উন্নয়নশীল দেশ

উন্নয়নশীল দেশ বলতে সাধারণতঃ স্বল্পোন্নত দেশ অথবা এলডিসি হিসেবে আখ্যায়িত প্রধানত নিম্নআয়ের দেশ বোঝায়।[১] যে সকল দেশের জীবনযাত্রার মান কম, অণুন্নত শিল্পাঞ্চলভিত্তিক এবং মানব উন্নয়ন সূচক অপরাপর দেশের তুলনায় নিম্নমূখী সেগুলো উন্নয়নশীল দেশরূপে চিহ্নিত।[২][৩]

  আইএমএফ অনুসারে উন্নয়নশীল অর্থনীতি
  উন্নয়নশীল অর্থনীতি, আইএমএফের পরিধির বাইরে

আবার, যে সকল দেশের অর্থনীতি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অধিকতর অগ্রগামী কিন্তু উন্নত দেশের সমপর্যায়ের নয়, তারা নব শিল্পাঞ্চলভিত্তিক দেশ বা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত।[৪][৫][৬][৭]

সংজ্ঞার্থ নিরূপণ

এইচডিআই ম্যাপ

উন্নয়নশীল দেশ বোঝাতে নানা পরিভাষা ব্যবহৃত হয়। পরিভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে অল্পতর উন্নত দেশ (LDC) বা অল্পতর অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ (LEDC), এবং আরও চূড়ান্ত ক্ষেত্রে, ন্যূনতম উন্নত দেশ (LDC) বা ন্যূনতম অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ (LEDC)।

উন্নয়নশীল দেশের মানদণ্ড পাওয়া যায়, একটি উন্নত দেশ সংজ্ঞায়িত যে বিষয়গুলি ব্যুত্ক্রমের মাধ্যমেঃ

  • মানুষের কম আয়ু আছে
  • মানুষের কম শিক্ষা আছে
  • মানুষের কম টাকা আছে (আয়)

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান উন্নত দেশের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন,[৮]

উন্নত দেশ বলতে যে সকল দেশ তার নাগরিকদের মুক্ত ও নিরাপদে রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরাপত্তাসহ উপযুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যকর জীবন প্রদানে সক্ষম তাকে বুঝাবে।

কিন্তু জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বিভাগের মতে,[৩]

উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ অথবা অঞ্চলের রূপরেখা জাতিসংঘের প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্মলনের মাধ্যমে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

জাতিসংঘ আরও বলেছে, সাধারণভাবে এশিয়ায় জাপান, উত্তর আমেরিকায় কানাডামার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওশেনিয়ায় অস্ট্রেলিয়ানিউজিল্যান্ড এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো উন্নত অঞ্চল বা এলাকা হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান মোতাবেক সাউদার্ন আফ্রিকান কাস্টমস ইউনিয়নকেও উন্নত অঞ্চল এবং ইসরায়েলকে উন্নত দেশ হিসেবে বলা যায়। উদীয়মান দেশ হিসেবে পরিচিত সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ এবং কমনওয়েলথভূক্ত স্বাধীন দেশ বা সিআইএস-ভূক্ত ইউরোপীয় দেশসমূহ (কোড ১৭২) উন্নত বা উন্নয়নশীল কোনটিরই মর্যাদা পায়নি।[৩]

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ তাদের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছে যে - এপ্রিল, ২০০৪-এর পূর্বেকার উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশসমূহ বিশেষতঃ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানসহ মঙ্গোলিয়া উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের আওতাভূক্ত নয়। কিন্তু, ঐ সকল দেশসমূহও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বৈশ্বিকভাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আইএমএফ একটি নমনীয় শ্রেণিবিভাগ প্রয়োগ করে যা বিবেচনায় আনে "(১) মাথাপিছু আয়ের স্তর, (২) রপ্তানি বৈচিত্রতা—তাই তেল রপ্তানীকারকরা যাদের উচ্চ মাথাপিছু জিডিপি আছে, উন্নত শ্রেণিবিভাগের আওতায় পড়ে না কারণ তাদের রপ্তানির প্রায় ৭০% তেল, এবং (৩) বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার সাথে একীকরণের মাত্রা।"[৯]

বিশ্ব ব্যাংক চারটি আয়ের দলের মধ্যে দেশগুলোকে ভাগ করে। প্রতি বছর ১ জুলাইতে তা নির্ধারণ করা হয়। ২০১১ মাথাপিছু জিএনআই অনুসারে আয়ের নিম্নলিখিত সীমা ব্যবহার করে অর্থনীতি ভাগ করা হয়ঃ[১০]

  • নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মাথাপিছু জিএনআই মার্কিন $১,০২৬ বা কম হবে।
  • নিম্নতর মধ্য-আয়ের দেশগুলোর মাথাপিছু জিএনআই মার্কিন $১,০২৬ ও মার্কিন $৪,০৩৬-এর মধ্যবর্তী হবে।
  • উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশগুলোর মাথাপিছু জিএনআই মার্কিন $৪,০৩৬ ও মার্কিন $১২,৪৭৬-এর মধ্যবর্তী হবে।
  • উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মাথাপিছু জিএনআই মার্কিন $১২,৪৭৬-এর বেশি হবে।

বিশ্ব ব্যাংক সব কম ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে উন্নয়নশীল হিসাবে শ্রেণীভূক্ত করে কিন্তু উল্লেখ্য, "শব্দটি ব্যবহার সুবিধাজনক; এটা গোষ্ঠীর সব অর্থনীতিকে বোঝানো অভিপ্রেত নয়, যারা অনুরূপ উন্নয়নের সম্মুখীন অথবা যা অন্যান্য অর্থনীতিগুলো উন্নয়নের একটি পছন্দসই বা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আয় দ্বারা শ্রেণিবিভাগ অপরিহার্যভাবে উন্নয়নস্থিতি প্রতিফলিত করে না।"[১০]

উন্নয়নের বর্তমান স্তরের সঙ্গে বরাবর, কিছু পরিমাণ সময়ে দেশগুলো কতটুকু পরিবর্তিত হয়েছে তা দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।[১১] এই পরম সংখ্যা বা দেশ র‍্যাংকিং দ্বারা হতে পারে।

  • দেশগুলো যারা আরও স্বল্পোন্নত দেশ ছিল, এবং এখন কম স্বল্পোন্নত দেশ হয়েছে (এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশ)
  • দেশগুলো যারা স্বল্পোন্নত দেশ ছিল, এবং এখন একই রকম আছে (উন্নয়নশীল দেশ)
  • দেশগুলো যারা কম স্বল্পোন্নত দেশ ছিল, এবং এখন আরও স্বল্পোন্নত দেশ হয়েছে (এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশ)

মানদণ্ড

একটি দেশের উন্নয়নের মানদণ্ড বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যানগত সূচকের মাধ্যমে নিরূপণের ব্যবস্থা রয়েছে। তন্মধ্যে - মাথাপিছু আয় (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন), প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল, স্বাক্ষরতার হার অন্যতম। জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন সূচকের ধারণাটির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় উপাত্তের সাহায্যে উপরের পরিসংখ্যানগত জটিল পদ্ধতিতে দেশগুলোর উন্নয়নের স্তর নিরূপণ করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

ঐ সমস্ত দেশগুলোকেই উন্নয়নশীল দেশ বলা যায় যেগুলো তাদের জনসংখ্যার অণুপাতে উল্লেখযোগ্য হারে শিল্পখাতের প্রসার ও উন্নয়ন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐ সকল দেশের জীবনযাত্রার মান মাঝারি থেকে নিম্নমানের হয়ে থাকে। নিম্নমূখী আয় এবং উচ্চমূখী জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে উন্নয়নশীল দেশের গভীরতর সম্পর্ক বিরাজমান।

দেশগুলোর শ্রেণিবিভাগ

দেশসমূহ প্রায়ই সাধারণভাবে উন্নয়নের পাঁচটি শ্রেণীর মধ্যে ভাগ করা হয়। প্রত্যেকটি শ্রেণীর তাদের নিজ নিজ প্রবন্ধে উল্লিখিত দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। "উন্নয়নশীল জাতি" শব্দটি একটি নির্দিষ্ট, একই ধরনের সমস্যাকে বোঝায় না।

  1. উন্নত দেশসমূহ, এবং তাদের নির্ভরতা।
  2. নব্য শিল্পোন্নত দেশসমূহ বা এনআইসি, যাদের অর্থনীতি উন্নয়নশীল বিশ্বের তুলনায় আরও উন্নত ও বিকশিত, কিন্তু এখনও উন্নত দেশের সমতুল্য নয়।[৪][৫][৬][৭] এনআইসি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে একটি শ্রেণী, এবং এর অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকা, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, এবং তুরস্ক
  3. দেশসমূহ যাদের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে এবং মোটামুটি দৃঢ়ভাবে উন্নয়নশীল দীর্ঘতর সময়কাল ধরে:কিছু অংশ পাকিস্তান, ইরান, বেশিরভাগ দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় (ব্যতিক্রম জ্যামাইকা ক্যাটাগরি ২ তে), বিভিন্ন পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্র, প্রাক্তন ওয়ারসো চুক্তির দেশসমূহ এবং অন্যান্য। (দেখুন উদীয়মান বাজার।)
  4. দেশসমূহ যাদের উন্নয়নস্থিতি অধারাবাহিক দেশ: আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশসমূহ উত্তর আফ্রিকা সহ, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া যেমনঃ (লাওস এবং কম্বোডিয়া), দক্ষিণ এশিয়া (যেমনঃ বাংলাদেশ) এবং মধ্য এশিয়া (যেমনঃ তাজিকিস্তান) এবং মধ্য প্রাচ্যের কিছু দেশ। পৃথিবীর দেশসমূহের ৭৬% এই শ্রেণীর আওতায় পড়ে।
  5. দেশসমূহ যারা দীর্ঘমেয়াদী গৃহযুদ্ধ বা আইনের শাসনের বৃহদায়তন ভাঙন বা অ-উন্নয়ন ভিত্তিক একনায়কতন্ত্র ("ব্যর্থ রাষ্ট্র") (যেমন আফগানিস্তান, হাইতি, সোমালিয়া, মায়ানমার, ইরাক, উত্তর কোরিয়া); কখনো কখনো তাদের কম সম্পদ থাকে।

উন্নয়নশীল দেশের তালিকা

এপ্রিল, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল কর্তৃক প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক রিপোর্টে নিম্নলিখিত দেশসমূহ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।[১২][১৩]

উন্নয়নশীল দেশসমূহ, আইএমএফের তালিকাভূক্ত নয়

উন্নয়নশীল থেকে বেরিয়ে আসা অর্থনীতির তালিকা

পাঁচ এশিয়ান বাঘ এবং নতুন ইউরো দেশ সহ, নিম্নলিখিত দেশগুলো, সম্প্রতি পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য করা হত, এবং এখন আইএমএফ দ্বারা উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়ঃ

আরোও দেখুন

বহিঃসংযোগ

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ