বুশম্যান
স্যান, বুশম্যান, শো, বাসারা, কাং, খোয়ে (ইংরেজি: Bushmen, San, Sho, Basarwa, Kung, Khwe) আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত দেশ - দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো, মোজাম্বিক, সোয়াজিল্যান্ড, বতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং অ্যাঙ্গোলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠী। বুশম্যান নামেই তাদের পরিচিতি থাকলেও অনেক সময় তাদেরকে স্যান জনগোষ্ঠী নামে ডাকা হয়ে থাকে। সনাতনী ধারায় তারা শিকার করে জীবনধারণ করে। তারা খোইসান ভাষাভাষী ও খোইখোই জাতির সাথে সম্পৃক্ত।
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
বতসোয়ানা (৫৫,০০০); নামিবিয়া (২৭,০০০); দক্ষিণ আফ্রিকা (১০,০০০); অ্যাঙ্গোলা (<৫,০০০) | |
ভাষা | |
বিভিন্ন খোইসান ভাষাসমূহ | |
ধর্ম | |
খোইসান ধর্ম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
খোইখোই, জোসা, বাস্তার্স, গ্রীকুয়া |
নামকরণ
আফ্রিকার দক্ষিণাংশে শিকারপ্রিয় জনগোষ্ঠী হিসেবে স্যান, বুশম্যান, শো, বাসারা, খোয়েদের পরিচিতি রয়েছে। এ শব্দগুলোর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক রয়েছে। বহিরাগত হিসেবেই তাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই জাতিগতভাবে নামাঙ্কিত হয়ে পরিচয় পেয়ে আসছে।[১] জু ভাষী লোকজন জু কিংবা হোয়ানসি এবং কাং জনগোষ্ঠী কাং নামে পরিচিত। সম্মিলিতভাবে তাদেরকে বুশম্যান নামে আখ্যায়িত করা হয়।[২]
ইতিহাস
শুষ্ক চারণভূমিতে তাদের বেঁচে থাকার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান বিলিয়ে দিয়ে যাওয়া। এটি করা হয় পরিকল্পিত নাঁচ, ধর্মীয় আচার-আচরণ আর গল্পের মাধ্যমে। আর তাই, জীবন রক্ষাকারী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বাহিত হয়। শিশুরা বড়দের দেখে শেখে। শেখা শুরু হয় অনেক ছোটবেলা থেকে। বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ, মারাত্মক প্রাণীসহ ভয়ঙ্কর কাঁকড়া বিছে ইত্যাদি থেকে নিজেকে সামলানোর বিদ্যা বয়স্কদের কাছ থেকে শেখে যা তাদের প্রতিদিনের লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত।
বুশম্যানদের সমাজব্যবস্থায় শিশুদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। অন্যান্য সকল বয়সীদের ন্যায় তারাও খেলাধুলা এবং অবসরকালীন বিনোদনে অভ্যস্ত। আলাপ-আলোচনা, স্ফূর্তি-মজা করা, গান করাসহ উদ্যাম নৃত্যে মেতে উঠে তারা। স্যান সমাজে মহিলারা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ও সকলের সম্মানীয়া। তারা নিজস্ব পরিবারের প্রধান হয়ে থাকেন। পানির সন্ধানে পরামর্শ, খাদ্য সংগ্রহসহ কখনোবা শিকারেও অংশ নিয়ে থাকেন।
জীবনপ্রণালী
কয়েক হাজার বছরে ধরে কালাহারি তাদের আশ্রয় স্থল। অতি অল্প সময়ের জন্যে আসা বর্ষা ও বন্যার জলকে সংগ্রহ করে সারা বছর ধরে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে তারা। জ্ঞান, অধ্যবসায়, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রস্তুতিই তাদেরকে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। তারা জানে কোথায় খাবার ও পানি আছে।
স্যান জনগোষ্ঠীর কাছে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়ুমূলের তন্তুগুলো পানির সংগ্রহস্থল। কয়েক মাসব্যাপী খড়ার কবলে পড়ার কারণে তারা বালুর নিচে পূর্বেই সংরক্ষিত গর্ত খুঁড়ে উটপাখির খালি ডিমে সঞ্চিত পানির মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণ করে। এরপর তা পুনরায় বালুর নিচে বিশেষভাবে ঘাষ দিয়ে ঢেকে রাখে।
খাবার খোঁজা তাদের প্রধান শিক্ষা। বুশম্যানদের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শিকার খুবই জরুরি ও মৌলিক উপাদান। দলবদ্ধভাবে পায়ে হেঁটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শিকারের সন্ধান করে। পুরুষেরা ছেলেদের শিকার করতে শেখায়। বেশীরভাগ কৌশলই শিকারের গল্পগুলোর নাটকীয় অভিনয়ের মাধ্যমে শেখানো হয়। প্রাণঘাতি অস্ত্ররূপে লাঠি ছোড়ার অভ্যাস করানো হয় শৈশব থেকেই। যখন তারা অস্ত্র ছোড়ায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে, তখন তাদেরকে অন্যান্য অস্ত্রের ব্যবহার শেখানো হয়। শিকার করার জন্য দরকার পড়ে ধৈর্য আর সহনশীলতা। তীর আর ধনুক তাদের প্রথম ও প্রধান অস্ত্র। শিকারের নাগালের ২৫ মিটারের মধ্যে তাদের গোপন জায়গায় অবস্থান করতে হয়। অন্যতম গোপন অস্ত্র গাছ কিংবা ডিয়ামফিডিয়া গোত্রের গোবরে পোকা থেকে বিশেষ কায়দায় সংগৃহীত বিষ তীরের অগ্রভাগে মিশিয়ে লক্ষ্যভেদে অগ্রসর হয় ও সাফল্যতা পায়।[৩] কয়েক হাজার বছর ধরে তারা এ বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে আসছে। একবার লক্ষ্যস্থলে তীর লাগার পর শিকারকে ধরতে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হলেও মৃত্যু অনিবার্য্য।সুদক্ষ শিকারী হিসেবে তাদের পছন্দের প্রাণীর তালিকার মধ্যে রয়েছে - কুদু, এন্টিলোপ, হরিণ, বানর, দিকদিক, মহিষ ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র
টেমপ্লেট:Ethnic groups in South Africa