সেবা খাতেই অর্থনৈতিক বুনিয়াদ রয়েছে বেশি। উন্নয়নশীল দেশের শিল্পায়নে প্রবেশের চেষ্টা কিংবা শিল্প-পূর্ব সমাজের তুলনায় উন্নত দেশে বিপরীত চিত্র সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ২০১০ সালের তথ্য মোতাবেক উচ্চ অর্থনীতিতে উন্নত দেশের জিডিপিতে ৬৫.৮% এবং পিপিপিতে ৫২.১% বৈশ্বিক অংশগ্রহণ রয়েছে।[২] ২০১১ সালে শীর্ষ দশ উচ্চ অর্থনীতির দেশ হিসেবে - যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডা, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া পরিচিতি পেয়েছে।[৩][৪]

সমার্থক পরিভাষা

উন্নত দেশের সমার্থক পরিভাষা হিসেবে রয়েছে - উচ্চতর দেশ, শিল্পাঞ্চল দেশ, অধিক উন্নত দেশ (এমডিসি), অধিক অর্থনৈতিক উন্নত দেশ (এমইডিসি), বৈশ্বিক উত্তর দেশ, প্রথম বিশ্ব দেশ এবং শিল্প-পরবর্তী দেশ। শিল্পাঞ্চল দেশের সংজ্ঞাটি চলমান প্রক্রিয়া বিধায় সংজ্ঞার্থ নিরূপণ করা বেশ খানিকটা কঠিন। এমইডিসি পরিভাষাটি আধুনিককালের ভূগোলবিশারদগণ সুনির্দিষ্টভাবে অধিক অর্থনৈতিক উন্নত দেশসমূহকে নির্দেশ করেছেন। প্রথম শিল্পাঞ্চল দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম। পরবর্তীতে তা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জেফ্রে সাচের ন্যায় অর্থনীতিবিদ মনে করেন, 'বিংশ শতকে বিশ্ব অর্থনীতি দু'টি ধারায় বিভক্ত। একটি হচ্ছে উন্নত দেশ এবং অপরটি উন্নয়নশীল দেশ।'

সংজ্ঞার্থ নিরূপণ

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আন্নান উন্নত দেশের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন,[৫]

উন্নত দেশ বলতে যে সকল দেশ তার নাগরিকদের মুক্ত ও নিরাপদে রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরাপত্তাসহ উপযুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যকর জীবন প্রদানে সক্ষম তাকে বুঝাবে।

কিন্তু জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বিভাগের মতে,[৬]

উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ অথবা অঞ্চলের রূপরেখা জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

জাতিসংঘ আরো বলেছে, সাধারণভাবে এশিয়ায় জাপান, উত্তর আমেরিকায় কানাডামার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ড এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো উন্নত অঞ্চল বা এলাকা হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান মোতাবেক সাউদার্ন আফ্রিকান কাস্টমস ইউনিয়নকেও উন্নত অঞ্চল এবং ইসরায়েলকে উন্নত দেশ হিসেবে বলা যায়। উদীয়মান দেশ হিসেবে পরিচিত সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ এবং কমনওয়েলথভূক্ত স্বাধীন দেশ বা সিআইএস-ভূক্ত ইউরোপীয় দেশসমূহ (কোড ১৭২) উন্নত বা উন্নয়নশীল কোনটিরই মর্যাদা পায়নি।[৬]

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ তাদের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছে যে - এপ্রিল, ২০০৪-এর পূর্বেকার উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশসমূহ বিশেষতঃ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানসহ মঙ্গোলিয়া উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের আওতাভূক্ত নয়। কিন্তু, ঐ সকল দেশসমূহও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈশ্বিকভাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

মানব উন্নয়ন সূচক

বৈশ্বিকভাবে ২০১১ সালের মানব উন্নয়ন সূচকের অবস্থান।
  খুবই ভাল
  ভাল
  মাঝারি
  নিম্ন
  তথ্য পাওয়া যায়নি

জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন সূচকে পরিসংখ্যানগতভাবে কোন দেশের মানব উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্যাদি তুলে ধরে। উচ্চমাত্রার মানব উন্নয়ন সূচকের সাথে উন্নত দেশের ভবিষ্যতের অর্থনীতির গতিধারা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেখানে একটি দেশের আর্থিক আয় কিংবা উৎপাদনশীলতার চেয়ে অন্যান্য বিষয়াদির উপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়। মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কিংবা মাথাপিছ আয়ের পাশাপাশি আয়ের কতটুকু অংশ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়িত হয়েছে তা-ও তুলে ধরা হয়।

১৯৯০ সাল থেকে নরওয়ে, জাপান, কানাডা এবং আইসল্যান্ড সর্বোচ্চ মানব উন্নয়ন সূচকে স্থান পেয়েছে। ২০১১ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২ নভেম্বর, ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়। এতে উচ্চমাত্রার মানব উন্নয়ন সূচকে ৪৭টি দেশ স্থান পায় যাতে সর্বোচ্চ ০.৯৪৩ স্কোরে নরওয়ে এবং ০.৭৯৩ স্কোরে বার্বাডোজ জায়গা করে নেয়।[৭]

০.৭৮৮ স্কোরের অনেক দেশের তালিকা আইএমএফ অথবা[৮] সিআইএ তৈরী করেছে যাতে ২০০৯ সাল থেকে ঐ দেশসমূহকে উচ্চতর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অনেক দেশ[৯] ২০১০ সাল থেকে মানব উন্নয়ন সূচকে ০.৭৮৮ স্কোরে পৌঁছে। এ স্কোর কিংবা তারও বেশি স্কোরকে ২০০৯ সাল থেকে আইএমএফ বা সিআইএ উচ্চতর দেশ হিসেবে তাদের তালিকায় রাখে। এছাড়াও, ২০০৯ সাল থেকে অনেক উচ্চতর অর্থনীতির দেশ হিসেবে মানব উন্নয়ন সূচকে ০.৯ বা তদূর্ধ্ব স্কোরের অধিকারী দেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ