বারেন্টস সাগর

উত্তর মহাসাগরের প্রান্তিক সাগর, যা নরওয়ে ও রাশিয়ার উত্তর উপকূলের কাছে অবস্থিত।

বারেন্টস সাগর (নরওয়েজীয়: Barentshavet; রুশ: Баренцево море, বারিয়েন্ত্‌সিয়েভো মোরিয়ে) উত্তর মহাসাগরের একটি বাহু তথা প্রান্তিক সাগর[১] সাগরটি রাশিয়া ও নরওয়ের জলসীমার মধ্যে পড়েছে।[২]

বারেন্টস সাগর
বারেন্টস সাগরের ভৌগোলিক অবস্থান
অবস্থানউত্তর মহাসাগর
স্থানাঙ্ক৭৫° উত্তর ৪০° পূর্ব / ৭৫° উত্তর ৪০° পূর্ব / 75; 40 (Barents Sea)
ধরনসাগর
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহনরওয়েজীয় সাগর, উত্তর মহাসাগর
অববাহিকার দেশসমূহনরওয়ে এবং রাশিয়া
পৃষ্ঠতল অঞ্চল১৪,০০,০০০ কিমি (৫,৪০,০০০ মা)
গড় গভীরতা২৩০ মি (৭৫০ ফু)
তথ্যসূত্রসামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্র, নরওয়ে

ওলন্দাজ অভিযাত্রী উইলেম বারেন্টসের (Willem Barentsz) নামে জলরাশিটির নামকরণ করা হয়েছে। সাগরটি ভাইকিং ও মধ্যযুগীয় রুশদের কাছে মুর্মীয় সাগর নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৩ সালে সর্বপ্রথম এটিকে "বারেন্টস সাগর" নামে একটি সমুদ্র মানচিত্রে উল্লেখ করা হয়। বারেন্টস ছিলেন ১৬ শ শতকে এক ওলন্দাজ অভিযাত্রী। তিনি ইউরোপ থেকে উত্তর দিক দিয়ে এশিয়া মহাদেশে পৌঁছানোর একটি পথ (যার নাম দেওয়া হয়েছে উত্তর-পূর্ব অতিক্রম পথ) খুঁজতে বের হয়েছিলেন। সম্ভবত তার সম্মানেই সাগরটির এরূপ নামকরণ করা হয়।

সাগরটির উত্তর-পশ্চিম কোণায় রয়েছে নরওয়েজীয় স্‌ভালবার দ্বীপপুঞ্জ। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে নরওয়েজীয় সাগর। পশ্চিমে এটি গ্রিনল্যান্ড সাগরের সাথে সীমান্ত গঠন করেছে; সীমান্তটি সভালবার দ্বীপপুঞ্জের ষ্পিৎসবের্গেন দ্বীপ থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে ভালুক দ্বীপ (Bjørnøya)হয়ে নরওয়ের মূল ভূখণ্ডের সর্ব-উত্তর বিন্দু উত্তর অন্তরীপ পর্যন্ত প্রসারিত। বারেন্টস সাগরের পূর্ব দিকে রাশিয়ার নোভাইয়া জেমলিয়া নামক দুইটি দ্বীপ সাগরটিকে কারা সাগর থেকে পৃথক করেছে। সাগরটি দক্ষিণ প্রান্তে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড (কোলা উপদ্বীপ) থেকে উত্তর দিকে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়েছে এবং উত্তরে ফ্রানৎস জোসেফ ল্যান্ড নামক দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে শেষ হয়েছে। সাগরটি প্রায় ১০৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত। এর মোট আয়তন প্রায় ১৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। অপেক্ষাকৃত অগভীর এই সাগরটির গড় গভীরতা ২৩০ মিটার বা প্রায় ৭৫০ ফুট, তবে ভালুক দ্বীপ সমুদ্রখাতের কাছে এর গভীরতা সর্বোচ্চ ২০০০ ফুটে গিয়ে পৌঁছায়। এর দক্ষিণ অংশটি সারা বছর বরফশূন্য থাকে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বারেন্টস সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপরিবহন পথ ছিল। সেসময় বিমানপথ ব্যতীত এটিই ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে সংযুক্ত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসমূহে পৌঁছানোর একমাত্র সরাসরি পথ ছিল। বর্তমানে বারেন্টস সাগর ইউরোপের মুরমান্‌স্ক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ভ্লাদিভোস্তক শহরে পৌঁছানোর জন্য যে ৮০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রপথ আছে, তার সর্বপশ্চিম প্রান্তটি গঠন করেছে।

ভূতাত্ত্বিকভাবে বারেন্টস সাগর ইউরেশীয় মহাদেশীয় ভূখণ্ডের প্রান্তে অবস্থিত একটি অগভীর মহীসোপানের উপরে বিদ্যমান। সমুদ্রতলটি বালি, পলি ও এই দুইয়ের মিশ্রণ দিয়ে আবৃত। ভালুক দ্বীপ সমুদ্রখাত সমুদ্রতলটিকে পূর্ব-পশ্চিমে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। এছাড়া দক্ষিণ অন্তরীপ, উত্তরীয় ও উত্তর-পূর্বী নামের আরও কিছু অপ্রধান সমুদ্রখাত আছে।

রাশিয়ার মুরমান্‌স্ক এবং তেরিবিয়োর্কা এবং নরওয়ের ভারদো (Vardø)এই সাগরের উপকূলের তিনটি বরফমুক্ত বন্দর শহর।

এখানকার জলবায়ু উপ-উত্তর মেরুদেশীয়। শীতকালে বাতাসের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ২৫ ডিগ্রি (উত্তর অংশে) এবং শূন্যের নিচে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে) নেমে আসে। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলগুলিতে যথাক্রমে গড়ে শূন্য ডিগ্রি ও ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়। বাৎসরিক বৃষ্টি বা তুষারপাতের পরিমাণ দক্ষিণে ৫০০ মিমি এবং উত্তরে এর অর্ধেক।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বারেন্টস সাগর মৎস্য আহরণ ও হাইড্রোকার্বন যৌগ অনুসন্ধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।[৩] ১৯৮৮ সালে বারেন্টস সাগরের রুশ অংশে, কোলা উপদ্বীপ থেকে ৬০০ কিলোমিটার উত্তরে, সমুদ্র-তলদেশের গভীরে ৩৮ হাজার কোটি ঘনফুট আয়তনের একটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়, যার নাম দেওয়া হয় শতোকমান গ্যাসক্ষেত্র। এটি বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার।[৪]

উদ্ভিদ ও প্রাণী

ফাইটোপ্ল্যাকটন জাতীয় আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ গভীর সাগরে অমেরুদণ্ডীদের খাবারের যোগান দেয়। এগুলিকে আবার সাগরের বিভিন্ন মাছ যেমন কড, হেরিং, স্যামন, প্লেস ও মাগুর মাছ জাতীয় মাছ খাবার হিসেবে খেয়ে বেঁচে থাকে। এছাড়া এখানে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী যেমন সিলমাছ ও তিমির দেখা মেলে। স্থলচারী স্তন্যপায়ী যেমন মেরু ভল্লুক, ও উত্তর মেরুদেশীয় শেয়াল দেখা যায়। এছাড়া শঙ্খচীল দেখা যায়। উষ্ণ আবহাওয়াতে হাঁস ও রাজহাঁস বিচরণ করে। দক্ষিণে অগভীর অঞ্চলে পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদ প্রচুর ও বৈচিত্র্যময়। বাদামী, লাল ও সবুজ সমুদ্রশৈবাল ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। উপকূলীয় তটরেখা মূলত শিলা ও প্রস্তরময়, তবে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তটরেখাতে গুল্ম, মস ও লাইকেনের দেখা মেলে; ঘাস বিরল।

জলবায়ু পরিবর্তন ও ফলাফল

উত্তর মহাসাগরের অংশ হলেও বারেন্টস সাগর ধীরে ধীরে আটলান্টিক মহাসাগরীয় ধর্ম প্রদর্শন করতে শুরু করেছে। এটিকে উত্তর মহাসাগরের উষ্ণায়নের একটি অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সাগরটির পানির ধর্ম পরিবর্তন হচ্ছে এবং সাগরে বরফের পরিমাণ কমে গেছে। এছাড়াও সাগরটির পানির স্তম্ভের স্তরায়ন ঘটেছে, যার কারণে ইউরেশিয়ার আবহাওয়াতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে। [৫]

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ